Premendra Mitra Biography In Bengali: প্রেমেন্দ্র মিত্র এর জীবন পরিচয়
প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রখ্যাতকবি, সার্থক ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্রকার রূপে সুখ্যাত হলেও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক রূপে স্বীকৃত।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Premendra Mitra
তার আদিনিবাস চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুর গ্রামে। পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র। তিনি কর্মসুত্রে কাশীতে বসবাসকালে, সেখানে প্রেমেন্দ্রর জন্ম হয়। অল্প বয়সেই মাতৃহারা হন। ফলে শৈশব কাটে মির্জাপুরে মামার বাড়িতে।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর শিক্ষাজীবন: Premendra Mitra’s Educational Life
১৯২০ খ্রিঃ কলকাতার সাউথ সুবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা ও কলকাতার কয়েকটি কলেজে ও পরে শ্রীনিকেতনে ভর্তি হন। কিন্তু বাঁধা ধরা শিক্ষা ভালাে লাগেনি বলে লেখাপড়ায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর প্রথম জীবন: Premendra Mitra’s Early Life
অল্প বয়স থেকেই সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। সতের বছর বয়সে রচিত বেনামী বন্দর কবিতা উত্তরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং কবিখ্যাতি লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু হয় সাহিত্যের অঙ্গনেই। ডঃ দীনেশচন্দ্র সেনের সহায়তায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামতনু রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যােগ দেন। এরপরে সম্পাদকীয় সহযােগী হিসেবে কাজ করেন সুভাষচন্দ্রের বাংলার কথা ও ফরােয়ার্ড পত্রিকায় এবং বঙ্গশ্রী কাগজে।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর কর্ম জীবন: Premendra Mitra’s Work Life
কিছুকাল বিজ্ঞাপনের কপি – লেখকহিসেবে কাজ করেছেন বেঙ্গল ইমিউনিটিতে। এরপরে যুক্ত হন চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে। একটি ফিল্ম কোম্পানির পাবলিসিটি অফিসার হিসেবে কিছুকাল কাজ করেন। এই সময়েই প্রখ্যাত পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়ার অনুরােধে রিক্তা ছবির চিত্রনাট্য রচনা করেন। এই ছবির সাফল্যলাভে উৎসাহিত হয়ে চিত্রনাট্য রচনাকে কিছুকাল পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্রে চাকরি নিয়ে কিছুকাল বম্বেতেও ছিলেন।
আরো পড়ুন: গিরিশচন্দ্র ঘোষ এর জীবন পরিচয়
কল্লোল পত্রিকাকে কেন্দ্র করে প্রগতিশীল একদল তরুণ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সাহিত্য আন্দোলন সৃষ্টি করলে, প্রেমেন্দ্র কল্লোল পত্রিকার কবি হিসেবেই সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পরবর্তীকালে কল্লোলযুগের অন্যতম প্রধান সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব রূপে স্বীকৃত হন। পনেরাে – ষােল বছর বয়সে শ্রমজীবীদের পত্রিকা সংবর্ততে ১৯২৭ খ্রিঃ তাঁর লেখা পাক উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর রচনা: Written by Premendra Mitra
বাংলার সায়েন্স ফিকসন রচনার সূত্রপাত তিনিই করেন। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের এই শাখাটি বর্তমানে অনেক বলিষ্ঠ লেখকের আবির্ভাবে যথেষ্ট পুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের স্মরণীয় সৃষ্টি শ্রীঘনশ্যাম দাস ওরফে ঘনাদা চরিত্র। অন্য কোন রচনা না লিখলেও একমাত্র ঘনাদা চরিত্র সৃষ্টির জন্যই তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে স্থায়ী আসন লাভ করতেন। ঘনাদাকে নিয়ে তার প্রথম গল্প মশা প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ খ্রিঃ।
ঘনাদার অনুরূপ আরও তিনটি চরিত্র তিনি পরবর্তীকালে সৃষ্টি করেন। এগুলাে হল, বিজ্ঞান গবেষক মামাবাবু, রহস্য – সন্ধানী পরাশর বর্মা এবং ভূত – শিকারী মেজোকর্তা। ঘনাদার মত প্রবাদ প্রতিম না হলেও এই চরিত্রগুলােও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল।
আরো পড়ুন: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবনী
পত্রিকা সম্পাদনার কাজেও প্রেমেন্দ্র মিত্রর যশ ও দক্ষতা ছিল। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে নিরুক্ত, বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে কবিতা পত্রিকা এবং রঙমশাল, কালিকলম, নবশক্তি প্রভৃতি সম্পাদনা করেন। কিছুকাল শিশু মাসিক পক্ষীরাজ সম্পাদনা করেন।
তার অনূদিত হুইটম্যানের কবিতা, লরেন্সও সমারসেট মম – এর গল্প প্রশংসিত গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। প্রথম গান লেখেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুরােধে। যদিভাল নালাগেতাে দিও না মন’কানন দেবীর কণ্ঠের এই জনপ্রিয় গানটির রচয়িতা তিনিই। কৃত্তিবাস ভদ্র ছদ্মনামেও তিনি লেখালেখি করেছেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র সমাধান ১৯৪৩ খ্রিঃ মুক্তি পায় ও খ্যাতি অর্জন করে। সব মিলিয়ে চোদ্দটি ছবি তিনি পরিচালনা করেন। তার মধ্যে ময়লা কাগজ বিশেষ উল্লেখযােগ্য।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর পুরস্কার ও সম্মান: Premendra Mitra’s Awards And Honors
রচিত গ্রন্থের সংখ্যা দেড়শতাধিক। ছােটদের ও বড়দের পদ্য ও গদ্য রচনা সমান দক্ষতায় লিখতে সক্ষম ছিলেন বলে সব্যসাচী লেখক রূপে আখ্যাত হতেন। বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। সাগর থেকে ফেরা কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৫৭ খ্রিঃ আকাদেমি পুরস্কার ও ১৯৫৮ খ্রিঃ রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৫৭ খ্রিঃ আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে তিনি বেলজিয়াম যান। এছাড়াও সােভিয়েত রাশিয়া, ইউরােপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন। পদ্মশ্রী ও দেশিকোত্তম উপাধিতে ভূষিত হন।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর মৃত্যু: Premendra Mitra’s Death
১৯৮৮ সালের, ৩রা মে প্রেমেন্দ্র মিত্র পরলোকগমন করেন।