ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

কৃত্তিবাস ওঝার জীবনী: Krittibas Ojha Biography In Bengali

Krittibas Ojha Biography In Bengali
Krittibas Ojha Biography In Bengali

কৃত্তিবাস ওঝা বাংলার আদি কবি কৃত্তিবাস রচিত রামায়ণ এমন একটি অসাধারণ গ্রন্থযা দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে কি গরীবের ঝুপরিতে কি ধনীর প্রাসাদে সর্বত্র সমান মর্যাদায় পঠিত হয়ে আসছে। জনপ্রিয়তার মাপ কাঠিতে কবি কৃত্তিবাসের তুলনা একমাত্র তিনিই।

বাল্মীকি রচিত রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ তিনি করেননি। রাম কাহিনীতে সংযােজিত করেছেন নিজের কল্পিত এমন অনেক বিষয় যা রামায়ণকে আধুনিক মন ও মননের উপযােগী করে তুলেছে। এই গ্রন্থই বাঙালীর ঘরে ঘরে রামের মহৎ জীবন প্রচার করে চলেছে।

আপামর মানুষের মধ্যে কবি কৃত্তিবাসের এমন আশ্চর্য সমাদর লক্ষ্য করে একদিন বাংলার অপর এক কবি মাইকেল মধুসূদন এমনি একজন সার্থক কবি হয়েওঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যাঁর রচনা, চণ্ডীমণ্ডপে, বটতলায়, মুদিখানায় পঠিত হবে আবার সমান আগ্রহে ও যত্নে ধনীর প্রাসাদেও ধ্বনিত হবে। কবি কৃত্তিবাসের সঠিক জন্ম তারিখ পাওয়া যায়নি। এমনকি তার রচিত মূল পান্ডুলিপি ও আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি।

প্রাচীন কবিরা প্রচলিত প্রথা অনুসারে নিজের রচনার ভণিতাতে জন্মসাল বা সময় উল্লেখ করতেন। কৃত্তিবাসের রচনায় তা অনুপস্থিত। তিনি আত্মপরিচয় হিসাবে যা বিবৃত করেছেন তা থেকে কেবল কবির জন্মদিনটির উল্লেখ পাওয়া যায়। সেটি এই রকম।

আশ্চর্যের বিষয় যে কবি রচিত এই আত্মকাহিনীটিও কালের কবলে হারিয়ে যেতে বসেছিল। সুবিখ্যাত সমালােচক রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেন ও হীরেন্দ্রনাথ। দত্ত এটি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

পরবর্তী কালে অপর একটি পুঁথি থেকেও কবির আত্মকাহিনী উদ্ধার করেছিলেন ডঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালী। কৰি কখন বর্তমান ছিলেন সেই কাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই আত্ম কাহিনীই হল মূল আকর। এর সহায়তায় আজ আমরা বলতে পারছি বঙ্গভারতীর বরপুত্র বঙ্গদেশে কখন কোন স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আত্ম কাহিনীতে কবি জানিয়েছেন, আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পুণ্য মাঘমাসে তার জন্ম হয়েছিল।

পুঁথিটি যারা নকল করেছিলেন, তাদের বিভ্রান্তির জন্য কোথাও কোথাও পুণ্য শব্দটি পূর্ণ রূপে লেখা হয়েছে। ফলে এ নিয়েও গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

যাইহােক দীনেশচন্দ্র সেনই প্রথম জানিয়েছিলেন কবির জন্ম হয়েছিল ১৪৪০ খ্রিঃ। জন্মদিনটি মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথি রবিবার। এই হিসেব অনুযায়ী কবির জন্মস্থান ফুলিয়া গ্রামে স্মৃতিফলক প্রােথিত হয়েছে। অবশ্য পরবর্তী কালে ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ গণ অনেকেই এই কালটির সঙ্গে একমত হতে পারেন নি। বর্তমান গবেষকগণ Indian Ephemeries-এর সাহায্যে সঠিক সালটি নিরূপণ করেছেন রবিবার এবং শ্রীপঞ্চমী তিথিকে ধ্রূব করে। এই হিসাবে কবি কৃত্তিবাসের জন্ম হয়েছিল ১৪৪৩ খ্রিঃ ৬ই জানুয়ারী।

জন্ম সাল-তারিখ জানা সম্ভব হলেও মৃত্যুর সাল-তারিখ জানা সম্ভব হয় নি। জয়ানন্দের চৈতন্য মঙ্গল কাব্যের সূত্র ধরে জানা যায়, কবি কৃত্তিবাস চৈতন্যদেবের জন্মের পূর্ব পর্যন্ত ১৪৯৩ খ্রিঃ অবধি জীবিত ছিলেন। কবির আত্মকাহিনী থেকে জানা যায়, তারা ছিলেন মুখটি বংশের কুলীন এবং পূর্বতন পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের অধিবাসী। সেই দেশে আকাল উপস্থিত হলে কবির বৃদ্ধ প্রপিতামহ পন্ডিত নরসিংহ ওঝা সপরিবারে পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাতীরে এক গ্রামে চলে আসেন।

পূর্বে মাঝিরা এই গ্রামে নিজেদের বাসস্থানে মনােরম ফুল বাগান তৈরি করত। তাই গ্রামের নাম হয়েছিল ফুলিয়া। এই গ্রামের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে গঙ্গা প্রবাহিত। এখানেই নরসিংহ ওঝা পুত্র পৌত্রাদি নিয়ে বাস করতে থাকেন।

নরসিংহের পুত্র গর্ভেশ্বর। গর্ভেশ্বরের তিন পুত্র মুরারি, সূর্য ও গােবিন্দ। মুরারির সাত পুত্র। তার মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ভৈরব রাজসভায় সমাদৃত হয়ে ছিলেন। অপর পুত্র বনমালী। তার ছয় পুত্র এক কন্যা। কৃত্তিবাস বনমালীর জ্যেষ্ঠপুত্র। কৃত্তিবাসের মায়ের নাম মালিনী। অবশ্য বিভিন্ন পুঁথিতে কবির মায়ের নাম বিভিন্ন দেখা যায়। যেমন: মেনকা, মানিকী, মানিকি, মালিকা ইত্যাদি।

কবি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পিতা ও পিতামহের কাছেই। বার বছর বয়সে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তাঁকে পাঠানাে হয় (১৪৫৪ খ্রিঃ ৪ই জানুয়ারী) গৌড়ের বিখ্যাত পন্ডিত রায়মুকুট আচার্য চুড়ামণি বৃহস্পতি মিশ্রের কাছে। এরপর তিনি যান উত্তরবঙ্গে আচার্য দিবাকরের কাছে।

পাঠ শেষ হলে আচার্য দিবাকর সর্বসাধারণের জন্য বঙ্গভাষায় রামায়ণ গান বা পাঁচালী বচনার আদেশ করেন। শিক্ষাগুরুর আদেশে কৃত্তিবাস রামায়ণ পাঁচালী রচনা শুরু করেন। বাইশ বছর বয়সে বাড়ি ফিরে এসে তিনি তৎকালীন গৌড়ের অধিপতি রুকনুদ্দীন বারবাক শাহের দরবারে উপস্থিত হন এবং সাতটি শ্লোক রচনা করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেন।

কৃত্তিবাসের কবিত্বে সন্তুষ্ট হয়ে গৌড়াধিপতি তাকে রাজকীয় মর্যাদায় ভূষিত করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি সগর্বে জানান।

কারাে কিছু নাই লই করি পরিহার।

যথা যাই তথায় গৌরব মাত্র সার।।

তবে রাজসম্মান সসম্মানে প্রত্যাখ্যান করলেও তিনি জনগণ দ্বারা ফুলিয়ার কবি হিসাবে সংবর্ধিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন পুঁথি থেকে জানা যায় রামায়ণ গান রচনায় কবি গৌড়েশ্বরের আন্তরিক সমর্থন পেয়েছিলেন।

তকালীন সমাজের কৌলিন্য প্রথা অনুযায়ী কবি তিনবার বিবাহ করেছিলেন। তার এক পুত্র ও চার কন্যা লাভ হয়েছিল।

বর্তমানে কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে যেটি প্রচলিত তার সপ্তকান্ডের অনেক খানিই সংগ্রহ করেছিলেন ন্যাথানিয়াল ব্রাসি হ্যালহেড। গ্রন্থাকারে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮০৩ খ্রিঃ শ্রীরামপুর মিশন থেকে।

Leave a Reply