ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

লুই পাস্তুর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali

Louis Pasteur Biography in Bengali
Louis Pasteur Biography in Bengali
Rate this post

লুই পাস্তুর জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Louis Pasteur Biography in Bengali. আপনারা যারা লুই পাস্তুর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী লুই পাস্তুর এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

লুই পাস্তুর কে ছিলেন? Who is Louis Pasteur?

লুই পাস্তুর (ডিসেম্বর ২৭, ১৮২২ – সেপ্টেম্বর ২৮, ১৮৯৫) একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে অণুজীব অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়ের পচনের জন্য দায়ী। জীবাণুতত্ত্ব ও বিভিন্ন রোগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

লুই পাস্তুর জীবনী – Louis Pasteur Biography in Bengali

নামলুই পাস্তুর
জন্ম27 ডিসেম্বর 1822
পিতাজিন জোসেফ পাস্তুর
মাতাজিন এতিয়েনেট রোকি
জন্মস্থানডলে, জুরা, ফ্রান্স
জাতীয়তাফরাসি
পেশাঅণুজীব বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ
মৃত্যু28 সেপ্টেম্বর 1895 (বয়স 72)

bengaliportal

 

লুই পাস্তুর এর জন্ম: Louis Pasteur’s Birthday

লুই পাস্তুর 27 ডিসেম্বর 1822 জন্মগ্রহণ করেন।

বিগত শতকের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তার অন্ধকার মানুষের জীবনকে ঘিরে রেখেছিল। সেই যুগে উপযুক্ত ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হত, তার জীবন ও জীবিকার পশু – সম্পদ হঠাৎ মারণ – মড়কে নির্মূল হয়ে যেত। বিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্ন থেকে বিভিন্ন মনীষীর আবির্ভাবের পর তাঁদের জীবন ও কর্মের আলোকে অন্ধকার যুগের অনিশ্চয়তার বিভীষিকা ধীরে ধীরে দূর হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভগৎ সিং জীবনী

আরও পড়ুন: মাতঙ্গিনী হাজরা জীবনী

আরও পড়ুন: জোন অব আর্ক জীবনী

আরও পড়ুন: আব্রাহাম লিংকন জীবনী

আরও পড়ুন: জর্জ ওয়াশিংটন জীবনী

জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোর বিচ্ছুরণ মানুষের জীবনকে আলোকময় করেছে। মানবসভ্যতা লাভ করেছে আলোকময় নতুন পথের দিশা। সেই অন্ধকার যুগে যাঁরা মানব সমাজকে আলোর সন্ধান দিয়েছিলেন, সেই ক্ষণজন্মা মহামানবদের মধ্যে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর অন্যতম। দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতক ধরে তিনি মানব সমাজকে দিয়েছেন নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উপহার। তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগের ওষুধ, জৈবিক অম্লের সৃষ্টি, জীবাণুর সন্ধান, রেশমগুটির অকাল মৃত্যু রোধ ও জলাতঙ্ক রোগের নিরাময়ের উপায়।

লুই পাস্তুর এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Louis Pasteur’s Parents And Birth Place

১৮২২ খ্রিঃ ২৭ শে ডিসেম্বর পূর্ব ফ্রান্সের দেল শহরে এক চর্মব্যবসায়ীর পরিবারে জন্মেছিলেন পাস্তুর। কালক্রমে নিজ অধ্যবসায় ও সাধনার গুণে সেই দরিদ্র বালকই পরবর্তীকালে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী ও মানবপ্রেমিক রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই সময় গবাদি পশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স নামে একপ্রকার মারাত্মক রোগ দেখা যেত। হাজার হাজার পশু প্রতি বছর এই দুরারোগ্য রোগের শিকার হত। রোগের কোন প্রতিকার মানুষের জানা ছিল না বলে অসহায় ভাবে ভাগ্যের ওপরেই তাদের নির্ভর করে থাকতে হত।

লুই পাস্তুর এর কর্ম জীবন: Louis Pasteur’s Work Life

মানুষের এই দুরবস্থা মোচনের জন্য অনেক মরমী বিজ্ঞানীই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। রোগের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের চেষ্টায় তারা গবেষণায় ব্রতী হয়েছিলেন। রবার্ট কোখ্ ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত জীবাণুতত্ত্ববিদ। অ্যানথ্রাক্স রোগের বিষয়ে তিনিও যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। একবার একটি রোগাক্রান্ত পশুর রক্ত পরীক্ষা করতে বসে পাস্তুর বুঝতে পারলেন, এক ধরনের মারাত্মক জীবাণুর প্রভাবই অ্যানথ্রাক্স রোগের কারণ। জীবাণু আবিষ্কার করার পরে কোন সুস্থ পশুদেহে ওই রোগের জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে নিজের ধারণার সত্যতা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হলেন।

তিনি বুঝতে পারলেন কোনভাবে বাইরে থেকে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণু সুস্থদেহে প্রবেশ করলেই ওই রোগে আক্রান্ত হতে হয়। কোখ্ – এর চেষ্টায় রোগজীবাণু আবিষ্কৃত হয়েছিল। তিনি কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করে যেতে পারেননি। পাস্তুর জানালেন, পরিমিত পরিমাণে অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণুকে সুস্থ পশুর দেহে প্রবেশ করালে পশুটি রোগাক্রান্ত তো হবেই না, উপরন্তু দেহে রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা জন্মাবার ফলে ভবিষ্যতে তার এই রোগে আক্রান্ত হবার ভয় থাকবে না। পশুরোগ বিশেষজ্ঞরা এই অদ্ভুত গবেষণাকে স্বীকার করে নিতে পারলেন না। ফলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদের সৃষ্টি হল।

বিজ্ঞানী পাস্তুর তার আবিষ্কারের ফলাফল সর্বসমক্ষে প্রমাণ করবার জন্য নিঃশঙ্ক চিত্তে এগিয়ে এলেন। পরীক্ষা চালাবার জন্য তিনি পঞ্চাশটি সুস্থ ভেড়াকে নির্বাচন করলেন। প্রথম পর্যায়ে পঁচিশটি ভেড়ার দেহে মৃদু পরিমাণে অ্যানথ্রাক্স রোগ জীবাণু নিয়ে টিকা দেওয়া হল। এই ভেড়াদের এবারে আলাদা করে রাখা হল। কিছুদিন পরে পঞ্চাশটি ভেড়ার শরীরেই তীব্র পরিমাণে অ্যানথ্রাক্স রোগজীবাণু প্রয়োগ করা হল। এবারেও কিছুদিন অপেক্ষা করলেন বিজ্ঞানী। একদিন দেখা গেল অদ্ভুত কাণ্ড। যে পঁচিশটি ভেড়াকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়নি তাদের সবকটিই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

কিন্তু যেই পঁচিশটি ভেড়াকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়েছিল তাদের কেউই অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়নি। এবারে কেবল স্বীকার করে নেওয়া নয়, বিজ্ঞানীর জয়কারে সকলে গলা মেলালেন ৷ তারা বুঝতে পারলেন পরিমিত পরিমাণ রোগজীবাণু সুস্থদেহকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দান করে। এই ঘটনার পর থেকেই পৃথিবীর সর্বত্র টিকাদানের পদ্ধতি চালু হল। মানুষ এবং গবাদি পশু — উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রচলিত হল। এইভাবেই বিজ্ঞানের ইতিহাসে মহান লুই পাস্তুর নিজের স্থানটি নির্দিষ্ট করে নিয়েছিলেন।

সমগ্র জীবন তিনি ব্যয় করেছিলেন জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে। বিভিন্ন তথ্য আবিষ্কার করেছেন। জীবাণু সম্বন্ধে তার মত এত বেশি আবিষ্কার আর কোন বিজ্ঞানী করতে পারেন নি। তিনি ছিলেন পৃথিবী শ্রেষ্ঠ জীবাণুতত্ত্ববিদ। ছেলেবেলা থেকেই দরদী ও পরদুঃখকাতর হবার শিক্ষা ও প্রেরণা পিতার কাছ থেকে লাভ করেছিলেন। উপযুক্ত শিক্ষালাভের জন্য পিতার কাছ থেকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করেছিলেন তিনি। ফলে ছাত্র হিসেবে স্কুল কলেজ সর্ব ক্ষেত্রেই কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে ছিলেন।

১৮৪৭ খ্রিঃ রসায়ন বিজ্ঞানে মৌলিক গবষেণার জন্য তিনি ডক্টর উপাধি লাভ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদ নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেন। একই সঙ্গে চলল তাঁর গবেষণার কাজ। রসায়নবিজ্ঞানী পাস্তরের প্রথমদিকে গবেষণার বিষয় ছিল রেশমিক অ্যাসিড। তাঁর এই গবেষণার ফলাফল ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর গবেষণাকে ভিত্তি করে পরবর্তীকালে লিভোটার্টারিক অ্যাসিড নামে একটি জৈব অ্যাসিড আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। রসায়ন নিয়ে জীবন শুরু করলেও মানুষের প্রয়োজনে জীবাণুতত্ত্ব, পশু চিকিৎসা, কীটপতঙ্গ ও শারীরবিজ্ঞানের বিষয়েও তাঁকে যথেষ্ট পরিশ্রম স্বীকার করতে হয়েছে।

ফ্রান্সের রেশম চাষীরা একবার খুবই বিপদের মধ্যে পড়ে গেল। রেশম গুটির অকালমৃত্যুর ফলে রপ্তানি শিল্পের বাজারে সঙ্কট দেখা দিল। বিপর্যস্ত চাষীদের সঙ্গে দেশের সরকারও চিন্তিত হয়ে পড়ল। শেষ পর্যন্ত পাস্তুরকেই দেওয়া হল গুটি পোকার মড়কের কারণ ও তার প্রতিষেধকের উপায় আবিষ্কারের দায়িত্ব। রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবেই পাস্তুরের পরিচিতি। জীবাণু নিয়ে তিনি এর আগে কখনো গবেষণা করেন নি। তৎসত্ত্বেও, জনগণের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে সরকার পাস্তুরের গবেষণার ওপরেই নির্ভর করল।

পাস্তুর বিপন্ন স্বদেশবাসীর কল্যাণের কথা বিবেচনা করে দায়িত্ব মাথা পেতে নিলেন। প্রবল উৎসাহ নিয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আবিষ্কার করতে সমর্থ হলেন গুটিপোকার মড়কের কারণ এবং তার প্রতিকারের উপায়। দেশবাসী অকুণ্ঠ প্রশংসা জানাল পাস্তরের প্রতিভাকে। সেই সঙ্গে তাদের কৃতজ্ঞতা। সরকার যে যোগ্য লোককেই দায়িত্ব দিয়েছিল সে বিষয়ে আর কারোরই দ্বিমত রইল না। এরপরে পাস্তুর যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছিলেন এর ফলেই বিখ্যাত পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল।

তারই উপকার ভোগ করছে আজ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের মানুষ। আঙুর বিট ইত্যাদির প্রচুর ফলন হয় ফ্রান্সে। ফলে সে দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মদ রপ্তানি ব্যবসায়। সেই ব্যবসায়ে যতটা অর্থাগম সম্ভব তার চেয়েও কম হতো। কারণ মদ বেশি দিন রাখা সম্ভব হত না। গেঁজে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। একবার এক সুরা ব্যবসায়ী পাস্তরকে অনুরোধ করলেন এই সমস্যার একটা প্রতিকারের উপায় উদ্ভাবনের জন্য। যথারীতি আবার গবেষণায় বসতে হল পাস্তরকে।

মদের প্রধান উপাদান হল অ্যালকোহল বা সুরাসার। এই অ্যালকোহল তৈরি করা হয় আঙুর, বিট, বিভিন্ন ফল, বার্লি, চাল, ঝোলাগুড় প্রভৃতিকে পচিয়ে। গবেষণার পরে পাস্তুর বুঝতে পারলেন, একপ্রকার অদৃশ্য জীবাণুর প্রভাবেই ফল, সবজি বা অন্যান্য বস্তু অল্পসময়ের মধ্যেই গেঁজিয়ে ওঠে। তিনি এ – ও বুঝতে পারলেন, দুধ যে টকে দই হয়ে যায়, রুটি বা মাখনের ওপর ছাতা পড়ে — এসবের মূলেও রয়েছে অদৃশ্য জীবাণুর রহস্য।

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী

আরও পড়ুন: মুকুন্দ দাস জীবনী

আরও পড়ুন: অতুলপ্রসাদ সেন জীবনী

আরও পড়ুন: শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী

আরও পড়ুন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী

অদৃশ্য জীবাণুদের সম্বন্ধে গবেষণা করে বহু মূল্যবান তথ্য প্রকাশ করলেন পাস্তুর। কিছু ক্ষেত্রে জীবাণু নাশের উপায় উদ্ভাবন করলেন তিনি। এই পর্যায়েই তিনি আবিষ্কার করেন পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি। দুধ সংরক্ষণের জন্য এই পদ্ধতিটি এখনো বহু দেশে প্রচলিত রয়েছে। পাস্তুর আবিষ্কৃত পদ্ধতির মূল বিষয়বস্তু হল, উত্তাপের দ্বারা জীবাণুকে ধ্বংস করে দুধ বা কোন খাদ্যকে বায়ুশূন্য করে যদি সংরক্ষণ করা যায় তাহলে সেই খাদ্যে জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়। জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটা পর্যন্ত তা পচে গেঁজে উঠবার সম্ভাবনা থাকবে না। ইতিপূর্বে পাউসেট নামে এক বিজ্ঞানী প্রচার করেছিলেন যে জীবাণুরা আপনা থেকেই জন্মায় ৷ পাস্ত্রর পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেছিলেন যে পাউসেটের সিদ্ধান্ত ভুল। জীবাণুরা স্বয়ং সৃষ্ট নয়।

এরা অদৃশ্যভাবে বাতাসে বিচরণ করে বলে কোন বস্তুতে এদের ক্রিয়াশীলতাকে স্বয়ংসৃষ্ট বলে বোধ হয় ৷ পাস্তুরাইজেশন আবিষ্কারের পরবর্তী পর্যায়েই পাস্তুর অ্যানথ্রাক্স রোগ সংক্রান্ত গবেষণা করেছিলেন। গবাদিপশুর রোগ নিরোধক টিকা তারই দান। গৃহপালিত পাখী, মুরগী প্রভৃতির জন্য যে কলেরা রোগের টিকার ব্যবস্থা রয়েছে, তা – ও পাস্তরের অবদান। জনকল্যাণে পাস্তরের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান জলাতঙ্ক রোগের সিরাম (র্যাবিজ ভাইরাস) আবিষ্কার। পাগলা কুকুর, বাঁদর, শেয়াল প্রভৃতি কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যেত।

এই রোগের কারণ আবিষ্কারের জন্য দীর্ঘদিন গবেষণায় ডুবে থাকতে হল তাঁকে। ইতিমধ্যে ১৮৬৫ খ্রিঃ তার পিতার মৃত্যু হল। কয়েক মাস পরেই তার ছোট মেয়ে অসুখে ভুগে মারা যায়। পরের বছরে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাল আর এক মেয়ে। এসব দুর্ঘটনার কয়েক বছর আগেই ১৮৫৯ খ্রিঃ তাঁর বড় মেয়েও টাইফয়েডের শিকার হয়েছিল। স্বজন বিয়োগ ব্যথা নিয়েই গবেষণার কাজ করে চলেছিলেন পাস্তুর। তিনি একসময় বুঝতে পারলেন মারাত্মক জলাতঙ্ক একধরনের ভাইরাস ঘটিত রোগ।

কুকুর, শেয়াল, নেকড়ে প্রভৃতি প্রাণীর লালায় এই ভাইরাস থাকে বলেই এরা কামড়ালে সুস্থ প্রাণীদেহে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে। সেই ভাইরাস শরীরের নার্ভ তন্ত্রকে আক্রমণ করে। ফলে রোগীর ক্ষতস্থান ফুলে ওঠে। প্রবল জ্বর দেখা দেয়। অকারণে ভয় পায়, ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। গলার পেশীর সংকোচন ঘটার ফলে রোগী জলপান করতে পারে না — জল দেখলেই ভীত হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে শরীর আড়ষ্ট হয়ে কর্মশক্তি হারায়। কুকুর বা শেয়াল কামড়ানোর দশ থেকে সত্তর দিনের মধ্যেই শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগ আত্মপ্রকাশের পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।

দীর্ঘ গবেষণার পর পাস্তুর জলাতঙ্কের ভাইরাস বা সিরাম আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। তিনি এই সিরাম প্রথম প্রয়োগ করেন যেই বালকের দেহে তার নাম জোসেফ লিস্টার। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছেলেটিকে একটা পাগলা কুকুর কামড়েছিল। পাস্তুর তার দেহে সিরাম প্রয়োগ করেছিলেন নিজ হাতে। ছেলেটির জলাতঙ্ক হয়নি। সেই দিন থেকেই অ্যানথ্রাক্স রোগের মত ভয়াবহ জলাতঙ্ক রোগের ভীতিও মানুষের মন থেকে দূর হয়। পাস্তুরের আবিষ্কারের ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। অথচ তিনি ছিলেন একজন রসায়ন বিজ্ঞানী। কখনো চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

তার আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। পাস্তুর আজ নেই কিন্তু পৃথিবীর দেশে দেশে তাঁর শ্রম ও সাধনার প্রতীক রূপে গড়ে উঠেছে পাস্তুর ইনসটিটিউট। প্যারিস শহরের উপকণ্ঠে স্থাপিত হয়েছে পাস্তুরের মর্মর মূর্তি, তার সঙ্গে রয়েছে একটি মেষপালক ও একটি কুকুর। অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্ক রোগ নিরাময়তার জন্য ওভাবেই শ্রদ্ধার্পণ করেছে তার কৃতজ্ঞ দেশবাসী সমস্ত পৃথিবীর জনগণের হয়ে।

আরও পড়ুন: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী

আরও পড়ুন: চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন জীবনী

আরও পড়ুন: চার্লস ডিকেন্স জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী

পাস্তুর ছিলেন কেবল বিজ্ঞানী নয়, শ্রেষ্ঠ মানব হিতৈষী। মনুষ্যতর প্রাণীরাও তাঁর কল্যাণ স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয় নি। শেষ বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেহের এক পাশ অবশ হয়ে গিয়েছিল পাস্তুরের। তার মধ্যেও তিনি তাঁর গবেষণা অব্যাহত রেখেছিলেন।

লুই পাস্তুর এর মৃত্যু: Louis Pasteur’s Death

১৮৯৫ খ্রিঃ ১৮ ই সেপ্টেম্বর প্যারিসে এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান হয়। একবার ফ্রান্সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য জনসাধারণের ভোট গ্রহণ করা হয়। সেই নির্বাচনে পাস্তুরই পেয়েছিলেন সর্বাধিক ভোট। মানব হিতৈষী বিজ্ঞানী পাস্তুর ছিলেন স্বদেশ প্রেমিক। তিনি বলতেন, “প্রজাতন্ত্রের পবিত্রতা রক্ষার জন্য আমি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত আছি …. বিপদের মধ্যে জীবনই প্রকৃত জীবন …. যখন পৃথিবীর কোনও দেশে জ্ঞানের আলো আসে ফ্রান্স তাকে অভিনন্দিত করে, আর যখন বিদেশে কোনও প্রতিভাবান ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে ফ্রান্স তার জন্য শোকে কাঁদে।”

Leave a Reply