ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

জর্জেস কুভিয়ার জীবনী – Georges Cuvier Biography in Bengali

Georges Cuvier Biography in Bengali
Georges Cuvier Biography in Bengali

জর্জেস কুভিয়ার জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Georges Cuvier Biography in Bengali. আপনারা যারা জর্জেস কুভিয়ার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জর্জেস কুভিয়ার এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

জর্জেস কুভিয়ার কে ছিলেন? Who is Georges Cuvier?

জিন লিওপোল্ড নিকোলাস ফ্রেডেরিক, ব্যারন কুভিয়ার (23 আগস্ট 1769 – 13 মে 1832), জর্জেস কুভিয়ার নামে পরিচিত, একজন ফরাসি প্রকৃতিবিদ এবং প্রাণিবিদ ছিলেন, কখনও কখনও তাকে “জীবাস্তুবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা পিতা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কুভিয়ার 19 শতকের গোড়ার দিকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান গবেষণার একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং জীবাশ্মের সাথে জীবিত প্রাণীর তুলনা করার মাধ্যমে তুলনামূলক শারীরস্থান এবং জীবাশ্মবিদ্যার ক্ষেত্রগুলি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ছিলেন।

জর্জেস কুভিয়ার জীবনী – Georges Cuvier Biography in Bengali

নামজর্জেস কুভিয়ার
জন্ম23 আগস্ট 1769
পিতাজিন জর্জ কুভিয়ের
মাতাঅ্যান ক্লেমেন্স চ্যাটেল
জন্মস্থানমন্টবেলিয়ার্ড, মন্টবেলিয়ার্ড কাউন্টি, ডাচি অফ ওয়ার্টেমবার্গ, পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য
জাতীয়তাফরাসি
পেশাপ্রকৃতিবিদ এবং প্রাণিবিদ
মৃত্যু13 মে 1832 (বয়স 62)

bengaliportal

 

জর্জেস কুভিয়ার এর জন্ম: Georges Cuvier’s Birthday

জর্জেস কুভিয়ার 23 আগস্ট 1769 জন্মগ্রহণ করেন।

জর্জেস কুভিয়ার এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Georges Cuvier’s Parents And Birth Place

পৃথিবীর ইতিহাসের ইতিহাসটি হল প্রাণীবিদ্যার ইতিহাস। এই ইতিহাসের প্রাণপুরুষ ছিলেন জর্জেস ক্যুভিয়ের। ফ্রান্সের এক অখ্যাত গ্রামে ১৭৬৯ খ্রিঃ কমুভিয়েরের জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন সুইডেন সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মচারী। কাজ নিয়েই তাঁকে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হত। কাজেই মায়ের স্নেহ আর শিক্ষা নিয়েই বড় হয়ে উঠতে হয়েছিল শিশু ক্যুভিয়েরকে।

আরও পড়ুন: ভগৎ সিং জীবনী

আরও পড়ুন: মাতঙ্গিনী হাজরা জীবনী

আরও পড়ুন: জোন অব আর্ক জীবনী

আরও পড়ুন: আব্রাহাম লিংকন জীবনী

আরও পড়ুন: জর্জ ওয়াশিংটন জীবনী

জর্জেস কুভিয়ার এর ছোটবেলা: Georges Cuvier’s Childhood

ছেলের শিক্ষার প্রতি সতর্ক নজর ছিল মায়ের। চারপাশের জগৎকে গভীর ভাবে দেখার চোখটি তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন। এইভাবেই বিচিত্র প্রাণীজগতের প্রতি ছেলেবেলা থেকেই আকৃষ্ট হয়েছিলেন কচুভিয়ের। একটু বয়স বাড়তেই প্রাণীবিদ্যার নেশায় ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। মায়ের কাছ থেকে সাহিত্য শিল্প সঙ্গীতের সঙ্গে প্রাচীন ইতিহাস ও বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেছিলেন কমুভিয়ের।

মায়ের প্রেরণাতেই পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে প্রাণীবিদ্যার ইতিহাসের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি নিপতিত হয়েছিল তার। বুফনের প্রাণীজগতের ইতিহাস মোট ৩৬ খন্ডের এক বিশাল গ্রন্থ। মায়ের কথাতেই এই বই পড়তে শুরু করেন ক্যুভিয়ের। এক একটি খন্ড শেষ করেন আর তার মনে হতে থাকে বিশাল সৃষ্টি রহস্যের এক একটি দরজা তার সামনে খুলে যেতে থাকে। এই বইতে তিনি ক্রমে এতই মজে গেলেন যে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলার কথা পর্যন্ত ভুলে গেলেন। যেখানেই যান বা থাকেন সারাক্ষণই হাতে থাকে বুফনের কোন না কোন খন্ড।

জর্জেস কুভিয়ার এর শিক্ষাজীবন: Georges Cuvier’s Educational Life

স্কুলের পড়াশোনাতেও মোটেই পশ্চাদপদ ছিলেন না কমুভিয়ের। ভাল ফল দেখিয়ে সরকারী বৃত্তি পেলেন। বৃত্তি নিয়ে চার বছর পড়াশুনা করলেন স্টুটগার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷

জর্জেস কুভিয়ার এর প্রথম জীবন: Georges Cuvier’s Early Life

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করার পর বেশিদিন বেকারও থাকতে হল না। নর্মান্ডির এক অভিজাত পরিবারে ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াবার কাজ পেয়ে গেলেন। এই কাজ তার প্রতিভার বিকাশের অনুকূলে যে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল তা বলাই বাহুল্য। কেননা নর্মান্ডির বিস্তীর্ণ সাগর বেলায় বিবিধ জীবজন্তুর জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছিলেন।

প্রাণীবিদ্যা বা জুলজির বই পড়ে আগে থেকেই তার একটি অদ্ভুত অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যেখানেই কোন প্রাচীন দেহাবশেষের নমুনা চোখে পড়ত, তাই সযত্নে সংগ্রহ করে ঘরে নিয়ে আসতেন। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে খুঁটিয়ে দেখতেন। সেই সূত্রে বর্তমান ছেড়ে তাঁর মন চলে যেতো ধুসর অতীতে সেই সময়ে সভ্যতা তো দূরের কথা, আদিম অরণ্যসঙ্কুল পৃথিবীতে মানুষের বসবাসযোগ্য পরিবেশও ভালভাবে গড়ে ওঠেনি।

চাকরি নিয়ে নর্মান্ডিতে এসে ক্যুভিয়েরের মনে হল তিনি যেন স্বভূমিতেই এসে পৌঁচেছেন। যথার্থই তার জীবনে নর্মান্ডির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গভীর। যে বাড়িতে তিনি পড়াতেন সেখানে ছিল পরিবারের একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। অন্যান্য বিষয়ের হাজার হাজার বইয়ের সঙ্গে বিজ্ঞানের নানা শাখার বইও ছিল প্রচুর এখানে। ক্যুভিয়ের খুঁজে খুঁজে প্রখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী লিনেয়াসের সিসটেমো নেচার বইটি বার করলেন।

প্রকৃতি বিজ্ঞানের রহস্যময় জগতের বহু অনাবিষ্কৃত বিষয়ের সন্ধান তিনি এই বই থেকে পান ৷ আর একটি বইও এই সময়ে কমুভিয়েরকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেই বইয়ের লেখক ছিলেন বিখ্যাত কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বকোষ সংকলক অ্যাবে তেসিয়ার। আশ্চর্য যোগাযোগ বলতে হবে, এই তেসিয়ার সেই সময় বাস করছিলেন ক্যুভিয়েরের নিয়োগকর্তার বাড়ির সন্নিকটেই।

তিনি সন্ত্রাসবাদীদের চোখের আড়াল হবার জন্য জন্মভূমি ছেড়ে নর্মান্ডিতে আত্মগোপন করে ছিলেন। সন্ধান পেয়ে কমুভিয়ের গিয়ে আলাপ করলেন প্রিয় লেখকের সঙ্গে। দিনকতকের মধ্যেই নানা বিষয়ের গভীর আলোচনা বিশেষ করে প্রাণীবিজ্ঞানের আলোচনার সূত্রে তেসিয়ার ক্যুভিয়েরের বিশেষ আগ্রহের বিষয়টির সন্ধান জেনে যান। তিনি ক্যুভিয়েরের মধ্যে ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনাময় প্রাণীবিজ্ঞানীকে দেখতে পান। স্বতঃস্ফুর্তভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন।

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী

আরও পড়ুন: মুকুন্দ দাস জীবনী

আরও পড়ুন: অতুলপ্রসাদ সেন জীবনী

আরও পড়ুন: শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী

আরও পড়ুন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী

জর্জেস কুভিয়ার এর কর্ম জীবন: Georges Cuvier’s Work Life

তেসিয়ারের চেষ্টায় ১৭৯৫ খ্রিঃক্যুভিয়ের প্যারিসের বিখ্যাত প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংরক্ষণশালায় অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পেয়ে যান। এবারে ক্যুভিয়েরের জীবন তার স্বাভাবিক গতিপথ পেয়ে সাবলীল ধারায় এগিয়ে চলল। অধ্যাপনার জগতে এসে অল্পদিনের মধ্যেই সুখ্যাত হয়ে উঠলেন ক্যুভিয়ের।

জীবাশ্ম – বিজ্ঞান বিষয়ে তার বক্তৃতাগুলি ছাত্রমহলে সবিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করল। প্রাচীন পৃথিবীর লুপ্ত প্রাণীরাও যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় হতে পারে তা ক্যুভিয়েরের মাধ্যমেই প্রথমে ছাত্ররা ও পরে সমগ্র ফ্রান্স জানতে পারল। এই সময়ে খনি খনন করবার সময়ে কোন জীবাশ্ম উদ্ধার হলে তা সনাক্তকরণের জন্য সরাসরি ক্যুভিয়ের – এর কাছেই নিয়ে আসা হত। প্রাণীবিদ্যার বিশারদ হিসেবে তিনি এতটাই খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

জীবাশ্ম বিজ্ঞানের ওপর ক্যুভিয়েরের প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ ফ্রান্সের বিজ্ঞান আকাদেমিতে জমা পড়ল ১৭৯৬ খ্রিঃ। প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল অতীত পৃথিবীর প্রাণীবা বর্তমান প্রকৃতি জগতের পরিচিত পশুপাখিদের চেয়ে কতটা পৃথক। আঠার শতকের শেষ পাদে ক্যুভিয়েরের এই প্রবন্ধের বৈজ্ঞানিক মূল্য যে সাধারণ ছিল না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্তমান জীবাশ্ম – বিজ্ঞানের আলোকমন্ডলে থেকে সেদিনের বিজ্ঞানের এই নতুন শাখার অভ্যূদয়ের কালের গুরুত্ব উপলব্ধি করা হয়তো সম্ভব নয়। সেই কালের মানুষের বিশ্বাস ছিল অতীত পৃথিবীর অবলুপ্ত মানুষ ও জীবজন্তুদের চেহারা, চালচলন, ধরনধারণ সবই সমকালের প্রাণীদেরই অনুরূপ ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে প্রকৃতি – জগতের বৈশিষ্ট্য ও প্রাণীদের শারীরিক গঠনগত রূপের পরিবর্তন হওয়া সম্ভব এ সম্পর্কে সেকালের মানুষের কোন ধারণাই ছিল না।

ক্যুভিয়েরই সমকালের সকল ধারণায় পরিবর্তনের ঝড় আনলেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করলেয়: We have difficulty in recognising the former inhabitants of the earth. তিনি কেবল পুরা পৃথিবীর অধিবাসীদের হদিশ – হদ্দ জানা কষ্টসাধ্য বললেন তাই নয়, তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণও দাখিল করলেন। ফ্রান্সের মত মারেতের জিপসাম খাদে খোঁড়াখুঁড়ির সময়ে শ্রমিকদের শাবল গাঁইতির আঘাতে বেরিয়ে এসেছিল অজ্ঞাত কোন জন্তুজানোয়ারের প্রস্তরীভূত দেহাবশেষ ৷

সেগুলো সনাক্ত করবার জন্য জমা পড়েছিল ক্যুভিয়েরের কাছে। তিনি জীবাশ্মের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো জুড়ে লুপ্ত প্রাণীটির একটি পূর্ণাবয়ব আদল তৈরি করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। এ যে এক সুকঠিন কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। সম্ভবতঃ প্রাণীবিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ধাঁধা হল অশ্মীভূত প্রাণীর নানা দেহাবশেষ জুড়ে একটা পূর্ণাবয়ব গড়ে তোলা।

সেই সু কঠিন কাজেই হতে দিলেন কমুভিয়ের। অতিকায় এক প্রাণীর অসংখ্য বিচ্ছিন্ন হাড়গোড় সামনে নিয়ে বসে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে একে একে অবস্থান অনুযায়ী মিলিয়ে সরু তার দিয়ে আটকে নতুনভাবে প্রাণীদেহ গড়ে তোলার কাজে মেতে উঠলেন তিনি। অসাধারণ অ্যানাটমি জ্ঞানের সঙ্গে প্রাণীবিদ্যার প্রতি অমানুষিক আগ্রহ সম্বল করে শেষ পর্যন্ত অতি অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছিলেন ক্যুভিয়ের। তাঁর দীর্ঘদিনের ধৈর্য শ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে দুটি তৃণভোজী লুপ্ত প্রাণীর বিচিত্র শরীর সম্পূর্ণ গড়ে উঠেছিল।

প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে যেসব প্রাণী পৃথিবীর মাটি থেকে হারিয়ে গেছে . এমন দুটি প্রাণীর কঙ্কাল শরীর প্রদর্শনের জন্য প্যারিসের প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হল। গোটা শহর আলোড়িত হল এই সংবাদে। বিজ্ঞানী অবিজ্ঞানী সর্বশ্রেণীর মানুষ ভেঙ্গে পড়ল হারিয়ে যাওয়া পুরা – প্রাণীর কঙ্কাল – খাঁচা দেখে কৌতূহল মেটাবার জন্য। তৃণভোজী এক নং প্রাণীটির নাম দিলেন কাভিয়ের এনোপ্লথেরিয়াম।

যার অর্থ অস্ত্রশস্ত্রহীন বন্য জানোয়ার। তৃণভোজী দুই নং – এর নাম রাখা হল প্যালিওথেরিয়াম। এর অর্থ হল প্রাচীন কালের বন্যপ্রাণী। এখানেই শেষ হল না ক্যুভিয়েরের দুঃসাধ্য অভিযান। নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে একটার পর একটা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীকে অবলুপ্ত জগতের অন্ধকার গহ্বর থেকে তুলে আনতে লাগলেন। তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল না। জীবাশ্মবিজ্ঞানী হিসেবে গোটা ইউরোপ জুড়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল।

বিশাল এক রত্নভান্ডারের দরজা যেন হঠাৎ অর্গলমুক্ত হয়ে গেল। ফ্রান্সের যেখানে যত জীবাশ্ম উদ্ধার হতে লাগল গাড়ি বোঝাই হয়ে হাজির হতে লাগল ক্যুভিয়েরের স্টুডিওর সামনে। এর মধ্যে পাওয়া গেল, প্রাচীন পাখি, তিমি ও অতিকায় সব হাতিদের জীবাশ্ম। ক্যুভিয়ের সংগ্রহকারীদের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করতে লাগলেন। স্তূপীকৃত হাড়গোড়ের পাহাড় থেকে একদিন আশ্চর্যভাবে ক্যুভিয়ের তুলে আনলেন সৃষ্টি রহস্যের মশলা মাখানো অত্যদ্ভুত এক প্রাণীর জীবাশ্ম।

সেটি হল পাখিদের আদিতম পূর্বপুরুষ সরীসৃপ – পাখি টেরোডাকটিল। ক্যুভিয়েরের নিরলস চেষ্টা ও আগ্রহে ধীরে ধীরে অতীত পৃথিবীর প্রাণীজগতের পরিচয় উঠে এল আধুনিক মানুষের জ্ঞানচর্চার অঙ্গনে। বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে ক্যুভিয়ার – চর্চিত জীবাশ্ম বিজ্ঞান অন্যতম শাখারূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করল। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জীবাশ্ম নিয়ে কাজ করতে করতে আর এক দুঃসাহসিক কাজের চিন্তা মাথায় এল ক্যুভিয়েরের।

তিনি প্রাণীজগতের নতুন শ্রেণীবিভাগের কাজে হাত দিলেন। লিনোয়াসের সিসটেমা নেচারি বইটি বহু পূর্বেই ভালভাবে পড়েছিলেন ক্যুভিয়ের। এই বইতে লিনোয়াস বহিরাকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে জীবজগতের বাসিন্দাদের শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন। ক্যুভিয়ের সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের পর প্রাণীজগতের শ্রেণীবিভাগ করলেন তাদের আদিম গঠনভঙ্গি ভিত্তি করে।

এই সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা ও কাজের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ১৭৯৮ খ্রিঃ একটি বই প্রকাশ করলেন। বইটির নাম দিলেন টেবলিউ এলিমেন্টেয়ার দে লভ হিস্ট্রি নেচারেল দেস অ্যানিমাকস। ক্যুভিয়ের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্যকে নিরূপণ করবার জন্য শারীরবৃত্তীয় ও শব ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান অর্থাৎ ফিজিওলজি ও অ্যানাটমিকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগিয়েছিলেন। তার এই কাজ মানবেতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনারূপে স্বীকৃত হয়েছে।

তিনি দেখিয়েছেন, মাছ থেকেই উভচর এবং উভচর থেকে সরীসৃপের জীবন অবস্থান্তর লাভ করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, সুদীর্ঘকাল একটানা গবেষণা করে জীবজগৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্তমূলক কোন স্থির মতামত প্রকাশ করতে পারেননি ক্যুভিয়ের। যেই সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে ল্যামার্ক, ওয়ালাক এবং ডারউইনের কাজে, এঁদের কাউকেই এত দীর্ঘ সময় গবেষণার জন্য ব্যয় করতে হয়নি। তবুও বলতে হবে, সত্যের প্রতিষ্ঠাই ছিল ক্যুভিয়েরের গবেষণার উদ্দেশ্য।

এই বিষয়ে তিনি নিজের সঙ্গেও আপোশ করতেন না। কোন জীবাশ্ম দেখে যদি মনে করতেন এ সম্পর্কে তার ধারণা ভুল, তাহলে তা পরিবর্তন করতে তিনি বিন্দুমাত্র ইতস্ততঃ করতেন না। সত্যসন্ধানের এই মহৎ বৈশিষ্ট্যই তাঁর চরিত্রকে মহতো মহীয়ান করে তুলেছিল। ১৮৩২ খ্রিঃ ক্যুভিয়ের কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্যুভিয়েরের তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর যাবতীয় জীবজন্তুকে মোট চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি হল (১) মেরুদন্ডী (২) কোমলাঙ্গী (৩) আলোবিকীর্ণকারী ও (৪) গ্রন্থিবদ্ধী।

কোমলাঙ্গীর উদাহরণ হিসেবে নাম করা যায় শামুকও শুক্তি। আলোকবিকীর্ণকারী প্রাণী হিসাবে নাম করা যায় প্রবাল ও একজাতীয় সামুদ্রিক সাদা গাছ সী – অ্যানেমন ৷ গ্রন্থীবদ্ধী প্রাণীর উদাহরণ হল নানা কীটপতঙ্গ ও কাঁকড়া। তার বইটিতে কমুভিয়ের কেবল প্রাণীদের শ্রেণীবিভাগই করেননি। তিনি শ্রেণীভুক্ত প্রাণীদের বিভিন্ন অঙ্গের নির্দিষ্ট কাজকর্ম সম্পর্কেও স্পষ্ট মতামত জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: গি দ্য মোপাসাঁ জীবনী

আরও পড়ুন: চরক জীবনী

আরও পড়ুন: আর্যভট্ট জীবনী

আরও পড়ুন: নাগার্জুন জীবনী

আরও পড়ুন: ভাস্কর জীবনী

তিনি জানিয়েছেন, এই চার শ্রেণীর প্রত্যেক প্রাণীই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করে চলে। কেউ কারো ওপরে নির্ভরশীল নয়। কেবল তাই নয়, এই সব শ্রেণীর প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক বিবর্তনগত কোন সম্পর্কও নেই। উত্তরকালে যারা জীবাশ্ম বিজ্ঞানের চর্চা করবেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে ক্যুভিয়ের পরামর্শ রেখেছেন যে প্রকৃতির নানা সময়কালের প্রাণী ও উদ্ভিদকুলকে পরীক্ষা করবার সময়ে যেন পৃথক ও স্বাধীন সত্তা হিসবেই গণ্য করা হয়।

এই পথে অগ্রসর হলে প্রাচীন পৃথিবীর প্রাণীদের আবিষ্কার করার কাজ সহজসাধ্য হবে। জীবাশ্ম নিয়েই বিজ্ঞান জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন ক্যুভিয়ের। এই সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যের কোন সমালোচনা শোনা গেল না। কিন্তু প্রাণী ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে ক্যুভিয়েরের বৈজ্ঞানিক মতবাদ সম্পর্কে অনেক বিজ্ঞানীই একমত হতে পারলেন না। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা যিনি নিলেন তিনি হলেন তারই বন্ধু ও সহকর্মী এতিয়েন সেইন্ট হিলের। প্যারিসের যেই সংগ্রহশালায় ক্যুভিয়ের অধ্যাপনা করতেন এতিয়েন ছিলেন সেই সংস্থারই বিখ্যাত অধ্যাপক। জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীমহলে তার প্রতিষ্ঠা ছিল।

ক্যুভিয়েরেরও অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এতিয়েন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, পৃথিবীর জীবনক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রাণী ও উদ্ভিদই এক সাধারণ ও নির্দিষ্ট পথ ধরে উপস্থিত হয়েছে। এই অবস্থায় এক শ্রেণীর সঙ্গে অন্য এক শ্রেণীর বিবর্তনগত সম্পর্ক যে রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। এই প্রসঙ্গে তিনি ল্যামার্ক – এর ধারণার কথাও উল্লেখ করেন। এই বিরূপ মতামতকে কেন্দ্র করে দুই সহকর্মীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কে চিড় ধরলেও ক্যুভিয়ের তার নিজের বিশ্বাসে অবিচল রইলেন।

তিনি স্পষ্ট ঘোষণা করলেন, একটা অক্টোপাশ ও একটা ঘোড়ার মধ্যে বিবর্তনগত নির্দিষ্ট কোন সম্পর্ক রয়েছে এই মত আমি স্বীকার করতে পারি না। তেমনি এ – ও মানি না, জীবজন্তুর আস্তাবল থেকেই মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। সেই সময়ে ক্যুভিয়ের মতামতই ক্রমশঃ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও পঞ্চাশ বছর পরে ডারউইন তাঁর বিখ্যাত বিবর্তনবাদের সাহায্যে এই ধারণাটির যথার্থ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ক্রমশঃ সমগ্র ইউরোপ ও পরে বিশ্বের বিজ্ঞানমহলে ক্যুভিয়েরের অবদান স্বীকৃতি লাভ করল।

একের পর এক সম্মান তাকে পুরস্কৃত করতে লাগল। এক সময়ে প্যারিসের রাজকীয় বিখ্যাত উদ্যান জার্ডিন দেস প্ল্যান্টেস ক্যুভিয়েরের তত্ত্বাবধানেই বর্ধিত হয়েছিল। এবার সেখানে অধ্যাপনার আহ্বান এল। ক্যুভিয়ের সংগ্রহশালার চাকরি ছেড়ে জার্ডিনে চলে এলেন। নতুন কাজে যোগ দেবার কিছুদিন পরেই ক্যুভিয়ের ফ্রান্সের বিখ্যাত বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ইনস্ট্যাট দে ফ্রান্সের আজীবন সচিব নির্বাচিত হন।

সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৮ খ্রিঃ ক্যুভিয়েরকে রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান পরিষদের সদস্যপদে মনোনয়ন দেন। আল্পস পর্বত ও রাইন নদীর পরপাড়ে ফ্রান্সের অধীন জেলাগুলিতে উচ্চশিক্ষা বিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, তার সর্বময় দায়িত্বও ক্যুভিয়েরকে দেওয়া হল।

১৮১৮ খ্রিঃ ফ্রান্সের বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য হন ক্যুভিয়ের। এর পরেই ফরাসি সরকারের অভ্যন্তরীণ সমিতির প্রধানের পদে নিযুক্ত হন। এই পদে তিনি আমৃত্যু, ১৮৩২ খ্রিঃ পর্যন্ত আসীন ছিলেন। ক্যুভিয়েরের সম্মান ও গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকার লাভ তখনো বাকি ছিল। ১৮৩১ খ্রিঃ ফ্রান্সের সম্রাট লুই ফিলিপ তাকে লর্ড সভার সদস্য করেন। একই সঙ্গে দেওয়া হয় রাজ্যসভার সভাপতির পদটি।

জর্জেস কুভিয়ার এর রচনা: Written by Georges Cuvier

১৮২৮ খ্রিঃ দীর্ঘ ২৫ বছরের সমূহ গবেষণার বিবরণ নিয়ে ক্যুভিয়ের একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম নেচারাল হিস্ট্রি অব ফিশ। পাঁচ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের মাছের ওপরে গবেষণা করে তাদের জন্ম ইতিহাসের নানা চমকপ্রদ ঘটনা ও বৈশিষ্ট্য উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলেন ক্যুভিয়ের।

সেই বিবরণও এই বইতে সংযুক্ত হয়েছিল। পরের পর জীবাশ্মবিজ্ঞান, জীবাশ্ম – অস্থি ও তুলনামূলক শবব্যবচ্ছেদ বিদ্যার ওপর তার বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয়। এই বইগুলি ক্যুভিয়েরের জীবনে বিপুল খ্যাতি বহন করে এনেছিল। ক্যুভিয়ের তার তুলনামূলক শবব্যবচ্ছেদ বিদ্যার গবেষণার দ্বারা বিখ্যাত বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করেও বিজ্ঞানীমহলে অপ্রতিহত প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি দেখিয়েছেন, মাছ থেকেই উভচর এবং উভচর থেকে সরীসৃপের জীবন অবস্থান্তর লাভ করেছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, সুদীর্ঘকাল একটানা গবেষণা করে জীবজগৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্তমূলক কোন স্থির মতামত প্রকাশ করতে পারেননি ক্যুভিয়ের। যেই সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে ল্যামার্ক, ওয়ালাক এবং ডারউইনের কাজে, এঁদের কাউকেই এত দীর্ঘ সময় গবেষণার জন্য ব্যয় করতে হয়নি। তবুও বলতে হবে, সত্যের প্রতিষ্ঠাই ছিল ক্যুভিয়েরের গবেষণার উদ্দেশ্য।

এই বিষয়ে তিনি নিজের সঙ্গেও আপোশ করতেন না। কোন জীবাশ্ম দেখে যদি মনে করতেন এ সম্পর্কে তার ধারণা ভুল, তাহলে তা পরিবর্তন করতে তিনি বিন্দুমাত্র ইতস্ততঃ করতেন না। সত্যসন্ধানের এই মহৎ বৈশিষ্ট্যই তাঁর চরিত্রকে মহতো মহীয়ান করে তুলেছিল।

জর্জেস কুভিয়ার এর মৃত্যু: Georges Cuvier’s Death

১৮৩২ খ্রিঃ ক্যুভিয়ের কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আরও পড়ুন: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় জীবনী

আরও পড়ুন: জগদীশচন্দ্র বসু জীবনী

আরও পড়ুন: চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন জীবনী

আরও পড়ুন: চার্লস ডিকেন্স জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী

Leave a Reply