[ad_1]
নিজেকে নিয়ে সন্দেহ মানে নিজের ভেতর থেকে আসা সেই কন্ঠ – যা আমাদের সামনে এগুতে বাধা দেয়। নতুন কিছু চেষ্টা করতে গেলেই সে আমাদের বলে, আমাদের দিয়ে এটা হবে না। আর আমরা ভয়ে পিছিয়ে যাই। অনেক ভালো ভালো সুযোগ আমরা হাতছাড়া করি, কারণ ভেতর থেকে একটি কন্ঠস্বর বলে – এটা অনেক কঠিন, আমরা এটা পারবো না।
কিন্তু সত্যি কথা হল, যে কোনও বড় অর্জনই কঠিন। কিন্তু এটা জটিল কিছু নয়। চেষ্টা, সদিচ্ছা আর পরিশ্রম – এই তিনটি থাকলে একজন মানুষ যে কোনও অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
নিজের ওপর সন্দেহ থাকলে সহজ জিনিসও কঠিন মনে হয়; যে কারণে অনেক সময়ে সহজেই করতে পারা জিনিসও আমরা শুরু করি না।
এ কথা ঠিক যে, কোনওকিছু শুরু করার আগে নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করা উচিত্। একমাত্র বোকারাই নিজের ক্ষমতা বিচার না করে কাজে হাত দেয় – কিন্তু তার মানে এই নয় – একটু কমতি থাকলেই পিছিয়ে আসতে হবে। তারচেয়ে যেখানে যেখানে কমতি আছে – সেগুলো ঠিক করে নিয়ে চেষ্টা করলেই কাজে সফল হওয়া যাবে।
তবে, এগুলোও আমাদের প্রায় সবারই জানা আছে। তবুও কেন জানি নিজেকে নিয়ে সন্দেহ আমাদের পিছিয়ে দেয়।
একারণেই, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে নিয়ে সন্দেহ কিভাবে দূর করা যায় – তা জানা জরুরী। আজ তাই এই সমস্যাটি দূর করার ১০টি কার্যকর টিপস আপনি জানবেন, যাতে করে ভবিষ্যতে মনে নিজেকে নিয়ে সন্দেহ জাগলে এগুলো কাজে লাগিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
০১. মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন
৭০ দশকের সেলফ ডেভেলপমেন্ট এর গুরু আর্ল নাইটেঙ্গেল তাঁর একটি অডিও প্রোগ্রামে মানুষের মনকে বিশাল এক শক্তিশালী গাড়ির সাথে তুলনা করেছেন। মানুষের মন অসম্ভব শক্তিশালী একটি জিনিস। যে কোনও অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই বোঝে না যে, এই বিশাল শক্তিশালী গাড়িটির ড্রাইভার সে নিজে। সে চাইলে একে যে কোনও দিকে চালিত করতে পারে। কিন্তু যদি ড্রাইভিং হুইল শক্ত করে না ধরা হয়, তবে যে কোনও গাড়ির মত মনও আপনার সর্বনাশ ঘটিয়ে ছাড়বে।
আর্ল নাইটেঙ্গেল বলেন, আপনি আপনার মনকে ব্যবহার করে যে কোনও কিছু অর্জন করতে পারেন, যদি স্টিয়ারিং হুইলে আপনার হাত শক্ত করে ধরা থাকে। মানে, আপনি যদি সঠিক পথে গাড়িটি ড্রাইভ করেন।
মানুষের মস্তিষ্কের একটি ‘core’ বা মূল ফিচার হল, এটি সব সময়ে মালিককে নিরাপদ রাখতে চায়। কিন্তু এই নিরাপদ রাখতে গিয়ে সে মানুষকে ঝুঁকি নিতে দেয় না – সামান্য ঝুঁকিকে সে অনেক বড় করে দেখায় – ফলে আমরা অনেক ভালো ভালো সুযোগের সামনে থেকে সরে আসি। এছাড়া মন বেশিরভাগ সময়েই বিনোদন আর ভোগে ডুবে থাকতে চায়।
সাধারণ মানুষ তাদের মনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা খুব কম করে, কারণ তারা মনে করে, মন তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে – কিন্তু সত্যি কথা হল, আপনি চাইলে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কোনও কাজ করার সময়ে, বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদক্ষেপ নেয়ার সময়ে যদি মাথার ভেতরে অযৌক্তিক নেতিবাচক চিন্তা আসে, বা নিজেকে নিয়ে সন্দেহ আসে – তাহলে বুঝবেন যে মনের গাড়ি ভুল পথে চলতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় শক্ত করে ড্রাইভিং হুইল ধরুন। জোর করে পজিটিভ চিন্তা করুন। বার বার বলুন – আমি পারব, আমাকে দিয়ে এটা সম্ভব। এবং জোর করে সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করুন। একটু পরে দেখবেন মনের ভেতরের সেইসব নেতিবাচক কথা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপারটি এতই সাধারণ। সফল উদ্যোক্তা ও মোটিভেটর গ্যার ভেইনারচাক বলেন, “মানুষ শুধু শুধুই সিক্রেট খুঁজে বেড়ায়। সবচেয়ে বড় সিক্রেট হল, সিক্রেট বলতে কিছু নেই। সাধারণ জিনিসগুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করলেই অসাধারণ অর্জন সম্ভব”
যখনই নিজেকে নিয়ে কোনও অযৌক্তিক সন্দেহ দেখা দেবে – দেরি না করে তার গলা টিপে ধরুন। গাড়িকে অন্য পথে নিয়ে যান – যেখানে আপনি সত্যিই যেতে চান।
০২. অতীত নিয়ে ভাবুন
যখনই আপনার মনে নিজেকে নিয়ে সন্দেহ জাগবে। বিশেষ করে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার সময়ে, তখন একটু অতীত নিয়ে ভাবুন।
কতজন মানুষের কথা আপনি যানেন, যারা সবচেয়ে কঠিন অবস্থা পাড়ি দিয়ে বড় অর্জন করেছেন? পৃথিবীতে যত মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন – তাঁদের বেশিরভাগই এমন অবস্থায় শুরু করেছেন – যেখান থেকে তাঁদের এত বড় কিছু করার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না।
আজকের যুগেও এমন বহু মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যাঁরা আপনার চেয়েও অনেক কঠিন অবস্থা পাড়ি দিয়ে অনেক বড় বড় কাজ সম্ভব করেছেন।
হয়তো আপনি নিজেও এর আগে এমন কাজ করেছেন। হয়তো বাধ্য হয়ে বা কারও উত্সাহে অসম্ভব মনে হওয়া কাজও এর আগে সফল ভাবে শেষ করেছেন। তখন পারলে এখন পারবেন না কেন? তারা পারলে আপনি পারবেন না কেন? – এভাবে যখন চিন্তা করবেন – তখন দেখবেন নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গেছে – এবং সন্দেহ আর দ্বিধাও অনেকটা কমে এসেছে। কাজে হাত দিলে সেই সন্দেহ আর দ্বিধা একদম অদৃশ্য হয়ে যাবে।
০৩. পজিটিভ ও আশাবাদী কোনও বিশ্বস্ত মানুষের সাথে কথা বলুন
আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছে, যাঁরা সব সময়ে পজিটিভ থাকতে পারেন। খারাপ পরিস্থিতিতেও তাঁদের মুখে হাসি থাকে। সব সময়ে তাঁরা ভালো কিছু আশা করেন।
আপনার বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয়দের মাঝে কেউ না কেউ এমন থাকবেনই। এই ধরনের মানুষ যেমন নিজে ভালো থাকতে পারেন – তেমনি আশপাশের মানুষকেও আশার বানী শোনাতে পারেন। কোনও কারণে নিজের ওপর সন্দেহ হলে বা আশাহত হলে এমন মানুষের কাছে গিয়ে নিজের অবস্থার কথা খুলে বলুন। দেখবেন এরা খুব সুন্দর করে আপনাকে পরিস্থিতির পজিটিভ বা ইতিবাচক দিকগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেইসাথে তাঁরা তাঁদের আশাবাদী মনোভাব দিয়ে আপনাকে চাঙ্গা করে তুলবেন। কথা বলার পরই দেখবেন আগের মত নিরাশ লাগছে না।
এছাড়া, কোনও বিষয়ে কম জানলে সেই বিষয়ে পরিচিত (বা অপরিচিত) বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন – তাহলে আর কাজে নামার সময়ে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগবেন না।
০৪. তুলনা করবেন না
মানুষ যখন অন্যের সাথে নিজের তুলনা করে, তখন সে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।বেশিরভাগ সময়েই আমরা তুলনাটি সঠিক উপায়ে করি না।
আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা যদি আপনার আইডল হন – তবে তাঁর বর্তমান অবস্থার সাথে আপনার বর্তমান অবস্থা তুলনা করলে বিপদে পড়বেন। তিনি এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের মালিক, অন্যদিকে আপনি হয়তো মাসে ৪০ হাজার টাকাও কামাতে পারছেন না। আপনাকে ভাবতে হবে, আপনার মত অবস্থায় বা আপনার চেয়েও খারাপ অবস্থায় থাকতে তিনি কি করেছেন – কিভাবে তিনি সেই অবস্থা কাটিয়ে এতদূর এসেছেন। তাহলেই আপনি বেশি উত্সাহ পাবেন।
আপনি যদি অন্যের সাথে সব সময়ে নিজের তুলনা করেন – তবে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিজের সাফল্যের সংজ্ঞা আপনার নিজেকে ঠিক করতে হবে। তারপর সেই সাফল্যের জন্য কাজ করতে হবে। অন্যরা বা আশপাশের মানুষের চোখে সফল হওয়া মানে সত্যিকার সাফল্য নয়। আপনি মন থেকে যেটা চান, সেটা করতে পারাই সত্যিকার সাফল্য।
সব চাবিই চাবি, কিন্তু সব চাবি দিয়ে সব তালা খোলা যায় না।
অন্যের সাথে প্রতিযোগীতা করার বদলে নিজের সাথে প্রতিযোগীতা করুন। আজ আপনি যা – কাল তাকে আরও ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকের প্রতিটি মূহুর্তকে কাজে লাগান। এভাবেই দেখবেন আপনি কখন অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন – তা নিজেও টের পাননি।
০৫. জার্নাল লিখুন
বিখ্যাত সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোচ ব্রায়ান ট্রেসি তাঁর প্রতিটি বই ও বক্তৃতায় লেখাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য সঠিক ভাবে পূর্ণ করার জন্য প্রতিদিন সেই লক্ষ্য সম্পর্কে জার্নালিং করা বা লেখা খুব জরুরী। এতে সফল হবার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
জার্নালিং এর অভ্যাস অনেক দিক দিয়েই আপনার উপকারে আসতে পারে। নিজের প্রতি সন্দেহ দূর করার ক্ষেত্রে এটি মূলত দুই ভাবে আপনার উপকার করতে পারে:
যখনই কোনও কারণে আপনার নিজের ওপর সন্দেহ হবে, তখন যদি একটি কাগজে এই সন্দেহ আসার কারণগুলো লেখার চেষ্টা করেন – তখন অনেক স্পষ্ট ভাবে কারণগুলো আপনার মাথায় আসবে। যে কোনও কিছু লেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্ক সাধারণের চেয়ে বেশি কাজ করে। চিন্তাগুলো অনেক স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়।
কারণগুলো লেখার পরে আপনি পাশে সেই কারণের প্রতিকার লেখা শুরু করুন। এমনিতে এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে গেলে হয়তো প্রতিকারগুলো খুব ভালো ভাবে মাথায় আসবে না। কিন্তু লেখার সময়ে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় মাথায় আসবে। সমস্যাগুলোর সমাধান খুব সহজে বের করতে পারবেন। সমস্যার বিভিন্ন দিক ও এর সমাধান লিখে ফেললে সেগুলো নিয়ে কাজ করার উত্সাহ ও আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে।
০৬. অন্যের মতামতকে অতিরিক্ত মূল্য দেবেন না
আপনি যখন আপনার কাজে ও কথায় অন্যরা কি ভাবতে পারে – তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবেন – তখন নিজের ওপর সন্দেহ বাড়তে থাকবে। এবং এক সময়ে আপনি কাজ শুরু করতেই ভয় পাবেন। আসলে, নিজের কাজ ও কথা নিয়ে নিজের মনে সন্দেহ হওয়ার প্রধান একটি কারণই হল অন্যের মতামতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া।
সত্যি কথা বলতে, খুব অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আপনার কথা ও কাজ নিয়ে কারওই সত্যিকার মাথাব্যাথা নেই। আর যেসব মানুষ আপনার কাজে সব সময়ে খুঁত ধরবে – তাদের স্বভাবই আসলে খুঁত ধরে বেড়ানো। আপনি যত ভালো কাজই করেন না কেন – খুঁত এরা ধরবেই। সফল উদ্যোক্তা ও বিজনেস ট্রেইনার গ্যারি ভেইনারচাক এর মতে – এইসব মানুষ আসলে নিজের জীবনে অসম্ভব রকম ব্যর্থ আর অকর্মা। নিজের অপূর্ণতা ঢাকতে এরা অন্যকে নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করে।
পাশের বাসার যে আংকেল আপনার বিসিএস নিয়ে আপনার বাবার চেয়ে বেশি মাথা ঘামান – বেশিরভাগ সময়েই তিনি একজন কেরানী বা ঐ ধরনের কিছু। এরা নিজের জীবনে বলার মত কিছুই করেনি – কিন্তু অন্যকে নিয়ে মাথা ঘামাতে এরা ওস্তাদ। একই ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা অন্যের লেখা বা ছবিতে বিরূপ মন্তব্য করে – তাদের আসলে কোনও কাজের কাজ নেই।
যেসব মানুষের সত্যিকার কাজ আছে, তাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। যারা সত্যিকারেই আপনার জন্য কেয়ার করে – তারা সব সময়ে আপনাকে উত্সাহ দেবে এবং আপনার ভালো চাইবে। সমালোচনার বদলে ভুল ধরিয়ে দিয়ে গঠনমূলক পরামর্শ দেবে।
কাজেই ‘পাছে লোকে কি বলে’ – এই ভয়ে কোনও কাজ বা পদক্ষেপ থেকে পিছিয়ে যাবেন না। সব সময়ে মনে রাখবেন – আপনার জীবনের ওপর অধিকার আপনার নিজের ও একান্ত আপনজনদের। এর বাইরে কে কি বলল – তাতে আপনার কিছু আসে যায় না। – এই চিন্তাধারায় যখন নিজেকে আনতে পারবেন – তখন দেখবেন নিজের ওপর সন্দেহ অনেক কম সৃষ্টি হচ্ছে।
০৭. নিজেকে মোটিভেট করুন
আপনার প্রতিটি দিনই যদি শুরু হয় আশার বানী ও ভালো কিছু শেখার মাধ্যমে – তাহলে সারাটা দিনই আপনার মন ভালো থাকবে। নিজের প্রতি বিশ্বাসও অনেক বেশি থাকবে।
প্রতিদিন সকালে মোটিভেশনাল উক্তি বা স্পিচ পড়ুন বা শুনুন। সফল মানুষদের জীবনী পড়ুন। তাহরে দেখবেন নিজের ও নিজের কাজের প্রতি আপনার আস্থা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে কম বয়সে বিলিওনেয়ার হওয়া ভারতীয়, পেটিএম এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মা কম বয়সে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। হিন্দী মিডিয়াম থেকে আসা বিজয় ইংরেজী লেকচার বুঝতে না পারার কারণে শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে এত অপমানিত হয়েছিলেন যে, ক্লাস বাদ দিয়ে লাইব্রেরিতে বসে থাকতেন। সেখানে তিনি সফল মানুষদের জীবনী পড়তেন আর ইংরেজী চর্চা করতেন। এক সময়ে তিনি এমন সফল হলেন যে, সেই শিক্ষক বা সহপাঠীরাও তাঁর ধারে কাছে আসতে পারেনি।
মিরাকেল মর্নিং বই এর লেখক হাল ইলরোড যখন সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গিয়েছিলেন – তিনি প্রতিদিন নিজেকে পজিটিভ কথা শোনাতেন এবং মোটিভেশনাল বই বা এই ধরনের কিছু শুনতেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন নিজের ওপর আস্থা খুঁজে পেতেন এবং ধীরে ধীরে নিজের হারানো সৌভাগ্য ফিরে পান।
প্রতিদিন যখনই সময় পান, ভালো এবং মোটিভেটিং কিছু পড়ুন, শুনুন, বা দেখুন – এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদী মনোভাব স্থায়ী হবে। আপনি যা-ই করতে যান, বা বলতে যান – কোনওকিছুর ব্যাপারেই অযৌক্তিক সন্দেহ মনে আসবে না।
০৮. মনে রাখুন: সব ব্যর্থতাই সাময়িক
ব্যর্থতার নিজস্ব কোনও শক্তি নেই, যদিনা আমরা তাকে শক্তিশালী করি। আমরা যদি তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, তবেই সে শক্তিশালী হয়। অতীতের ব্যর্থতার কারণে অনেক সময়েই আমাদের নিজের ওপর বিশ্বাস টলে যায়। কিন্তু সত্যিকথা বলতে, ব্যর্থতা শুধুই একটি ঘটনা। যা অতীতে হয়তো প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু বর্তমানে শুধু আমাদের মনের ভেতরে ছাড়া তার আর কোনও অস্তিত্ব নেই।
মনে রাখবেন, এর আগে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই আপনি একজন ব্যর্থ মানুষ নন। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার যদি শুরু করেন – তবে সেই ব্যর্থতা আবার আপনাকে কাবু করতে পারবে না। সব সময়ে মনে রাখুন, ব্যর্থতা ছাড়া সফল হওয়া যায় না। একটি কাজে নামলে ব্যর্থতা আসবেই – সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে নিতেই এক সময়ে আপনি সেই কাজে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন। পথ ভুল করতে করতেই এক সময়ে পথ চেনা হয়।
আগের ব্যর্থতা নিয়ে গভীর চিন্তা অবশ্যই করবেন, তবে তা শুধু তার থেকে কি কি শিক্ষা নিতে পারেন – তা ভেবে বের করার জন্য। তারপর আর তা নিয়ে ভাবা মানে শুধুই সময় নষ্ট। অতীত ব্যর্থতা যেন আপনার নিজের ক্ষমতার ওপর সন্দেহ না ছড়াতে পারে সেজন্য “অতীত ব্যর্থতা কাটিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ার ৯টি টিপস” শিরোনামে পুরো একটি লেখাই আমরা প্রকাশ করেছি। চাইলে সেই লেখাটিও পড়ে নিতে পারেন।
০৯. প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন
কোনও বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান আর দক্ষতা থাকে, তবে সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া বা কাজে নামার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি থাকবে। অনেক সময়েই আমরা কোনও পদক্ষেপ নিতে চেয়েও নিতে পারি না, সেই বিষয়ে যথেষ্ঠ জ্ঞান আর দক্ষতার অভাবে। যে কোনও বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর প্রধান উপায় হল, সেই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা এবং প্রাকটিস করা।
অনেকের মানুষের সামনে কথা বলার সাহস থাকে না। আপনি যদি প্রেজেন্টেশন স্কিল বাড়ানোর জন্য সেই বিষয়ের বই পড়েন, এবং কোর্সে ভর্তি হয়ে নিয়মিত প্রাকটিস করেন – তবে আপনার ধারণা করা সময়ের আগেই দেখবেন বিষয়টিতে অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছেন।
বিশ্বখ্যাত সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোচ ব্রায়ান ট্রেসির মতে, কেউ যদি তার হাতে আসা টাকার ৩% নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য খরচ করে (বই কেনা, কোর্স করা – ইত্যাদির মাধ্যমে) – তবে কিছুদিনের মধ্যেই সে নিজের ক্ষেত্রের সেরা একজন মানুষে পরিনত হবে। এই ব্যাপারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “যে কোনও ক্ষেত্রে সেরা মানুষ হওয়ার উপায়: ৩% ফর্মূলা” নিয়ে লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
আপনি যে ক্ষেত্রেই সেরা হতে চান না কেন, নিয়মিত চর্চা ও জ্ঞান অর্জন আপনাকে সব সময়েই আত্মবিশ্বাসী রাখবে – এবং সেই ব্যাপারে নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহকে পাত্তা দেয়ার মানসিকতা আপনার থাকবে না।
১০. বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করুন, এবং ধাপে ধাপে পূরণ করুন
সাফল্য বা আত্ম উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গেলে এই বিষয়টি আসবেই। আপনি যখন অনেক বড় লক্ষ্য ঠিক করবেন – তখন স্বাভাবিক ভাবেই সেই লক্ষ্য পূরণের ক্ষমতা নিয়ে একটু সন্দেহ আসবেই। এই সন্দেহ ঝেড়ে ফেলার সেরা উপায় হল বড় কোনও লক্ষ্যকে ছোট ছোট লক্ষে ভাগ করা।
ধরুন আপনি সিঁড়ি বেয়ে ১০ তলা উঠতে চান। একবারে দশ তলার দিকে তাকালে একটু ভয় লাগতেই পারে। আপনি ১০ তলার চিন্তা না করে, এক তলা এক তলা – অথবা ৫টি করে সিঁড়ি টপকানোর কথা চিন্তা করুন। ১ তলা ওঠার সময়ে পরের তলার চিন্তা করবেন না। আপনার পুরো ফোকাস একটি তলাতেই দিন। তাহলেই দেখবেন আর নার্ভাস লাগবে না।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর একটি উক্তি মনে রাখুন : “বিশ্বাসের সাথে মাত্র একটি ধাপে পা রাখো। সবগুলো সিঁড়ির দিকে তাকানোর দরকার নেই, শুধু প্রথম পদক্ষেপটি নাও.”
ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগীতায় প্রতিযোগীদের টানা ২৬ মাইল দৌড়াতে হয়। একবারে কেউ ২৬ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করে না। প্রথমে ১ মাইল টানা দৌড়ায়, তারপর ২ মাইল. এভাবে দীর্ঘদিন প্রাকটিসের পর এই শক্তি ও দক্ষতা অর্জিত হয়। – আপনার বড় লক্ষ্যটিকে ম্যারাথন দৌড়ের সাথে তুলনা করুন। সব সময়ে এই দৌড়ের কথা ভাবুন – দেখবেন উত্সাহ পাচ্ছেন।
আপনার লক্ষ্য যদি হয় ১০ বছরের তাহলে শুধু এই বছর নিয়ে আপাতত ভাবুন। বছরকে ১২ মাসে ভাগ করুন, মাসকে ভাগ করুন সপ্তাহে, এভাবে প্রতি দিনের জন্য লক্ষ্য ঠিক করুন। প্রতিদিনে ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করে পরের দিনের জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করুন।
এভাবে প্রতিটি ধাপ পার হওয়ার সাথে সাথে পরের ধাপে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস এমনিতেই আপনার মাঝে জন্ম নেবে। নিজের ক্ষমতা বা সাফল্য নিয়ে সন্দেহ অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
পরিশিষ্ট
যে বিশ্বাস করতে পারে সে অর্জন করতে পারে। এই লেখার প্রথমে দেয়া শেকসপিয়রের উক্তিটির মানে এটাই। শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস করে প্রথম পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই অনেক সম্ভাবনাময় জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ে মনে যতই সন্দেহ আসুক, তাকে পাত্তা দেবেন না। যদি সত্যিই কোনও বিষয়ে আপনার দুর্বলতা থাকে, তবে সেই দুর্বলতা কাটানোর জন্য পরিশ্রম করুন, জ্ঞান অর্জন করুন। হয়তো কোনও বিষয়ে আপনার শিক্ষা নেই – কিন্তু শেখার যোগ্যতা ও সময় অবশ্যই আছে। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস ও চেষ্টা।
আপনার মাঝে সেই বিশ্বাস ও চেষ্টা করার উত্সাহ জাগিয়ে তোলার জন্যই এই লেখা। নিজের প্রতি সন্দেহ দূর করার উপায় জানতে লেখাটি যদি আপনার একটুও উপকারে আসে – তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল।
[ad_2]