ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

সক্রেটিস জীবনী – Socrates Biography in Bengali

Socrates Biography in Bengali
Socrates Biography in Bengali
Rate this post

সক্রেটিস জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Socrates Biography in Bengali. আপনারা যারা সক্রেটিস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সক্রেটিস এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

সক্রেটিস কে ছিলেন? Who is Socrates?

সক্রেটিস (৪৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক। এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া যায় কেবলমাত্র তাঁর শিষ্য প্লেটোর ডায়ালগ এবং সৈনিক জেনোফনের রচনা থেকে। তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে তাঁকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে পশ্চিমি দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। সক্রেটিস ছিলেন এক মহান সাধারণ শিক্ষক, যিনি কেবল শিষ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে বিশ্বাসী ছিলেননা। তার কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষায়তন ছিলনা। যেখানেই যাকে পেতেন তাকেই মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তিনি মানব চেতনায় আমোদের ইচ্ছাকে নিন্দা করেছেন, কিন্তু সৌন্দর্য দ্বারা নিজেও আনন্দিত হয়েছেন।

সক্রেটিস জীবনী – Socrates Biography in Bengali

নামসক্রেটিস
জন্ম470 খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পিতাসোফ্রোনিসকাস
মাতাফেনারেতে
জন্মস্থানডেমে অ্যালোপেস, এথেন্স
জাতীয়তাগ্রীক
পেশাদার্শনিক
মৃত্যু399 খ্রিস্টপূর্বাব্দ (বয়স প্রায় 71)

bengaliportal

 

সক্রেটিস এর জন্ম: Socrates’s Birthday

সক্রেটিস 470 খ্রিস্টপূর্বাব্দ জন্মগ্রহণ করেন।

সক্রেটিস এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Socrates’s Parents And Birth Place

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগের কথা গ্রীসের সিংহাসনে তখন সম্রাট পেরিক্লিস। তাঁর রাজত্বকালেই প্রাচীন গ্রীস উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছিল। বহু বিখ্যাত নাট্যকার, বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক ও দার্শনিক এইযুগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে জগৎবরেণ্য দার্শনিক সক্রেটিস অন্যতম।

অনেক সুপ্রাচীন বিষয়ের মত পণ্ডিত – দার্শনিক সক্রেটিসের জন্মের সন – তারিখ ইত্যাদি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৯ অব্দে, কারো মতে ৪৭০ অব্দে এথেন্স নগরীর উপকন্ঠে সক্রেটিসের জন্ম। সক্রেটিসের বাবা ছিলেন সাধারণ এক ভাস্কর। ছেলেবেলা সক্রেটিস বাবার সঙ্গে থেকে মূর্তি গড়ার কাজ শিখেছিলেন।

আরও পড়ুন: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী

আরও পড়ুন: চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন জীবনী

আরও পড়ুন: চার্লস ডিকেন্স জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী

সক্রেটিস এর কর্ম জীবন: Socrates’s Work Life

ভাস্কর্য বিদ্যায় সেই সময গ্রীসের খ্যাতি দেশের বাইরেও। অতীতের গ্রীক ভাস্কর্যের অতুলনীয় নিদর্শন আজো কিছু কিছু অক্ষত অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। বালক সক্রেটিস বাবার পাশে থেকে মূর্তিগড়া দেখেন, কখনো তাঁকে সাহায্য করেন। নিজেও কিছু যে চেষ্টা না করেন তা নয়। কিন্তু মূর্তি খোদাইয়ের কাজে যেন ঠিক তৃপ্তি পেত না তার মন।

কাজ করতে করতে প্রায়ই উদাস হয়ে পড়েন তিনি। চারপাশের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তাঁর মাথায় ভিড় জমাত। শেষ পর্যন্ত জীবন ধারণের জন্য জাগতিক ব্যবস্থা ভাস্কর্যবিদ্যাকে নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর মনে হল তার। জীবনের সত্যের সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে একদিন তিনি গৃহত্যাগ করলেন।

প্রাচীন গ্রীসে সফিস্ট নামে একটি সম্প্রদায় ছিল। এই সফিস্টদের পেশা ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ানো। সেই কারণে সমাজে সফিষ্টরা যথেষ্ট সম্মান পেতেন। তাদের অর্থ উপার্জনও হত যথেষ্ট। গ্রীকরা গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতাকে একটি মহৎ গুণ বলে মনে করত এবং গুণীর সম্মান দেখাতে বা মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে তারা কার্পণ্য করত না। কাজেই সফিস্টদের আয় রোজগার যথেষ্টই ভাল ছিল বলা চলে।

বক্তৃতা দেওয়া মহৎ গুণ তাতে সন্দেহ নেই, এই গুণ চেষ্টা ও চর্চার দ্বারা অর্জন করতে হত। যুক্তি দিয়ে সুশৃঙ্খল ভাবে গুছিয়ে কথা বলা রীতিমত অভ্যাসের ব্যাপার। অন্যান্য শিল্পকর্ম যেমন চর্চা ও অনুশীলনের দ্বারা সম্ভব হয়, তেমনি কোন বিষয়ে মনোজ্ঞ বক্তব্যকেও শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করতে পারা যায় নিরন্তর অনুশীলনের মাধ্যমে।

সমাজের সফিস্টরা তাই নিজেরা যেমন বক্তৃতা দিতেন, তেমনি অন্য লোককেও শেখাতেন। রাস্তার মোড়ে, মাঠে – ময়দানে বা হাটে – বাজারে দাঁড়িয়ে যখন এঁরা নানা বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন, সেই সময় তরুণ অনেক শিক্ষার্থীও থাকত তাঁদের সঙ্গে। হাতে কলমে তালিম গ্রহণই ছিল এই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে। সক্রেটিস এসে এই সফিস্ট দলে যোগ দিলেন। তাদের দলের সঙ্গে কিছুদিন নানাস্থানে ঘুরে বেড়ালেন।

কিন্তু খুব অল্প দিনের মধ্যেই সফিস্টদের সম্বন্ধে তাঁর মন বিরূপ হয়ে উঠল। সক্রেটিস দেখলেন যে সফিস্টরা শুধু যন্ত্রের মত কথাই বলে, সেই সব কথার মধ্যে সারবস্তু কতটা আছে, কি পরিমাণ সত্য ও যুক্তি আছে তা নিয়ে মোটেই ভাবনা চিন্তা করে না। পুরনো গতানুগতিক ভাবধারাই সকলে নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তুলে ধরে। স্বাধীন চিন্তা বলতে কারোরই কিছু নেই।

সকলেরই একমাত্র লক্ষ অর্থ উপার্জন — এজন্য গুছিয়ে কথা বলার দিকেই সকলের মনোযোগ নিয়োজিত। বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সক্রেটিস সফিস্টদের সঙ্গ ত্যাগ করলেন। তাঁর মনে নানা প্রশ্ন। তার ব্যাপ্তি পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু থেকে সৃষ্টিকর্তা ভগবান পর্যন্ত। ভগবান কে ? মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য কি ? প্রকৃত রাষ্ট্র কেমন হওয়া উচিত ? দয়া, ধর্ম, ভক্তি এসব কথার মর্ম কি ? মানুষের জীবনে এসবের প্রয়োজনীয়তা কি ?

এসব হাজারো প্রশ্ন নিরন্তর তাঁর মনে উদিত হতে থাকে। নিজেকেই নিজে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেন, কে দেবে এসব প্রশ্নের উত্তর ? সমাজে যারা জ্ঞানীগুণী বলে পরিচিত, তাঁদের কাছে এসব প্রশ্নের সমাধান চেয়েও হতাশ হন তিনি। তাঁরা সেই পুরনো ধ্যানধারণার কথাই আওড়ান। তাদের সব কথার যুক্তি তিনি খুঁজে পান না। নিজের চিন্তায় ডুবে থেকে সক্রেটিস উদভ্রান্তের মত পথে পথে ঘুরে বেড়ান।

পায়ে জুতো নেই, পোশাক – আসাকের বালাই নেই। পথ চলেন আর পথের মানুষদের ধরে ধরে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। তার কথা শুনে কেউ হাসে, কেউ টিটকারি দেয়, কেউ পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সকলেই ভাবে সক্রেটিস পাগল হয়ে গেছে। তা পাগল ভাববার অন্য কারণও ছিল। জাতি হিসেবে গ্রীকরা সকলেই সুগঠিত সুন্দর দেহের অধিকারী। স্বভাবতই তারা সুন্দরের পূজারী। অসুন্দর কিছু দেখলে সহজেই তাদেব মন বিরূপ হয়ে পড়ে।

সক্রেটিস নিজে ছিলেন কদাকার — মাথাজোড়া টাক, গোলমুখ, চ্যাপ্টা নাক, থলথলে শরীর। তার ওপরে অপরিচ্ছন্ন আলুথালু বেশবাসে তাকে পাগল বলে মনে হওয়া কিছুমাত্র অস্বাভাবিক ছিল না। সমস্ত অবয়বের মধ্যে কেবল চোখদুটি ছিল আশ্চর্য রকমের উজ্জ্বল। কিন্তু সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখের দিকে সাধারণ মানুষের তাকাবার ফুরসৎ কোথায় ? তাদের কেবল নজরে পড়ত, লোকটা দিনরাত উদ্দেশ্যহীন ভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে আর যাকে খুশি যা – তা প্রশ্ন করছে।

কখনো ভগবানের কথা, কখনো বা প্রশ্ন, বল তো বাবা মাকে কেন শ্রদ্ধা করা উচিত ? দয়া – ভক্তি – ভালবাসা এসব কথার অর্থ বোঝ ? তারা দেখতে পেত লোকটা এভাবে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ওদিকে তার বাড়িতে বৌ ছেলেমেয়ে না খেতে পেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাদের ভরণপোষণের চিন্তা নেই, টাকাপয়সা রোজগারের ধান্দা নেই, নিজে কি খাবে তার ভাবনাও নেই। গোড়ার দিকে সক্রেটিসকে নিয়ে সকলেই হাসি – তামাসা করত।

কিন্তু যত দিন যেতে লাগল, তারা বুঝতে পারল, এ পাগল সাধারণ পাগল নয়। তার প্রশ্নগুলে ! এলোমেলো বটে, শুনলে হাসি পায়, কিন্তু জবাব দিতে গেলে বোকা বনে যেতে হয়। আরও পরে সক্রেটিসের মুখ থেকে নানা প্রশ্নের জবাব শুনে লোকেরা বুঝতে পারল, তারা এতদিন কেবল বাঁধা বুলি মুখস্থ করেছে, সফিস্টরা যা বলেছে, তাই একবাক্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু খুঁটিয়ে বিচার করলে সক্রেটিসেব কথাগুলোই বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে বোধ হচ্ছে।

তারা যুক্তি দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে যা বিচার করেনি, সক্রেটিস তাই করেছে। ধীরে ধীরে সকলের মনের ঘোর কাটল, সকলের বিস্ময় জাগল, বিস্ময় থেকে শ্রদ্ধা। তারা বুঝতে পারল, নিতান্ত পাগল হলে লোকটা এমন মনের জোর, একনিষ্ঠা ধৈর্য ও অধ্যবসায় বজায় রাখতে পারত না। সক্রেটিসের অপরিসীম ধৈর্যের বিষয়ে অনেক গল্প প্রচলিত। তার মধ্যে একটি হল, হঠাৎ একবার রটে গেল, সক্রেটিস ভোরবেলা থেকে একজায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কি ভেবে চলেছেন।

দলে দলে লোক জড়ো হতে লাগল তাঁকে দেখবার জন্য। সকলেই দেখল, সক্রেটিসের কোনদিকেই খেয়াল নেই, নিজের ভাবনায় ডুবে আছেন। সকাল গিয়ে দুপুর হল, দুপুর থেকে সন্ধ্যা। দিন শেষ হতে চলল, সক্রেটিস তখনো এক জায়গায় অটল অনড় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কৌতূহলী হয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল সক্রেটিসের কান্ড। ক্রমে রাত গভীর হল। সক্রেটিস তখনো দাঁড়িয়ে ভাবছেন। তার সেই ভাবনার অবসান হল পরদিন সকালে — যখন আকাশে সুর্যোদয় হল।

এই ঘটনার মধ্য দিয়েই এই বিশ্ববরেণ্য দার্শনিকের অপরিসীম ধৈর্য, কষ্টসহিষ্ণুতা ও জ্ঞান পিপাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। সক্রেটিস সেদিন নিশ্চয়ই কোন অমীমাংসিত প্রশ্নের মীমাংসায় ডুবে ছিলেন চিন্তার জগতে। ইতিমধ্যে নাগরিকদের অনেকেই সক্রেটিসের যুক্তিপূর্ণ কথা ও আলোচনা শুনে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দেশের তরুণ সম্প্রদায়। দিনে দিনে তরুণদের মধ্যে সক্রেটিসের চিন্তার প্রভাব বেড়ে চলতে লাগল।

অনেকে এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। তাঁদের মধ্যে প্লেটো ও জেনোফোনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ! পরবর্তী যুগে প্লেটো একজন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ও জেনোফোন ঐতিহাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। অন্যান্য দার্শনিকদের মত সক্রেটিস নিজের মতামত কোন গ্রন্থে লিখে যান নি। তিনি কখনো কিছু লিখতেন না। সবসময় একদল শিষ্য নিয়ে কথা বলতে বলতে ঘুরে বেড়াতেন কিংবা কোথাও বসে মুখে মুখে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।

আরও পড়ুন: গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: সালিম আলী ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: আবদুস সালাম জীবনী

আরও পড়ুন: দৌলাত সিং কোঠারি জীবনী

প্লেটো ও জোনোফোন সক্রেটিসের জীবনী ও মতবাদ লিখে রেখে গেছেন। তাঁদের লেখা থেকেই সক্রেটিস সম্পর্কে যা কিছু জানা সম্ভব হয়েছে। সক্রেটিসের মূল কথা ছিল Know thyself অর্থাৎ নিজেকে জানো। সমগ্র বিশ্বে জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ বলেই সক্রেটিস সম্মানীত। কিন্তু নিজের সম্পর্কে সক্রেটিস বলতেন, One thing only I know, and that is that I know nothing.

তিনি বলতেন, আমি এটুকুই কেবল জানি যে আমি কিছুই জানি না। এই বিশ্ববিশ্রুত দার্শনিক এই কথার দ্বারা বলতে চেয়েছেন, মানুষের জানার কোন সীমা নেই, জ্ঞান অসীম ও অনন্ত। সক্রেটিসের মতে জ্ঞানই হচ্ছে মানুষের ধর্ম। মানুষকে বিচার করতে হবে সে কি রকম জ্ঞানী তাই দিয়ে। আর জ্ঞান হল আহরণের বা অর্জনের জিনিস তা আপনা থেকে মনের মধ্যে উৎপন্ন হয় না। তাই কেউ বৃদ্ধ হয়েছে বলেই তাকে জ্ঞানী বলা যায় না, যদি না সে সত্যিকার জ্ঞান অর্জন করে।

এই কারণেই মা – বাবা যদি অশিক্ষিত হন, তবে তাঁরা শুধু গুরুজন বলেই সন্তানদের ভক্তিশ্রদ্ধা পেতে পারেন না। রাষ্ট্রের বিষয়েও নানা কথা বলে গেছেন সক্রেটিস। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের যিনি কর্ণধার, দেখতে হবে তিনি সত্যিকার কর্ণধার হবার উপযুক্ত কিনা। নইলে রাজার ছেলে বলেই রাজা হবেন, কিম্বা সবাই ভোট দিয়েছে বলে বা গায়ের বলে দেশটা দখল করতে পেরেছে বলেই একজন দেশের হর্তাকর্তা হবেন — সকলে তাকে মান্য করে চলবে, হতে পারে না।

বিচার করে দেখতে হবে, দেশ শাসন করবার উপযুক্ত বিবেক বুদ্ধি তার আছে কিনা। সক্রেটিস বলতেন, অনেক লোক বলল বলে কিংবা তুমি দেখছ শুনছ বলে হুট করে কোন কিছুকে সত্যি বলে মেনে নিও না। যা শুনছ, দেখছ তাকে আগে বিচার বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে দেখ, তারপর গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করলে গ্রহণ করবে, নইলে বাতিল করবে। ভাবাবেগের বশীভূত হয়ে কখনো কিছু করবে না। ভগবান থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত কিছুই এইভাবে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।

অন্ধ ভক্তি বিশ্বাসকে পশ্রয় দিলে আখেরে ঠকতে হতে পারে। মানুষের সকল সংস্কার, আচার – অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেই সক্রেটিসের ছিল সন্দেহ ও জিজ্ঞাসা। এই সর্বব্যাপী জিজ্ঞাসাই চিন্তা জগতে সক্রেটিসের সবচেয়ে বড় অবদান। জ্ঞান ও সত্যের প্রভুত্ব ছাড়া আর কোন কিছুর প্রভুত্ব তিনি স্বীকার করতেন না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব তিনি স্বীকার করতেন কিন্তু তা করতেন নিজের যুক্তি বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে।

লোকে বলে ঈশ্বর আছেন, কাজেই তা বিশ্বাস করতে হবে, চোখবুজে মেনে নিতে হবে, সক্রেটিস সব বিষয়েই এরকম চিন্তার বিরোধী ছিলেন। সক্রেটিস ছিলেন যুক্তিবাদী দার্শনিক। কিন্তু তাই বলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে নিজের কর্তব্যের প্রতি কখনো উদাসীন ছিলেন না। সেই কর্তব্য পালনেও তার কুন্ঠা ছিল না। দেশের স্বার্থে একাধিক যুদ্ধে তিনি সৈনিকরূপে যোগদান করেন এবং রীতিমত বীরত্বের পরিচয় দেন। বেশ কিছুকাল তিনি এথেন্সের রাজসভার সদস্য ছিলেন।

তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের অনুগত প্রজা। কিন্তু ন্যায় – অন্যায়ের বোধ ছিল তার সদাজাগ্রত। ইতিমধ্যে গ্রীসে গণতন্ত্রের উচ্ছেদ হয় এবং অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সরকারী নীতির প্রতিবাদ করা শাস্তি জনক অপরাধ হয়ে দেখা দিল। নির্বিচারে প্রতিবাদী মানুষদের জেলে পাঠানো হতে লাগল। অনেকেরই প্রাণদন্ড হল। সক্রেটিস তখন জীবনের শেষপ্রান্তে। তিনি সমাজে মান্যগণ্য বিশিষ্ট এক নাগরিক।

এই সময় একদিন তার ও অপর চারজন নাগরিকের ওপর সরকারী আদেশ এল যে অপর এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। যেই নাগরিককে গ্রেপ্তার করার হুকুম হয়ছিল, সক্রেটিস ভালভাবেই জানতেন যে তিনি সরকারী নীতির সমর্থক না হলেও মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সৎ এবং নির্দোষ। অতএব তাঁকে গ্রেপ্তার করবার প্রশ্নই আসে না। সক্রেটিস সরকারী আদেশ মানতে সরাসরি অস্বীকার করলেন। এই ঘটনায় সক্রেটিস সরকারের রোষে পড়লেন।

যদিও তার প্রভাবের কথা বিবেচনা করে প্রকাশ্যে তাকে কিছু বলা হল না। দেশজুড়েই তখন তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সক্রেটিসের মতবাদের প্রবল প্রভাব। তারাই তাঁর প্রধান ভক্ত ও অনুগত। দেশের প্রচলিত রীতিনীতি, আচার – অনুষ্ঠানের প্রতি তারা বিশ্বাস হারিয়েছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ হয়ে পড়েছে উশৃঙ্খল। ফলে সমাজ জীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয় — গ্রহণ ও বর্জন নিয়ে আলোড়ন ৷

আরও পড়ুন: ব্লেজ পাস্কাল জীবনী

আরও পড়ুন: অ্যান্টনি ভন লিউয়েন হক জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী

আরও পড়ুন: লাজারো স্পালানজানি জীবনী

আরও পড়ুন: হেনরি ক্যাভেন্ডিশ জীবনী

দেশের তরুণদের অবস্থা দেখে রক্ষণশীল প্রবীণ সম্প্রদায় শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। দেশের ভবিষ্যৎ স্বরূপ যে যুবশক্তি, তাদের মধ্যেই যদি চিন্তার ক্ষেত্রে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তাহলে যে প্রচলিত রীতিনীতি ধসে পড়বে। বুদ্ধি – বিবেকের দাহাই দিয়ে যে – কেউ যা – খুশি করে বেড়াবে ? দেশে সমাজ ব্যবস্থা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না ? উদ্বিগ্ন প্রবীণ সম্প্রদায় সরকারের দ্বারস্থ হলেন। সক্রেটিসের ওপর সরকারের মনোভাব আগে থেকেই বিরূপ ছিল।

এবারে সুযোগ এসে গেল তাকে উপযুক্ত জবাব দেবার। একরকম সঙ্গে সঙ্গেই সক্রেটিসকে রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হল। পাঁচশ একজন বিচারক নিয়ে বিচারকমণ্ডলী গঠিত হল। সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করা হল দুটি — প্রথমতঃ তিনি নাস্তিক, দেশের সকলে যে ঈশ্বরের পুজো করে, তিনি তাকে মানেন না। দ্বিতীয় অভিযোগ হল, দেশের যুব সমাজকে তিনি বিপথে চালিত করছেন।

দেশের বিচার তার বিরুদ্ধে গেলেও সক্রেটিস সত্যচ্যুত হতে চাননি। প্রহসন বিচার ব্যবস্থার সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তিনি কি বলেছিলেন, সক্রেটিস শিষ্য প্লেটো তা লিখে রেখে গেছেন। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অকুতোভয়ে নিজের মতবাদকেই সক্রেটিস ঘোষণা করে যান। যা সত্যি বলে জানেন এবং মানেন, তাই তিনি প্রচার করেছেন — এ যদি অপরাধ হয় তবে তিনি অপরাধী। অধিকাংশ বিচারকই একমত হয়ে সক্রেটিসকে দোষী বলে সাব্যস্ত করেন।

সক্রেটিস দণ্ড হিসেবে এক মিনা (তিন পাউন্ড) মাত্র দিতে স্বীকৃত হলে বিচারকগণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে বিষপানে হত্যার নির্দেশ দেন। আর সেই বিষ হেমলক, নিজের হাতে তাকে পান করতে হবে। সক্রেটিস দন্ডাদেশ শুনে কোনরকম প্রতিবাদ করেন নি। অথচ তিনি জানতেন দন্ডাদেশ মকুব করার জন্য আপীল করার পথ খোলা রয়েছে।

আরও পড়ুন: জন ডাল্টন জীবনী

আরও পড়ুন: কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউস জীবনী

আরও পড়ুন: আমেদেও অ্যাভোগাড্রো জীবনী

আরও পড়ুন: হামফ্রে ডেভি জীবনী

আরও পড়ুন: কাউন্ট রামফোর্ড জীবনী

সক্রেটিস এর মৃত্যু: Socrates’s Death

সত্তর বছরের বৃদ্ধ দাশনিক সক্রেটিসকে পাঠানো হল কারাগারে। মৃত্যু নিশ্চিত কিন্তু অতুটুকু মনোবিকার দেখা গেল না তাঁর মধ্যে। কারাগারে বসেও তিনি আগের মতই শিষ্যদের সঙ্গে নিশ্চিন্তে তর্কবিতর্ক আলাপ – আলোচনা করেছেন। শিষ্যরা তাঁর পলায়নের পরিকল্পনা ছকে কারারক্ষীদের সঙ্গে রফা করলেন। কিন্তু সক্রেটিস রাজি হলেন না। বললেন, প্রাণের চেয়ে আদর্শ বড়। আদর্শের জন্য তিনি প্রাণ দেবেন, চোরের মত পালিয়ে গিয়ে আদর্শকে হেয় করবেন না।

তারপর একদিন শান্তমুখে সকলকে ক্ষমা করে তিনি হেমলক বিষের পাত্র নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে মুখে তুলে ধরলেন। সক্রেটিসের মৃত্যু ছিল যেমন করুণ তেমনই মহিমাময়। নিজের আদর্শের জন্য হাসিমুখে সক্রেটিস প্রাণ দিয়েছিলেন। মানুষের চিন্তাজগতে প্রথম আলোড়ন তুলে অন্ধকুসংস্কারেব ওপাব ব্যক্তি মানুষের বিচারবুদ্ধিকে বড় করে তুলে আঘাত হেনেছিলেন তিনি। চিন্তাজগতে বিবর্তনের হোতা পৃথিবীর প্রথম শহীদ দার্শনিক সক্রেটিস।

Leave a Reply