ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

ভি.আই. লেনিন জীবনী – Vladimir Lenin Biography in Bengali

Vladimir Lenin Biography in Bengali
Vladimir Lenin Biography in Bengali

ভি.আই. লেনিন জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Vladimir Lenin Biography in Bengali. আপনারা যারা ভি.আই. লেনিন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ভি.আই. লেনিন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

ভি.আই. লেনিন কে ছিলেন? Who is Vladimir Lenin?

ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ওরফে লেনিন (Ленин; Lenin) (এপ্রিল ২২ ১৮৭০ – জানুয়ারি ২১, ১৯২৪) একজন মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। লেনিন অক্টোবার বিপ্লবের বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি ১৯১৭ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধিনায়ক ছিলেন।

তার প্রশাসনের অধীনে, রাশিয়া এবং তারপরে বৃহত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা পরিচালিত একদলীয় সাম্যবাদী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। আদর্শগতভাবে একজন সমাজতান্ত্রিক হয়ে তিনি মার্কসবাদের একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকাশ করেছিলেন যা “লেনিনবাদ” নামে পরিচিত। তার ধারণাগুলি মরণোত্তরভাবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছিল।

ভি.আই. লেনিন জীবনী – Vladimir Lenin Biography in Bengali

নামভি.আই. লেনিন
জন্ম22 এপ্রিল 1870
পিতাল্যা নিকোলয়েভিচ্ উলিয়ানভ
মাতামারিয়া আলেক্সান্ড্রাভনা উলিয়ানভা
জন্মস্থানসিমবির্স্ক, রুশ সাম্রাজ্য
জাতীয়তারাশিয়ান
পেশারাজনীতিবিদ, বিপ্লবী, আইনজীবী
মৃত্যু21 জানুয়ারী 1924 (বয়স 53)

bengaliportal

 

ভি.আই. লেনিন এর জন্ম: Vladimir Lenin’s Birthday

ভি.আই. লেনিন 22 এপ্রিল 1870 জন্মগ্রহণ করেন।

ভি.আই. লেনিন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Vladimir Lenin’s Parents And Birth Place

লেনিনের সম্পূর্ণ নাম ভলাদিমির ইলভিচ উলিয়ানভ।বিশ্বের ইতিহাসের স্মরণীয় মহাবিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম হলেন লেনিন। বিপ্লবী দলে নাম লেখাবার পরে তিনি যে ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন, সেই লেনিন নামেই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। লেনিনের এক দাদা ছিলেন রাশিয়ায় সন্ত্রাসবাদী দলের নেতা।

তিনি ছাত্রাবস্থায় ১৮৭৭ খ্রিঃ রুশ সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যা করার এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁকে প্রাণদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল। এই বছরেই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে কাজান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কৃত করা হয়। লেনিনের মা কিন্তু পুত্রের এই শোচনীয় মৃত্যুর জন্য এতটুকু মুষড়ে পড়েন নি।

আরও পড়ুন: জনি ওয়েইসমুলার জীবনী

আরও পড়ুন: গোবর গোহ জীবনী

আরও পড়ুন: উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জীবনী

আরও পড়ুন: রণজিৎ সিং জীবনী

আরও পড়ুন: গোষ্ঠ পাল জীবনী

তিনি ছিলেন অভিজাত, শিক্ষিত ও দৃঢ়চেতা এবং বিপ্লবীমনস্ক মহিলা। তাঁরই উৎসাহে তাঁর দুই পুত্র ও তিন মেয়ে অল্প বয়স থেকেই বিপ্লবীদলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ফলে মা হিসেবে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করবার মত মানসিক বলের অভাব ছিল না তাঁর। লেনিনের বাবা ছিলেন জার নিকোলাসের আমলের শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তা। তার কর্মস্থল ছিল ইউরোপীয় অংশের রাশিয়ার সিমরিক্স। বড় ছেলের প্রাণদন্ডের এক বছর আগেই তিনি মারা যান।

ভি.আই. লেনিন এর শিক্ষাজীবন: Vladimir Lenin’s Educational Life

স্বামীর মৃত্যুর পরেই লেনিনের মা পরিবারের সকলকে নিয়ে কাজান প্রদেশের গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। এখান থেকেই লেনিনের মা ও বোনেরা বিপ্লবী কাজকর্ম পরিচালনা করতেন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে লেনিনের মা ও বোনেরা সরকারি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন।

১৮৯১ খ্রিঃ লেনিন সেন্টপিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময়ে তিনি মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং শ্রমিকদের নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করেন।

ভি.আই. লেনিন এর কর্ম জীবন: Vladimir Lenin’s Work Life

সেদিনের রুশ শ্রমজীবী মানুষের কাছে লেনিনের লেখা ইস্তাহার হয়ে উঠেছিল ধর্মগ্রন্থের মতই অবশ্যপাঠ্য ও প্রিয়। পুলিশ তাকে যে ভাবে দফায় দফায় নিগৃহীত করছিল, তাতে বিপ্লবী কাজকর্ম খুবই বিঘ্নিত হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি আইনব্যবসায় ইস্তফা দিয়ে সর্বক্ষণের জন্য বিপ্লবের কাজে বিশেষ করে শ্রমিকশ্রেণীকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়ে এসেছিল।

কিন্তু এরই মধ্যে তিনি রুশ পুলিশের হাতে বন্দি হলেন। একবছর কারাবাসের পর তিনি সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হন। সময়টা ১৮৯৫ খ্রিঃ ডিসেম্বর। এই নির্বাসিত অবস্থাতেই তিনি ক্রুপস্কায়াকে বিবাহ করেন। ক্রুপস্কায়া ছিলেন অসামান্য প্রতিভাময়ী এক তেজস্বী রমণী। লেনিনের বিপ্লবী জীবনের সূচনা লগ্নে এই রমণীর প্রেম লেলিনকে অসাধারণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

জেলে বন্দি অবস্থাতেই লেনিন The Development of Capitalism in Russia গ্রন্থটি রচনা আরম্ভ করেন। নির্বাসনের দিনগুলিতে তিনি এই গ্রন্থ রচনার মধ্যেই ডুব দিলেন। এদিকে ১৮৯৭ খ্রিঃ ক্রুপস্কায়াও গ্রেপ্তার হলেন। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে সাইবেরিয়ার একই কারাগারে দুজনে মিলিত হবার সুযোগ পেয়ে গেলেন। লেনিন ক্রুপস্কায়ার সান্নিধ্য লাভ করে গ্রন্থ রচনার কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চললেন।

এই সময়ে তারা উভয়ে মিলে সিডনি ও ওয়েবের The History of the Trade Unions গ্রন্থটি ইংরাজি থেকে রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৯০০ খ্রিঃ লেনিনের নির্বাসন দন্ড শেষে দেশে ফিরে আসার সুযোগ ঘটে। কিন্তু তার রাশিয়ার যে কোন বড় শহরে বসবাস নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাকে মিউনিখ, ব্রাসেলস, প্যারি, জেনেভা, লন্ডন প্রভৃতি স্থানে ঘুরে ঘুরে বাস করতে হয়। এই সময়েই তাঁকে তাঁর আসল নাম ত্যাগ করে বিপ্লবী জীবনে স্থায়ীভাবে লেনিন নাম গ্রহণ করতে হয়।

ক্রুপস্কায়া রয়েছেন সঙ্গে, ছদ্মনাম গ্রহণ করেছেন, তবু বারবার এই বিপ্লবী দম্পতিকে জার্মান ও ইংরাজ গোয়েন্দা বাহিনীর দ্বারা বিব্রত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। সেই দুস্তর বাধার মধ্যে থেকে সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে লেনিন তাঁর বিপ্লবের আরব্ধকর্ম সম্পূর্ণ করে তুলবার সাধনায় ছিলেন অবিচল। তিনি এগিয়ে চলেছিলেন দৃঢ় পদক্ষেপে। অক্লান্ত পরিশ্রমে যখনই শরীর মন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, ক্রুপস্কায়ার প্রেরণা ও সাহচর্যে তিনি আবার নতুন শক্তিতে জেগে উঠেছেন।

জার্মানি থেকে লেনিন Iskra নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ আরম্ভ করেন। রুশ দেশে সেই পত্রিকা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে দ্রুত প্রসার লাভ করতে লাগল। পত্রিকা সম্পাদনা ও ইশতাহার রচনা ছাড়াও তিনি সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে রুশ বিপ্লবের কাজকে ত্বরান্বিত করতে লাগলেন। জার্মানিতে ও সুইজারল্যান্ডে তিনি একাধিকবার বহু বিপ্লবী কর্মীর সঙ্গে গোপনে মিলিত হয়েছেন। রুশ বিপ্লব সাফল্যের কাজে যাতে রুশ জনগণ, শ্রমিক, কৃষক ও বুদ্ধিজীবীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব হয় তার জন্য সকল শ্রেণীর বিপ্লবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

এই সময়ে লেনিনের ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন বিপ্লবী দল থেকে বহু বিপ্লবী লেনিনের বিশ্বস্ত অনুগামী হয়ে ওঠেন। লেনিন যেসব ইস্তাহার রচনা করে প্রকাশ করতেন তাতে সাধারণ মানুষের উপযোগী সাবলীল ভাষায় তিনি মার্কসবাদের গভীর তত্ত্বগুলি বিশ্লেষণ করতেন। ফলে বিপ্লবের চেতনা অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে সমগ্র রুশ ভূখন্ডে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সরকারী কর্মচারি, পুলিশ, এমনকি সামরিক বিভাগের জনগণের মধ্যেও জারের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে, বিপ্লবী মানসিকতা প্রসার লাভ করতে থাকে।

আরও পড়ুন: ভি.আই. লেনিন জীবনী

আরও পড়ুন: বিপ্লবী বসন্ত কুমার বিশ্বাস জীবনী

আরও পড়ুন: মার্টিন লুথার কিং জীবনী

আরও পড়ুন: জওহরলাল নেহেরু জীবনী

আরও পড়ুন: মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জীবনী

১৯০৫ খ্রিঃ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনকালে একটি ভুখা মিছিল পিটার্সবার্গের জারের প্রাসাদের অভিমুখে যাত্রা করে। সেই সময় অতর্কিতে অপরিণামদর্শী জারের নির্দেশে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি বর্ষণ আরম্ভ করে। বহুলোক হতাহত হয়। এই ঘটনার পরিণামে লেনিনের বিপ্লবক্ষেত্র দ্রুত পরিণতি লাভ করার সুযোগ লাভ করে। দেশের প্রত্যন্ত পর্যন্ত পুলিশী নির্যাতনের ঘটনা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবী আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়ে চলল।

এই পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করলেন লেনিন। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি দেশে ও বিদেশে বিপ্লবের প্রচারে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কখনো ফিনল্যান্ড থেকে, কখনো জার্মানি বা সুইজারল্যান্ড, কখনো জেনেভা থেকে তিনি রুশদেশে প্রয়োজন মত নির্দেশ পাঠিয়ে অথবা ইশতাহারে প্রচারের ব্যবস্থা করে দেশের বিপ্লবী আবহাওয়াকে বিস্ফোরণের পর্যায়ে পৌঁছে দিলেন। ১৯০৫ খ্রিঃ শেষ দিকে বিদেশ থেকে একবার গোপনে রাশিয়ায় প্রবেশ করে দেখে খুশি হলেন যে বিপ্লবের পটভূমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

১৯০৩ খ্রিঃ লন্ডনে অনুষ্ঠিত রুশ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টির দ্বিতীয় সম্মেলনে লেনিন নেতৃত্বের অধিকার লাভ করেছিলেন। এবারে, ১৯০৫ খ্রিঃ, তাঁর উদ্যোগে রাশিয়ার শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম সোভিয়েত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। লেনিন অনুধাবন করলেন কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের হাতে অস্ত্র তুলে নেবার সময় এগিয়ে এসেছে। প্রকৃত প্রস্তাবে ঘটলোও তাই। মাঝে মাঝেই শ্রমিক ধর্মঘট ও সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটতে লাগল।

পরে এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা সমস্ত রুশভূখন্ডে সামগ্রিক বিপ্লবের রূপ গ্রহণ করে মানব ইতিহাসে এক নব যুগের দ্বারোদঘাটন করল। রুশ সম্রাটের সামরিক শক্তি ঝাপিয়ে পড়ল বিদ্রোহ দমনে। কিন্তু নির্মম অত্যাচার সত্ত্বেও রুশ জনগণের সম্মিলিত শক্তির মনোবল তারা বিন্দুমাত্র টলাতে পারল না। ১৯১৪ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে লেনিনকে কিছুকাল কারারুদ্ধ থাকতে হল। পরে তিনি মুক্ত হয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। ১৯১৬ খ্রিঃ লেনিন তার গ্রন্থ ‘ সাম্যবাদ — ধনতন্ত্রের চূড়ান্ত পর্যায় ’ রচনার কাজ সম্পূর্ণ করেন।

১৯১৭ খ্রিঃ রাশিয়ার Moderate Socialist- রা দেশে জারতন্ত্রের উচ্ছেদ সাধন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অধিকার করল। লেনিন সুইজারল্যান্ড থেকে স্বদেশে ফিরে এলেন। লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ খ্রিঃ ৭ ই নভেম্বর (তৎকালীন রুশ পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৫ শে অক্টোবর) তাঁর বলশেভিক দল কমিউনিস্ট পার্টি এই নতুন নামে পরিচিত হল। তিনি এই সময়েই সোশ্যালিস্টদের হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে Soviet Republic of workers, Soldiers and Peasants নামে দেশের নামকরণ করেন।

এরপর তিনি Soviet Peoples Commission- এর সভাপতিরূপে প্রতিক্রিয়াশীল এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই পরিচালনা করে চললেন। ১৯১৮ খ্রিঃ ৩ রা মার্চ জার্মানির সঙ্গে তিনি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এইভাবে বিপ্লবী লেনিন রাশিয়াকে একেবারে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করে নবজীবন দান করেন। লেনিন ব্যক্তি মানুষটি আকারে ছোটখাট হলেও তার চরিত্র ছিল বজ্রের মত দৃঢ়। কখনো আত্মস্বার্থের কথা ভাবেননি, দেশের মানুষের স্বার্থ চিন্তাই ছিল তার সকল কর্মপ্রচেষ্টার মূল প্রেরণা।

কঠোর পরিশ্রমে লেনিনের শরীর ভেঙ্গে যায় এবং ১৯২৪ খ্রিঃ ২১ শে জানুয়ারি মস্কোর নিকটবর্তী গোর্কীনগরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে তিনি দেহত্যাগ করেন। লেনিনের মরদেহ ভেষজ প্রক্রিয়ায় অবিকৃত রেখে ক্রেমলিনে সংরক্ষণ করা হয়েছে। লেনিনের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া রুশবিপ্লব মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কি সেই রুশ বিপ্লব ? লেনিনের জীবনের আলোকে আমরা তারই পরিচয় লাভ করব। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসী বিপ্লব এবং বর্তমান শতাব্দীর রুশ বিপ্লবের মত আর কোন বিপ্লবই মানব সভ্যতাকে এমন গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি।

ফরাসী বিপ্লব শুনিয়েছিল সাম্যের জয়গান, রুশ বিপ্লবের ফলে মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার মধ্যে তা স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ পরিগ্রহ করেছিল। রুশ বিপ্লবের সময়ে রাশিয়ার সম্রাট ছিলেন জার দ্বিতীয় নিকোলাস। রাজতন্ত্র তখন সম্পূর্ণ অক্ষম, অপদার্থ ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল। ১৯০৪-৫ খ্রিঃ রুশ – জাপান যুদ্ধে জাপানের কাছে রাশিয়ার পরাজয় জারশাসনের অপদার্থতাকে প্রকট করে তুলেছিল। ফলে ১৯০৫ খ্রিঃ রুশ জনগণ জারশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ জানায়।

জার প্রথম দিকে রুশ জনগণের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তন করলেও কিছুকাল পরেই তা বাতিল করে নির্মমভাবে জনতার আন্দোলনকে দমন করেন। কিন্তু দস্তয়েভস্কি, গোর্কি, টলষ্টয়, তুর্গেনিভ প্রভৃতি সাহিত্যিক – দার্শনিকদের রচনাপাঠে উদ্বুদ্ধ জনসাধারণ বিপ্লবের জন্য পরবর্তী সুযোগের প্রতীক্ষা করতে থাকে। ভলাদিমির উলিয়ানভ বা লেনিন ছদ্মনামে পরিচিত বিপ্লবী তরুণের নেতৃত্বে রাশিয়ায় বিপ্লবের অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলতে থাকে।

১৯০৩ খ্রিঃ বিপ্লবীদের মধ্যে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে লেনিনের বিরোধীরা মেনশেভিক নামে একটি স্বতন্ত্র দল তৈরি করেন। লেনিনের অনুসারী বিপ্লবী দলটির নাম হয় বলশেভিক। বলশেভিকরা ছিলেন সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কার্ল মার্কসের আদর্শে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করতেন, ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোথাও দুর্বলতা দেখা দিলে সেখানেই শ্রমিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে বলশেভিকরাই রুশ বিপ্লবকে সফল করে তুলেছিলেন।

আরও পড়ুন: গণেশ ঘোষ জীবনী

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী

আরও পড়ুন: জোসেফ স্তালিন জীবনী

আরও পড়ুন: মাও সেতুং জীবনী

আরও পড়ুন: বারীন্দ্রকুমার ঘোষ জীবনী

১৯১৪ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাতিধর্ম দল নির্বিশেষে রুশ জনসাধারণ স্বদেশের স্বার্থে জারতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে সাময়িকভাবে জাতীয় পরিষদে দলগত বিভেদের অবসান ঘটায়। কিন্তু উপযুক্ত রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে রুশ বাহিনী প্রতি পদক্ষেপেই জার্মান বাহিনীর কাছে পরাজিত হতে থাকলে সারা দেশে নিদারুণ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ১৯১৭ খ্রিঃ গোড়ার দিকে সারা দেশে নিদারুণ খাদ্যাভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে। শ্রমিকরা পেট্রোগ্রাড শহরে ধর্মঘট শুরু করল।

রুশ সরকার মার্চের প্রথম দিকে সেনাবাহিনীকে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাবার নির্দেশ দিল। কিন্তু সৈন্যবাহিনী আদেশ পালনে অসম্মত হয়। ফলে বিদ্রোহ দ্রুতগতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। গণবিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং স্থানীয় শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সৈনিকও শ্রমিকরা সম্মিলিত ভাবে রাজধানীতে একটি সোভিয়েট বা পরিষদ গঠন করল। জার পেট্রোগ্রাড পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে দায়িত্বশীল মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিতে হল। জনসাধারণ জারের পদত্যাগ দাবী করল।

জার দ্বিতীয় নিকোলাস এই চাপে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন ১৯১৭ খ্রিঃ ১৫ ই মার্চ। এটিই হল রুশ বিপ্লবের প্রথম পর্ব যা মার্চ বিপ্লব নামে পরিচিত। এই সফল প্রথম পর্বের পর জাতীয় পরিষদ ফ্রিন্স লভ – এর নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার স্থাপন করল। কিন্তু এই সরকার জনগণের আশাকে বাস্তব রূপ দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে আবার দেশ জুড়ে গোলযোগের সূত্রপাত হয়। রাশিয়ার সর্বত্র শ্রমিক ও সৈন্যরা সোভিয়েট গঠন করে জোর প্রচারকার্য আরম্ভ করল, শ্রমিকরা উচ্চহারে বেতন দাবি করে ধর্মঘট করল।

সৈন্যরা তাদের উর্ধ্বতন কর্মচারীদের আদেশ অমান্য করে বিদ্রোহী হল। কৃষকরা বলপূর্বক অভিজাত সম্প্রদায়ের জমি দখল করে নিল। মে মাসেই ট্রটস্কি প্রমুখ নির্বাসিত বলশেভিক বিপ্লবীদের অনেকেই স্বদেশে ফিরে এলেন এবং তারা নতুন উৎসাহে এই বিদ্রোহে প্রেরণা দিতে লাগলেন। বলশেভিক নেতা লেনিন তার আগেই এপ্রিল মাসে সুইজারল্যান্ড থেকে জার্মানি হয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন।

এই অবস্থায় লভ সরকারের নেতৃবর্গ বিতাড়িত হলেন এবং কেরেনস্কির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক মেনশেভিক দল সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করল। জুলাই মাসে যুদ্ধে রাশিয়ার আরও বিপর্যয় দেখা দিল। হতোদ্যম ও নিরাশ রুশ সৈন্যরা গ্যালিসিয়ায় পরাজয় বরণ করলে ১৬ জুলাই হাজার হাজার শ্রমিক, নাবিক ও সৈনিক কৃষকের হাতে জমি, নিরন্নের মুখে অন্ন, জনসাধারণের মনে সুখশান্তি এবং সোভিয়েটের হাতে শাসন ক্ষমতার দাবিতে পেট্রোগ্রাড শহরের রাস্তায় নেমে পড়ল।

মেনশেভিকরা এই বিদ্রোহকে বিপ্লবের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করল। শক্তি শালী সরকারী সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সেই মুহূর্তে লড়াইয়ের ক্ষমতা নেই দেখে লেনিন তখুনি এই বিদ্রোহকে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত করলেন না। ফলে অজস্র হতাহতের মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের বিপ্লবাত্মক দিনগুলি অতিবাহিত হয়ে গেল। এর পরে কেরেনস্কি লেনিনের বিরুদ্ধে বিদেশী আর্থিক সাহায্য লাভের অভিযোগ তুললে লেনিন ফিনল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। বলশেভিক নেতা ও কর্মীবৃন্দ গ্রেপ্তার হলেন। সশস্ত্র বলশেভিক রেড গার্ডদের নিরস্ত করা হল।

প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি তাঁর সেনাবাহিনীর প্রধান করনিলভকে নিয়ে বলশেভিকদের একেবারে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ মুহূর্তে করনিলভ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন ভেবে মত পরিবর্তন করলেন। দুজনের মধ্যে এই পারস্পরিক অবিশ্বাস ও ইতস্তত ভাবের ফলে সোভিয়েটের পক্ষে বলশেভিকদের পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত করে তোলা সম্ভব হল। অক্টোবর মাস নাগাদ সব মূল সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে কেরেনস্কি সরকার কার্যত ক্ষমতাহীন এক অপদার্থ সরকারে পরিণত হল।

ইতিমধ্যে লেনিন দেশে ফিরে এসে জনসাধারণকে জমি, রুটি ও শান্তি দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তাঁর নির্দেশে ট্রটস্কির অধিনায়কত্বে বলশেভিকরা চূড়ান্ত বিপ্লবের জন্য তৈরি হতে লাগল। ১৯১৭ খ্রিঃ ৭ ই নভেম্বর শুরু হয় সেই বিপ্লব। কেরেনস্কি সরকারের পতন ঘটল এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালালেন ৷ পরদিনইলেনিনএক বাক্ততায় মস্ত জমি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে এনে জনসাধারণেব মধ্যে তা বন্টনের কথা ঘোষণা করলেন।

বলশেভিকদের তত্ত্বাবধানে ২৫ শে নভেম্বর নির্বাচনের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পরিষদ গঠিত হল এবং ১৯১৮ খ্রিঃ ১৮ জানুয়ারি পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসল। নির্বাচনে সাম্যবাদী বিপ্লবীরা পেয়েছিল প্রায় অর্ধেক আসন। এক চতুর্থাংশ পেয়েছিল বলশেভিকরা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথম অধিবেশনের পরেই এক আদেশ বলে পরিষদ ভেঙ্গে দেওয়া হল এবং সারা রাশিয়ায় সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হল। ইতিমধ্যে লেনিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়ার অংশ গ্রহণের নাম প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন। কিন্তু মিত্রশক্তিবর্গ তাতে কর্ণপাত করল না।

আরও পড়ুন: ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: মার্কো পোলো জীবনী

আরও পড়ুন: ইন্দিরা গান্ধী জীবনী

আরও পড়ুন: রাসবিহারী বসু জীবনী

আরও পড়ুন: মাদার টেরিজা জীবনী

আরও পড়ুন: ভগিনী নিবেদিতা জীবনী

ফলে লেনিন জার্মানির সঙ্গে পৃথকভাবে সন্ধি করতে চাইলেন। সুযোগ বুঝে জার্মানরা রাশিয়ার ইউরোপীয় অংশের প্রায় একতৃতীয়াংশ দাবি করল এবং শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন অঞ্চল দখল করে নিয়ে রাশিয়াকে ব্রেস্টলিটোভস্কের অপমানজনক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তিবর্গ রাশিয়ার বলশেভিক বিরোধী শক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য রাশিয়ায় সৈন্য পাঠালে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং বলশেভিক সরকারের পতন প্রায় আসন্ন হয়ে ওঠে। এই সময়ে ট্রটস্কি বলশেভিক ফৌজকে সংগঠিত করে পূর্বতন জার বাহিনীর সেনানায়কদের সহযোগিতায় মিত্রপক্ষের ফৌজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন।

অসংগঠিত সেনানায়কদের অনৈক্য, তদুপরি রাশিয়ার সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষকদের সমর্থনের অভাবে শেষ পর্যন্ত মিত্রশক্তির সৈন্যদের পরাজয় ঘটে এবং সারা রাশিয়ায় লেনিন পরিচালিত বলশেভিকদের পুনঃ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এ এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই প্রথম জনগণ নিজেদের অধিকার অর্জন করল। বিপ্লবের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দেশ পুনর্গঠন।

এই কাজে হস্তক্ষেপ করে লেনিন প্রথমেই ঘোষণা করলেন এক রাষ্ট্রীয় সনদ, তা হল, যুদ্ধ নয় শান্তি। এর পর জমিদার আর ভূস্বামীদের কাছ থেকে সমস্ত জমি কেড়ে নিয়ে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হল। এই কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ চারবছর দেশের রাজতন্ত্রের সমর্থক ও অসংখ্য প্রতিবিপ্লবী দলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হল। এইভাবেই লেনিনের রাশিয়ায় গড়ে উঠল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য শ্রমিক কৃষক ছাত্র শিক্ষক, সমস্ত প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করল নতুন রাশিয়ার কর্ণধার লেনিনকে।

ভি.আই. লেনিন এর মৃত্যু: Vladimir Lenin’s Death

21 জানুয়ারী 1924 ভি.আই. লেনিন এর জীবনাবসান হয়।

আরও পড়ুন: সুনির্মল বসু জীবনী

আরও পড়ুন: শিবরাম চক্রবর্তী জীবনী

আরও পড়ুন: আশাপূর্ণা দেবী জীবনী

আরও পড়ুন: সুকুমার সেন জীবনী

আরও পড়ুন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী

Leave a Reply