ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে পেয়ারা খান – জানুন পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: পেয়ারা আমাদের সকলের একটি প্রিয় সুস্বাদু ফল। এটি ভারতের সর্বত্র পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বাড়িতে পেয়ারা গাছ দেখা যায়। একটি উপকারী ও সুস্বাদু ফল পেয়ারা। পেয়ারা সহজলভ্য এবং খাদ্যগুণ ও পুষ্টি মূল্যে ভরপুর। তাই কথায় বলে “One guava a day, keeps the doctor away!”

পেয়ারার বিজ্ঞানসম্মত নাম: Psidium guajava

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে পেয়ারা খান – জানুন পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

পেয়ারাতে থাকা পুষ্টি ও ভিটামিন আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও শরীর কে স্ট্রং রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পেয়ারা ফলই শুধুই উপকারী নয় পেয়ারা পাতাতেও অনেক গুণ রয়েছে আয়ুর্বেদে। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী, ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম। এছাড়া প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে পেয়ারা পাতা। স্বাদ পুষ্টিগুণ আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখে পেয়ারা খেলে মানব শরীরে প্রচুর লাভ হয়ে থাকে।

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে পেয়ারা খান - জানুন পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে পেয়ারা খান – জানুন পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:

১. কাঁচা পেয়ারার গুণ: কাঁচা পেয়ারার মধ্যে ট্যানিক, অক্সালিক ও ফসূফোরিক এ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট বেশী পরিমাণে থাকে যা দাঁত মাড়ির পক্ষে বিশেষ উপকারী। এছাড়া দাঁত দিয়ে রক্তপড়া রােগে কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে তার রস দিয়ে পুরাে দাঁত ও মাড়িতে প্রলেপ দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। মাড়ি ফোলা ও ব্যথার ক্ষেত্রে পেয়ারা গাছের শিকড় অল্প পরিমাণ জলে ফুটিয়ে সেইজল দিয়ে ধুলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

আরও পড়ুন: আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

২. ফ্যাট বা ওজন মেদ কমাতে: পেয়ারা প্রতিদিন ১টা খোলা সমেত চিবিয়ে খেলে স্বাস্থ্য বিশেষ উপকারিতা লাভ করে। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস রয়েছে। এতে, ক্যালরি এবং ফ্যাট দুইই কম থাকে। পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: পেয়ারাতে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন নিয়ম করে ১-২ টি পেয়ারা খেলে নানা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ, অম্লরােগ, মুখে ক্ষত, হাঁপানি, নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

৪. ত্বক বা স্কিনের সমস্যায়: রোজ পেয়ারা ১-২টি খেলে যেমন স্বাস্থ্যের উপকার করে তেমন ত্বক বা স্কিনের সমস্যার সমাধান ও করে থাকে। পেয়ারা ব্রণ, মুখের কালো ছোপকে প্রতিরোধ করে ত্বকের গ্লো ফুটিয়ে তোলে। পেয়ারাতে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার ফলে স্কিনের জন্য খুব উপকারী।

৫. দাঁতের ব্যথায়: দাঁতের ব্যথায় পেয়ারা পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। পেয়ারাতে রয়েছে আন্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি-বাকটেরিয়াল গুণাগুণ যা মুখের ইনফেকশন বা জীবাণু রোধ করতে সক্ষম। দাঁতের যন্ত্রনায় পেয়ারা গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে কুলি করলে দাঁতের যন্ত্রনা নরম হয় তাড়াতাড়ি। দাঁত দিয়ে রক্তপড়া রােগে কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে তার রস দিয়ে পুরাে দাঁত ও মাড়িতে প্রলেপ দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। মাড়ি ফোলা ও ব্যথার ক্ষেত্রে পেয়ারা গাছের শিকড় অল্প পরিমাণ জলে ফুটিয়ে সেইজল দিয়ে ধুলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

৬. পেশিতে টানলাগা: অনেক সময় কাজ করতে করতে আমাদের হাত ও পায়ের পেশির শিরা টান লাগে এগুলি সাধারণত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এর মাত্রা শরীরে কম থাকার কারণে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারাতে ক্যালসিয়াম (১৮.১৮ মিলিগ্রাম), পটাসিয়াম (৪১৬৯৬ মিলিগ্রাম), ভিটামিন-বি ১২ (৪৯.০ মিলিগ্রাম) ম্যাগনেশিয়াম যথেষ্ট পরিমানে পেয়ারাতে থাকায় এই সমস্যার থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৭. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি: এই ফলে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার থাকার ফলে পেট পরিষ্কার রাখতে ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পেয়ারার জুড়ি মেলা ভার।

৮. স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে: আর্য়ুর্বেদ মতে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে পেয়ারার গুণ গুরুত্বপূর্ণ। যাদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা প্রতিদিন ১-২টি গোটা পেয়ারা খোসা সমেত চিবিয়ে খেলে উপকার পাবেন। পেয়ারাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম (১৮.১৮ মিলিগ্রাম), ভিটামিন-বি (০.৬৯ মিলিগ্রাম) ও ভিটামিন-বি ৬, ভিটামিন-বি ১২ (৪৯.০ মিলিগ্রাম) যা মস্তিষ্কে রক্তস ঞ্চালন বৃদ্ধি সাথে মাথা ঠান্ডা রাখে ও স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

৯. প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় পেয়ারা রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা খুব বাড়ায়।

আরও পড়ুন: আতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

১০. ডাইরিয়াতে: কাঁচা পেয়ারা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ উপযােগী, কচি পেয়ারা এবং মাখন একসাথে মিশিয়ে খেতে পারলে সাধারণ ডায়রিয়া ডিসেন্ট্রির ক্ষেত্রে উপকারী।

১১. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য: গর্ভবস্থায় মহিলাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়, ঠিক মতো হজম না হওয়া বা পেট পরিষ্কার না হওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস, স্নায়ু দুর্বলতা, ইনফেক্সনএর মতো আরো নানা রোগ থেকে পেয়ারা রক্ষা করে। পেয়ারাতে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-বি ৯, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী।

১২. ক্যানসার প্রতিরোধ: নিয়মিত পেয়ারা খেলে ছোট থেকে নানা বড় ধরণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আজকাল আমাদের চারিপাশে ক্যান্সার রোগে নানা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা থাকা অতি আবশ্যক। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন নিয়মিত পেয়ারা সেবনে পেয়ারা ক্যান্সার কেও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। পেয়ারাতে থাকা লাইকোপিন, কুয়েরসিটিন, ভিটামিন-সি ও আরও নানা ধরণের পলিফেনলস যা সমস্ত রকম ক্যানসার রােধ করতে সহায়ক।

১৩. দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে: পেয়ারার নানা গুনের মধ্যে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে পেয়ারার গুণ অনস্বীকার্য। পেয়ারাতে বেশি ভিটামিন-এ (৬২৪ আই. ইউ.) পাওয়া যায় যার ফল স্বরূপ আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালাে থাকে।

১৪. ডায়াবেটিক রােগীদের জন্য: বহুযুগ আগে চিনা চিকিৎসা শাস্ত্রে পেয়ারার অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণাগুন নিয়ে আলােচনা হয়েছে, এরপর বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা, বহু আলােচনার পর জানা গিয়েছে যে এই ফল খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স-এর জন্য পেয়ারা ডায়াবেটিক রােগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

১৫. নানা রোগে পেয়ারা: পেয়ারা যে সমস্ত রােগের উপশমে কার্যকরী, সেগুলি হল জীবাণু সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁতের ব্যথা, অম্লরােগ, মুখে ক্ষত, হাঁপানি, পীড়িত ফুসফুস, অস্বাভাবিক মােটা, ত্রুটিপূর্ণ রক্ত চলাচল, স্ফীত মাড়ি, দীর্ঘদিন রজঃস্রাব, দেহস্থ মাংসপেশীর আক্ষেপ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: লিচুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

Benefits And Nutritional Value Of Guava
Benefits And Nutritional Value Of Guava

পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Guava:

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে আছে-

  • কার্বোহাইড্রেট – ১.৪৩০ গ্রাম
  • ছাই – ১.৩৯ গ্রাম
  • শর্করা – ১৪ গ্রাম
  • প্রােটিন – ২.৫৪ গ্রাম
  • ভিটামিন-এ – ৬২৪ আই. ইউ
  • ফ্যাট – ৯.৬ গ্রাম
  • জল – ৮০.৬০ গ্রাম
  • ভিটামিন-বি – ০.৬৯ মিলিগ্রাম
  • খাদ্য আঁশ – ৫.৩৯ গ্রাম
  • ভিটামিন-সি – ২২৮.৪৮ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ১৮.১৮ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেশিয়াম – ২.২০০ গ্রাম
  • ভিটামিন-বি – ০.৬৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন-বি ৩ – ১.০৯ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম – ৪.১৬৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন-বি ১২ – ৪৯.০ মিলিগ্রাম
  • লােহা – ০.২৪ মিলিগ্রাম
  • তাপশক্তি – ১১২ কিলাে ক্যালােরি
  • কপার – ০.২৪ মিলিগ্রাম

ব্যবহার বিধি:

কাঁচা বা পাকা যে পেয়ারাই হােক তা অবশ্যই টাটকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। পেয়ারার জ্যাম জেলি ঘরে তৈরী করেও ব্যবহার করা যায় তাতেও প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যাবে। সামগ্রিকভাবে দেখলে বলা যায় যে, পেয়ারা খুবই সহজলভ্য ফল যার সাহায্যে বেশ কিছু জটিল রােগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের প্রত্যেককেই ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করতে হবে। ফল বলতে আমরা অনেকেই বুঝি আপেল বা মুসম্বী কিন্তু সাধারণ ও সহজলভ্য ফলও যে অনেক খাদ্যগুণ আছে তা আমরা অনেকেই গুরুত্ব দিই না।

Leave a Reply