সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আপেল খান – জানুন আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: আপেল আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মার্কেটে বা বাজারে পাওয়া যায়। আপেল একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু জাতের ফল। আপেল ভারতের কাশ্মীরে চাষ হয়। এক কথায় ভারতীয় আপেলকে কাশ্মীরি আপেল বলা হয়। আপেল খেতে আমরা কম-বেশি সবাই পছন্দ করি।
আপেল এর বিজ্ঞানসম্মত নাম: Pyrus malus
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে আপেল খান – জানুন আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
আপেল একটি সুষম খাবার। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। দ্রুত ক্ষুধা মেটাতে কিংবা শরীরচর্চার পর দ্রুত শক্তির জন্য আমরা আপেল খেয়ে থাকি। এটি ফাইবার, পুষ্টিকর এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ আপেল সকালের খাবার কিংবা টিফিনের জন্যও সমান উপযোগী।
আরও পড়ুন: আতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
আপেলের স্বাস্থ্যকর অংশটিই আমরা সাধারণত ফেলে দেই! এমনটাই প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলের আপেল ফলটিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, তাই সারাবছর কমবেশি বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। নিয়মিত আপেল খেলে চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় না। আপেলের কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই।
আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি যা দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. আপেল অসুস্থ শরীরকে তাৎক্ষণিক এনার্জি প্রদান করে ও দেহের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
৩. ওজন ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: আপেলে আমাদের শারীরিক দেহের গঠন নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপেল দেহের চাহিদা মতো, ওজন বৃদ্ধিতে শরীরকে স্ট্রং করতে সাহায্য করে। আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, তাই ওজন ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গলস্টোনের সম্ভাবনা কমায়।
৪. ডায়ারিয়া রোগে: আপেলের পুষ্টি ও ভিটামিনস গুলি শুধু স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী নয় ডায়রিয়াতে ও আপেল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডায়রিয়া হলে ১টি আপেল ফুটন্ত গরম ভাতে ফেলে দিয়ে সিদ্ধ করে নিন তারপর সিদ্ধ আপেলটি ভালো করে আলুর মতো খোসা সমেত ঠেসে নিন পরিমান মতো নুন দিয়ে তার পর গরম ভাতের সহিত রোগীকে খাইয়ে দিন কমপক্ষে তিনদিন ডায়রিয়াতে আরাম পাবে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা: আপেল কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশমে অত্যন্ত কার্যকরী। আপেলের মধ্যে থাকা অর্গানিক এসিড, সুগার আর সেলুলোজ সহজে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সাথে সাথে পেটের সমস্যা কমায় ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: আপেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি, বি ৯, পটাসিয়াম, ভিটামিন-বি ৩, সোডিয়াম থাকায় শরীরের রােগ প্রতিরােধকারী শক্তি (ইমিউনিটি সিস্টেম) বৃদ্ধিতে আপেল সাহায্য করে।
৭. রক্তাল্পতা রোগে: আপেল রক্তাল্পতা, অ্যাজমা ও ইনসমনিয়া জাতীয় রােগে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।অনেক সময় রক্তদান করার পর ডাক্তার তাদেরকে আপেল খেতে বলে থাকে। কারণ আপেল খুব তাড়াতাড়ি শরীরের রক্তের চাহিদা মেটায়। যারা রক্তাল্পতায় বা যাদের শরীরে রক্তের পরিমান কিছু ঘাটতি দেখা দেয় ডাক্তার তাদেরকে আপেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন ১-২টি আপেল খেলে রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পাবেন ও আরো সমস্যা থেকে।
৮. আলঝাইমা রােগে: আলঝাইমা রােগের প্রতিরােধ শক্তি রয়েছে আপেলের মধ্যে। নিয়মিত আপেল খেলে আলঝাইমা রােগের সম্ভাবনা কমে।
৯. ক্যানসারের সম্ভাবনা: গবেষকদের মতে ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয় আপেল। বিশেষ করে আপেল খেলে প্যানক্রিয়াস ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে। তবে অতিরিক্ত আপেল খাওয়া ভালো নয়।
১০. দাঁতের সমস্যা: প্রতিদিন ১-২টি করে আপেল খেলে দাঁতের এনামেলের ক্ষয় রােধ করে। তার সাথে সাথে আরো নানা রোগের থেকে মুক্তি পাবেন।
১১. পার্কিনসন্স রােগে: আপেল পার্কিনসন্স রোগের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। পার্কিনসন্স-এ আক্রান্ত হলে আমাদের স্নায়ুকোষ ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে একটি রাসায়নিকের ঘাটতির জন্য এটা হয়ে থাকে। পার্কিনসন্স রােগের প্রতিরােধে আপেল খুব উপকারী।
১২. ত্বকের সমস্যা: আমাদের মুখেই ধরা পড়ে আমাদের ভিতরের সৌন্দর্য। শরীরে যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি বা ভিটামিনস না পায়, তা হলে তার চিহ্নও ফুটে ওঠে আমাদের মুখের মধ্যেই। কারো হজম সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে, লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে বা অন্য নানা সমস্যার প্রথম ছাপ দেখা যায় আমাদের ত্বকে। মুখে দাগ, র্যাশ, ব্রণ, অসমান ত্বকের রং, এ সবই কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও গোলযোগ কে চিহ্নিত করে থাকে। এই রকম যেকোনো ধরণের ত্বকের সমস্যা ভিতর থেকে সারিয়ে তােলে আপেলের মধ্যে থাকা ভিটামিন-ই, এ, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: লিচুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১৩. চোখের কোনে কালি: আপেলে থেতে পেস্ট করে নিন তারপর চোখের ওপরের পাতায় ১৫-২০ মিনিট রাখলে স্ট্রেসজনিত কারণে চোখের কোনে পড়া কালি অনেকটা দূর হয়। চোখের কালী দূর করতে আপেলের জুড়ি মেলা ভার।
১৪. টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগে: ডায়াবিটিসের উপর আপেলের প্ৰভাব। ভারতীয়রা জিনগত ভাবে বেশি ডায়াবেটিস রোগে আক্রন্ত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে যে ডায়াবেটিসের প্রাধান্য আধিক্য দেখা যাচ্ছে এর কারণ শারীরিক কসরতের বা ব্যায়ামেরে অভাব এবং অধিক ক্যলোরি যুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতার জন্য। এর ফলে আমাদের সমাজে মোটা হওয়ার প্রবণতা খুব বেড়ে যাচ্ছে। তবে মোটা নন এমন মানুষও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এঁদের বেশির ভাগেরই তলপেটে চর্বি জমে ভুঁড়ির আকৃতি নেয়। মানসিক স্ট্রেস বা চাপও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। নিয়মিত আপেল খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে যায়।
১৫. হৃদয় সুস্থ: আপেল নিয়মিত খেলে হৃদয় সুস্থ সবল থাকে। হৃদয়কে সুস্থ ও সবল রাখা প্রয়োজন কারণ হৃদয় সুস্থ থাকলে হার্ট-এটাকের সম্ভবনা কমেযায়।
১৬. বৃদ্ধি ও বিকাশে: আপেল একটি সুষম খাবার। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।
আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Apples:
প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে আছে-
- কার্বোহাইড্রেট – ১৩.৮১ গ্রাম
- লােহা – ০.১২ মিলিগ্রাম
- প্রােটিন – ০.২৬ গ্রাম
- জিঙ্ক – ০.০৪ গ্রাম
- ফ্যাট – ০.১৭ গ্রাম
- ভিটামিন-এ – ৫৪ আই. ইউ
- জলের মাত্রা – ৮৫.৫৬ গ্রাম
- ভিটামিন-বি ১ – ০.০১৭ মিলিগ্রাম
- খাদ্য আঁশ – ২.৪০ গ্রাম
- ভিটামিন-বি ৩ – ০.০২৬ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৬.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-বি ৯ – ৩.০০ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম – ১০৭.০০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-সি – ৪.০৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ৫.০০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-ই – ১.১৪ মাইক্রোগ্রাম
- ফসফরাস – ১১.০০ মিলিগ্রাম
- তাপশক্তি – ৬৬ কিলাে ক্যালােরি
- সােডিয়াম – ১.০০ মিলিগ্রাম