ত্বকের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়: রূপচর্চা কথাটির অর্থ হলো রূপের পরিচর্চা। আর এই রূপচর্চার প্রথম ও প্রধানতম অঙ্গ হলো ত্বক। সুন্দর, কোমল, মসৃন,পরিচ্ছন্ন ত্বক কে না চায়। সঠিক উপায়ে সঠিক পরিচর্যার সাহায্যে আপনিও হতে পারেন রূপময়ী ত্বকের অধিকারী। তাই আকর্ষণীয় ত্বকের পরিচর্চা শুরু করার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার ত্বকের গঠন ও প্রকৃতি।
Domestic Way To Skin Care
ত্বকের প্রকারভেদ:
আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সাধারণত, চার প্রকারের ত্বক দেখা যায়।
১) স্বাভাবিক বা সাধারণ ত্বক।
২) শুষ্ক বা শুকনো ত্বক।
৩) তৈলাক্ত বা তেলতেলে ত্বক।
৪) মিশ্র ত্বক।
আপনার ত্বক কেমন তা চিনবেন কিভাবে:
রাতে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে কোনো প্রসাধন বা ক্রিম না লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়ে এক টুকরো টিস্যু পেপার নিয়ে সারা মুখে ভালোভাবে মেলে দিন নাকের দুপাশে, কপালে, গালে, থুতুনিতে, গলায় ভালো ভাবে চাপদিন ঘষবেন না। কিছুক্ষন পর তুলেনিন ও লক্ষ্য করুন, যদি ওই টিস্যু পেপারে তেলের ছাপ অল্প থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার শুষ্ক ত্বক। আর তেলের ছাপ বেশি থাকলে বুঝবেন তৈলাক্ত ত্বক। আর কপাল, নাক, থুতুনিতে ও বাকি অংশে শুকনো থাকলে বুঝবেন মিশ্র ত্বক।
ত্বকের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায় – ত্বকের পরিচর্যার প্রকারভেদ
সাধারণ চারটি পর্যায়ে সমস্ত ধরণের ত্বকের পরিচর্চা করা হয়ে থাকে।
ক) ক্লিনজিং
খ) ফ্রেশনিং
গ) ময়শ্চারাইজিং
ঘ) কন্ডিশনিং।
আরও পড়ুন: ত্বকের ফেসিয়ালের ৯ টি বিশেষ পদ্ধতি
১. ক্লিনজিং: সারাদিন নানা রকম কাজ কর্ম করার ফলে আমাদের ত্বকের উপরিভাগে ধুলো ময়লার আস্তরণ জমে। যার ফলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে চামড়ার ক্ষতি হয়। এর হাত থেকে ত্বকে বাঁচাতে দরকার ক্লিনজিং এর।
A. সমস্তরকম ত্বকের জন্য ক্লিনজিং হিসাবে যে কোনো গায়ে মাখা সাবান ব্যাবহার করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চন্দন বা লেবুযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বক দিনে দু-বার অর্থাৎ সকালে একবার ও সন্ধ্যা বা রাতে একবার ক্লিনজিং করুন।
B. শুষ্ক ত্বকের জন্য গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করুন। সাবান সরাসরি মুখে না লাগিয়ে হাতে ঘষে ফ্যানা করে নিন। সেই ফ্যান মুখে লাগিয়ে আন্টিক্লক ওয়াইজ ম্যাসাজ করার পর প্রথমে উষ্ণ গরম জলে ও পরে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন।
C. বেসনও খুব ভালো ক্লিনজিং এর কাজ করে। ২ থেকে ৩ চামচ বেসন ১ পট বা কোনো প্লাস্টিকের ছোট বালতির এক বালতি জলে গুলে মুখ সমেত সারা শরীরে মেখে কিছুক্ষন পরে উষ্ণ গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
D. দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার মুখে ঠান্ডা জলের ঝাটকা দিন। স্নানের পরে ও মুখ ধোয়ার পরে নারাম তোয়ালে দিয়ে খুব আলতো ভাবে চেপে সমস্ত জল মুছে নিন। তোয়ালে দিয়ে ত্বকের উপর ঘষবেন না। কারণ আমাদের ত্বক খুবই স্পর্শকাতর।
২)ফ্রেশনিং: ক্লিনজিং-এর পর অবশ্যই ত্বকের ফ্রেশনিং করা দরকার। ক্লিনজিং-এর পরও লােমকূপের মধ্যে ময়লা থেকে যেতে পারে। ফ্রেশনিং করলে পুরাে ময়লা বেরিয়ে গিয়ে ত্বকের গ্রন্থিগুলাে ঠাণ্ডা হয়ে বিশ্রাম পায়। এরফলে ত্বক আরও কোমল হয়। নামী কোম্পানীর ফ্রেশনার ছাড়া ঘরােয়া পদ্ধতিতে প্রস্তুত ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন।
A. শশা গােল গােল করে কেটে মুখের উপর বুলিয়ে নিতে পারেন, বা শশার রস বের করে ছেকে নিয়ে রসটা তুলােয় করে মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
B. আলু থেতাে করে রসটা তুলাে দিয়ে মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর একই উপায়ে ধুয়ে ফেলুন।
C. লেবুর রস একই উপায়ে লাগিয়ে দশ মিনিট পর একই উপায়ে ফ্রেশনিং করা জায়গাগুলাে ধুয়ে ফেলুন।
D. দামী কোম্পানীর ফ্রেশনার বা ঘরােয়া পদ্ধতিতে তৈরী ফ্রেশনার যাই ব্যবহার করুন, প্রথমে তুলাে জলে ভিজিয়ে চিপে বাড়তি জল বের করে নিয়ে এ ভেজা তুলােয় ফ্রেশনার লাগিয়ে ক্লিনজিং করা সমস্ত জায়গায় ফ্রেশনার লাগান। দশ মিনিট পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ভাল করে ফ্রেশনার করা জায়গাগুলাে ধুয়ে ফেলুন। এবং নরম তােয়ালে দিয়ে আলতােভাবে মুছে নিন। শুষ্ক ত্বকে অ্যাস্ট্রিনজেন ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
৩)ময়শ্চারাইজিং: ময়েশ্চারাইজার ত্বককে আর্দ্র করে। রােদ, হাওয়া, বাতাস থেকে ত্বককে নিরাপদে রাখে। তাই ফ্রেশনিং-এর পরে দরকার ময়শ্চারাইজিং এর। যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে যারা অতিরিক্ত মেকাপ করেন। তারা মেকাপের আগে অল্প ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ময়শ্চারাইজার বাতাসের জলীয় বাষ্প টেনে নেয় বলে রুক্ষ শুষ্ক ত্বক হয়ে ওঠে কোমল মসৃণ। সঠিক পদ্ধতিতে ময়শ্চারাইজার লাগান। প্রথমে পনের কুড়ি ফোটা ময়শ্চারাইজার হাতের চেটোতে নিয়ে দুই হাতের তালুতে মাখিয়ে নিন। এবার আঙ্গুলের সাহায্যে নীচ থেকে উপর টানে ঘুরিয়ে সারা মুখে ময়শ্চারাইজার লাগান। মেকাপের দশ মিনিট আগে ময়শ্চারাইজার লাগান। এতে মেকাপ ত্বকের সাথে ভালাে করে মিশে গিয়ে সর্বত্র সমান ভাবে মেকাপ হয় এবং ত্বককে মেকাপের হাত থেকে রক্ষা করে।
৪)কন্ডিশনিং: কন্ডিশনিং এর কাজ হল ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল করে তােলা। চড়া রােদ, অতিরিক্ত শুষ্ক হাওয়া ও বাতাসের ধুলিকণার প্রভাবে ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এই ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের প্রয়ােজনীয় পুষ্টি জোগায় বাজারে বিক্রিত বিভিন্ন নামী কোম্পানীর ক্রীম, কোল্ড ক্রীম, নারিশিং ক্রীম, ভিটামিন ক্রীম, হ্যান্ড এন্ড বডি লােশন, ড্রাইস্কিন ক্রীম ইত্যাদি। সঠিক পরিমাণে ত্বকের উপরে এই সমস্ত ক্রীম বা লােশনের ব্যবহার ও সঠিক পদ্ধতি মেনে চলাই হল কণ্ডিশনিং এর আসল কাজ।
রাতে শােবার আগে চুল আঁচড়ে উঁচু করে বেঁধে নিন। যাতে মুখে চুল না পড়ে। এবার হাত, মুখ, পা ভালাে করে ধুয়ে নরম তােয়ালে দিয়ে আলতাে ভাবে চেপে জল মুছে নিন। এবার আঙুলে ক্রীম লাগিয়ে আলতাে করে নীচ থেকে উপর টানে মুখ, ঘাড়, গলায় ক্রীম লাগান। চোখের তলায় খুব সাবধানে। ক্রীম লাগাবেন। হাতের আটটি আঙুল দিয়ে উর্ধমুখী টানে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার কিছুক্ষণ পরে নরম তােয়ালে বা তুলাের প্যাড দিয়ে আলতাে করে। মুখ, গলা, ঘাড় থেকে বাড়তি ক্রীম মুছে ফেলুন।