ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

উইলিয়াম রামসে জীবনী – William Ramsay Biography in Bengali

William Ramsay Biography in Bengali
William Ramsay Biography in Bengali

উইলিয়াম রামসে জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে William Ramsay Biography in Bengali. আপনারা যারা উইলিয়াম রামসে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী উইলিয়াম রামসের জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

উইলিয়াম রামসে কে ছিলেন? Who is William Ramsay?

স্যার উইলিয়াম র‍্যামজি (২ অক্টোবর ১৮৫২ – ২৩ জুলাই ১৯১৬) ছিলেন একজন স্কটীয় রসায়নবিদ। তিনি নিষ্ক্রিয় গ্যাস আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯০৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ঐ একই বছর আর্গন নামক নিষ্ক্রিয় গ্যাসটি আবিষ্কারের জন্য তার সহকর্মী লর্ড রেলি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তার আর্গন, হিলিয়াম, নিয়ন, ক্রিপ্টন পৃথকীকরণের কাজের ফলে পর্যায় সারণীতে একটি নতুন পরিচ্ছেদ যুক্ত হয়।

উইলিয়াম রামসে জীবনী – William Ramsay Biography in Bengali

নামউইলিয়াম রামসে
জন্ম2 অক্টোবর 1852
পিতাউইলিয়াম রামজে
মাতাক্যাথরিন রবার্টসন
জন্মস্থানগ্লাসগো, স্কটল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
পেশারসায়নবিদ
মৃত্যু23 জুলাই 1916 (বয়স 63)

bengaliportal

 

উইলিয়াম রামসের জন্ম: William Ramsay’s Birthday

উইলিয়াম রামসে 2 অক্টোবর 1852 জন্মগ্রহণ করেন।

উইলিয়াম রামসের পিতামাতা ও জন্মস্থান: William Ramsay’s Parents And Birth Place

উইলিয়াম রামসে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে ১৮৫২ খ্রিঃ ২ রা অক্টোবর বিজ্ঞানী উইলিয়াম রামসের জন্ম। তার বাবা ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার। স্বাভাবিক ভাবেই বাল্য বয়স থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হবার কথা তার। কিন্তু তিনি থাকতেন বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আরও পড়ুন: গণেশ ঘোষ জীবনী

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী

আরও পড়ুন: জোসেফ স্তালিন জীবনী

আরও পড়ুন: মাও সেতুং জীবনী

আরও পড়ুন: বারীন্দ্রকুমার ঘোষ জীবনী

উইলিয়াম রামসের শিক্ষাজীবন: William Ramsay’s Educational Life

তাই বলে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন এসব বিষয়েও যে তার ভীতি ছিল তা নয়। বিজ্ঞান ছাড়া আর সব বিষয়েই তিনি ছিলেন রীতিমত চৌকস। তার ওপরে তাঁর মধ্যে ছিল প্রবল ধর্মবিশ্বাস। গীর্জায় যাতায়াত করতে, পাদ্রীদের মুখে যিশুর গুণগান শুনতেই যেন বেশি পছন্দ করতেন। অভিভাবকরা সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, স্কুলের শিক্ষাটুকু শেষ করেই হয়তো রামসে যাজক হয়ে যাবেন।

বাড়ির ধর্মীয় পরিবেশে লালিত পালিত হয়ে এভাবেই এগিয়ে চলেছিল বালক উইলিয়াম রামসের জীবন। এর মধ্যে হঠাৎই ঘটল এক বিস্ময়কর কান্ড। উইলিয়াম রামসে বিরূপ হয়ে উঠলেন ধর্মের প্রতি। নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ঘোষণা করলেন, স্কুলে তিনি বিজ্ঞান পড়বেন। ধর্মের পথে নয়, বিজ্ঞানী হয়ে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন।

অনেকে উইলিয়াম রামসের জীবনের এই আকস্মিক পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ধারণা করেছেন, হয়তো ইতিমধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ের কোন বই উইলিয়াম রামসে পড়ে থাকতে পারেন। যথারীতি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেন উইলিয়াম রামসে। শিক্ষকেরা তাঁর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করে বিস্মিত হন।

স্কুলের পাঠ শেষ হতে হতেই বিজ্ঞানের হালফিল বিষয়ের খবরাখবর ভালভাবে জানা হয়ে গেল উইলিয়াম রামসের। শেষ পরীক্ষায় বিজ্ঞানে সকলের ওপরে নাম্বার পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিলেন তিনি। এরপর আর আটকায় কে। নিজের পথ নিজেই ঠিক করে নিয়েছেন। সোজা চলে এলেন জার্মানি। হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতকীর্তি বিজ্ঞানী বুনসেন। উইলিয়াম রামসে বিশ্লেষণী রসায়নের উচ্চতর শিক্ষা নিতে লাগলেন বুনসেনের কাছেই।

বুনসেনের গবেষণার আওতায় থেকে নতুন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে লাগলেন রামসে। রসায়ন বিভাগে তখন স্বমহিমায় বিরাজ করছেন অল্পসময়ের মধ্যেই বুনসেনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেন তিনি। ফলে বিশ্লেষণী রসায়নে সুখ্যাত হয়ে উঠলেন।

উইলিয়াম রামসের কর্ম জীবন: William Ramsay’s Work Life

পরীক্ষার ফলাফলের কৃতিত্ব ও বিজ্ঞান প্রতিভার সুবাদে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনার কাজও জুটে গেল অবিলম্বে। কিছুকাল এখানে কাজ করার পর উচ্চতর গবেষণার স্বার্থে উইলিয়াম রামসে যোগ দিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। প্রথম যে কাজের জন্য রামসে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তা হল অ্যালকালয়েড জাতীয় জৈব রসায়ন বিষয়ে তাঁর গবেষণা।

এই রাসায়নিক শরীরের জৈব রাসায়নিক কাজে কি ধরনের কাজ করে তা নির্ণয় করতে গিয়ে তিনি দেখান ওই সব জৈব রাসায়নিকের সঙ্গে অসম চক্রাকৃতি জৈব রাসায়নিক পিরিডিনের গঠনগত সম্পর্ক রয়েছে। অসম চক্রাকৃতি জৈব রাসায়নিকটি হল সোরাজান ঘটিত। বেঞ্জিনের গঠনের সঙ্গে পিরিডিনের গঠনের যথেষ্টই মিল রয়েছে।

সেই সময়ে রসায়নের নতুন গবেষণা নিয়ে মেতে ছিলেন ব্রিটিশ রসায়নবিদ লর্ড র্যালি। তিনি ওইকালে বাতাস থেকে সোরাজান পৃথক করে দেখতে পেলেন ওই সোরাজানের ঘনত্ব সাধারণ সোরাজানের ঘনত্ব থেকে যথেষ্টই বেশি। এর কারণ নির্ণয় করতে গিয়েই আর অগ্রসর হতে পারছিলেন না। পরীক্ষার পর পরীক্ষা করেও বারবার একই ফলাফলের সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন: ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: মার্কো পোলো জীবনী

আরও পড়ুন: ইন্দিরা গান্ধী জীবনী

আরও পড়ুন: রাসবিহারী বসু জীবনী

আরও পড়ুন: মাদার টেরিজা জীবনী

আরও পড়ুন: ভগিনী নিবেদিতা জীবনী

লর্ড্যালি ব্রিটেনের সকল রসায়নবিদের কাছেই দুই সোরাজানের ঘনত্বের এই ব্যবধানের কারণ নির্ণয়ের আহ্বান জানালেন। কিন্তু কেউই তাকে সাহায্য করতে পারলেন না। উইলিয়াম রামসে সেই সময়ে ব্যস্ত ছিলেন পিরিডিন ও বেঞ্জিনের গঠন গত ভাবনা নিয়ে। লর্ড র্যালির সমস্যার কথা কানে পৌঁছতে তিনি সোরাজান সমস্যা মাথায় তুলে নিলেন।

উইলিয়াম রামসের বিশ্লেষণী রসায়নের শিক্ষা হয়েছিল বিজ্ঞানী বুনসেনের কাছে। সেই শিক্ষা এবারে তিনি প্রয়োগ করলেন নতুন সমস্যার সমাধানের কাজে। যথারীতি সমাধান পেয়েও গেলেন। তিনি জানালেন লর্ড র্যালি যে দুই সোরাজানের কথা বলেছেন সেই দুটি এক নয়। রাসায়নিকভাবে প্রস্তুত সোরাজান একেবারেই নির্জলা খাঁটি। কিন্তু বাতাস থেকে যে সোরাজানকে পৃথক করা হয়েছে তার সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে ভারী কোন রাসায়নিক মৌল, যার অস্তিত্ব আজও পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

লর্ড র্যালি সানন্দে মেনে নিলেন উইলিয়াম রামসের সিদ্ধান্ত। তিনি এটাই যে সঠিক সিদ্ধান্ত তা কবুল করে উইলিয়াম রামসেকে নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করে নিলেন। দুজনে মিলে উঠে পড়ে লেগে গেলেন বাতাসে মিশে থাকা ভারী রাসায়নিকের মৌলের সন্ধানে। অচিরেই তারা একটি নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করলেন। এর সাহায্যে সোরাজান ও অম্লজানকে পৃথক করার পর সার্থকভাবে বের করে আনলেন ভারী রাসায়নিক মৌল।

দেখা গেল এই মৌল রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত নিষ্ক্রিয়, তাঁরা তার নামকরণ করলেন আর্গন। বাতাসে এই আর্গন গ্যাসের পরিমাণ খুবই সামান্য এক ভাগ। একশোভাগ বাতাসে মাত্র এরপর উইলিয়াম রামসে এককভাবে গবেষণা আরম্ভ করলেন। এক বছরের মধ্যেই ক্লেভাইট খনিজ থেকে দ্বিতীয় একটি ভারী ও নিষ্ক্রিয় গ্যাস পৃথক করতে সমর্থ হলেন। এই ভারী মৌলটির নাম দেওয়া হল হিলিয়াম। দেখা গেল হিলিয়াম আর্গন থেকে অনেক বেশি হাল্কা।

সূর্যের ল্যাটিন নাম হল হিলিয়াম। সূর্যের ভেতরের আবহাওয়ায় রয়েছে এই ধরনের ভারী গ্যাসের প্রাচুর্য — সেই কারণেই তার নাম রাখা হল হিলিয়াম। তেজস্ক্রিয় মৌল রেডিয়াম থেকে যে বিকিরণ নিঃসৃত হয়, তা থেকেও হিলিয়াম পেলেন উইলিয়াম রামসে। উইলিয়াম রামসের উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করেই এরপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী একে একে আবিষ্কার করেন নিয়ন, ক্রিপটন, জেনন ও রেডন নামের ভারী অথচ নিষ্ক্রিয় গ্যাস মৌল।

মেন্ডেলিফ যে পর্যায় সারণী প্রস্তুত করেছিলেন সেখানে এভাবে সংযোজিত হল এক নতুন গ্রুপ যার নাম শূন্য গ্রুপ। এই গ্রুপে পারমাণবিক ওজনের ক্রম অনুসারে নিষ্ক্রিয় গ্যাস মৌলগুলো সাজানো হল এই ভাবে – হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন এবং রেডন। তার পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনা কাগজে কলমে রেখে দিয়েছিলেন দক্ষ ভবিষ্যদ্বক্তার মত। নিজে যে নিষ্ক্রিয় মৌলগুলো আবিষ্কার করেছিলেন তিনি তা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে পর্যায় সারণী গড়েছিলেন পরে।

সেখানে অনুদ্দিষ্ট মৌলগুলোর জন্য ঘর ফাকা রেখেছিলেন। ভাবীকালের রসায়ন বিজ্ঞানীদের এই সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য এই ভাবেই পথ নির্দেশ করে রেখেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে যখন অত্যন্ত উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় বাতাসকে তরল করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়, তখন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ট্রাভাস নিয়ন, জেনন ও ক্রিপটন তরল বাতাস থেকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: গি দ্য মোপাসাঁ জীবনী

আরও পড়ুন: চরক জীবনী

আরও পড়ুন: আর্যভট্ট জীবনী

আরও পড়ুন: নাগার্জুন জীবনী

আরও পড়ুন: ভাস্কর জীবনী

রামসে হিলিয়ামকে যেভাবে পৃথক করেছিলেন, একই পদ্ধতিতে তিনি রেডিয়ামের বিকিরণ থেকে রেডনকে পৃথক করেছিলেন। পূর্বের আবিষ্কৃত মৌলগুলোর সঙ্গে নামের মিল রেখে প্রথমে তার নাম রাখেন নাইটন। পরে যেহেতু রেডিয়াম থেকে পাওয়া সেই জন্য নাম পরিবর্তন করে রাখেন রেডন। উইলিয়াম রামসে একের পর এক নিষ্ক্রিয় গ্যাস মৌল আবিষ্কার করে রসায়ন বিজ্ঞানের এক নতুন ভবিষ্যৎ তৈরি করে দিয়েছিলেন।

উইলিয়াম রামসের পুরস্কার ও সম্মান: William Ramsay’s Awards And Honors

যুগান্তকারী গবেষণার সূত্রে লন্ডনের প্রখ্যাত রয়াল সোসাইটি উইলিয়াম রামসেকে ফেলো নির্বাচিত করেন ১৮৮৮ খ্রিঃ। তিনি নাইট উপাধি পান ১৯০২ খ্রিঃ। উইলিয়াম রামসেকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ১৯০৪ খ্রিঃ। এছাড়াও পৃথিবীর বহুদেশ থেকে তিনি পেয়েছেন স্বর্ণপদক, সম্মান ও নগদ অর্থ। পেয়েছেন বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি।

উইলিয়াম রামসের মৃত্যু: William Ramsay’s Death

শান্তিপ্রিয় মানবতাবাদী বিজ্ঞানী উইলিয়াম রামসের দুর্ভাগ্য যে তাঁকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মারণযজ্ঞের ভয়াবহতা গভীর বেদনার সঙ্গে দেখতে হয়েছিল। যেই মানব কল্যাণের ব্রতকে জীবনের সকল সাধনার ধ্রুববিন্দু করেছিলেন, তাঁর সেই ব্রতসাধনের তৃপ্তি যেন নিরর্থক হয়ে গিয়েছিল উইলিয়াম রামসের কাছে। এরপর ২৩ দিন বেঁচে ছিলেন, গভীর মর্মযাতনা তাকে প্রপীড়িত করেছিল। যুদ্ধের অমানবিক দৃশ্য দেখতে দেখতেই ১৯১৬ খ্রিঃ ২৩ শে জুলাই ইংলন্ডের সুরি শহরে প্রাণত্যাগ করেছিলেন বিজ্ঞানী রামসে।

Leave a Reply