ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী – Orville Wright and Wilbur Wright Biography in Bengali

Orville Wright and Wilbur Wright Biography in Bengali
Orville Wright and Wilbur Wright Biography in Bengali

রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Sukumar Ray Biography in Bengali. আপনারা যারা অরভিল রাইট জীবনী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী উইলবার রাইট জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট ছিলেন? Who is Orville Wright and Wilbur Wright?

রাইট ভ্রাতৃদ্বয়, অরভিল রাইট (১৯ আগস্ট, ১৮৭১ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮) এবং উইলবার রাইট (১৬ এপ্রিল, ১৮৬৭ – ৩০ মে, ১৯১২) ছিলেন দু’জন মার্কিন প্রকৌশলী, যাদের উড়োজাহাজ আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তারা ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম নিয়ন্ত্রিত, শক্তিসম্পন্ন এবং বাতাসের চাইতে ভারী সুস্থিত মানুষ-বহনযোগ্য উড়োজাহাজ তৈরি করেন। পরবর্তী দু’বছর তারা তাদের উড়ন-যন্ত্রটিকে অনড়-পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজে রূপান্তরিত করেন। পরীক্ষামূলক বিমানপোত নির্মাণে সর্বপ্রথম না হলেও, তাদের আবিষ্কৃত উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রকের সাহায্যেই প্রথম অনড়-পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজ নির্মাণ সম্ভবপর হয়।

অরভিল রাইট জীবনী – Orville Wright Biography in Bengali

নামঅরভিল রাইট
জন্ম19 আগস্ট 1871
পিতামিল্টন রাইট
মাতাসুসান ক্যাথরিন কোরনার
জন্মস্থানডেটন, ওহিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তামার্কিন
পেশাবৈমানিক
মৃত্যু30 জানুয়ারী 1948

উইলবার রাইট জীবনী – Wilbur Wright Biography in Bengali

নামউইলবার রাইট
জন্ম16 এপ্রিল 1867
পিতামিল্টন রাইট
মাতাসুসান ক্যাথরিন কোরনার
জন্মস্থানমিলভিল, ইন্ডিয়ানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তামার্কিন
পেশাবৈমানিক
মৃত্যু30 মে 1912

bengaliportal

 

রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী – Orville Wright and Wilbur Wright Biography in Bengali

যে সকল প্রতিভাবান অনুসন্ধিৎসু মানুষের চিন্তা ও কর্ম মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে, উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট —এই দুই সহোদর তাদের মধ্যে অন্যতম। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় নামেই তাঁরা সারা বিশ্বে পরিচিত। আজকের পৃথিবীতে দূর হয়েছে নিকট — পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয় বলতে গেলে।

এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে মানুষের আবিষ্কৃত বিমানপোত ৷ আর তা আবিষ্কার করেছিলেন উইলবার ও মরভিল দুই ভাই। নিজেদের তৈরি যন্ত্রযানে চেপে তারাই প্রথম আকাশে উড়ে মানুষের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশে ১৮৬৭ খ্রিঃ উইলবারের জন্ম। অরভিলের জন্ম ১৮৭১ খ্রিঃ। পিঠোপিঠি দুই ভাই ছেলেবেলা থেকেই ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে মেতে থাকতেন। কখনো নিজেরাই কিছু একটা বানাতেন।

অসীম ধৈর্য নিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে লেগে থাকতেন নিজেদের সেইসব কাজে ৷ পড়াশুনা শেষ করে দুই ভাই মিলে নিজেদের পছন্দমত একটা কারখানা তৈরি করলেন ৷ প্রথমে ছাপার যন্ত্র ও পরে বাইসাইকেল নিয়ে কি করে এগুলোর আরো উন্নতি করা যায় তার চেষ্টা করলেন। সেই সময় অটো লিলিয়েনথাল নামে একজন জার্মান ইঞ্জিনিয়ার উড়ন্তযান নিয়ে গবেষণা করছিলেন।

আরও পড়ুন: জন ফ্রাঙ্কলিন এন্ডারস জীবনী

আরও পড়ুন: আর্থার কম্পটন জীবনী

আরও পড়ুন: রাইট ভ্রাতৃদ্বয় অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট জীবনী

আরও পড়ুন: সিগমুন্ড ফ্রয়েড জীবনী

আরও পড়ুন: শরৎ চন্দ্র পণ্ডিত দাদাঠাকুর জীবনী

কয়েক বছরের চেষ্টায় তিনি অনেকটা সফলও হলেন। কিন্তু হঠাৎ ভদ্রলোকের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর গবেষণার কাজ সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। রাইট ভাইয়েরা তখন লিলিয়েনথালের অসমাপ্ত কাজের বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন। লিলিয়েনথালের উড়ন্ত যানের নক্সা নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে তার ত্রুটি খুঁজে বার কবলেন তারা।

তারপর আরম্ভ করলেন এই নিয়ে গবেষণার কাজ। উড়ন্ত যান নিয়ে ইতিপূর্বে যত কাজ হয়েছিল প্রথমেই তারা সেই সব বিবরণ সংগ্রহ করলেন। সেসব পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন কেবলমাত্র বাতাসের গতিবেগের ওপর নির্ভর করে উড়ন্ত যান বেশিদূর চালানো সম্ভব নয়। এজন্য দরকার শক্তিচালিত ইঞ্জিনের। গতি সঞ্চার করতে না পারলে এই যানের কোন ব্যবহারিক মূল্য থাকবে না। তারপর দুই ভাই মিলে চিন্তা শুরু করলেন ইঞ্জিনের বিষয় নিয়ে। বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন।

কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারলেন না। বারবার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন দুজনেই। তখন বুঝতে পারলেন এবিষয়ে তাঁদের জ্ঞান যথেষ্ট সীমিত। সাফল্যের জন্য দরকার বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান। আকাশযান সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা কিছু বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, তাঁদের ব্যর্থতা, সাফল্য ও চিন্তাভাবনার ইতিবৃত্ত নিয়ে দুই ভাই অধ্যয়ন করলেন গভীর মনোযোগ দিয়ে।

এইভাবেই তারা ধীরে ধীরে বাতাসের গতিবেগ, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তার চাপ, ভারসাম্য নির্ণয়ের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করলেন। ইতিপূর্বে কি পদ্ধতিতে উড়ন্তযান নির্মাণ করা হয়েছে সেই কৌশলও তারা রপ্ত করে নিলেন। সুদূর অতীতে নীল আকাশে পাখিদের ওড়া দেখে একদিন মানুষের মনেও সাধ জেগেছিল আকাশে উড়বার।

কিন্তু পাখিরা আকাশে ওড়ে ডানার সাহায্যে, মানুষের তো ডানা নেই। সেই অভাব তো মানুষের পক্ষে পূর্ণ করা সম্ভব নয়। তবু, অনেক দুঃসাহসী মানুষ কৃত্রিম ডানা পিঠে বেঁধে আকাশে উড়বার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে ওড়া হল না। বাড়ল দুর্ঘটনা। তারপর সেই চেষ্টা বন্ধ করে মানুষ বানাল বেলুন। কিন্তু বেলুনে চেপে শূন্যে ভাসা সম্ভব হলেও মানুষের আশা পূরণ হল না। তারপর বানানো হল খেলনার আকৃতির গ্লাইডার।

এই যন্ত্রগুলো নানান কৌশলে আকাশে ওড়ানো সম্ভব হল বটে, কিন্তু তাতে চেপে মানুষের আকাশে ওড়ার সাধ পূর্ণ হল না। মানুষের আকাশে ওড়ার ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে রাইট ভাইয়েরা এখানে এসে থামলেন। তাঁরা স্থির করলেন, এমন যন্ত্র বানাতে হবে যা চেপে মানুষ ইচ্ছামত আকাশে উড়ে বেড়াতে পারবে। নিজেদের কারখানায় আবার শুরু হল পরীক্ষা – নিরীক্ষা।

দীর্ঘ এক বছরের চেষ্টায় একটা বড় আকারের গ্লাইডার বা উড়ন্ত যান তৈরি হল। গ্লাইডারের বিশেষত্ব হল এটি বাতাসে ভারসাম্য রেখে সহজেই উড়ে যেতে পারবে। এই সাফল্যই নতুন প্রেরণার সঞ্চার করল দুই ভাইয়ের মধ্যে। এরপরই তারা তৈরি করলেন দুই পাখা বিশিষ্ট একটি ছোটখাট বিমান। ভারসাম্য রক্ষার জন্য এলিভেটর নামের একটি ছোট যন্ত্র এই বিমানের সামনে ও পেছনে জুড়ে দেওয়া হল।

এই যন্ত্রটি বিমানের গতি নিয়ন্ত্রণ করতেও পাইলটকে সাহায্য করবে। সাফল্যের আনন্দ নিয়ে একদিন বিমান নির্মাণের কাজ শেষ হল। তারপর শহর থেকে দূরে খোলা এক মাঠে নিয়ে গিয়ে বিমানটিকে শূন্যে উড়িয়ে দেওয়া হল। এই কাজও ছিল পরীক্ষার পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় বুঝতে পারলেন, তাদের কলাকৌশলের কিছু পরিবর্তন দরকার। আবার শুরু হল চিন্তাভাবনা ও সেই মত কাজ।

বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে দেখা গেল, পেট্রল চালিত হাল্কা ইঞ্জিনই বিমানটির পক্ষে উপযোগী। সেই সময়ে বাজারে যেসব ইঞ্জিন পাওয়া যেত, সেগুলো বিমানের পক্ষে নিতান্তই অনুপযুক্ত। কাজেই বাধ্য হয়ে নিজেরাই বসে গেলেন বিমানের উপযুক্ত ইঞ্জিন তৈরি করতে। কয়েক মাসের নিরলস চেষ্টায় তৈরি হল তিন পাউন্ড ওজনের এক অশ্বশক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিন।

তারপর উইলবার ও অরভিল যেদিন কেরোলিনা প্রদেশের কিটি হক শহরের এক মাঠে তাঁদের উদ্ভাবিত পরীক্ষামূলক বিমানটি নিয়ে উপস্থিত হলেন, সেই দিনটি ছিল ১৯৩০ খ্রিঃ ১৭ ই ডিসেম্বর। আগেই শহরময় রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল মানুষ বিমানে চেপে পাখির মত আকাশে উড়ে বেড়াবে। কথাটা কেউ বিশ্বাস করল, কেউ করল না। তবু কৌতূহলী কয়েকজন মানুষ হাজির হল মাঠে। তখনো এরোপ্লেন নামটি উদ্ভাবিত হয়নি।

রাইট ভাইরা তাদের উড়ন্ত যানের নাম দিয়েছিলেন রাইট ফ্লাইয়ার। ইঞ্জিন যুক্ত করে দুই ভাই মিলে বিমানটিকে উড়বার জন্য প্রস্তুত করে নিলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল বিমানে দুজনের তো চড়বার ব্যবস্থা নেই। একজনকেই উড়তে হবে। দুজনে মিলেই বিমানটি নির্মাণ করলেও প্রথম আকাশে ওড়ার দুর্লভ সম্মান নিতে হবে একজনকেই। কে প্রথম বিমান চালাবে শেষ পর্যন্ত টস করে তা ঠিক করা হল। টসে জিতে অরভিল বিমানে গিয়ে উঠলেন। উইলবার রইলেন নিচে।

তাঁদের আবিষ্কারের সাফল্য দেখবার জন্য সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র জনা পাঁচেক মানুষ। সেদিন কি তারা ভাবতে পারছিলেন কী যুগান্তকারী ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করবার সুযোগ পেয়েছেন ? বিমানে চেপে নিজের জায়গায় বসে অরভিল প্রপেলার চালু করলেন। দুপাশ থেকে দুটি দড়ি নিচে বাঁধা ছিল। উইলবার এবারে সেগুলো খুলে দিলেন। তারপর প্রাণপণ শক্তিতে বিমানটিকে ঠেলতে আরম্ভ করলেন।

আরও পড়ুন: জনি ওয়েইসমুলার জীবনী

আরও পড়ুন: গোবর গোহ জীবনী

আরও পড়ুন: উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জীবনী

আরও পড়ুন: রণজিৎ সিং জীবনী

আরও পড়ুন: গোষ্ঠ পাল জীবনী

কিছুদুর গিয়েই শূন্যে লাফিয়ে উঠে আকাশে উড়ে চলল মানুষের হাতে তৈরি আকাশযান। কিছুদুর মসৃণ ভাবে এগিয়ে গিয়ে পাক খেয়ে ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে এল। সেদিন রাইট ভাইয়ের তৈরি বিমান প্রথম দফায় বারো সেকেন্ড আকাশে ভেসে ছিল। মানুষের ইতিহাসে আকাশ জয়ের নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল ওই বারো সেকেন্ড সময় নিয়ে। এ ছিল গতির যুগের শুভ সূচনা।

অরভিল নিরাপদে অবতরণ করলে আকাশে উড়লেন উইলবার। তিনি সবশুদ্ধ আকাশে ভেসে থাকলেন উনষাট সেকেন্ড, অতিক্রম করলেন ৮২০ ফুট দূরত্ব। বাতাসের বেগ বাড়ছিল বলে সেদিন আর আকাশে ওড়া সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক ঘটনাটি এমন ভাবে ঘটল যে পৃথিবীর মানুষ তার কোন সংবাদই জানতে পারল না। কেবল কিট হক্ শহরে রটে গেল, দুজন মানুষ যাদু মন্ত্র বলে পাখির মত আকাশে উড়েছে।

সাফল্যের আনন্দের উত্তেজনা কাটিয়ে উঠতে দিন কতক লাগল। তারপর দুভাই মিলে কিছুদিনের চেষ্টাতেই আগের চাইতে অনেক বড় আর শক্তিশালী বিমান তৈরি করে ফেললেন। এবারে তাঁরা স্থির করলেন, তাঁদের সাফল্যের কথা সমস্ত মানুষকে জানাতে হবে ৷ এই উদ্দেশ্যে তারা আমেরিকার পত্রিকা গুলোকে আমন্ত্রণ জানালেন তাদের আকাশে ওড়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করবার জন্য। মানুষ পাখির মত আকাশে উড়বে অধিকাংশ পত্রিকার লোকই তা বিশ্বাস করতে পারল না।

তবুও কৌতূহল চরিতার্থ করবার জন্য পত্রিকার সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট দিনে এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু সেদিন সকাল থেকেই ছিল ঝোড়ো বাতাস। এছাড়া নতুন ইঞ্জিনটাও ঠিকভাবে কাজ করছিল না। দুর্ভাগ্যের ফেরে রাইট ভাইদের তাদের পরিকল্পনা বাতিল করতে হল। রাইট ভাইদের সমস্ত প্রচারই মিথ্যা এই ধারণা নিয়ে সাংবাদিকদের সকলেই ফিরে গেলেন। বিপর্যয়টা ছিল আকস্মিক।

তাই প্রথমে অপ্রস্তুত হলেও কাটিয়ে উঠতেও সময় লাগল না। রাইট ভাইরা নতুন উদ্যমে আবার কাজে নেমে পড়লেন। ইঞ্জিনের গোলমাল সারাই করে নিজেরাই এবারে আকাশে ওড়া অভ্যাস করতে লাগলেন। প্রচারের কথা মাথায়ও আনলেন না তারা। সকলের অগোচরেই দুভাই মিলে ধীরে ধীরে আকাশে ওড়ার সময় বাড়াতে লাগলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই একমাইলের বেশি দূরত্ব বিমান নিয়ে অতিক্রম করে গেলেন তারা।

বিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার গবেষণার কাজটি রীতিমত ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই কাজ করতে গিয়ে দুই ভাই এতদিনে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ফলে বাধ্য হয়েই উড়াউড়ির কাজ কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখতে হল। অর্থোপার্জন দরকার। দুভাই মিলে ব্যবসায়ের কাজে নেমে পড়লেন। সময় খুব বেশি লাগল না বাজারের ধার দেনা পরিশোধ করতে। কিছু অর্থ সঞ্চয়ও হল। দুভাই মিলে আবার ফিরে এলেন নিজেদের আগের কাজে।

সেই সময় ইউরোপের কয়েকজন বিজ্ঞানী উড়ন্ত যান নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাই রাইট ভাইদের মনে আশঙ্কা ছিল, আবার কেউ না তাদের আগে তৈরি বিমান নিয়ে আকাশে উড়ে পৃথিবীকে চমকে দেয়। তাহলে তাদের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যাবে। বঞ্চিত হবেন আকাশযান তৈরির কৃতিত্বের গৌরবে। অবশ্য তেমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল না।

রাইট ভাইরা তাঁদের আকাশে উড়া প্রত্যক্ষ করবার জন্য এবারে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানালেন। নির্দিষ্ট দিনে সকলেই উপস্থিত হয়ে সবিস্ময়ে দেখলেন, নিজেদের তৈরি বিমানে রাইট ভাইরা একে একে পাখির মতই স্বচ্ছন্দে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন। যা ছিল এতদিন অবিশ্বাস্য অসম্ভব, এতদিনে তা সফল হল। মাটির মানুষের বিজয় অভিযান সম্প্রসারিত হল আকাশে। এই বিস্ময়কর সংবাদ বাতাসের মতই আমেরিকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত ইউরোপে।

চর্তুদিকে পড়ে গেল জয়জয়কার। আসতে লাগল শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। এবাবে রাইট ভাইরা পরিকল্পনা নিলেন আরো উন্নত ধরনের বিমান তৈরির। দেখা দিল অর্থের সমস্যা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল সিন্ডিকেট। আমেরিকান সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। শর্ত অনুসারে অরভিল আমেরিকায় থেকে উন্নত ধরনের বিমান তৈরির কাজে মনোনিবেশ করলেন। উইলবার গেলেন ফ্রান্সে। সেখানে বিমানে চেপে আকাশে ওড়ার কলাকৌশল দেখিয়ে চমৎকৃত করলেন সকলকে।

ফ্রান্সেই প্রথম উইলবার একজন সহযাত্রী নিয়ে আকাশে একঘন্টা বিমান চালালেন। মানুষের আকাশ জয়ের ইতিহাসে সে – ও এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ফ্রান্সের এক বিখ্যাত কোম্পানি উইলবারের কাছ থেকে তাঁদের আবিষ্কৃত বিমানের পেটেন্ট কিনে নিলেন বিরাট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। এতদিনে বিমানের সুবাদে রাইট ভাইদের অর্থের সমস্যাও দূর হল। অরভিল ছিলেন আমেরিকায়।

আরও পড়ুন: ভি.আই. লেনিন জীবনী

আরও পড়ুন: বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস জীবনী

আরও পড়ুন: মার্টিন লুথার কিং জীবনী

আরও পড়ুন: জওহরলাল নেহেরু জীবনী

আরও পড়ুন: মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জীবনী

একদিন একজন সামরিক অফিসারের সঙ্গে বিমানে আকাশে ঘুরে বেড়াবার সময় দুর্ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনায় পড়লেন তিনি। প্রপেলার ভেঙ্গে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ল। সঙ্গী অফিসারটি দুর্ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন। অরভিল আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেলেন। কিছুদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেন। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ উপলব্ধি করতে পেরেছে আকাশযানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনের ব্যাপকতা। সকলেই ব্যস্ত হয়ে উঠল এরোপ্লেন কেনার জন্য। তা নিয়ে শুরু হয়ে গেল দেশে দেশে পরিকল্পনা রচনা।

রাইট ভাইদের দীর্ঘ শ্রম অধ্যবসায় ও অনুশীলনের সাফল্যের মধ্য দিযে পৃথিবীতে এল গতির যুগ। এই গতি ত্বরান্বিত করল সভ্যতার অগ্রগতিকে। বস্তুতঃ সামগ্রিকভাবে এই অগ্রগতি সম্ভব করে তুললেন রাইট ভাইরা দুজন। অল্পসময়ের মধ্যেই দেশে তৈরি হল বিমান তৈরির কারখানা। নতুন নতুন বিমান তৈরি হতে লাগল পূর্ণোদ্যমে। দেশের উৎসাহী তরুণদের বিমান চালনার প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন অরভিল আর উইলবার।

১৯১২ খ্রিঃ উইলবার মারা গেলেন। অরভিল বেঁচে ছিলেন আরও কয়েক বছর। বিমানের উন্নতি ও উৎপাদনের কাজেই তিনি আমৃত্যু নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন।

Leave a Reply