সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে গাজর খান – জানুন গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: গাজর আমাদের একটি বিশেষ পরিচিত ফসল। আমরা গাজরকে নানা ভাবে ব্যবহার করে থাকি। গাজরের বিজ্ঞানস্মত নাম Dancus Carrota. গাজর একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাধু খাদ্য। গাজর আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ টি গাজর খাওয়া প্রয়োজন।
গাজরে যে সমস্ত ভিটামিন গুলি পাওয়া যায় তা হলো- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, বিটা ক্যারােটিন, এবং ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেট, সােডিয়াম, প্রােটিন, পটাসিয়াম, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ডায়েট তন্তু, আয়রণ ইত্যাদি। গাজরে থাকা এই সমস্ত ভিটামিনের গুলি অর্শ, ক্ষয়রােগ, পিত্ত রােগের জন্য খুবই উপকারী গাজর খেলে রং ফরসা হয়, মুখের সৌন্দর্য বাড়ে, শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে।
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে গাজর খান – জানুন গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১.স্ট্রোক কমায়: গাজরে বিটা ক্যারােটিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা-ক্যারােটিন আর লুটিয়েন। এর ফলে নিয়মিত গাজর খেলে হৃৎপিণ্ড ভাল থাকে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি তথ্য অনুসারে যারা মাসে এক-আধটা গাজর খান, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে পাঁচটা বা তার বেশি গাজর খান তাদের স্ট্রোক কম।
২. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে: গাজর খেলে দৃষ্টিশক্তি ভাল হয়। গাজরে থাকা বিটা-ক্যারােটিন যকৃতে ভিটামিন এ তে পরিণত হয়ে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩. ত্বককে রক্ষা: গাজরে থাকা ভিটামিন এ ত্বককে সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচায়, ফলে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়।
৪. ক্লোস্টরলের মাত্রা: প্রতিনিয়ত গাজর সেবনে ক্লোস্টরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. বার্ধক্য রােধ: গাজরে থাকা বিটা-ক্যারােটিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা বার্ধক্য রােধ করতে সক্ষম।
৬. মাড়ি পরিষ্কার: গাজর কামড়ে বা কাঁচা চিবিয়ে খেলে দাঁতে লেগে থাকা খাবারের অংশ বা প্লাক পরিষ্কার হয় এর ফলে মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার থাকে।
৭. ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে: গাজর নিয়মিত খেলে ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের প্রবণতা কমে।
আরও পড়ুন: ফুলকপির উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৮. ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে: গাজরে থাকা ভিটামিন এ শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। গাজর যকৃতে ফ্যাট নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
৯. ইনফেকশনে: কোনও কাটাছেড়া বা ইনফেকশনে গাজর কার্যকরী। গাজরের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে পিষে পেস্ট তৈরী করে কাটায় লাগালে।
১০. প্রস্টেট ক্যানসার: নিয়মিত গাজর সেবনে প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরােধ করতে গাজরের অবদান অনবদ্য।
১১. ফাংগাল ডিজিজ: গাজরে রয়েছে ফ্যালকারিনল, যা ত্বককে যে কোনও ফাংগাল ডিজিজ থেকে সুরক্ষা দেয়।
১২. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে: প্রতিনিয়ত গাজর সেবনে নির্যাস স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
১৩. ব্যথা ও যন্ত্রণার উপশম: গাজরে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রপাটিজ, যা দেহে ব্যথা-যন্ত্রণার উপশম ঘটায়।
১৪. নানা রোগে গাজর: অর্শ, ক্ষয়রােগ, পিত্ত রােগে গাজর খেলে সুফল মেলে।
১৫. গাজর সেদ্ধ করে ক্ষতস্থানে বাঁধলে ফেঁড়া বা ঘা সেরে যায়।
১৬. ভিটামিন এ গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। এই ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে শরীর ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শরীরের বৃদ্ধি থেমে যায় শারীরিক ক্ষমতা কমে যায়। খাদ্য দ্রব্য হজম হতে অনেক দেরি লাগে, চামড়া খসখসে হয়ে যায় ত্বকের রােগ দেখা দেয়।
১৭. শরীর নরম: গাজর খেলে শরীর নরম ও সুন্দর হয়। শরীরে শক্তির সঞ্চার হয় আর ওজন বাড়ে।
১৮. গাজরের রস: শিশুদের গাজরের রস খাওয়ালে দাঁত বেরােতে কোনাে কষ্ট হয় না আর দুধও ঠিক মতাে হজম হয়।
১৯. মস্তিষ্কের পক্ষে: অর্শ, ক্ষয়রােগ, পিত্ত রােগে গাজর খেলে সুফল পাওয়া যায়। গাজরের রস মস্তিষ্কের পক্ষেও ভাল।
২০. শরীরের পুষ্টি: প্রতিদিন ২ টি গাজর কাঁচা সেবনে শরীরের পুষ্টি এবং বৃদ্ধিও বিকাশে গাজর খাওয়া খুবই প্রয়ােজন।
২১. মুখের সৌন্দর্য: গাজর খেলে রং ফরসা হয়, মুখের সৌন্দর্য বাড়ে কারণ গাজরে আছে রক্ত পরিষ্কার করবার গুণ।
২২. ঋতুপ্রাপ্তি: গাজরের বীজে জল মিশিয়ে বেটে পর পর পাঁচ দিন পান করলে মেয়েদের ঋতুপ্রাপ্তি হয়।
২৩. ফোড়া: গাজর সেদ্ধ করে পুলটিস বাঁধলে ক্ষত, ফোড়া আর সব রকমের খারাপ ধরনের ঘা সেরে যায়।
গাজরের পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Carrots:
প্রতি ১০০ গ্রামে গাজরের উপাদান-
- এনার্জি – ৪১ কিলাে কালােরি
- ভিটামিন সি – ৭ শতাংশ
- কার্বোহাইড্রেট – ৯.৬ গ্রাম
- সােডিয়াম – ৬৯ মিলিগ্রাম
- প্রােটিন – ০.৯৩ গ্রাম
- পটাসিয়াম – ৩২০ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট – ০.২৪ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৩ শতাংশ
- ডায়েট তন্তু – ২.৮ গ্রাম
- আয়রন – ২ শতাংশ
- ভিটামিন এ – ১০৪ শতাংশ
সতকর্তা: গাজর চাষের সময় গাজরের পাতায় ব্যাকটেরিয়া ধরে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই গাজর কেনা ও রান্নার আগে সতর্ক থাকা উচিত।