[ad_1]
‘সময় হয়েছে যাবার, যেতে হবে দিতে, রেখো না আমারে তুমি মায়ার বাধনে বেঁধে…’ পুরনো যাবে, নতুন আসবে- এই তো জগতের নিয়ম। নিয়মের বেড়াজালে বন্দী এই নশ্বর পৃথিবীর সকলেই। ক্রিকেটাররাও তার ব্যতিক্রম নন।
বছর দশেক আগে তারা ছিলেন দলের সবচেয়ে জুনিয়র, সময়ের পালাবদলে আজ সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় তারা। সবাই নিজ নিজ স্থানে দারুণ পারফরম্যান্স করলেও হয়তো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে এসব বাঘা বাঘা পারফর্মারদের আর দেখা যাবেনা সামনের এশিয়া কাপে। তাদের নিয়েই এই আয়োজন। দেখে নেওয়া করা যাক, ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা তারকাদের।
এই তালিকায় সবার আগে চলে আসে বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নাম। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা রিয়াদ এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট, ২১টি ওয়ানডে ও ১১৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ৯৭৮১ রান ও বল হাতে ১৬২টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ডানহাতি অফ ব্রেক বোলিংয়ের সাথে লোয়ার অর্ডার ব্যাটার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে নিজেকে প্রপার ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরিয়ান রিয়াদ। যখনই বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে সমস্যায় পড়েছে, রিয়াদ বরাবরই ছিলেন অবিচল। হোক তা চট্টগ্রামের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অথবা ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইতিহাস তৈরী করা সেঞ্চুরি কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাকাব্যিক শতক। এসবের সাথে নিদাহাস ট্রফির সেই ছক্কা তো সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো।
দলের প্রয়োজনে কখনো ওয়ান ডাউন, কখনো চার-পাঁচ-ছয় কখনোবা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নামতে দ্বিধায় ভুগেননি রিয়াদ। তবে যে পজিশনেই খেলেন, নিজের কাজটা চুপিসারে শতভাগ করে গেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘সাইলেন্ট কিলার’ রিয়াদ। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে কিছুটা অফ ফর্ম এদেশের ক্রিকেটে রিয়াদের অবদান মুছে ফেলতে পারবে না। প্রত্যাশা করি, খুব সম্ভবত নিজের ক্যারিয়ারের শেষ এশিয়া কাপে আবারো দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ঘুরে দাঁড়াবেন রিয়াদ, পথ দেখাবেন দলকে, মাথা উঁচু করেই শেষ করবেন বাকি পথটুকু।
মোহাম্মদ নবী
ক্রিকেট যেখানে অন্য দশটা দেশের মতো বিনোদনের মাধ্যম নয়, একটা জাতীয় আশার নাম। যে দেশের মানুষের ঘুম ভাঙে বোমা-গোলার ভয়ঙ্কর শব্দে, সেই দেশ থেকেই উঠে আসা এক তরুণ রাজত্ব করেছেন বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, ভারত থেকে ইংল্যান্ড এর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বে। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর কথা।
আফগান ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি সঙ্গী হিসেবে আছেন। বর্তমানে রশিদ খান, মুজিব উর রহমানের মতো দুর্দান্ত খেলোয়াড় আফগানিস্তান দলে থাকলেও তাদের আগে আফগানদের একমাত্র আইডল ছিলেন এই মোহাম্মদ নবী, যিনি আফগান ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার। ক্রিকেট নিয়ে বিন্দুমাত্র খোঁজখবর রাখা মানুষের নবীর উচ্চতা অজানা নয়। ২০০০ সালে আফগানিস্তানের হয়ে এমসিসির বিরুদ্ধে শতরানের মাধ্যমে সর্বপ্রথম নজরে আসেন এই অলরাউন্ডার। পরবর্তীতে এই এমসিসির হয়েই প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের সূচনা হয় তার।
২০০৯ সালে আফগানিস্তান ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর তার অভিষেক হয় একদিনের ক্রিকেটে। অভিষেক ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে নিজের জাত চেনান। এরপর একই বছর জিম্বাবুয়ে একাদশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের হয়ে প্রথম প্রথম শ্রেণির ম্যাচেই ১০২ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলেন। সেখান থেকেই নবীর বিশ্বজয়ের মিশন শুরু।
২০১৪ সালে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্ব পান নবী। সেবার বাংলাদেশকে পরাজিত করে আফগানরা, যা ছিল কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের প্রথম ওয়ানডে জয়। এরপর ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন, ঐ বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আফগানদের একের পর এক সাফল্য উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। বয়স তার ৩৮ ছুঁইছুঁই, এই বয়সেও পারফর্ম করে যাচ্ছেন সমানতালে, দলকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন দারুণভাবে। তবে বয়স বলছে, হয়ত তার এটাই শেষ এশিয়া কাপ!
দীনেশ কার্তিক
১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত সবসময়ই প্রতিভায় ভরপুর। এই প্রতিভার স্রোতে অনেক সময় সম্ভবনাময় অনেকেই হারিয়ে যান। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দীনেশ কার্তিক। তবে কার্তিক একইভাবে লিখেছেন অবিশ্বাস্য কামব্যাকের গল্পও। ভারতের তামিলনাড়ুতে জন্ম নেওয়া কার্তিকের ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়।
২০০৪ থেকে ২০২২- মাঝখানে ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কার্তিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র ২৬টি টেষ্ট , ৯৪টি ওয়ানডে আর ৪৭টি টি-টোয়েন্টি খেলার সৌভাগ্য হয়। ভারতের মতো দেশের হয়ে খেলেও ১৮ বছরে মাত্র এই কয়টি ম্যাচ খেলার কারণ হিসেবে একমাত্র প্রতিভার ব্যাপ্তিই বলা চলে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই উইকেটরক্ষক পজিশন নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথে লড়াই শুরু, শেষের দিকে এসে পান্ট-কিষাণদের সাথে একই লড়াই চলতে থাকা- এসব দেখলে বড্ড দূর্ভাগা মনে হয় দীনেশ কার্তিককে।
পারফর্ম করেও দলে ডাক না পাওয়া, দলে ডাক পেলেও একাদশে সুযোগ না পাওয়া এসব কারণে মাঝখানে ক্রিকেট ছেড়ে ধারাভাষ্যে পূর্ন মনোযোগ দিয়েছিলেন কার্তিক। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আবারও ক্রিকেটে ফিরে ২০২২ আইপিএলের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স তাকে ভারতীয় দলে সুযোগ করে দেয়। পারফর্মারে টইটুম্বুর ভারতের হয়ে এবারই শেষ এশিয়া কাপ খেলতে চলেছেন কার্তিক। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ভাগ্যের সাহায্য না পাওয়া কার্তিক শেষদিকে এসে পাওয়া সুযোগের পূর্ণ ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই এবারের এশিয়া কাপে মাঠে নামবেন, দেশের জন্য নিজের প্রতিভার সবটুকু উজাড় করে দিবেন।
[ad_2]