বিপিনচন্দ্র পাল জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Bipin Chandra Pal Biography in Bengali. আপনারা যারা বিপিনচন্দ্র পাল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বিপিনচন্দ্র পাল এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
- বিপিনচন্দ্র পাল কে ছিলেন? Who is Bipin Chandra Pal?
- বিপিনচন্দ্র পাল জীবনী – Bipin Chandra Pal Biography in Bengali
- বিপিনচন্দ্র পাল এর জন্ম: Bipin Chandra Pal’s Birthday
- বিপিনচন্দ্র পাল এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Bipin Chandra Pal’s Parents And Birth Place
- বিপিনচন্দ্র পাল এর শিক্ষাজীবন: Bipin Chandra Pal’s Educational Life
- বিপিনচন্দ্র পাল এর প্রথম জীবন: Bipin Chandra Pal’s Early Life
- বিপিনচন্দ্র পাল এর কর্ম জীবন: Bipin Chandra Pal’s Work Life
- বিপিনচন্দ্র পাল এর রচনা: Written by Bipin Chandra Pal
- বিপিনচন্দ্র পাল এর মৃত্যু: Bipin Chandra Pal’s Death
বিপিনচন্দ্র পাল কে ছিলেন? Who is Bipin Chandra Pal?
বিপিনচন্দ্র পাল (৭ নভেম্বর ১৮৫৮ – ২০ মে ১৯৩২) প্রখ্যাত বাঙালি বাগ্মী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও লেখক। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তিনি অনলবর্ষী বক্তৃতা দিতেন, তার আহ্বানে হাজার হাজার যুবক স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বিপিনচন্দ্র পাল জীবনী – Bipin Chandra Pal Biography in Bengali
নাম | বিপিনচন্দ্র পাল |
জন্ম | 7 নভেম্বর 1858 |
পিতা | রামচন্দ্র পাল |
মাতা | নারায়ণী দেবী |
জন্মস্থান | পইল গ্রাম, হবিগঞ্জ জেলা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | রাজনীতিবিদ, লেখক, ভারতীয় স্বাধীনতা, আন্দোলনের কর্মী, বক্তা, সমাজ সংস্কারক |
মৃত্যু | 20 মে 1932 (বয়স 73) |
বিপিনচন্দ্র পাল এর জন্ম: Bipin Chandra Pal’s Birthday
বিপিনচন্দ্র পাল 7 নভেম্বর 1858 জন্মগ্রহণ করেন।
বিপিনচন্দ্র পাল এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Bipin Chandra Pal’s Parents And Birth Place
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৫৮ খ্রিঃ ৭ ই নভেম্বরে শ্রীহট্ট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রামচন্দ্র পাল। ছেলেবেলায় শ্রীহট্ট শহরে একজন মৌলভীর কাছে ও পরে উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে বিপিনচন্দ্র পড়াশুনা করেন।
আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী
আরও পড়ুন: মুকুন্দ দাস জীবনী
আরও পড়ুন: অতুলপ্রসাদ সেন জীবনী
আরও পড়ুন: শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী
আরও পড়ুন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী
বিপিনচন্দ্র পাল এর শিক্ষাজীবন: Bipin Chandra Pal’s Educational Life
১৮৭৪ খ্রিঃ প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েও স্কলারশিপ লাভ করেছিলেন। পরে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে দুবছর এবং কলকাতার চার্চ মিশনারী সোসাইটিতে একবছর পড়াশুনা করেন কিন্তু গণিতের জন্য আই.এ. পাশ করতে পারেন নি। কিন্তু পরিচিত মহলে সাহিত্যে ও ইংরাজি ভাষায় তাঁর জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কলকাতায় অধ্যয়নকালেই বিপিনচন্দ্র সংস্কারপন্থী ব্রাহ্ম আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
বিপিনচন্দ্র পাল এর প্রথম জীবন: Bipin Chandra Pal’s Early Life
১৮৭৭ খ্রিঃ শিবনাথ শাস্ত্রীর নিকট ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন। পরিণতিতে তাঁকে পিতার ত্যাজ্যপুত্র হতে হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ করতে না পেরে পুনরায় বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৭৯ খ্রিঃ বিপিনচন্দ্রের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি কটকের একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কাজ গ্রহণ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্য হেতু কিছুকাল পরে এই কাজ ছেড়ে দেন। পরে শ্রীহট্ট, কলকাতা, বাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানে শিক্ষকতা করেন। ১৮৮১ খ্রিঃ বোম্বাইয়ে এক ব্রাহ্ম বাল্য – বিধবাকে ব্রাহ্মমতে বিবাহ করেন। এই স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করেন।
বাঙ্গালোর থেকে কলকাতায় ফেরার সময় তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৮৮৭ খ্রিঃ মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসমিতির তৃতীয় অধিবেশনে বিপিনচন্দ্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকে অস্ত্র আইন প্রত্যাহারের দাবী সমর্থন করে বক্তৃতা করেন। ১৮৯৮ খ্রিঃ বৃত্তি পেয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়বার জন্য বিলাত গিয়ে একবছর অক্সফোর্ডে থাকেন। ভারতে ফিরে আসেন ১৯০১ খ্রিঃ। এখানে তিনি নিউইন্ডিয়া নামে একটি ইংরাজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তৎকালীন ভারতে যে সকল মনীষী জাতীয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেছিলেন, তাদের মধ্যে বিপিনচন্দ্র ছিলেন অন্যতম। তার জাতীয়তাবোধের সঙ্গে ছিল ধর্মবোধ এবং আধ্যাত্মিকতার সংযোগ।
বিপিনচন্দ্র পাল এর কর্ম জীবন: Bipin Chandra Pal’s Work Life
রাজনীতি ক্ষেত্রে বিপিনচন্দ্রের দীক্ষাগুরু ছিলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ। তাঁর বাগ্মিতা প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছিল। তিনি কংগ্রেসের প্রগতিশীল শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং নব্য বাংলার রূপায়ণে নেতৃত্ব দান করেছিলেন। বিশ শতকের প্রারম্ভের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা দেশে বৈপ্লবিক সংগঠন গড়ে ওঠে ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ আরম্ভ হয়। ১৮৫৭ খ্রিঃ ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই প্রথম ইংরাজ বিতাড়নের প্রচেষ্টা আরম্ভ হয়। কিন্তু সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর থেকে ক্রমাগত ভারতের জনসাধারণের মধ্যে স্বাধীনতার বাণী প্রচারিত হতে থাকে। সিপাহী বিপ্লব ছিল ভারতে প্রথম সশস্ত্র বিপ্লব। তা ব্যর্থ হয়েছিল।
প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্রাহ্মণযুবক মঙ্গলপান্ডে ব্যারাকপুরে অশ্বত্থবৃক্ষে ফাসির রজ্জু গলায় পরে আত্মোৎসর্গ করেন। সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হলেও তার প্রভাবে ভারতের দিকে দিকে ধ্বনিত হয়ে উঠল ঘুম ভাঙ্গার গান। পরাধীন ভারতবাসীর অন্তরে গুঞ্জরিত হয়ে উঠল স্বাধীনতার নান্দীপাঠ। এরপর থেকেই ভারতে নানাভাবে আরম্ভ হয়ে গেল মুক্তিসাধনা। সাহিত্যে ও দেশের ভাববাদে প্রচারিত হতে লাগল স্বাধীনতার আদর্শ। ঋষি বঙ্কিম রচনা করলেন আনন্দমঠ ৷ স্বামী বিবেকানন্দর প্রচারিত আদর্শবাদের মধ্যেও দেশের তরুণ সম্প্রদায় পেল স্বাধীনতার উদ্দীপনা। ভারতে সংগঠিত হল জাতীয় কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: সুনির্মল বসু জীবনী
আরও পড়ুন: শিবরাম চক্রবর্তী জীবনী
আরও পড়ুন: আশাপূর্ণা দেবী জীবনী
আরও পড়ুন: সুকুমার সেন জীবনী
আরও পড়ুন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী
এরই কিছুকাল পরে মহারাষ্ট্র ও বাংলাদেশে সংগঠিত হল বৈপ্লবিক গুপ্ত সমিতি। বাংলা দেশে গুপ্ত সমিতি ও বিপ্লববাদ প্রতিষ্ঠায় প্রথম হোতা শ্রী অরবিন্দ, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যারিস্টার পি.মিত্র, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রমুখ। এঁদেরই উদ্যোগে ও চেষ্টায় বাংলাদেশে ১৯০২ খ্রিঃ কলকাতায় প্রথম গুপ্ত সমিতি অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়। এর কয়েক বছর পরে শ্রী অরবিন্দ বরোদার চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় আসেন এবং নিজেকে সর্বতোভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করলেন।
লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের সৃষ্টি হল। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধব, কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, সখারাম গণেশ দেউসকর, অশ্বিনীকুমার প্রমুখ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বাংলাদেশে বয়কট আন্দোলন বা বিলাতী বর্জন আন্দোলন গড়ে তুললেন। সুরেন্দ্রনাথ এবং বিপিনচন্দ্র বজ্রনির্ঘোষে ঘুমন্ত বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুললেন। তাঁদের কন্ঠের জলদগম্ভীর মন্ত্র এবং অগ্নিময় ভাষণ সেদিন বাঙ্গালীর প্রাণে প্রাণে বিদ্যুৎ – শিহরণ জাগিয়ে তুলল।
তাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মানুষকে একেবারে যুদ্ধের উম্মাদনায় ক্ষিপ্ত করে তোলে ৷ চারদিকে আরম্ভ হল জনসভা, মিছিল ও বিলাতি কাপড়ের বহ্ন্যুৎসব। ক্রমশ ইংরাজ সরকার আরম্ভ করলেন দমন ও পীড়ন। ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে, অত্যাচার চালিয়ে তারা আন্দোলনকে বানচাল করবার চেষ্টা করলেন। এবারে বাংলাদেশে শুরু হল সরকারী দমন নীতির সঙ্গে বাংলার নির্ভীকতা ও আদর্শবাদের সংঘর্ষ। সুরেন্দ্রনাথ ও বিপিনচন্দ্রের সঙ্গে সেদিন শত শত স্বদেশী নেতা ও কর্মী বাংলাদেশের শহরে পল্লীতে বক্তৃতা করে স্বদেশীমন্ত্র ও বিলাতি বর্জন প্রচার করে বেড়াতে লাগলেন। রাজনৈতিক মতবাদের দিক থেকে বিপিনচন্দ্র ছিলেন পরিপূর্ণ স্বরাজবাদী।
তিনি বয়কট বা Passive resistance আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন। বাংলার বিলাতি বর্জন কর্মপদ্ধতির ওপরে এক প্রবল গণআন্দোলন গড়ে উঠল। একদিকে যেমন এই প্রকাশ্য স্বদেশী আন্দোলন বাংলায় সর্বত্র ব্যাপ্ত হতে লাগল অন্যদিকে সঙ্গোপনে আরম্ভ হয়ে গেল বৈপ্লবিক গুপ্ত সমিতির প্রসার। বাংলার সুরেন্দ্রনাথ তখন নিখিল ভারতের একচ্ছত্র নেতা। তিনি ভারতের সমস্ত প্রদেশকে জাগ্রত করলেন; কংগ্রেসের মধ্যে নিয়ে এলেন এবং ভারতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করলেন। তার আগে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে ভারতীয় চেতনা বলে কিছু ছিল না। প্রত্যেক প্রদেশ নিজ নিজ প্রদেশকেই স্বদেশ বলে মনে করত।
সমস্ত ভারতের কথা কেউ ভাবত না, নিখিল ভারতকে নিজের স্বদেশ বলে ধারণা করতে পারত না। সুরেন্দ্রনাথই তাঁর অলৌকিক প্রতিভা, দেশপ্রেম ও বাগ্মিতার দ্বারা প্রথম ভারতবর্ষে এই ভাবধারার সৃষ্টি করলেন। সমস্ত প্রদেশকে জাগ্রত করে, একত্র করে একই আদর্শে অনুপ্রাণিত করে নিখিল ভারতবাসীর মনে এক অখন্ড ভারতীয় চেতনা সৃষ্টি করলেন। তার নেতৃত্বের প্রভাব চলাকালীন সময়ে এল তার নেতৃত্বের বিরোধী এক শক্তি এবং ভাববাদ।
এই নতুন ভাববাদ সুরেন্দ্রনাথের ভাববাদ অপেক্ষা অধিক উগ্র, উত্তপ্ত ও অগ্রগামী। এই নতুন ভাববাদের হোতা হলেন তিনজন গণমান্য নেতা। এই ত্রি – নেতৃত্বের নাম লাল – বাল – পাল – এর ত্রিত্রয় (Trinity) অর্থাৎ পাঞ্জাবের লালা লাজপত রায়, মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক এবং বাংলার বিপিনচন্দ্র পালের নেতৃত্ব। এই নেতৃবৃন্দ সুরেন্দ্রনাথ ও তার অনুগামী দলকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের আখ্যা দিলেন মডারেট বা মধ্যপন্থী নরম দল বলে। নিজেদের স্বরূপকে তাঁরা ব্যাখ্যা করলেন এক্সট্রিমিস্ট বা চরমপন্থী দল বলে। এই লাল – বাল – পাল – পরিচালিত চরমপন্থী দলেরই নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন পরে শ্রী অরবিন্দ। চরমপন্থী দলেরই পরিপূর্ণ সাহায্য এবং উৎসাহ লাভ করে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব এবং বাংলাদেশে গুপ্তসমিতির আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করেছিল।
আরও পড়ুন: জীবনানন্দ দাশ জীবনী
আরও পড়ুন: সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনী
আরও পড়ুন: হােমার জীবনী
আরও পড়ুন: গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী
আরও পড়ুন: দান্তে আলিঘিয়েরি জীবনী
বস্তুতঃ বাংলাদেশে চরমপন্থী আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক, প্রচারক ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল ৷ চরমপন্থী তথা বিপ্লবপন্থীদের মুখপত্র বন্দেমাতরম পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৬ খ্রিঃআগস্ট মাসে। পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হন বিপিনচন্দ্র পাল। তার পরে সম্পাদক হন শ্রী অরবিন্দ। পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুবোধচন্দ্র মল্লিক, হরিদাস হালদার, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, চিত্তরঞ্জন দাশ, হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ প্রমুখ। শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় বিপিনচন্দ্র কাগজের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন।
ইতিমধ্যে মানিকতলা মুরারীপুকুরের বাগানে বোমার কারখানা আবিষ্কার হলে অন্যান্য বিপ্লবী নেতাদের সঙ্গে অরবিন্দও গ্রেপ্তার হলেন। ইংরাজ সরকার সকলের বিরুদ্ধে আরম্ভ করল রাজদ্রোহিতার মামলা। সেই সময় বিপিনচন্দ্র পুনর্বার বন্দেমাতরম সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অরবিন্দের মামলায় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিপিনচন্দ্র মৌন অবলম্বন করলে আদালত অবমাননার দায়ে কারাদন্ড ভোগ করেন। ১৯০৭ খ্রিঃ স্বদেশী ও স্বরাজের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বিপিনচন্দ্র মাদ্রাজে বক্তৃতা করেন। তার এই বক্তৃতাবলী সমগ্র দক্ষিণভারতে জাগরণের সৃষ্টি করেছিল।
পরের বছর তিনি পুনর্বার বিলাত যান। বিলাত অবস্থানকালে বিপিনচন্দ্র Swaraj এবং Indian Student নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। Swaraj পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর The Actiology of the Bomb Bengal প্রবন্ধের জন্য তিনি রাজরোষের কবলে পড়েন। বিলেতে তিনবছর অবস্থানের পর স্বদেশে ফিরে এলে বর্তমান মুম্বইতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯১৬ খ্রিঃ বাল গঙ্গাধর তিলক হোমরুল গঠন করলে বিপিনচন্দ্র পুনর্বার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি তিলকের সঙ্গে যোগ দেন।
১৯১৮ খ্রিঃ ভারতের শাসন সংস্কার বিষয়ে মন্টেগু চেমসফোর্ড রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পরের বছরে, ১৯১৯ খ্রিঃ বিপিনচন্দ্র একটি কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তৃতীয়বার বিলাত যান ৷ ১৯২১ খ্রিঃ গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন আরম্ভ করলে বিপিনচন্দ্র তার বিরোধিতা করেন এবং নিন্দিত হন। এরপর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বিপিনচন্দ্র মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী ছিলেন। স্ত্রী – পুরুষের সমানাধিকার এবং স্ত্রী শিক্ষা ও জাতীয় শিক্ষায় উৎসাহী ছিলেন। চিদম্বরম পিল্লাই তাকে ‘স্বাধীনতার সিংহ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
বিপিনচন্দ্র পাল এর রচনা: Written by Bipin Chandra Pal
বিপিনচন্দ্রের প্রতিভা ছিল সর্বতোমুখী। ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি সভ্যতা – সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় ছিল তার অনায়াস বিচরণ। তাঁর বিভিন্ন রচনা এবং বক্তৃতার মধ্যে এই সর্বতোমুখী প্রতিভার পরিচয় বিধৃত রয়েছে। ১৯১২ খ্রিঃ থেকে ১৯১৫ খ্রিঃ পর্যন্ত লেখাই ছিল তাঁর মুখ্য কাজ।
তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী হল — শোভনা, ভারত সীমান্তে রুশ, মহারানী ভিক্টোরিয়ার জীবনী, জেলের খাতা, নবযুগের বাংলা, সত্তর বৎসর (আত্মচরিত), চরিত্রচিত্র, সাহিত্য ও সাধনা, রাষ্ট্রনীতি, মার্কিনে চারিমাস, Indian Nationalism, Nationality and Empire, Swaraj and the present situation, The Basis of Social Reform, The soul of India, The New Spirit, Studies of Hinduism, Memoirs of My life and Time প্রভৃতি। নিউ ইন্ডিয়া ও বন্দেমাতরম ছাড়াও তিনি আরও অনেক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সেগুলি হল পরিদর্শক, দি হিন্দু রিভিউ, দি ডেমোক্র্যাট, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রভৃতি।
আরও পড়ুন: জন মিলটন জীবনী
আরও পড়ুন: উইলিয়ম শেক্সপীয়র জীবনী
আরও পড়ুন: হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন জীবনী
আরও পড়ুন: কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ টলষ্টয় জীবনী
আরও পড়ুন: মার্ক টোয়েন জীবনী
বিপিনচন্দ্র পাল এর মৃত্যু: Bipin Chandra Pal’s Death
১৯৩২ খ্রিঃ কলকাতায় বিপিনচন্দ্র পরলোক গমন করেন।