আর্কিমিডিস জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Archimedes Biography in Bengali. আপনারা যারা আর্কিমিডিস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আর্কিমিডিস এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
- আর্কিমিডিস কে ছিলেন? Who is Archimedes?
- আর্কিমিডিস জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
- আর্কিমিডিস এর জন্ম: Archimedes’s Birthday
- আর্কিমিডিস এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Archimedes’s Parents And Birth Place
- আর্কিমিডিস এর শিক্ষাজীবন: Archimedes’s Educational Life
- আর্কিমিডিস এর কর্ম জীবন: Archimedes’s Work Life
- আর্কিমিডিস এর মৃত্যু: Archimedes’s Death
আর্কিমিডিস কে ছিলেন? Who is Archimedes?
আর্কিমিডিস (খ্রি.পূ. ২৮৭-২১২) একজন গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক। যদিও তার জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তবুও তাকে ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পদার্থবিদ্যায় তার উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে স্থিতিবিদ্যা আর প্রবাহী স্থিতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন এবং লিভারের কার্যনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যাপ্রদান। পানি তোলার জন্য আর্কিমিডিসের স্ক্রু পাম্প, যুদ্ধকালীন আক্রমণের জন্য সীজ ইঞ্জিন ইত্যাদি মৌলিক যন্ত্রপাতির ডিজাইনের জন্যও তিনি বিখ্যাত। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার নকশাকৃত আক্রমণকারী জাহাজকে পানি থেকে তুলে ফেলার যন্ত্র বা পাশাপাশি রাখা একগুচ্ছ আয়নার সাহায্যে জাহাজে অগ্নিসংযোগের পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
আর্কিমিডিস জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
নাম | আর্কিমিডিস |
জন্ম | 287 খ্রিস্টপূর্বাব্দ |
পিতা | ফিডিয়াস |
মাতা | – |
জন্মস্থান | সিরাকিউস, সিসিলি |
জাতীয়তা | গ্রিক |
পেশা | গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক |
মৃত্যু | 212 খ্রিস্টপূর্বাব্দ (বয়স প্রায় 75) |
আর্কিমিডিস এর জন্ম: Archimedes’s Birthday
আর্কিমিডিস 287 খ্রিস্টপূর্বাব্দ এ জন্মগ্রহণ করেন।
আর্কিমিডিস এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Archimedes’s Parents And Birth Place
পৃথিবীর সর্বকালের সকল দেশের শ্রেষ্ঠবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ হিসেবে আর্কিমিডিসের নাম মানবজাতির ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তার ন্যায় পন্ডিত সেকালের ইউরোপে দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। এখনো পর্যন্ত তা র সমকক্ষ গণিতবিদ পৃথিবীতে খুব অল্পই জন্মেছেন। তাঁর চিন্তাধারা ও আবিষ্কার কৌশল আধুনিক বিজ্ঞানীদের পাথেয় রূপে বিবেচিত হয়ে থাকে। আনুমানিক খ্রিঃ পূর্ব ২৮৭ অব্দে গ্রীসের সিসিলির অন্তর্গত সাইরাকিউস নগরে আর্কিমিডিসের জন্ম হয়।
তার পিতা ছিলেন সেকালের একজন সুপ্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ। তাঁরই সাহচর্য ও উৎসাহে অঙ্কশাস্ত্র ও জ্যামিতি বিদ্যার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন এবং কালক্রমে বিজ্ঞান ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় প্রতিভারূপে অমরত্ব লাভ করেন। সেকালে গ্রীস দেশেও প্রাচীন ভারতের মত গুরুগৃহে থেকে শিক্ষালাভ করতে হত। এই ছিল প্রচলিত নিয়ম।
আরও পড়ুন: জন ফ্রাঙ্কলিন এন্ডারস জীবনী
আরও পড়ুন: আর্থার কম্পটন জীবনী
আরও পড়ুন: রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী
আরও পড়ুন: সিগমুন্ড ফ্রয়েড জীবনী
আরও পড়ুন: শরৎ চন্দ্র পণ্ডিত দাদাঠাকুর জীবনী
আর্কিমিডিস এর শিক্ষাজীবন: Archimedes’s Educational Life
আর্কিমিডিসের লেখাপড়াও শুরু হয়েছিল সেভাবে আলেকজান্দ্রিয়ায়। তার শিক্ষাগুরু ছিলেন জ্যামিতির জনক ইউক্লিডের শিষ্য স্যামোসের কোনে। গুরুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ও শিক্ষায় তার প্রতিভা বিকাশ লাভ করেছিল। গুরুগৃহে শিক্ষা শেষ কবে আর্কিমিডিস নিজের জন্মস্থান সাইরাকিউসেই বিজ্ঞানচর্চায় সারাজীবন অতিবাহিত করেন।
আর্কিমিডিস এর কর্ম জীবন: Archimedes’s Work Life
সাইরাকিউসের রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো আর্কিমিডিসকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং নিজের বন্ধু রূপে সম্মান দিতেন। হিয়েরোর অনুরোধেও উৎসাহে পরবর্তীকালে তিনি নানা ধরনের কার্যকরী যন্ত্র উদ্ভাবন করেছিলেন। চল্লিশটিরও বেশি যন্ত্র তিনি উদ্ভাবন করেছিলেন।
রাজা হিয়েরোর সোনার মুকুট নিয়ে তার জগদ্বিখ্যাত আপেক্ষিক গুরুত্বের সূত্র আবিষ্কারের গল্পটি বহুল প্রচলিত। এই ঘটনার সূত্রে আর্কিমিডিসের উচ্চারিত ইউরেকা (Eureka -পেয়েছি) শব্দটি প্রবাদে পরিণত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজা হিয়েরো এক স্বর্ণকারকে দিয়ে একটি সোনার মুকুট তৈরি করিয়েছিলেন। মুকুটটিতে খাদ মেশানো আছে কিনা তা নির্ণয় করবার জন্য তিনি আর্কিমিডিসকে অনুরোধ করেন।
একদিন টবে স্নান করতে গিয়ে আর্কিমিডিস লক্ষ করেন খানিকটা জল টবের গা বেয়ে উপচে পড়ে গেল। এই ব্যাপারটা থেকেই আকস্মিকভাবে রাজার প্রশ্নের উপযুক্ত সমাধান তাঁর মাথায় এসে গেল। আনন্দে তিনি ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠলেন। পরে একটি পরীক্ষার দ্বারা তিনি রাজাকে বুঝিয়ে দেন যে মুকুটটিতে খাদ মেশানো আছে।
সামান্য এই ঘটনার সূত্র ধরেই আর্কিমিডিস আবিষ্কার করেন আপেক্ষিক গুরুত্বের ভৌতিক সূত্র যা বিজ্ঞানে আর্কিমিডিসের তত্ত্ব নামে পরিচিত। এই তত্ত্বে তার সিদ্ধান্ত হল: অদ্রাব্য কোন বস্তুকে কোন স্থির তরল বা বায়বীয় পদার্থে আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপে নিমজ্জিত করলে, বস্তুটি সম – আয়তন জল বা বায়ু অপসারিত করে এবং নিজে অপসারিত জল বা বায়বীয় পদার্থের ওজনের সমান ওজন হারায়।
আর্কিমিডিস সোনার মুকুটে খাদের পরিমাণ নির্ণয় করেছিলেন এভাবে, মুকুটের সমান ওজনের একটু সোনা তিনি একটি জলপূর্ণ পাত্রের মধ্যে ফেলে দেন। এর ফলে খানিকটা জল উপচে পড়ে এবং এই জলটুকু তিনি ওজন করেন। পরের বারে সোনার মুকুটটিকে তিনি জলভর্তি পাত্রে ফেলে দেন। এবারেও উপচে পড়া জলটুকু ওজন করেন। দেখা যায় প্রথম ও দ্বিতীয়বারে উপচে পড়া জলের ওজন বিভিন্ন।
এই থেকে তিনি সিদ্ধান্তে এলেন মুকুট খাঁটি সোনার তৈরি হলে দুই বারেই ঠিক একই পরিমাণ জল উপচে পড়তো। কিন্তু খাদ মেশানো থাকায় সমান ওজনের সোনা অপেক্ষা মুকুট আয়তনে কিছুটা বড় হয়েছে এবং তার ফলে জল খানিকটা বেশি ফেলে দিয়েছে। কী পরিমান খাদ মুকুটে মেশানো হয়েছিল দুবারের জলের ওজনের পার্থক্য থেকেই তা নির্ণয় করা হয়েছিল।
আর্কিমিডিস বিজ্ঞানের বড় বড় জটিল তত্ত্ব নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষায় ব্যস্ত থাকতেন। রাজা হিয়েরোর অনুরোধে তিনি জনসমাজের কল্যাণকর যেসব ছোটখাট যন্ত্র অবিষ্কার করেছেন তার মধ্যে পুলি বা কপিকল এবং লিভার অন্যতম। এগুলোর সাহায্যে স্টীমারে জাহাজে নৌকায় রেলগাড়িতে ও বড় বড় কারখানায় মাল ওঠানো নামানো এবং খুব ভারি জিনিসকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রাবার কাজ খুবই সহজভাবে করা যায়।
আরও পড়ুন: জনি ওয়েইসমুলার জীবনী
আরও পড়ুন: গোবর গোহ জীবনী
আরও পড়ুন: উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জীবনী
আরও পড়ুন: রণজিৎ সিং জীবনী
আরও পড়ুন: গোষ্ঠ পাল জীবনী
শুকনো জমিতে জলসেচের জন্য আর্কিমিডিস এক ধরনের প্যাঁচালো কৰ্ক স্ক্রু টদ্ভাবন করেছিলেন। পাম্প আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত জল নিষ্কাশনের জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার রা হত ৷ এই কর্কস্ক্রুর এক প্রান্ত জলে ডোবানো থাকে। আনত অবস্থায় এটি ঘুরতে কলে এর ভেতরের প্যাচানো পথে জল ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যায়।
গণিত বিষয়ে আর্কিমিডিসের আবিষ্কারগুলিও স্মরণীয় হয়ে আছে। বৃত্তের রিধি ও ব্যাসের অনুপাত নির্ণয় সমতল ক্ষেত্রের সমত্ব সম্বন্ধে তত্ত্ব নির্ণয়, নধিবৃত্তীয় অংশগুলির ক্ষেত্রফল নির্ণয় সমান ভূমি ও উচ্চতা বিশিষ্ট ত্রিভুজ ও নধিবৃত্তের অংশের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় ইত্যাদি বিজ্ঞান জগতে তার বিশেষ অবদান রূপে স্বীকৃত।
একবার দেশে যুদ্ধের সময় সামান্য আতস কাচকে আর্কিমিডিস অস্ত্ররূপে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কৌশল আবিষ্কার করে সকলকে বিস্মিত করে দিয়েছিলেন। রোমান সেনাপতি মার্সেলাস সৈন্যবাহিনী ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ে সাইরাকিউস আক্রমণ করেছিলেন। আর্কিমিডিস সেইসময় সরার মত ভেতরে গর্তওয়ালা বিরাট বিরাট আয়না এমনভাবে দেয়ালের গায়ে সাজিয়ে রাখলেন যে তাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে রোমানদের জাহাজগুলিতে আগুন ধরে যায়।
আর্কিমিডিস এর মৃত্যু: Archimedes’s Death
এছাড়াও সমর কৌশল সম্পর্কিত তার বিভিন্ন আবিষ্কার রোমান সৈন্যদের নানাভাবে পর্যুদস্ত করে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রোমান সৈন্যদের অস্ত্রাঘাতেই আর্কিমিডিস নিহত হন। সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ২১২ অব্দ। রোমান বাহিনী রাতের অন্ধকারে সাইরাকিউসের প্রাচীর টপকে শহরে ঢুকে পড়েছিল। তাদের নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসলীলার শিকার হন আর্কিমিডিস।
তিনি যখন বালির ওপর গণিত ও জ্যামিতি সংক্রান্ত বিষয়ে আঁকজোক করছিলেন সেই সময় রোমান সৈন্যরা তাকে হত্যা করে। যদিও রোমান সেনাপতি মার্সেলাস – এর আদেশ ছিল আর্কিমিডিসকে যেন হত্যা করা না হয়। মৃত্যুর পর আর্কিমিডিসকে মার্সেলাস রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহকারে সমাহিত করেন। তার আত্মীয় – স্বজনদের সঙ্গেও কোন প্রকার অমর্যাদাকর ব্যবহার করা হয়নি।
আরও পড়ুন: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ জীবনী
আরও পড়ুন: খান আবদুল গফফর খান জীবনী
আরও পড়ুন: ক্ষুদিরাম বসু জীবনী
আরও পড়ুন: অরবিন্দ ঘোষ জীবনী
আরও পড়ুন: বিনয় – বাদল – দীনেশ জীবনী