সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আলু খান – জানুন আলুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: আলু অম্ল নাশ করে। রান্না করা আলু বায়ুবর্ধক। কিন্তু কাঁচা আলু খাওয়া সবচেয়ে ভালাে। খেতে বসে তরকারীর সঙ্গে অথবা খেয়ে উঠে খােসাসমেত চিবিয়ে চিবিয়ে খেলে অম্লরােগ দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, শরীর পুষ্টিলাভ করে, দেহে লাবণ্য ফিরে আসে। এমনকি ডায়াবেটিস রােগীদেরও প্রতিদিন কাঁচা আলু এবং ভাত রুটি কম খেয়ে আলুর তরকারী, আলু সেদ্ধ খাওয়া উচিত। আলু খুবই সহজ পাচ্য।
আলুর বিজ্ঞানসম্মত নাম: Solanum tuberostut
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আলু খান – জানুন আলুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
আলু শর্করা (২২.৬ গ্রাম) জাতীয় খাদ্য হলেও প্রােটিন (১.৬ গ্রাম) থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম আলুর খাদ্য যােগ্য অংশে। এটি উৎকৃষ্ট ছিবড়া জাতীয় খাদ্য। ছােট আলু ও অঙ্কুরিত আলু বর্জনীয়। বেলে আলু সবচেয়ে ভালাে। খােসার নিচে (Fe) লােহা থাকে বলে খােসা ফেলে সেদ্ধ বা রান্না করতে নেই। আলু সহজে হজম হয়। বেশি আলু খেলে প্রােটিনের কাজ হয়।
আলুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১. ক্যানসার প্রতিরােধ: আলুতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, ক্যারােটেনয়েডস আর ফ্ল্যাভােনয়েডস। এই সমস্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস ক্যানসার প্রতিরােধ করতে সহায়ক।
২. স্ট্রেস কমাতে: আলুতে থাকা ভিটামিন-বি, সেরােটোনিন, ডােপামাইন, অ্যাড্রিনালিন হরমােন তৈরি করতে সহায়ক। ফলে আলু স্ট্রেস কমাতে উপকারী।
আরও পড়ুন: মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৩. হরমােন সমস্যা: ব্রেন-এর সঠিক পরিচালনাতে গ্লুকোজ লেভেল, অক্সিজেন সাপ্লাই, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, কিছু হরমােন, অ্যামাইনাে অ্যাসিড যেমন: ওমেগা-থ্রি প্রভৃতির থাকা প্রয়ােজন। এই সমস্ত কিছুই আলুতে পূরণ হয়।
৪. নতুন কোষ তৈরিতে: আলুতে রয়েছে ভিটামিন-বি সিক্স, যা শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
৫. দাঁত ও হাড়ের জন্য: বেশি পরিমাণে আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক রয়েছে আলুতে। এই সব উপাদান গুলােই দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ ভালাে।
৬. ত্বককে উজ্বল করতে: ত্বকে বলিরেখা, ফাইন লাইন্স প্রতিরােধ করতে সহায়ক আলু। এটি ত্বকের ডার্ক স্পট কমাতেও সাহায্য করে। আলু ত্বকে কোলাজেন তৈরি।
৭. ওজন বৃদ্ধি: যেহেতু আলুতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় কাবােহাইড্রেট আর কম পরিমাণে প্রােটিন, তাই ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
৮. পেটের সমস্যা: যেহেতু আলু খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়, তাই পেটের কোনও সমস্যা হলে আলু উপকার দেয়।
৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে: আলু হৃদরােগ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। এছাড়া আলু খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আলু স্কার্ভি রােগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১০. ক্যানসারে কার্যকরী: আলুর মধ্যে থাকা ফলেট ডি.এন.এ. তৈরী করতে সাহায্য করে। দেহের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আলু। ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আলুতে থাকে, তাই কোলন ক্যানসারে দারুণ কার্যকরী।
১১. পুড়ে যাওয়া: আলুর রস যে কোনও কাটা ছেড়া, পুড়ে যাওয়া ও ত্বকের সমস্যায় কার্যকরী। আলুর খোসা ছাড়িয়ে তা পেস্ট করে লাগালে উপকার পাবেন।
১২. স্নায়বিক দুর্বলতা: সামগ্রিক পুষ্টিগুণে আলু অনন্য। আলু দেহ সচল রাখতে দারুণ সাহায্য করে। এতে ঘুম ভালাে হয়। মস্তিষ্কের চাপ নেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ায় আলু। আলুতে থাকা কোলিন কোষের গঠন বজায় রেখে স্নায়বিক দুর্বলতা কমায়।
আরও পড়ুন: ঢেঁড়শ এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১৩. যকৃতের বিকার: খাওয়ার আগে আধ কাপ আলুর রস খেলে যকৃতের বিকার সারে ও পাথুরি রােগ (Gallstone) নিরাময়ে ভালাে কাজ দেয়।
১৪. মাথার যন্ত্রণা: কপালে আলুর রস লাগালে মাথার যন্ত্রণা দূর হয়। আলু খোসা সমেত থেঁতো করে তার রস নিয়ে কপালে লাগালে আরাম পাবে।
আলুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Potatoes:
প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে উপাদান গুলি-
- কার্বোহাইড্রেট – ২২.৬০ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ২০.০০ মিলিগ্রাম
- প্রােটিন – ১.৬০ গ্রাম
- ফসফরাস – ৪০.০০ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট – ০.১০ গ্রাম
- লােহা – ০.৭০ মিলিগ্রাম
- খাদ্য আঁশ – ০.৪০ গ্রাম
- সােডিয়াম – ১১.০০ মিলিগ্রাম
- জল – ৭৪.৭০ গ্রাম
- পটাসিয়াম – ২৪৭.০ মিলিগ্রাম
- খনিজ পদার্থ – ০.৪০ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ১০.০০ মিলিগ্রাম
- তাপশক্তি – ৯৭ কিলােক্যালােরি
- তামা – ০.২০ মিলিগ্রাম
সতর্কতা:
(ক) বেশি পরিমাণে আলু খেলে মােটা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
(খ) আলুতে বেশি মাত্রায় শ্বেতসার (Starch) থাকায় ডায়াবেটিস রােগের প্রবণতা বাড়ে।