রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্মস্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Rakhaldas Bandyopadhyay
ঔপন্যাসিক তথা সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিমান রাখালদাস (Rakhaldas Bandyopadhyay) বাঙ্গালীর ইতিহাসে ঐতিহাসিক মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন। মানুষের ঐতিহাসিক প্রগতির মূক নিদর্শন ও জড়েরমুখ দিয়ে ইতিহাসের ঘটনাবলীকে ঔপন্যাসের মাধ্যমে প্রকাশ করে রাখালদাস বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিচিত্র দিগদর্শনকে উপস্থিত করতে পেরেছিলেন। ইতিহাস আলােচনার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তিনি যে কয়খানি উপন্যাস রচনা করেছেন তা একাধারে উপন্যাস ও নৈর্ব্যত্তিক ঐতিহাসিক চিত্র। বস্তুতঃ তাঁর হাতেই ঐতিহাসিক উপন্যাস ভারতবর্ষে বিশেষতঃ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মর্যাদা লাভ করেছে। ১৮৮৫ খ্রিঃ ১২ ই এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে রাখালদাসের জন্ম। তার পিতা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরে ওকালতি করতেন।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর শিক্ষাজীবন: Rakhaldas Bandyopadhyay’s Educational Life
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুল থেকে তিনি ১৯০০ খ্রিঃ এন্ট্রাস পাশ করেন। প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হবার আগেই তখনকার সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর এই কলেজ থেকে ১৯০৩ খ্রিঃ এফ.এ পাশ করেন। এই সময়ে পিতামাতার মৃত্যু এবং নানা বৈষয়িক ঝামেলার জন্য পড়াশােনা বন্ধ থাকে। এরপর ১৯০৭ খ্রিঃইতিহাসে অনার্স সহ বি.এ. এবং ১৯১০ খ্রিঃ এম.এ পাশ করেন।
আরো পড়ুন: কালীপ্রসন্ন সিংহ এর জীবন পরিচয়
বি.এ পরীক্ষা পাশ করার আগেই রাখালদাস (Rakhaldas Bandyopadhyay) প্রাচীন লেখ ও মুদ্রা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে খাতি লাভ করেন। ১৯০৬ খ্রিঃ বঙ্গীয় এশিয়াটিক সােসাইটি পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যা প্রাচীন পণ্ডিত ভিনসেন্ট ও স্মিথ কর্তৃক প্রশংসিত হয়।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর কর্ম জীবন: Rakhaldas Bandyopadhyay’s Work Life
১৯১০ খ্রিঃ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে সহকারী থেকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট হন, পরে অধ্যক্ষের পদ লাভ করেন। কৈশাের থেকেই রাখালদাস (Rakhaldas Bandyopadhyay) ভারতীয় ইতিহাসের অনুরাগী পাঠক ছিলেন এফ. এ পড়বার সময়েই তিনি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্লক সাহেবের সাহচর্যে আসেন এবং প্রাচীন লিপি পাঠে দক্ষতা লাভ করে। এই শিক্ষা তার কর্মজীবনে সবিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
১৯২২ খ্রিঃ গােড়ার দিকে রাখালদাস কর্মসূত্রে সিন্ধু দেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদারাে পরিদর্শনে যান এবং এখানে খনন কার্যের মাধ্যমে মহেঞ্জোদারাের সুপ্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার রাখালদাসের জীবনের অবিনশ্বর কীর্তি।
আরো পড়ুন: মহর্ষি বাল্মীকির জীবন পরিচয়
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার ধারক। পুরাতন লেখাদির পাঠ ও ব্যাখ্যা, সুপ্রাচীন ও মধ্যযুগীয় মুদ্রার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নির্ণয়, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্প নিদর্শনের মূল্য বিচার, লেখ ও মুদ্রাদির সাহায্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন যুগের প্রামাণিক ইতিহাস রচনা প্রভৃতি ছাড়াও তার কীর্তির স্বাক্ষর রয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় পটভূমিকায় লিখিত মনােরম উপন্যাসে।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর রচনা: Written by Rakhaldas Bandyopadhyay
১৯২৬ খ্রিঃ বিভাগীয় কাজে মতভেদের কারণে চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯২৮ খ্রিঃ থেকে রাখালদাস (Rakhaldas Bandyopadhyay) বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপকের চাকুরি গ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততার মধ্যেও গ্রন্থ ও প্রবন্ধাদি রচনায় তার বিরাম ছিল না। তার প্রবন্ধাদি বঙ্গীয় এশিয়াটিক সােসাইটি পত্রিকা, বিহার রিসার্চ সােসাইটি পত্রিকা, Epigraphia Indica, লন্ডনের রয়েল এশিয়াটিক সােসাইটি পত্রিকা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, Indian Antiquary, Annals of Bhandarkar Oriental Research Institute, ভারতবর্ষ, প্রবাসী ইত্যাদি ইংরাজি ও বাংলা সাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাঁর রচনাবলীর মাধ্যমে যে বহু মূল্যবান তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন তার মূল্য অপরিসীম। মুদ্রাতত্ত্বে সুপণ্ডিত রাখালদাস মুদ্রা বিষয়ে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন। তার প্রাচীন মুদ্রাগ্রন্থটি প্রকাশের আগে বাংলা বা ইংরাজি ভাষায় এই বিষয়ের ওপর অপর কোন গ্রন্থ ছিল না। রাখালদাস রচিত অন্যান্য গ্রন্থ দুই খণ্ডে বাংলার ইতিহাস, পাষাণের কথা, ত্রিপুরীর হৈহয় জাতির ইতিহাস ; উড়িষ্যার ইতিহাস, বাঙ্গালীর ভাস্কর্য, শশাঙ্ক, ধর্মপাল, করুণা, ব্যতিক্রম, অসীম, পক্ষান্তর, অনুক্রম, The Origin of Bangali Script, Palas of Bengal প্রভৃতি।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যু: Rakhaldas Bandyopadhyay’s Death
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে এপ্রিল রাখালদাসের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে।