ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

হারম্যান জোসেফ মুলার জীবনী – Hermann Joseph Muller Biography in Bengali

Hermann Joseph Muller Biography in Bengali
Hermann Joseph Muller Biography in Bengali

হারম্যান জোসেফ মুলার জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Hermann Joseph Muller Biography in Bengali. আপনারা যারা হারম্যান জোসেফ মুলার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হারম্যান জোসেফ মুলার এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

হারম্যান জোসেফ মুলার কে ছিলেন? Who is Hermann Joseph Muller?

হারম্যান জোসেফ মুলার (২১ ডিসেম্বর ১৮৯০ – ৫ এপ্রিল ১৯৬৭) ছিলেন একজন মার্কিন জিনতত্ত্ববিদ, শিক্ষক ও নোবেল বিজয়ী। তিনি তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ক্ষতিকর শারীরিক ও জিনগত প্রভাবের উপর তার করা কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্পষ্টবাদী রাজনৈতিক বক্তা হিসেবেও তার সুনাম ছিল। মুলার পারমাণবিক যুদ্ধ ও পারমাণবিক পরীক্ষার তেজস্ক্রিয় প্রভাব সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।

হারম্যান জোসেফ মুলার জীবনী – Hermann Joseph Muller Biography in Bengali

নামহারম্যান জোসেফ মুলার
জন্ম21 ডিসেম্বর 1890
পিতাহারম্যান জোসেফ মুলার সিনিয়র
মাতাফ্রান্সেস (লিয়ন্স)
জন্মস্থাননিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তামার্কিন
পেশাজিনতত্ত্ববিদ, শিক্ষক
মৃত্যু5 এপ্রিল 1967 (বয়স 76)

bengaliportal

 

হারম্যান জোসেফ মুলার এর জন্ম: Hermann Joseph Muller’s Birthday

হারম্যান জোসেফ মুলার 21 ডিসেম্বর 1890 জন্মগ্রহণ করেন।

হারম্যান জোসেফ মুলার এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Hermann Joseph Muller’s Parents And Birth Place

আধুনিক জীববিজ্ঞানের অন্যতম পুরোধা পুরুষ হেরম্যান জোসেফ মুলার ১৮৯০ খ্রিঃ ২১ শে ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন ধাতুশিল্পের একজন ডিজাইনার। বাবা মা দুজনেই ছিলেন বিজ্ঞানে উৎসাহী। তাঁদের চেষ্টা ও যত্নে হেরম্যান বাল্যকাল থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহান্বিত হয়ে উঠেছিলেন।

আরও পড়ুন: জন ফ্রাঙ্কলিন এন্ডারস জীবনী

আরও পড়ুন: আর্থার কম্পটন জীবনী

আরও পড়ুন: রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী

আরও পড়ুন: সিগমুন্ড ফ্রয়েড জীবনী

আরও পড়ুন: শরৎ চন্দ্র পণ্ডিত দাদাঠাকুর জীবনী

হারম্যান জোসেফ মুলার এর শিক্ষাজীবন: Hermann Joseph Muller’s Educational Life

স্কুলে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের প্রতি হেরম্যানের আগ্রহ তার শিক্ষকদেরও বিস্মিত করত। বন্ধুদের নিয়ে সেই সময়েই তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিজ্ঞান ক্লাব। সেখানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করা হত। মজার ব্যাপার এই যে, জীবনবিজ্ঞান যে বিজ্ঞানের একটা বিশেষ শাখা, একথা একদম মানতে চাইতেন না হেরম্যান ৷

নিতান্ত অবজ্ঞার দৃষ্টিতেই এই বিষয়টাকে দেখতেন তিনি। ক্লাবেও ঠাই দেননি জীবনবিজ্ঞানকে। তিনি বলতেন, জীবনবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা আর হাতে ধরে জীবনটাকে নষ্ট করা একই কথা। স্কুলে বরাবরই ভাল ফল করতেন। চূড়ান্ত পরীক্ষাতে বৃত্তি নিয়ে পাশ করলেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলেন তখন তার বয়স সতেরো।

আগাগোড়া ছিলেন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের ভক্ত। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আকস্মিক ভাবেই তার মনোযোগ আকৃষ্ট হলো জীবন বিজ্ঞানের প্রতি। অধ্যাপক এডমন্ড উইলসন পড়াতেন জীববিজ্ঞান। তিনি ছিলেন গবেষকও। ফলে জীববিজ্ঞানের রহস্যময় দিকগুলি তিনি ক্লাশে এমনভাবে তুলে ধরতেন যে তার ক্লাশে ছাত্রছাত্রীদের ভিড় উপছে পড়ত ! হেরম্যান উইলসনের ক্লাশে প্রথম পরিচিত হলেন জেনেটিক্স বা প্রজনন বিদ্যা নামক জীববিজ্ঞানের রহস্যময় বিভাগটির সঙ্গে।

ফলে তার আবাল্য লালিত জীবন – দর্শনেরই আমূল পরিবর্তন ঘটে গেল। কিছুদিনর মধ্যেই হেরম্যান সিদ্ধান্ত নিলেন জীববিজ্ঞানের রোমাঞ্চকর বিভাগ জেনেটিক্স নিয়েই গবেষণা করবেন। অধ্যাপক উইলসন মূলত: ছিলেন সাইটোলজিস্ট। কোষতত্ত্বের গবেষণা করে তিনি এক মহৎ সত্যকে আবিষ্কার করেছিলেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জেনেটিক্সের উদ্ভাবক যোহান মেন্ডেলের তাত্ত্বিক উপাদানের কাজের সঙ্গে জনন কোষের নিউক্লিয়াসে ক্রোমোসোমের কাজের সাদৃশ্য রয়েছে। এবিষয়ে গবেষণা করবার জন্য ছাত্রছাত্রীদেরও তিনি উৎসাহিত করতেন। হেরম্যান স্থির করলেন তিনি মেন্ডেলের বংশগতির এককের পরিচয় লাভ করবেন উইলসনের ধারণাকে অনুসরণ করে।

কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গড়ে তুললেন জীববিজ্ঞান ক্লাব। যেসব ছাত্রছাত্রী জীববিজ্ঞানে উৎসাহী এবং বংশগতি সম্পর্কে আগ্রহী বিশেষ করে তাদের নিয়েই গড়ে উঠল এই জীববিজ্ঞান ক্লাব। ১৯১০ খ্রিঃ কুড়ি বছর বয়সে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেরম্যান স্নাতক হয়ে বেরলেন।

সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগে আর একজন প্রথিতযশা অধ্যাপক গবেষক ছিলেন। তাঁর নাম টমাস হান্ট মর্গান। ড্রসোফিল নামে একপ্রকার লালচক্ষু ফলারে মাছি নিয়ে তিনি গবেষণা করতেন। এই মাছিদের বৈশিষ্ট্য হল, এরা সাধারণত : ফলের ওপরেই জীবনযাপন করে। বংশবিস্তারও করে খুব তাড়াতাড়ি। অধ্যাপক মর্গান এই মাছিদের নিয়ে যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন তা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে বিস্ময় উৎপাদন করেছিল।

লিঙ্গবাহিত বংশগতি সম্পর্কে মর্গানের পরীক্ষা ও ফলাফল জেনেটিক্স শাখায় সম্ভাবনাময় অবদান হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। লালচক্ষু ড্রসোফিলদের মধ্যে শুভ্রচক্ষু স্ত্রী ড্রসোফিলাদের আবিষ্কার করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন জীবনের গুণ বা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াতেও সম্ভব। অধ্যাপক মর্গান মেতে ছিলেন ড্রসোফিলা মাছিদের নিয়ে গবেষণায়।

তখনো কেউ বুঝতে পারেনি যে জীব বিজ্ঞানের এই সাধকের নীরব সাধনায় রয়েছে এক মহাবিপ্লবের সম্ভাবনার ইঙ্গিত। যার সূত্র ধরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন: জনি ওয়েইসমুলার জীবনী

আরও পড়ুন: গোবর গোহ জীবনী

আরও পড়ুন: উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জীবনী

আরও পড়ুন: রণজিৎ সিং জীবনী

আরও পড়ুন: গোষ্ঠ পাল জীবনী

হারম্যান জোসেফ মুলার এর কর্ম জীবন: Hermann Joseph Muller’s Work Life

অধ্যাপক মর্গান যখন নিজের পরীক্ষা – নিরীক্ষা নিয়ে একের পর এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে চলেছেন সেই সময় মুলার এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন। ফলে নতুন গতি লাভ করল মর্গানের গবেষণা। মর্গানের গবেষণার সঙ্গে মুলার ছাড়াও তাঁর আরও দুই ছাত্র ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। তারা হলেন স্টারটেভান্ট এবং ব্রিজেস। এঁদের সহযোগিতায় মর্গানের জিন সম্পর্কিত গবেষণা ক্রমেই উচ্চতর মাত্রা লাভ করতে লাগল।

ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৯১৯ খ্রিঃ মুলারের বংশগতি সংক্রান্ত প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হল। তিনি তাঁর গবেষণায় দেখালেন যে, জিন বা বৈশিষ্ট্যের বাহক যে উপাদানের জন্য ড্রসোফিল মক্ষিকার পাখার গঠনের বক্রতা তার অস্তিত্ব রয়েছে ড্রসোফিলের চতুর্থ ক্রোমোেসমের মধ্যে। এইভাবেই মুলার আরম্ভ করলেন জিনের নানা রহস্য উন্মোচনের কাজ।

কিছুদিনের মধ্যেই চারজনে মিলে জেনেটিক্সের ওপরে একটি বই রচনা করলেন। বইয়ের নাম দেওয়া হল The Mechanism of Mendelian Heredity. বইটি প্রকাশিত হল ১৯১৫ খ্রিঃ। বইতে যেসব বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হল, সেগুলো হল: ১. সবকটি জিনই অভিন্ন সম্পর্ক কারক বিন্যাসে একই রেখায় বিন্যস্ত। ২. সমস্ত জিনের অবস্থানই ক্রোমোসমে এবং সম্পর্ককারক বিন্যাস – এর দ্বারাই গঠিত হয়। ৩. যে কোন সজীব পদার্থের একটি ক্রোমোসমে রয়েছে নানা সম্পর্ক কারক বিন্যাস।

যেই সম্ভাবনার স্পষ্ট আভাস নিয়ে বইটি আত্মপ্রকাশ করল তা সমাদৃত হবার মত পরিবেশ তখনো বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। কেননা, জেনেটিক্সের সবেমাত্র যাত্রাশুরুর কাল তখন। জীবনবিজ্ঞানের এই শাখার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে তখনো সম্যক ধারণা গড়ে ওঠেনি। বই প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯১৫ খ্রিঃ মুলার যোগ দিলেন বিখ্যাত রাইস ইনটিটিউটের জীববিজ্ঞান বিভাগে ৷

এখানে এসেও শুরু করলেন ড্রসোফিলের জিন – সংক্রান্ত গবেষণা। একবছর পরেই ড্রসোফিল জেনেটিক্সের ওপরে দ্বিতীয় গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন মুলার। এই গবেষণায় তিনি দেখালেন, প্রাকৃতিক ক্রিয়ায় পরিবর্তিত জিন নিয়ে ড্রসোফিল পিতামাতা যখন নতুন সম্ভানসন্ততির জন্ম দেয় তখন বংশগতির সাধারণ সূত্রের বাইরে এমন এক বংশধারা গড়ে ওঠে যার সম্পর্কে গাণিতিক বিচারে কোন আগাম মতামত প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

এই গবেষণা মুলারকে ডক্টরেট ডিগ্রি এনে দিল। মিউটেশন বা জিনের প্রাকৃতিক গুণগত পরিবর্তনের প্রথম হদিশ পেয়েছিলেন হল্যান্ডের এক অখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তাঁর নাম হুগো ডি ভ্রিস। তিনি থাকতেন আমস্টারডাম শহরের অদূরে হিলভারসান নামক এক জায়গায়। গবেষণার প্রয়োজনে সেখানে তিনি সন্ধ্যামণি ফুলের বাগান করেছিলেন। একদিন সকলে তার নজরে পড়ে কয়েকটি সন্ধ্যামণির গায়ে ঘটেছে আকস্মিক পরিবর্তন।

এই পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান করবার জন্য তিনি গবেষণায় প্রবৃত্ত হয়ে ১৯০১ খ্রিঃ আবিষ্কার করেন মিউটেশান তত্ত্ব। The Mutation theory এই নামে ১৯০১ খ্রিঃ তিনি একটি বইও প্রকাশ করেন। বইতে তিনি তুলে ধরেছেন পরিবেশগত পরিবর্তন ও বংশগতির মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সম্পর্কের আভাস।

এইভাবেই ডি ভিসের হাতে হয়েছিল মিউটেশন তত্ত্বের গোড়াপত্তন। অবশ্য ইতিপূর্বে, উনিশ শতকের আশির দশকে এই সম্পর্কে একটা অনুমানের সূত্র ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ জীববিজ্ঞানী ল্যামার্ক। তিনি এনোথেরা লামার্কিয়ানা গাছটি, সেই সময়ে এই গাছটি ছিল অজ্ঞাতনামা, আমেরিকা থেকে ফ্রান্সে এনে তার মধ্যে বৃদ্ধিগত আকস্মিক একটা পরিবর্তন লক্ষ করেছিলেন।

আমেরিকাতে গাছটির ছিল স্বাভাবিক বৃদ্ধি। ফ্রন্সের মাটির সংস্পর্শে এসে সেই গাছ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিলাভ করেছিল। মিউটেশনের বিষয়ে পূর্বাপর সমস্ত খবরাখবর সংগ্রহ করে মুলার এই বিষয়ের ওপরেই গভীর গবেষণা আরম্ভ করলেন। অসংখ্য জিজ্ঞাসা তখন পাক খাচ্ছে তাঁর মাথায়। জিনের মধ্যে এই আকস্মিক অথচ স্থায়ী পরিবর্তন কেন ঘটে, কেন তা জিন মাধ্যমে পরম্পরাক্রমে বংশধারায় প্রসারিত হয় ? পরিবেশগত পরিবর্তনে জিনের পরিবর্তনই বা ঘটে কিভাবে ? মিউটেশনের প্রকৃতিই বা কি ? পরিবেশগত পরিবর্তন কেন জীবনের বৈশিষ্টো ব্যাপক কোন পরিবর্তন ঘটায় না ? কেনই বা জিনের সামান্য পরিবর্তন জনন কোষের মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমে পরিবাহিত হয় ? সমস্ত জিজ্ঞাসারই উত্তর পেয়ে গেলেন এক সময়ে মুলার তার দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে।

আর এই সাফল্যই মূলারকে করে তোলে জীববিজ্ঞানের অগ্রপথিক। মুলারের মতে, একক একটি জিনের ওপরে কাজ করে তার প্রাকৃতিক পরিবর্তন পরিমাপ করা হল ভয়ানক কঠিন একটি কাজ। এই শক্ত কাজটিরই সমাধান করেছিলেন মুলার ১৯২৭ খ্রিঃ। তিনি বিশ্ববিজ্ঞানকে দেখালেন, এক্স – রশ্মির বিকিরণের প্রভাবেই জিনের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। মুলার তার এই বিশ্ববিখ্যাত পরীক্ষাটি করেছিলেন ড্রসোফিল – এর এক বিশেষ প্রজাতির ওপরে। এটির নাম ড্রসোফিলা লোনোেগস্টার।

এই বিশেষ প্রজাতির মাছির ওপরে এক্স – রশ্মি ব্যবহার করে তিনি দেখলেন জিনের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এইভাবেই মুলার বিশ্বে প্রথম বাইরে থেকে জিনের ওপরে শক্তি প্রয়োগ করে কৃত্রিম উপায়ে বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন এনে তার পরিমাণগত পরিমাপকে সম্ভব করলেন। মুলারের গবেষণার সহযোগী ছিলেন আর এক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী আন্টেনবার্গ। তারা যুগ্মভাবে গবেষণা করে পরের বছরেই,

১৯২৮ খ্রিঃ দেখালেন, এক্স – রশ্মির বিকিরণসঞ্জাত শক্তির প্রভাবে ক্রোমোেসমের আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে। তিনি আরও দেখালেন, এক্স – রশ্মির প্রয়োগে কোষের নিউক্লিয়াসের ক্রোমোসমগুলির স্থান পরিবর্তন বেড়ে যায়। তবে এক্স – রশ্মির বিকিরণ কোষের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এর ফলে ক্রোমোেসমের একটি অংশ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

মুলার ও আন্টেনবার্গের পরীক্ষা – নিরীক্ষা ড্রসোফিলা মক্ষিকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে এক্স – রশ্মির বিকিবণের ফল অন্যান্য সব্জীব পদার্থের কোষে কি ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে সেই সম্পর্কে তখন কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। ১৯২২ খ্রিঃ মুলার সেই সময় পর্যন্ত জিন নিয়ে যত কাজ হয়েছে তার একটি ধারাবিবরণী তৈরী করেছিলেন।

১৯২৭ খ্রিঃ তিনি সেই বিবরণীর সঙ্গে নিজের পরীক্ষার ক্রম অনুযায়ী বিবরণ নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রবন্ধটির নাম দেন The Artificial Trans mutation of the Gene I মুলারের এই প্রবন্ধ বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলের প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

মুলার তার বিশ্ববিখ্যাত প্রবন্ধটিতে জানিয়েছেন (১) প্রাকৃতিক প্রভাবে জিনের বৈশিষ্ট্যের একটা আকস্মিক পরিবর্তন সাধিত হয়। অনুরূপ ভাবে বিকিরণের প্রভাবেও জিনের বৈশিষ্ট্যের স্বতঃস্ফুর্ত পরিবর্তন ঘটে থাকে। (২) বিকিরণের মাত্রার ওপরে পরিবর্তনের হার নির্ভরশীল। বিকিরণের মাত্রা অস্বাভাবিক রকমের বাড়ানো হলে, পরিবর্তনের হারও সেইভাবে বেড়ে যাবে। প্রাকৃতিক প্রভাবে স্বতঃস্ফুর্ত পরিবর্তন থেকে এই হার বহুগুণ বেশি। (৩) বিকিরণের স্পর্শহীন ড্রসোফিলের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্ত প্রাকৃতিক পরিবর্তনের হার প্রতি দশ হাজারে আট।

আরও পড়ুন: ভি.আই. লেনিন জীবনী

আরও পড়ুন: বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস জীবনী

আরও পড়ুন: মার্টিন লুথার কিং জীবনী

আরও পড়ুন: জওহরলাল নেহেরু জীবনী

আরও পড়ুন: মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জীবনী

অপর দিকে মোটামুটি মাত্রা অর্থাৎ আড়াই হাজার রন্টগেন রশ্মি প্রয়োগে ড্রসোফিলায় জিনের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন আট শতাংশ। বিকিরণের মাত্রা যদি আরও বাড়ানো হয় পরিবর্তনের হারও তেমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২৮ খ্রিঃ আর একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন মুলার। সেখানে তিনি দেখালেন এক্স – রশ্মির বদলে গামা রশ্মির বিকিরণ ঘটিয়েও জিনের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটানো যায়।

একই সময়ে এফ.বি. হানসন এবং এফ . এম . হেস নামক দুজন বিজ্ঞানী স্বতন্ত্রভাবে একই বিষয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁদের গবেষণা থেকে জানা গেল, জন্তুদের অণ্ডকোষে গামা রশ্মি ছাড়াও নিউট্রন বা অন্য কোনও শক্তিশালী বিকিরণের দ্বারাও জিনের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে থাকে।

মুলার সহ অন্যান্য খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে জানা যায়—

(১) উচ্চশক্তিসম্পন্ন বিকিরণের প্রভাবে যে কোনও জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জিনের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে।

(২) শতকরা ৯৯ টি বিকিরণই কোষের পক্ষে ক্ষতিকর।

(৩) সব্জীব পদার্থের পরিবর্তিত জিন তার স্বাভাবিকতা হারায়।

(৪) পরিবর্তিত জিনের বৈশিষ্ট্য যে সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বহু ক্ষেত্রেই বংশগতিতে কোন এক সময়ে পরিবর্তন বিশেষ গুণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

(৫) পরিবর্তিত জিনের সংখ্যা বিকিরণের মাত্রার হারের ওপর নির্ভরশীল নয়। এই কারণেই জিন প্রভাবকারী বিকিরণের ফল ক্রমবর্ধমান হতে বাধ্য।

(৬) বিকিরণের কোন মাত্রা জিনের ওপরে কোন প্রভাব ফেলবে না অর্থাৎ জিনের পরিবর্তনকারী বিকিরণের সর্বনিম্নমাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব হয় না। মুলারের গবেষণার সূত্র ধরে এভাবেই জিন গবেষণায় মিউটেশন একটি প্রধান সূত্র হয়ে ওঠে।

হারম্যান জোসেফ মুলার এর পুরস্কার ও সম্মান: Hermann Joseph Muller’s Awards And Honors

মুলারের গবেষণা প্রবন্ধের গুরুত্ব তার সমকালে নিরূপন সম্ভব না হলেও দীর্ঘ উনিশ বছর পরে বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল তা অনুধাবন করতে সক্ষম হলেন। ১৯৪৬ খ্রিঃ মুলারের মিউটেশান গবেষণাকে স্বীকৃতি জানিয়ে অর্থাৎ এক্স রশ্মির বিকিরণে জিনের বৈশিষ্ট্যের আকস্মিক পরিবর্তন আবিষ্কারের জন্য নোবেল কমিটি তাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করলেন। মুলারের বয়স তখন ছাপ্পান্ন।

বিজ্ঞানী হিসেবে মূলার যেমন ছিলেন বড় মাপের প্রতিভা তেমনি মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন হৃদয়বান ও উদার প্রকৃতির। তিনি বারবার উচ্চারণ করেছেন, জিন গবেষণা যেন বিশ্বমানবের কল্যাণেই নিবেদিত হয়। যখন মুলার নোবেল পান, সেই সময়ে তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক। আমৃত্যু তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন: গণেশ ঘোষ জীবনী

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী

আরও পড়ুন: জোসেফ স্তালিন জীবনী

আরও পড়ুন: মাও সেতুং জীবনী

আরও পড়ুন: বারীন্দ্রকুমার ঘোষ জীবনী

হারম্যান জোসেফ মুলার এর মৃত্যু: Hermann Joseph Muller’s Death

জীববিজ্ঞানের অন্যতম অগ্রপথিক মুলার ১৯৬৭ খ্রিঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Reply