ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আম খান – জানুন আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: আম ভারতের জাতীয় ফল। আম ভারতের সমস্ত অঞ্চলে পাওয়া যায়। আম ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব স্থানে চাষ হয়ে থাকে। আমরা বাঙালি আর আম আমাদের অতি প্রিয় একটি ফল। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। ফলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। পাকা আম সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর। কাঁচা আমের আচার, আমসি, চাটনি ইত্যাদি হয় এবং পাকা আম থেকে আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি, আম-রস প্রভৃতি তৈরি হয়।

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আম খান – জানুন আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

আম অপছন্দ করেন এমম বাঙালির সংখ্যা খুব একটা চোখে পড়েন না। এমন মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না, যে আম খেতে ভালোবাসেন না। আম কাঁচা অথবা পাকা দুই ভাবে খাওয়া যায়। আবার আম রান্না করেও খাওয়া হয়ে থাকে। কাঁচা অথবা পাকা যে ভাবেই খাওয়া হোক না কেন তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে। নানান ক্ষেত্রে পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের গুণ আরও বেশি উপকারী হয়ে থাকে। আম আমাদের শরীর কে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন: জানুন আঙুর এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

আম কাঁচা অথবা পাকা যে আমই হোক না কেন লোভের চোটে অনেকেই বেশি পরিমানে খেয়েও ফেলেন৷ তাতে ভয় পাওয়ার বা চিন্তার করার কোনো কারণ নেই। আজকাল বহু আমই কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়।ক্যালশিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয় আম তাড়াতাড়ি পাকিয়ে ফেলার জন্য। এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহারের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বা আমাদের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এর থেকে শরীরে ক্লান্তি, অস্বস্তিবোধ, পেটের ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এই সব রাসায়নিক ব্যবহার করার ফলে ত্বকেরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আম খান - জানুন আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
Benefits And Nutritional Value Of Mango

আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:

১. কর্মশক্তি বৃদ্ধি করতে: আমে রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, যা কর্মশক্তি বা কাজে উৎসাহ প্রদানে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমিত পরিমাণ আম শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে তবে অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকর।এ তে নানান সমস্যা হতে পারে, কথায় আছে আম খেলে আমাশয়।

২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে: আমে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রােটিন, ভিটামিন-সি, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। দেহ তরল এবং কোষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগ পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস হচ্ছে তাজা আম। যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম বের হয়ে যায়। কাঁচা আম শরীরের সেই সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। কাঁচাআ মের পেকটিন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের চিকিৎসায় ও অত্যন্ত উপকারী। এবং ভিটামিন-সি, থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে আম।

আরও পড়ুন: পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

৩. ক্যানসার রােগ প্রতিরােধ: আমে থাকে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন-এ আর ভিটামিন-সি, যা শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্টস ক্যানসার রােগ প্রতিরােধ করতে সাহায্য করে। আম ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করে থাকে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, আমে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণ খাদ্য আঁশ থাকার ফলে, এটা কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা, লিউকেমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও ক্যারোটিন, আইসো-কেরোটিন, এস্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, গ্যালিক এসিড ইত্যাদি এনজাইম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা রোগ: আমের মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ চোখের জন্য বিশেষ উপকারী। এটা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন যা চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। শুধুমাত্র এক কাপ পাকা আম খেলে সারাদিনের ভিটামিন এর চাহিদার ২৫% পূরণ করে থাকে। এছাড়া চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

৫. শরীরকে ঠান্ডা ও সান স্ট্রোকের রোধ: আম পুড়িয়ে সরবত করে খেলে জল-তৃষ্ণা কমে ও গ্রীষ্মকালে সান স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে। আম শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। রােদ থেকে শরীরকে আম রক্ষা করে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খড় রৌদ্রে একটি আমের রসের সাথে সামান্য পরিমানে জল, এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ হয় এবং শরীর গরমের কারণে হওয়া স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতে কাঁচা আম ও জিরার মিশ্রণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৬. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে: আমে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে। এতে থাকা এনজাইম প্রোটিনকে ভাঙতে সাহায্য করে। আমে থাকা আঁশ হজমে এবং বর্জ্য ত্যাগ করতে সাহায্য করে। এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন: আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

৭. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে: আমে রয়েছে গ্লুটামাইন অ্যাসিড, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমে থাকা উচ্চ মাত্রার গ্লুটামাইন এসিড নামক এটি প্রোটিন মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী বাচ্চাদের আম খেতে দেয়া উচিত।

৮. অ্যালকালি রিজার্ভ: আমে প্রচুর মাত্রায় আয়রণ রয়েছে। আমে থাকা টার্টারিক এ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড শরীরে অ্যালকালি রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৯. পোড়া ও কাটাতে: আগুনে পুড়ে গেলে আমপাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিয়ে উপকার পাওয়া যায়। এবং কাটা স্থানে আমপাতা ও দূর্বা ঘাস বেটে লাগিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় ও তাড়াতাড়ি ঠিক হতে শুরু করে।

১০. ত্বকের সমস্যায়: আমের ক্কাথ, মধু আর দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে খানিকক্ষণ লাগিয়ে রাখলে ত্বক নরম হয়। আমে থাকা ভিটামিন ‘সি’ কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে যার ফলে ত্বক সতেজ ও টানটান হয়। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া আম ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা ব্রণের ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। আম ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

১১. বহুমূত্র রােগীদের (Dibetes): শুধু আম নয় আমের পাতাও বেশ উপকারী। বহুমূত্র রোগীদের ক্ষেত্রে আমের কয়েকটি কচিপাতা রাত্রে জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খেলে রােগের উপশম হয়। অথবা যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি ৫-৬টি আম পাতা জলে ধুয়ে একটি পাত্রে সেদ্ধ করে নিয়ে সারারাত ১ গ্লাস জলে ভিজিয়ে রেখে, সকালে এর ক্বাথ জলে ফেঁটে ছেকে নিয়ে পান করেন তাহলে এটা ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে বা বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: আতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

১২. অর্শ রােগ: আমের আঁটি গুঁড়াে করে দুধে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে অর্শ রােগ সারে।

১৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে: আমে অনেক ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আঁশ জাতীয় খাবার হজম ক্রিয়াতে সাহায্য করার ফলে তা দেহের বাড়তি ক্যালরি ক্ষয় করতে সাহায্য করে। এর ফলে শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আম খেলে ক্ষুধা কমে এবং কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

১৪. নানা রোগে আম: আম কয়েকটি রােগের পক্ষে বেশ উপকারী। যথা-কোষ্ঠবদ্ধতা, চোখের রােগ, যকৃতের রােগ, জীবানু সংক্রমণ, হৃদ-ঘাত, উদরাময়, কেশপতন, আমাশয়, শ্বেত প্রদর, মাসিক পীড়া, অর্শ, ভগন্দর, ন্যাবা রােগ, গর্ভিনী নারীর প্রাথমিক প্রভাত কালীন বমি বমি ভাব, প্লীহা রােগ, ঘামাচি প্রভৃতি।

১৫. হরমোন নিয়ন্ত্রণ: আমে রয়েছে উত্তেজক গুণাগুণ এবং একে ‘লাভ ফ্রুট’ও বলা হয়ে থাকে। এটা পুরুষের পুরুষত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এবং যৌনশক্তি বাড়াতে আমের গুরুত্বও রয়েছে। আমে প্রচুর ভিটামিন ‘ই’(১.১২ আই. ইউ ) থাকায় এটা সেক্স হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

১৬. রক্তশূন্যতা নিয়ন্ত্রণে: আমে প্রচুর মাত্রায় আয়রণ রয়েছে। আমের উচ্চমাত্রার আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। কাঁচা আমের ভিটামিন ‘সি’(২৭.৭০ আই. ইউ.) রক্তনালী সমূহের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে এবং নতুন রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। এতে করে রক্তস্বল্পতা রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।

আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Mango:

প্রতি ১০০ গ্রাম আমে আছে-

  • কার্বোহাইড্রেট – ১৭.০ গ্রাম
  • লােহা – ০.১৩ গ্রাম
  • প্রােটিন – ০.৫১ গ্রাম
  • খাদ্য আঁশ – ১.৮০ গ্রাম
  • সেলেনিয়াম – ০.৩
  • ফ্যাট – ০.২৭ গ্রাম
  • জিঙ্ক – ০.০৪ গ্রাম
  • জল – ৮১.৭ গ্রাম
  • ভিটামিন-এ – ৩৮৯৪ আই. ইউ
  • ভিটামিন-বি ১ – ০.০৫৮ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ১০.০০ মিলিগ্রাম।
  • ভিটামিন-বি ৩ – ০.১৬০ আই. ইউ
  • পটাসিয়াম – ১৫৬.০ মিলি গ্রাম
  • ভিটামিন-সি – ২৭.৭০ আই. ইউ
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৯.০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন-ই – ১.১২ আই. ইউ
  • সােডিয়াম – ২ .০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন-কে – ৪.২ আই. ইউ
  • ফসফরাস – ১১.০৭ মিলি গ্রাম
  • তাপশক্তি – ৭০ কিলাে ক্যালােরি
  • কপার – ০.১১০ মিলিগ্রাম

আরও পড়ুন: লিচুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

সতর্কতা: ডায়াবেটিস রােগীরা একদিন অন্তর এক ফালি আম খেতে পারেন, তার বেশি নয়। রেনাল ফেলিওর অর্থাৎ কিডনির সমস্যায় যারা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ মতাে আম খেতে পারেন।

Leave a Reply