সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে বেগুন খান – জানুন বেগুন এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: বেগুন আমাদের একটি পরিচিত ফসল যা ভারতের সমস্ত জায়গাতে পাওয়া যায়। বেগুন হলো একটি পুষ্টিকর সবজি। বেগুন যেমন পুষ্টিকরি তেমনই রোগ নিরাময়ে ও এর গুণ অনস্বীকার্য। বেগুন কে আমরা কেউ কেউ পছন্দ করিনা বা খাইনা। তবু বলি বেগুনের অনেক গুণ খেলে বুঝবে তার গুণ।
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে বেগুন খান – জানুন বেগুন এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
বেগুনে আছে যে বিশেষ পুষ্টি গুলি হলো কার্বোহাইড্রেট, ফসফরাস, প্রােটিন, লােহা, ফ্যাট, কপার, জল, সালফার, তন্তু, ক্লোরিন,পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, অকসালিক অ্যাসিড, সােডিয়াম, তাপশক্তি, একটি অ্যান্টিবায়ােটিক সবজি।
বেগুনের বিজ্ঞানসম্মত নাম: Solanum melongena
বেগুন এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১. অ্যান্টিবায়ােটিক: বেগুন একটি অ্যান্টিবায়ােটিক সবজি। বেগুন খেলে বহুমূত্র রােগ দমন হয়।
২. পাথুরী রােগ: নিয়মিত বেগুন খেলে পাথুরী রােগ (Stone) সারে, প্রস্রাব পরিষ্কার হয় ও প্রাথমিক অবস্থায় কিডনির ছােট পাথর গলে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়।
৩. অর্শ রােগ: ছােট গােল সাদা বেগুন নিয়মিত খেলে অর্শ রােগ সেরে যায়।
আরও পড়ুন: ঝিঙের উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৪. ম্যালেরিয়া: খালি পেটে সকালে সেঁকা বেগুন চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। ম্যালেরিয়ার জন্য প্লীহা বাড়া এতে কমে যায়।
৫. খিদে বাড়ে: বেগুন, টমাটো, লংকা ও লবণ দিয়ে তৈরি ঝােল খেলে পরিপাক ক্রিয়া। ভালাে হয় এবং খিদে বাড়ে।
৬. ক্যান্সার রােগ: বেগুনে অ্যান্থােসায়ানিন থাকে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ আছে। ক্যান্সার রােগ থেকে মুক্তি দেয়।
৭. পীড়িততা রােগ: বেগুনে কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা আক্ষেপ পীড়িততা (convulsion) রােগ দূর করে।
৮. পাছার বাত: ৪-৫টি বেগুন সেদ্ধ করে জল ফেলে দিয়ে বেগুন গুলােকে তেলে ভেজে দিনে একবার করে খেলে পাছার বাত (Sctica) এর উপশম হয়।
৯. অনিদ্রা রােগ: বেগুন পােড়ায় মধু মিশিয়ে সন্ধ্যেবেলায় চেটে চেটে খেলে অনিদ্রা রােগ (Insomnia) দূর হয় ও পরের দিকে রাতে ভালাে ঘুম হয়।
আরও পড়ুন: চিচিঙ্গার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১০. পেটের গ্যাস দূর: লবণ সহযােগে পােড়া বেগুন খেলে পেটের গ্যাস দূর হয় ও শরীরের পীড়া দূর হয়। এছাড়া বেগুনের তরকারী ও ঝােল হিং-ও রসুন মিশিয়ে খেলে। পেটে বায়ুর প্রকোপ কমে। এছাড়া পেটে সৃষ্টি হওয়া বায়ু গােলক কমে যায় বা সেরে যায়।
১১. লিভার বেড়ে যাওয়া: কচি বেগুন পুড়িয়ে রােজ সকালে খালি পেটে একটু গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার দরুণ লিভার বেড়ে যাওয়া কমে।
১২. হলদেটে ভাব: লিভারের দোষের জন্যে চেহারায় হলদেটে ভাব এলে তা ক্রমশ কমে যায়।
১৩. ভাল ঘুম হবে: যাঁদের ঘুম ভাল হয় না তারা যদি একটু বেগুন পােড়ায় মধু মিশিয়ে সন্ধ্যেবেলা চেটে খান তাহলে তাদের রাত্তিরে ভাল ঘুম হবে।
১৪. বেগুনের তরকারি, বেগুন পােড়া, বেগুনের স্যুপে রােজ যদি একটু হিং ও রসুন মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে বায়ুর প্রকোপ তাে কমেই যদি কারাে পেটে বায়ু গােলকের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাও কমে যায় বা সেরে যায়।
১৫. অনিয়মিত ঋতু না হলে: মহিলাদের অনিয়মিত ঋতু না হলে বা কোনাে কারণে বন্ধ হয়ে গেলে। তারা যদি শীতকালে নিয়ম করে বেগুনের তরকারি বাজরার রুটি এবং গুড় খান তাহলে উপকার পাবেন। অবশ্য যাদের শরীরে গরমের ধাত বেশি তাদের পক্ষে এটা না খাওয়াই ভাল।
১৬. মূত্রকৃচ্ছ্বতা সারে: নিয়মিত বেগুন খেলে মূত্রকৃচ্ছ্বতা সারে।
১৭. প্রস্রাব পরিষ্কার হওয়ার প্রারম্ভিক অবস্থায় কিডনির ছােট পাথরও গলে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
১৮. মুরগির ডিমের সাইজের ছােট গােল সাদা বেগুন অর্শের পক্ষে উপকারী।
আরও পড়ুন: কড়াইশুটির উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১৯. বেগুনের পুলটিস বাঁধলে ফোড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
২০. বেগুনের রস খেলে ধুতুরার বিষ নেমে যায়।
বেগুন এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Brinjal:
প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে আছে –
- কার্বোহাইড্রেট – ৪.০ গ্রাম
- ফসফরাস – ৪৭.০ মিলিগ্রাম
- প্রােটিন – ১.৪ গ্রাম
- লােহা – ০.৯ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট – ০.৫ গ্রাম
- কপার – ০.১৭ মিলিগ্রাম
- জল – ৯২.৭ গ্রাম
- সালফার – ৪৪.০০ মিলিগ্রাম
- তন্তু – ১.৩ গ্রাম
- ক্লোরিন – ৩২.০০ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম – ২০০.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ – ১২৪ আই. ইউ
- ক্যালসিয়াম – ১৮.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি – ১২.০০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ১৬.০ মিলিগ্রাম
- অকসালিক অ্যাসিড – ১৮.০ মিলিগ্রাম
- সােডিয়াম – ৩.০ মিলিগ্রাম
- তাপশক্তি – ২৪ কিলােক্যালােরি