ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

সান ইয়াৎ-সেন জীবনী – Sun Yat-sen Biography in Bengali

Sun Yat-sen Biography in Bengali
Sun Yat-sen Biography in Bengali

সান ইয়াৎ-সেন জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Sun Yat-sen Biography in Bengali. আপনারা যারা সান ইয়াৎ-সেন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সান ইয়াৎ-সেন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

সান ইয়াৎ-সেন কে ছিলেন? Who is Sun Yat-sen?

সান ইয়াত সেন (১২ নভেম্বর ১৮৬৬ – ১২ মার্চ ১৯২৫) চীন দেশের নেতা ছিলেন। তিনি সেদেশের মানচু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়ে ছিলেন। তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় মানচু রাজবংশের পতন হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি হন। তিনি প্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

সান ইয়াৎ-সেন জীবনী – Sun Yat-sen Biography in Bengali

নামসান ইয়াৎ-সেন
জন্ম12 নভেম্বর 1866
পিতাসান দাচেং
মাতামাদাম ইয়াং
জন্মস্থানকুইহেং গ্রাম, হসিয়াংশান কাউন্টি, কোয়াংতুং প্রদেশ, কিং সাম্রাজ্য
জাতীয়তাচীনা
পেশাচীনা রাষ্ট্রনায়ক, চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক দার্শনিক
মৃত্যু12 মার্চ 1925 (বয়স 58)

bengaliportal

 

সান ইয়াৎ-সেন এর জন্ম : Sun Yat-sen’s Birthday

সান ইয়াত-সেন 12 নভেম্বর 1866 জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী

আরও পড়ুন: চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন জীবনী

আরও পড়ুন: চার্লস ডিকেন্স জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী

সান ইয়াৎ-সেন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Sun Yat-sen’s Parents And Birth Place

নবীন চীনের অগ্রদূত সান – ইয়াৎ – সেন জন্ম গ্রহণ করেন দক্ষিণ চীনের কোয়ান্টাং প্রদেশের এক অখ্যাত গ্রামে ১৮৬৬ খ্রিঃ ২ রা নভেম্বর। তাঁর বাবা ছিলেন দরিদ্র চাষী। স্বভাবতঃই নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হয়ে উঠতে হয়েছিল সানকে। বাড়ির কাছেই ছিল মিশনারীদের একটা স্কুল। সান সুযোগ পেলেই সেখানে চলে যেতেন। একপাশে দাঁড়িয়ে দেখতেন তাঁর বয়সী ছেলেরা কেমন পড়াশুনা করছে।

সান ইয়াৎ-সেন এর শিক্ষাজীবন: Sun Yat-sen’s Educational Life

ছেলের উৎসাহ দেখে সানের বাবা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। মনের আনন্দে সান স্কুলে যাতায়াত শুরু করলেন। মিশনারী স্কুলে ধর্মবিষয়ক শিক্ষাই ছিল প্রধান। বাচ্চাদের দুর্বোধ্য নানা বিষয় সেখানে তাদের মুখস্থ করতে হত, আবৃত্তি করতে হত। সানের জানার আগ্রহ ছিল সহজাত। তিনি কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করতে চাইতেন না। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে শিক্ষকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন।

ফলে প্রায়ই তাকে স্কুলের শিক্ষকদের কাছে শাস্তি পেতে হত। আমেরিকানরা সেই সময় চীনে ব্যবসা করতে আসত। চীনের গ্রামের লোকেরা জানত, এই সাগরপারের মানুষদের অনেক টাকা। আমেরিকার সোনার খনির কথাও অজানা ছিল না তাদের। সানের বাবা সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ি ফিরে এসে যখন বিশ্রাম করতেন, সেই সময় সান এসে তার পাশে বসতেন। নানান গল্প শুনতেন।

সানের বাবার স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে তার ছেলেও একদিন সাগর মানুষদের সোনার দেশে গিয়ে অনেক অর্থ আয় করে আনবে। সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। সেই কথা তিনি গল্পচ্ছলে ছেলেকে বারবার মনেও করিয়ে দিতেন প্রতিদিন। সানের এক বৃদ্ধা ঠাকুমা থাকতেন সেই গ্রামে। তিনি কিন্তু আমেরিকানদের পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, সাগর মানুষরা অদ্ভুত পোশাক গায়ে দেয়, কাঠি দিয়ে না খেয়ে লোহার হাতের মত জিনিস (চামচ) দিয়ে খায়, লোকগুলো নেহাৎই অসভ্য। সান যেন কোন দিনই তাদের দেশে না যায়।

আরও পড়ুন: সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর জীবনী

আরও পড়ুন: হর গোবিন্দ খোরানা জীবনী

আরও পড়ুন: আর্কিমিডিস জীবনী

আরও পড়ুন: ফ্রান্সিস বেকন জীবনী

আরও পড়ুন: এরিস্টটল জীবনী

দুজনের মুখে দুরকম কথা শুনে শিশু বয়সেই সানের মনে আমেরিকানদের সম্পর্কে কৌতূহল জেগে ওঠে। নানাভাবে তিনি তাদের সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করতেন। পাশের গ্রামেই ছিল তিন ভাই। তারা আমেরিকায় গিয়ে অনেকদিন ছিল, সেখানের সোনার খনিতে কাজ করে অনেক অর্থ নিয়ে দেশে ফিরেছিল। তাদের কাছেই বালক সান একদিন শুনতে পেলেন, আমেরিকার মানুষেরা নিজেরাই তাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ঠিক করে।

চীনের মাঞ্চু রাজারা যেমন চাষীদের ফসল, ধন – সম্পদ কেড়ে নেয়, বিনা অপরাধে নির্দোষ লোককে কয়েদ করে রাখে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি কখনো তা করতে পারে না। কথাগুলো শুনে সানের খুবই ভাল লাগত। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে সে দেশের আরো অনেক কথা জানার চেষ্টা করতেন। দেশের মাঞ্চুরাজাকে ঈশ্বরের পুত্র বলে বিশ্বাস করত চীনের সাধারণ মানুষেরা। তাই তাদের অন্যায় কাজেরও প্রতিবাদ করবার সাহস পেত না তারা।

একদিন সান শুনতে পেলেন, আমেরিকার সোনার খনিতে কাজ করা তিন ভাইকে ঈশ্বরপুত্র মাঞ্চুরাজা হত্যা করে তাদের ধনসম্পদ কেড়ে নিয়ে গেছে। অবস্থাপন্ন লোকদের সম্পদ এভাবেই চীনের রাজারা কেড়ে নিয়ে আত্মসাৎ করত সেকালে। সেই ঘটনার পরে প্রথম সানের মনে মাঞ্চুরাজার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জেগে উঠল। তিনি মনে মনে স্থির করলেন, সাগর পারের মানুষেরা অনেক ভাল, বড় হয়ে তিনি তাদের দেশেই চলে যাবেন ৷

সানের দাদা আ মেই হাওয়াই দ্বীপের হনলুলুতে থেকে ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে তিনি অনেক দেশে ঘুরেছেন। শেষে হনলুলুতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। সেখানেই দোকান খুলেছেন, গড়েছেন মস্ত খামার। কারবার দেখাশোনার জন্য তিনি পনেরো বছরের সানকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। সেই প্রথম দেশ ছেড়েবিদেশে পা দিলেন সান। তাঁর মনে হল যেন এক নতুন জগতে এসে পড়েছেন।

দাদা সেখানেই এক মিশনারী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন সানকে। সানের আরম্ভ হল ব্যস্ত জীবন। স্কুলের পড়াশোনা আবার ব্যবসার কাজ দেখাশোনা করা একই সঙ্গে চলতে লাগল তার। মিশনারীদের স্কুলে ইংরাজি, অঙ্ক, ইতিহাস আর বাইবেল পড়তে হতো। পড়াশুনায় ছিল সানের গভীর আগ্রহ, তাই অল্প দিনের মধ্যেই তিনি স্কুলের সেরা ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠলেন। ব্যবসায়ের কাজে দোকানে যখন তিনি বসতেন, তখন প্রায়ই সাগর পারের বিদেশী মানুষদের দেখতেন। আগ্রহ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন।

মানুষগুলোর স্বাধীনচেতা ভাব দেখে সানের মনে প্রথম স্বাধীনতার স্পৃহা দেখা দেয়। দেশের মানুষদের কথা ভেবে তার নিজেরই তখন দুঃখ ও লজ্জা হতো। আঠারো বছর বয়সের মধ্যেই পশ্চিমের শিক্ষা – সংস্কৃতির সঙ্গে ভালভাবে পরিচিত হয়ে উঠলেন সান। স্কুলেও সেরা ছাত্র হিসাবে পুরস্কার পেলেন। দাদা আ মেই কিন্তু ছোটভাইয়ের সাহেবদের মত হাবভাব দেখে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। সান বলতেন, মাঞ্চু রাজারা দিনের পর দিন নানা ভাবে অত্যাচার করে আমাদের দেশের মানুষগুলোকে পশুর মত করে রেখেছে।

তারা প্রাণখুলে হাসতে পর্যন্ত পারে না। আর সাহেবরা কেমন টগবগে— দেখলে মনে হয় দুনিয়ায় ওরা কাউকে পরোয়া করে না। অথচ ওদের চাইতে আমাদের সভ্যতা কত প্রাচীন, আমরা রীতিমত একটা সভ্যজাত। মাঞ্চুরা এই কথাটা একবারও আমাদের মনে করতে দিতে চায় না। ভাইয়ের মুখে এসব বিপ্লবী কথাবার্তা শুনে দাদা শঙ্কিত হয়ে ভাবলেন, এ সবই ইংরাজি শিক্ষার ফল। আরো কিছুদিন এখানকার শিক্ষা পেলে সে পুরদস্তুর সাহেব হয়ে উঠবে— নিজের দেশের কথাই হয়তো ভুলে যাবে। আ মেই বাবার কাছেই গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন সানকে।

আধুনিক শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত সান একেবারে নতুন মানুষ হয়ে গ্রামে ফিরলেন। গ্রামের মানুষের কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস থেকে তিনি তখন মুক্ত। দেশের প্রাচীন প্রথা ও দেবদেবীদের ওপর থেকেও পুরোপুরি বিশ্বাস চটে গেছে তার। নিজের বিশ্বাস ও ভাবনার কথাই এবারে সান গ্রামের মানুষদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতে শুরু করলেন। মাঞ্চুরা যে শাসনের নামে নানাভাবে শোষণ করে তাদের পশুতে পরিণত করে রেখেছে, উৎপীড়িতর মুখ বন্ধ করবার জন্য নিজেদের ঈশ্বরপুত্র বলে প্রচার করছে, এমনি সব কথা তিনি স্থানীয় মানুষদের শোনাতে লাগলেন।

আরও পড়ুন: এডওয়ার্ড জেনার জীবনী

আরও পড়ুন: ডানিয়েল গাব্রিয়েল ফারেনহাইট জীবনী

আরও পড়ুন: স্যামুয়েল হ্যানিম্যান জীবনী

আরও পড়ুন: মাইকেল ফ্যারাডে জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার উইলিয়াম ক্রুকস জীবনী

তিনি আরও বলতেন, প্রজারা যে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শস্য দিয়ে অর্থ দিয়ে খাজনা দেয়, সেই অর্থে তো দেশের লোকের জন্য স্কুল তৈরি হতে পারে, রাস্তা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সেদিকে তো মাঞ্চুদের কোন নজর নেই, নিজেদের ভোগ বিলাস নিয়েই তারা মত্ত হয়ে রয়েছে। প্রজার দেওয়া অর্থেই তো তাদের যত সমৃদ্ধি — কিন্তু প্রজারা এমন দৈন্যদশায় থাকবে কেন, কেন সব অত্যাচার মুখ বুজে সইবে ? শত শত বছরের দাসত্বে থেকে গ্রামের মানুষেরা নিজেদের দাস আর রাজাকে দেবতা ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা সানের কথায় সায় দিতে পারল না।

অনেকেই প্রতিবাদ করল, অভিশাপ দিল। সান কিন্তু নিরস্ত হলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন অন্ধ ধর্মবিশ্বাস আর শিক্ষার অভাবই দেশের মানুষগুলোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে সবার আগে দরকার এদের মন থেকে ধর্মবিশ্বাস দূর করা আর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা ৷ কিন্তু সেই দিকে অগ্রসর হবার আগেই সানকে কোয়ানটাং প্রদেশ ছাড়তে হল। দেবতা ও রাজার বিরুদ্ধে কথাবার্তা শুনে বিভিন্ন গ্রামের মোড়লরা একজোট হয়ে সানকে গ্রামছেড়ে কেবল নয়, প্রদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করল। তা না হলে যে রাজরোষে গোটা প্রদেশেই আগুন জ্বলবে ! সান – ইয়াৎ – সেন দেশ ছেড়ে এলেন হংকং।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, নিজে প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে উঠতে না পারলে অপরকে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব নয়। উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য তিনি ভর্তি হলেন কুইনস কলেজে। এরপর কলেজ থেকে পাশ করে ভর্তি হলেন ক্যান্টন মেডিক্যাল স্কুলে। এখান থেকে ডাক্তারি পাশ কবলেন ২৮ বছর বয়সে। সান – ইয়াৎ – সেন ভাবলেন, এবাবে তিনি দেশে ফিরে দুঃস্থ মানুষের সেবার কাজ করবেন, সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলবেন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা।

সান ইয়াৎ-সেন এর কর্ম জীবন: Sun Yat-sen’s Work Life

ডাক্তারী পড়বার সময়েই সমভাবাপন্ন কিছু সহপাঠীকে নিয়ে সান – ইয়াৎ সেন গড়ে তুলেছিলেন একটি বিপ্লবী দল। সেই সময়ে দেশে নানা প্রান্তে ও বিদেশে আরো কিছু বিপ্লবী দল গড়ে উঠেছিল। এদের সকলেরই লক্ষ্য ছিল, দেশকে বিদেশীদের শোষণ থেকে রক্ষা করা, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করে দুর্নীতি বন্ধ করা। এই সংগঠনগুলো মাঞ্চু সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইতে নামবার জন্যও প্রস্তুত হচ্ছিল। ক্যান্টনে ফিরে এসে সান ডাক্তারি আরম্ভ করলেন। কাজের ফাকে সংগঠনের কাজও চলতে লাগল। অল্পদিনের মধ্যেই দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে গেল।

এরপরই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রচার পুস্তিকা নিয়মিত প্রকাশিত হতে লাগল। তার এক সংখ্যায় সান লিখলেন, জনগণই হল দেশের মূল ভিত। এই ভিত যত শক্ত হবে দেশও হবে তত নিরাপদ। মাঞ্চুরাজাদের গুপ্তচর বাহিনীও ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছিল। সান যখন অন্যান্য বিপ্লবী সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলিত ভাবে ক্যান্টনে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নেবার কথা ভাবছেন সেই সময়েই একদিন অতর্কিতে পুলিশের আক্রমণ ঘটল। দলের অধিকাংশ সদস্যই ধরা পড়লেন। কৌশলে পালিয়ে গেলেন সান।

কিছুদিন এখানে সেখানে আত্মগোপন করে থাকার পর তিনি ছদ্মবেশে হাওয়াই দ্বীপে চলে এলেন। শুরু হল তার নির্বাসিত জীবন। সানের পলায়নের কথা মাঞ্চু সরকার জানতে পেরে প্রত্যেক দেশের দূতাবাসে তাকে বন্দী করার কথা জানিয়ে দেওয়া হল। তার মাথার জন্য ঘোষণা করা হল এক লক্ষ পাউন্ডের পুরস্কার। সান বিচলিত হলেন না। দেশের মুক্তি যুদ্ধের সৈনিককে মৃত্যু ভয়ে ভীত হলে চলে না। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করেই কাজ করে যেতে হয় বিপ্লবীকে।

সান – ইয়াৎ – সেন এবারে দেশে দেশে ঘুরে দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা, শাসক – শ্রেণীর উৎপীড়ন শোষণের কথা প্রচার করতে লাগলেন। চীন বহুকাল থেকেই বিদেশী মানুষের কাছে ছিল অজ্ঞাত দেশ। অথচ পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার বিকাশভূমি ছিল চীন। ইতালীয় পর্যটক মার্কোপলোই প্রথম বিদেশী যিনি চীন দেশে আসেন। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হলে বিদেশী বণিকরা এই প্রাচীন দেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে ক্রমে ক্রমে সেখানে উপস্থিত হয় পর্তুগীজ, ওলন্দাজ ও ইংরাজরা।

চীনসম্রাট ওই সব বিদেশী বণিকদের প্রশ্রয় দিতে চায় নি। তবু নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেই বিদেশী বণিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্য করতে থাকে। বিদেশীদের মধ্যে ইংলন্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসারপরিমাণই ছিল সব চেয়ে বেশি। এরা চীন থেকে চা, রেশম, ইত্যাদি কিনতো। আর চীনাদের কাছে বিক্রি করত আফিম্। গোটা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের আফিমের ব্যবসা। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল আফিমের নেশা। চীন সম্রাট এই ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও অর্থলোভী ইংরাজ বণিকরা গোপনে ব্যবসা চালিয়ে যেতে লাগল।

উৎকোচলোভী সরকারী কর্মচারীরাই তাদের সাহায্য করত। শেষ পর্যন্ত আফিমকে কেন্দ্র করেই ব্রিটিশ বণিকদের সঙ্গে মাঞ্চু সম্রাটদের বিরোধ চরমে উঠল। স্বদেশীয় বণিকদের সাহায্যে এগিয়ে এল ব্রিটিশ সেনা বাহিনী। ১৮৪০-৪২ খ্রিঃ ধরে দুই পক্ষে চলল যুদ্ধ। ইতিহাসে এই যুদ্ধই আফিম – এর যুদ্ধ নামে চিহ্নিত হয়ে আছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হল চীনারা।ইংরাজরা যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে পাকাপাকিভাবে ব্যবসা করার অধিকারও আদায় করল। এই যুদ্ধের সুযোগে মার্কিনরাও ব্যবসা করতে নেমে পড়ল চীন দেশে। এতদিন ছিল চীন সম্রাটের শোষণ। সেই সঙ্গে এবারে যুক্ত হল ইংরাজ ও মার্কিন বাণিকরা।

আরও পড়ুন: চার্লস ডারউইন জীবনী

আরও পড়ুন: এভারিস্ট গ্যালোইস জীবনী

আরও পড়ুন: হেনরি ভিক্টর রেনোঁ জীবনী

আরও পড়ুন: হারমান ভন হেলমহোল্টজ জীবনী

আরও পড়ুন: জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার জীবনী

দেশের জমির মালিক ছিল জমিদাররা। তারা খাজনা আদায়ের নামে কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের সিংহভাগই জবরদস্তি করে আদায় করত। এছাড়া রাজকর্মচারীরাও নানা অছিলায় লোকের সম্পত্তি অধিকার করত। অসহায় চীনের সাধারণ মানুষ কোন প্রতিবাদ করারই সুযোগ পেত না। বিদেশী – বণিকরাও কিছু কম ছিল না। আফিমের নেশা ধরিয়ে দিয়ে তারা নানা কৌশলে শোষণ করত চীনাদের। তাদের বাধা দেবার কোন ক্ষমতাই ছিল না মাঞ্চু সম্রাটদের।

ফলে চাষীরা দিন দিনই নিঃস্ব রিক্ত হতে লাগল। মাঞ্চু সম্রাটদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয় ১৮৫১ খ্রিঃ। হংসিং চুয়ান নামে এক ব্যক্তি ছিলেন এই বিদ্রোহের নেতা। বিদেশী সৈন্যের সহায়তায় মাঞ্চু সম্রাট এই বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। ইতিহাসে এই ঘটনা তাইপিং বিদ্রোহ নামে পরিচিত হয়েছে। চীন সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদেশী বণিকরাই হয়ে উঠল দেশের পরোক্ষ শাসক। দেশের এমনি দুরবস্থার কালেই সান – ইয়াৎ – সেনের আবির্ভাব ঘটল।

তিনি চীনের দুরবস্থার কথা প্রবাসী চীনাদের সাহায্যে বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন। নিজের দেশে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও তার জন্য প্রস্তুত করে নিতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি সান – ইয়াৎ – সেন। বিদেশে যেখানেই গেছেন, সেখানকার সমাজ সংস্কৃতি অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান লাভের চেষ্টা করেছেন। ইংলন্ডে থাকার সময়ে বৈপ্লবিক কাজ কর্মের ফাকে যে সময়টুকু পেতেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামেই কাটাতেন। তিনি পড়তেন সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিকদের জীবন ও রচনাবলী।

এই সূত্রেই কার্ল মার্কসের রচনাবলী তিনি পাঠ করেন। পরে লেনিন ও অন্যান্য রাশিয়ান বিপ্লবীদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৮৯৯ খ্রিঃ জাপানে এসে পান – ইয়াৎ সেন তার সংগঠনের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন।ইংলন্ড আমেরিকার চাইতে এখান থেকেই স্বদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার সুবিধা ছিল বেশি। বিদেশে থেকেই দেশের মাটিতে অনুগামী বিপ্লবীদের মাধ্যমে প্রচারকার্য আরম্ভ করলেন সান – ইয়াৎ – সেন। চেষ্টা বিফল হল না। চীনেব নিপীড়িত মানুষদের মধ্যে ধীরে ধীরে গড়ে উঠল গণ চেতনা।

অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের খোলস ছেড়ে ধীরে ধীরে জেগে উঠতে লাগল নতুন এক চীন। বিভিন্ন সংস্কারের দাবি ক্রমশই তীব্র হয়ে উঠতে লাগল চারদিকে। মাঞ্চু সম্রাটরা এই গণচেতনার পরিণতি ভেবে শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য জনসাধারণের দাবি মেনে নিয়ে ১৯০৬ খ্রিঃ সম্রাজ্ঞী জু সি প্রশাসনিক সংস্কারের কথা ঘোষণা করলেন। এই সংস্কারের মধ্যে ছিল আংশিকভাবে ঋণ মকুব, শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি ও সেনাবাহিনী পুনর্গঠন। সান – ইয়াৎ – সেন কিন্তু এই সংস্কার প্রস্তাবকে মেনে নিতে পারলেন না।

তিনি বুঝতে পারলেন দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য রাজতন্ত্রের উচ্ছেদই একমাত্র পথ। তিনি বিপ্লবী দলের প্রথম সম্মেলন আহ্বান করলেন টোকিওতে। এই সম্মেলনেই প্রথম গঠিত হল প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবী দল। দলের নামকরণ হল কুওমিনটাং। সান দলের লক্ষ্য ও আদর্শ ঘোষণা করে জানালেন দেশ পুনর্গঠনের কাজে তিনটি বিষয়ই হবে প্রধান৷ সেগুলো হল, বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, গণতান্ত্রিক সরকার গঠন এবং প্রজারা যাতে নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ভোগ করতে পারে তার জন্য জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন।

তিনি তাঁর দলের আদর্শ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, শান্তি আমাদের মুখ্যকাম্য। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রই আমাদের লক্ষ। সান ইয়াৎসেনের সমর্থনে এগিয়ে এল অগণিত চীনা ছাত্র, যুবক, কৃষিশ্রমিক। এদের সঙ্গে হাত মেলালেন, চিয়াং কাইসেক সহ দক্ষিণ চীনের সামরিক বাহিনীর নেতৃবৃন্দ। চীনা ব্যবসায়ীরা রাশি রাশি অর্থ তুলে দিল তার হাতে। দেখতে দেখতে গড়ে উঠল বিরাট মুক্তযোদ্ধা বাহিনী। বিপ্লব ছড়িয়ে পড়তে লাগল দিকে দিকে। কিন্তু রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আঘাত হানার চেষ্টা ব্যর্থ হয় সানের। কেবল একবার নয়। পর পর দশবার। কিন্তু তবু তিনি মনোবল হারালেন না। নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টায় সান আমেরিকা গেলেন।

সেখানেই খবর পেলেন ১৯১১ খ্রিঃ ১০ ই নভেম্বর চিয়াং- কাইসেক – এর নেতৃত্বে বিপ্লবী মুক্তিবাহিনী সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে নানকিং শহর দখল করে নিয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাঁর নাম। আমেরিকার পর ব্রিটেন, ফ্রান্স হয়ে সান ১৯১২ খ্রিঃ ৫ ই জানুয়ারি এসে পৌঁছলেন নানকিং। আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হলেন তিনি। এর কয়েক দিন পরেই, ১২ ই জানুয়ারী, কয়েক শ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে মাঞ্চু রাজবংশের নাবালক সম্রাট পদত্যাগ করলেন। সমস্ত চীনে প্রতিষ্ঠিত হল নতুন প্রজাতন্ত্র। সান ইয়াৎসেন হলেন নতুন প্রজাতন্ত্রে কর্ণধার।

এই সময় তাঁর বয়স ছেচল্লিশ বছর। সান ইয়াৎ সেনের স্বপ্ন ছিল, দেশের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে, সামরিক বাহিনীর প্রত্যেক দলের মধ্যে এবং অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থার সকল স্তরের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধশালী এক নতুন চীন গড়ে তুলবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন সফল করার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গড়ে তুলবার আগেই দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল লিবারেল পার্টির হাতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা তুলে দিতে হল। লিবারেল পার্টি উদার রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিল।

আরও পড়ুন: অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং জীবনী

আরও পড়ুন: মেরী কুরি জীবনী

আরও পড়ুন: গুলিয়েলমো মার্কনি জীবনী

আরও পড়ুন: আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী

আরও পড়ুন: হারম্যান জোসেফ মুলার জীবনী

এই দলের নেতা ছিলেন সমাজ সংস্কারক ইউয়ান – শি – কাই। প্রজাতন্ত্রী নতুন চীনেব রাষ্ট্রপতি হলেন শি – কাই। কলেজের এক ছাত্রী সুন্দরী চিং লিং সুং ছিলেন সানের অনুরাগী। তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল সানের সেক্রেটারী। কিছুদিনের মধ্যে তাকে বিয়ে করলেন সান। ইতিপূর্বেও একবার বিয়ে করেছিলন সান। কিন্তু সে বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল। চিং লিং হলেন সানের যোগ্য সহধর্মিনী। ক্ষমতা হাতে পেয়ে শি – কাই আর উদারনীতিতে বিশ্বাসী রইলেন না। হয়ে উঠলেন ক্ষমতাকামী একনায়ক। সান শিং – কাই – এর স্বৈরাচারের প্রতিবাদ জানালেন। শি – কাই সানকে বন্দি করার হুকুম দিলেন অনুগত সামরিক বাহিনীকে।

প্রাণের দায়ে রাতারাতি জাপানে পালিয়ে যেতে হল সানকে। আবার শুরু হল স্বৈরাচারী একনায়ক শি – কাই – এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম। নানকিং – এ সান – এর অনুগত বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করল, কিন্তু পরাজিত হল। শি – কাই নিজেকে চীনের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি মারা গেলেন। ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল চেং। তাঁর সঙ্গে যোগ দিল দেশের জমিদার সম্প্রদায়। সান – এর নেতৃত্বে এবং দেশের ছাত্র কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতায় দেশজুড়ে শুরু হল গৃহযুদ্ধ।

১৯২১ খ্রিঃ গণ অভ্যুত্থানে পতন ঘটল জেনারেল জেং – এর। সানের জাতীয়তাবাদী দল ক্যান্টনে নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করল। সান হলেন এই সরকারের রাষ্ট্রপতি। ইতিমধ্যে রাশিয়ায় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। চীনের এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রাশিয়া ছাড়া ইউরোপের অপর কোন দেশ থেকে সান সাহায্য পাননি। এরপর সান রাশিয়ার আদর্শে চীনের গঠন মূলক কাজে হস্তক্ষেপ করবেন। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি পেলেন না।

সান ইয়াৎ-সেন এর মৃত্যু: Sun Yat-sen’s Death

১৯২৫ খ্রিঃ দেশের রাজনৈতিক দলগুলির যুক্ত অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১২ ই মার্চ তারিখে তাঁর সংগ্রামী জীবেনর চির অবসান ঘটে।

সানের আকস্মিক মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন চিয়াং কাইসেক। দেশের বিরোধী শক্তিগুলিকে কঠোর হাতে তিনি দমন করলেন। তবে তিনি কমিউনিষ্ট মত বাদে বিশ্বাস করতেন না। তাই চীনে কমিউনিস্ট দলগুলির সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। আধুনিক চীনের উত্থানের পেছনে সান ইয়াৎসেনের অবদান অবিস্মরণীয় চীনের ৮০০ বছরের রাজতন্ত্র উৎখাত করে তিনিই প্রথম প্রজাতন্ত্র গঠন করেছিলেন। বিদেশী শাসক ও শোষকদের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন চীনকে। বিলম্বে হলেও তাঁর সমৃদ্ধ নতুন চীন গঠনের স্বপ্ন স্বার্থক হয়েছে।

আরও পড়ুন: মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী

আরও পড়ুন: নসট্রাদামুস জীবনী

আরও পড়ুন: রাজা রামমোহন রায় জীবনী

আরও পড়ুন: বারট্রান্ড রাসেল জীবনী

আরও পড়ুন: রোম্যাঁ রোলাঁ জীবনী

Leave a Reply