স্যার উইলিয়াম ক্রুকস জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে William Crookes Biography in Bengali. আপনারা যারা স্যার উইলিয়াম ক্রুকস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী স্যার উইলিয়াম ক্রুকস এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস কে ছিলেন? Who is William Crookes?
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস (১৭ জুন ১৮৩২ – ৪ এপ্রিল ১৯১৯) ছিলেন একজন ব্রিটিশ রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ এবং লন্ডনের রয়েল কলেজ অব কেমিস্ট্রির প্রাক্তনী। তিনি স্পেকট্রোস্কপি তথা বর্ণালীবীক্ষণের উপর বহু গবেষণা করেছেন। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে নির্বাত নল বা ভ্যাকুয়াম টিউবের অন্যতম পথিকৃত স্যার উইলিয়াম ক্রুকসের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান তড়িৎমোক্ষণ নল – ক্রুকস টিউবের পরীক্ষা যা কিনা পরবর্তীতে সমগ্র রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ।
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস জীবনী – William Crookes Biography in Bengali
নাম | স্যার উইলিয়াম ক্রুকস |
জন্ম | 17 জুন 1832 |
পিতা | জোসেফ ক্রুকস |
মাতা | মেরি স্কট |
জন্মস্থান | লন্ডন, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পেশা | রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ |
মৃত্যু | 4 এপ্রিল 1919 (বয়স 86) |
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস এর জন্ম: William Crookes’s Birthday
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস ১৮৩২ সালের ১৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ স্যার উইলিয়ম ক্রুকসের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান তড়িৎমোক্ষণ নলের পরীক্ষা। বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জ্ঞাত ছিল গ্যাস কিংবা বায়ুকে নিম্নচাপে রেখে তার ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে গ্যাস অথবা বায়ুকে তড়িৎপরিবাহী করা যায়। কিন্তু পরীক্ষাক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল বায়ুর চাপ যত কমিয়ে আনা যায় ততই বায়ুর পরিবাহিতাও বৃদ্ধি পায় ৷
আরও পড়ুন: লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন জীবনী
আরও পড়ুন: অস্কার ওয়াইল্ড জীবনী
আরও পড়ুন: সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী
আরও পড়ুন: প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ জীবনী
আরও পড়ুন: মেঘনাদ সাহা ‘র জীবনী
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস এর কর্ম জীবন: William Crookes’s Work Life
এই পরীক্ষাটি করা হত ৩০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ও ৪ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত চোঙাকৃতি একটি শক্ত কাচের নলে। নলের দুপ্রান্তে দুটি ধাতব তড়িৎ – দ্বার সিল করে বন্ধ করে দেওয়া হত। নলের ভেতরে যে বায়ু থাকত তা বাইরে থেকে টেনে নেবার মত কেবল একটি ছিদ্র নলটিতে রাখা হত। এছাড়া বায়ু চলাচলের মত অপর কোন ছিদ্র থাকত না। নলের দু প্রান্তের তড়িৎ – দ্বার দুটোর মাধ্যমে তড়িৎপ্রবাহ পাঠিয়ে এবং নলের ভেতরকার বায়ু সম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত করে বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত ফলাফল লক্ষ করতে লাগলেন ৷
এই বিস্ময়কর ঘটনাগুলো ছিল এরকম: তড়িৎ – দ্বার যুক্ত নলদুটির আবেশকুন্ডলীর সঙ্গে গৌণকুন্ডলী যুক্ত করে উষ্ণ তড়িৎবিভব প্রয়োগ করা হয়। যে তড়িৎ – দ্বারকে ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত করা হয় তাকে বলা হয় ক্যাথোড। ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যে তড়িৎ – দ্বারকে যুক্ত করা হয় তাকে বলা হয় অ্যানোড। নলের ভেতরে তড়িৎমোক্ষণ শুরু করা হয় দশ হাজার থেকে পনের হাজার ভোেল্ট বিভবপ্রভেদ প্রয়োগ করে।
এই অবস্থায় পাম্পের সাহায্যে নলের ভেতরের বায়ুকে পারদ চাপের ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত নিয়ে এলে দেখা যায় বেগনী এবং নীল রঙের লম্বা স্ফুলিঙ্গ এক তড়িৎ – দ্বার থেকে অন্য তড়িৎ – দ্বারের দিকে ছুটছে। নলের ভেতরের বায়ুর চাপ পাঁচ মিলিমিটার পারদ চাপের সমান করা হলে দুই তড়িৎ – দ্বারের মধ্যবর্তী স্থানে একপ্রকার আলোক স্তম্ভ অধিকার করে নেয়, তার রঙ হয় গোলাপী। বায়ুর চাপকে আরও কমিয়ে যখন দুই মিলিমিটার পারদ চাপের সমান করা হয় তখন দেখা যায় ধনাত্মক স্তম্ভগুলির মাঝখানে একটা অন্ধকার অঞ্চল ধরা পড়ে।
এই অন্ধকার অঞ্চলটি আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে। সেকারণে তাঁর নামেই এর নামকরণ করা হয়েছিল ফ্যারাডের কৃষ্ণাঞ্চল বলে। এর পরেও নলের মধ্যস্থিত বায়ুর চাপকে কমিয়ে বাড়িয়ে নানাভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফলে ইতরবিশেষ ঘটতে দেখা যায়নি। কিন্তু এই পরীক্ষার ভিন্ন একটি ফলাফল লাভ করা সম্ভব হয়েছিল বিজ্ঞানী ক্রুকস – এর পক্ষে।
তিনি নিজের তৈরি একটি যন্ত্রের সাহায্যে নলের মধ্যস্থিত বায়ুকে ০.১ মিলিমিটার পারদ চাপের সমান চাপে এনে আর একটি কৃষ্ণাঞ্চলের অবস্থান আবিষ্কার করেন। নলের মধ্যস্থিত ০.১ বায়ুচাপে ধনাত্মক স্তম্ভগুলো ভেঙ্গে গিয়ে ছোট ছোট আলোর চাকতি সৃষ্টি হয়। অপর দিকে ঋণাত্মকরশ্মির বিচ্ছুরণ ক্যাথোডপাত থেকে সরে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় দ্বিতীয় একটি কৃষ্ণাঞ্চল। এই অঞ্চলটির নামকরণ পরবর্তীকালে করা হয় ‘ক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল’ আবিষ্কারকের নামে।
বিজ্ঞানীরা পরে ক্রুকসের পদ্ধতি প্রয়োগ করে নলের বায়ুর চাপকে ০.৩১ মিলিমিটার পারদের সমান চাপে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই অবস্থায় ক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল গোটা নল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর ক্যাথোডের বিপরীত দিকে নলের কাচের দেয়াল আলোকিত হয়ে উঠেছিল হাল্কা সবুজ আলোতে। এই আলোর কারণও ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছিল যা প্রচন্ড বেগে কাচের দেয়ালের দিকে নির্গত হয়ে হাল্কা সবুজ আলোর দীপ্তি প্রকাশ করেছিল। বিজ্ঞানীরা এই আলোর নামকরণ করেছেন ক্যাথোড রশ্মি।
আরও পড়ুন: জোহানেস কেপলার জীবনী
আরও পড়ুন: উইলিয়াম হার্ভে জীবনী
আরও পড়ুন: র্যনে দেকার্ত জীবনী
আরও পড়ুন: জোহানেস গুটেনবার্গ জীবনী
আরও পড়ুন: ইভানজেলিস্তা টরিসেলি জীবনী
এই পরীক্ষার মাধ্যমেই ক্রুকস প্রমাণ করেছিলেন ক্যাথোড রশ্মি শক্তিযুক্ত এবং তার ভরবেগ বা মোমেন্টাম বর্তমান। এই রশ্মি পাতলা ধাতব পাতকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। এই থেকে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন ক্যাথোড রশ্মি অণুর স্রোত ছাড়া কিছু নয়। পরবর্তীকালে অবশ্য ক্রুকসের এই সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু ক্রুকস যে পরীক্ষাগুলো করেছিলেন বিজ্ঞানীদের কাছে সেগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ। পরবর্তীকালে ক্রুকস আবিষ্কার করেছিলেন রেডিওমিটার নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র যা আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
ক্রুকস তড়িদ্বারযুক্ত নলের মধ্যস্থিত বায়ুকে নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য আবিষ্কার করেছিলেন একটি বায়ুনিষ্কাশন পাম্প। ঐ পাম্পের সাহায্যে তিনি কোন বদ্ধ নলের মধ্যস্থ বায়ুর চাপকে কমিয়ে বায়ু চাপের দশ হাজার ভাগের এক ভাগে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর ফলে তড়িৎ মোক্ষণ নলের পরীক্ষার সমস্ত বাধা অপসারিত হয়েছিল। যুগসন্ধিক্ষণের বিজ্ঞানী ক্রুকসের জন্ম হয়েছিল লন্ডনে ১৮৩২ খ্রিঃ ১৭ জুন। অনুসন্ধিৎসা ছিল তার জন্মগত।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার পর রসায়ন বিজ্ঞানের পাঠ নিয়েছিলেন রয়েল কলেজে। কিছুকাল প্রসিদ্ধ গবেষক – অধ্যাপক হা্ম্যানের অধীনে গবেষণা করেন। পরে রয়েল কলেজেই অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। রয়েল কলেজে পড়াশোনার সময় ক্রুকস অজৈব রসায়নের ওপরে গবেষণা করেন ৷ থলিয়াম নামক একটি মৌলিক পদার্থ তারই আবিষ্কার। সোনা ও রূপাকে তাদের আকরিক থেকে পৃথক করার কোন সহজসাধ্য পদ্ধতি তাঁর সময়ে ছিল না। ফলে বিষয়টি ছিল যথেষ্ট ব্যয় ও শ্রমসাধ্য। ক্রুকস এই সমস্যা দূর করেছিলেন একটি সহজ পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। এই পদ্ধতির নাম সোডিয়াম অ্যামালগাম প্রসেস।
স্যার উইলিয়াম ক্রুকস এর মৃত্যু: William Crookes’s Death
১৯১৯ খ্রিঃ ৪ ঠা এপ্রিল ক্রুকস লন্ডনে প্রাণত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: জন ডাল্টন জীবনী
আরও পড়ুন: কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস জীবনী
আরও পড়ুন: আমেদেও অ্যাভোগাড্রো জীবনী
আরও পড়ুন: হামফ্রে ডেভি জীবনী
আরও পড়ুন: কাউন্ট রামফোর্ড জীবনী