ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

জুসেপ্পে গারিবালদি জীবনী – Giuseppe Garibaldi Biography in Bengali

Giuseppe Garibaldi Biography in Bengali
Giuseppe Garibaldi Biography in Bengali

জুসেপ্পে গারিবালদি জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Giuseppe Garibaldi Biography in Bengali. আপনারা যারা জুসেপ্পে গারিবালদি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জুসেপ্পে গারিবালদি র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

জুসেপ্পে গারিবালদি কে ছিলেন? Who is Giuseppe Garibaldi?

জুসেপ্পে গারিবালদি (Giuseppe Garibaldi) (৪ জুলাই ১৮০৭ – ২ জুন ১৮৮২) ছিলেন আধুনিক ইতালির স্রষ্টা ও এক মহান বিপ্লবী। ঐক্যবদ্ধ ইতালির অনন্যসাধারণ জননায়ক হিসাবে বিশ্বের স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। তিনি আধুনিক কালের অন্যতম সেরা জেনারেল হিসাবে বিবেচিত হন। পাশাপাশি কাউন্ট ক্যাভুর নামে পরিচিত ক্যামিলো বেন্সো ইতালির দ্বিতীয় ভিক্টর এমানুয়েল এবং জুসেপ্পে মাৎসিনির সাথে তাঁকে ইতালির জনক বলা হয়। দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে সামরিক উদ্যোগের কারণে জুসেপ্পে গারিবালদি “দুই পৃথিবীর বীর” হিসাবেও পরিচিত।

জুসেপ্পে গারিবালদি জীবনী – Giuseppe Garibaldi Biography in Bengali

নামজুসেপ্পে গারিবালদি
জন্ম4 জুলাই 1807
পিতাজিওভানি ডোমেনিকো গ্যারিবাল্ডি
মাতামারিয়া রোসা নিকোলেটা রাইমন্ডি
জন্মস্থাননাইস, ফরাসি সাম্রাজ্য
জাতীয়তাইতালীয়
পেশাবিপ্লবী
মৃত্যু2 জুন 1882 (বয়স 74)

bengaliportal

 

জুসেপ্পে গারিবালদি র জন্ম: Giuseppe Garibaldi’s Birthday

জুসেপ্পে গারিবালদি 4 জুলাই 1807 জন্মগ্রহণ করেন।

জুসেপ্পে গারিবালদি র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Giuseppe Garibaldi’s Parents And Birth Place

আধুনিক ইতালিরস্রষ্টা মহান বিপ্লবী গ্যারিবন্ডির জন্ম ১৮০৭ খ্রিঃ ৪ ঠা জুলাই, নাইস – এ অঞ্চলে। সেই সময় নাইস ছিল ফরাসী সম্রাটের অধীন। জন্মসূত্রে ফরাসী নাগরিক হলেও গ্যারিবন্ডির বাবা ও মা দুজনেই ছিলেন ইতালিয়ান। ১৮১৫ খ্রিঃ নাইস পিডেমন্ট রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই গ্যারিবল্ডি নিজেকে ইতালিয়ান বলেই মনে করতেন।

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী

আরও পড়ুন: মুকুন্দ দাস জীবনী

আরও পড়ুন: অতুলপ্রসাদ সেন জীবনী

আরও পড়ুন: শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী

আরও পড়ুন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী

জুসেপ্পে গারিবালদি র ছোটবেলা: Giuseppe Garibaldi’s Childhood

ষোল বছর বয়স হতেই একটা জাহাজে ‘কেবিন বয়’ – এর কাজ নিয়ে গ্যারিবন্ডি সমুদ্রযাত্রা করলেন। জাহাজের জীবনেই তিনি ক্রমশ দক্ষ নাবিক রূপে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। মার্সাই বন্দরের এক কাফেতে তিনি প্রথম ঐক্যবদ্ধ ইতালির বিষয়ে প্রথম আলোচনা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর সেই স্বপ্ন রূপায়িত করার কাজে নেমেই তিনি ঐক্যবদ্ধ ইতালির অনন্যসাধারণ জননায়ক রূপে বিশ্বের স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন।

জুসেপ্পে গারিবালদি র কর্ম জীবন: Giuseppe Garibaldi’s Work Life

সেই সময়ে ইতালির বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃত্ব ছিল অস্ট্রিয়ার ওপরে। এই রাজ্যগুলি যারা শাসন করত তারা প্রত্যেকেই ছিল স্বৈরাচারী রাজা। তাদের শাসন ও অত্যাচারে ক্রমশই জনসাধারণের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছিল। এমনি যখন পরিস্থিতি, মাৎসিনি নামে এক মহান পুরুষের আবির্ভাব ঘটল ইতালিতে। তার স্বপ্ন ছিল ঐক্যবদ্ধ ইতালি সংগঠন করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি ইয়ং ইতালি নামে এক গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। গ্যারিবল্ডি ছিলেন এই বৈপ্লবিক দলের সক্রিয় সদস্য। পিডেমেন্টের শাসকরা ছিল বৈপ্লবিক ভাবধারা ও যে কোন বৈপ্লবিক কার্যকলাপের ঘোরতর বিরোধী।

এই সকল ক্রিয়াকলাপ নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিতে তাদের তৎপরতার ত্রুটি ঘটত না। স্বাভাবিকভাবেই ইয়ং ইতালির সক্রিয় সদস্য গ্যারিবন্ডির অনুপস্থিতেই পিডেমেন্টের শাসকরা তাকে মৃত্যুদন্ড দিলেন। গ্যারিবন্ডি এক জাহাজের সেকেন্ড মেটের চাকরি নিয়ে রিও – ডি – জেনেরো চলে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ইয়ংইতালির এক শাখা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলেন। ব্রাজিলে বিপ্লব শুরু হয় ১৮৩৭ খ্রিঃ। অনিবার্যভাবে গ্যারিবন্ডিও বিপ্লবীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লেন।

এই সময়ে অ্যানিটা নাম্মী এক জেলের স্ত্রীকে একরকম বলপূর্বকই গ্যারিবল্ডি নিজের সঙ্গিনী করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই অ্যানিটা গ্যারিবন্ডির সুযোগ্য সঙ্গিনী হয়ে উঠেছিলেন। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তিনি নির্ভীকভাবে বন্দুক হাতে যুদ্ধ করেছেন। গ্যারিবল্ডি তার নাম দিয়েছিলেন ‘ব্রাজিলীয় নারীযোদ্ধা আমাজন’। বিপ্লবীদের একটি জাহাজ নিয়ে গ্যারিবল্ডি যখন সমুদ্রে ভাসেন তখন তার অধীনে ছিল আরও তিনখানা জাহাজ। সঙ্গে ছিল অ্যানিটাও। শত্রুপক্ষের গোলার আঘাতে তিনটি জাহাজ ডুবে গেলে গ্যারিবল্ডি অ্যানিটা ও সহবিপ্লবীদের সঙ্গে স্থলপথে পলায়ন করেন।

১৮০৪ খ্রিঃ প্রথম সন্তানের জন্মের পর গ্যারিবল্ডির মনে হল, বৃথাই বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে তিনি মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন। তিনি মান্টিভিডিও গিয়ে কিছুদিন একাজ সে কাজের পর এক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ নিলেন। প্রথম সন্তান জন্মের দুইবছর পরে ১৮৪২ খ্রিঃ তিনি অ্যানিটাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ করলেন। উরুগুয়েতে বসবাস কালেই গ্যারিবল্ডি ভাগ্যচক্রে এক ভয়াবহ যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন। প্রতিবেশী আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের স্বাধীনতা বিপন্ন করে তুললে মান্টিভিডিওকে রক্ষার জন্য গ্যারিবল্ডি এক ইতালিয়ান বাহিনী বা লিজিয়ন গঠন করলেন।

এই বাহিনীর পোশাক ছিল লাল কোট। আর প্রতীকী পতাকায় ছিল আগ্নেয়গিরির সঙ্গে কালো রং। পরবর্তীকালে এই প্রতীক ও লাল কোট – এর খ্যাতি সমগ্র ইউরোপে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধে ছোট্ট রাষ্ট্র উরুগুয়েকে সাহায্য করবার জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্স নৌবহর ও অভিযাত্রী সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিল। এদের সহযোগিতায় নিজের ইতালিয়ান বাহিনী বা লিজিয়ন নিয়ে যুদ্ধ করে জয়লাভ করলেন। তার প্রিয় মান্টিভিডিও রক্ষা পেল। উরুগুয়ে সরকার বীর গ্যারিবন্ডিকে জেনারেল পদে উন্নীত করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। ১৮৪৬ খ্রিঃ পোপ গ্রেগরীর মৃত্যুর পর নবম পায়াস তার স্থলাভিষিক্ত হলেন।

তার সংস্কারমুখী নীতি ইতালির স্বাধীনতাকামী জনগণকে আশান্বিত করে তুলল। এদিকে দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ হয়ে গ্যারিবন্ডি সস্ত্রীক ১৮৪৮ খ্রিঃ তাঁর ৬০ জন লিজিয়ন নিয়ে ইতালিতে ফিরে এলেন। এখানে তিনি লাভ করলেন রাজকীয় সংবর্ধনা। যুবকেরা দলে দলে এসে লিজিয়নে নাম লেখাতে লাগল কিছুদিন পরেই ১৬০ জন লিজিয়ন সঙ্গে নিয়ে জেনোয়ার দিকে যাত্রা করলেন। পিডেমেন্টের রাজা চার্লস অ্যালবার্ট অস্ট্রিয়ান সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। গ্যারিবন্ডি তার নিজস্ব বাহিনী নিয়ে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করলেন।

এইসময় মুষ্টিমেয় সৈন্য নিয়ে তিনি যে শৌর্য বীর্যের পরিচয় দিলেন তাতে দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আগ্রাসী রাজশক্তির কাছে তিনি হয়ে উঠলেন মূর্তিমত্ত আতঙ্ক। ইতিমধ্যে পোপের পার্শ্বচর কাউন্ট পেলেগ্রিনো রোসি আততায়ীর হাতে নিহত হলেন। প্রাণভয়ে পোপ রোম ছেড়ে নেপলসে আশ্রয় নিলেন। ফলে ১৮৪৮ খ্রিঃ সামরিক বাহিনী শাসনভার হাতে নিল। অন্তর্বর্তী গণপরিষদ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের নির্দেশ দিল। অবিলম্বে ইতালির রোমে প্রথম স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠিত হল।

আরও পড়ুন: সুনির্মল বসু জীবনী

আরও পড়ুন: শিবরাম চক্রবর্তী জীবনী

আরও পড়ুন: আশাপূর্ণা দেবী জীবনী

আরও পড়ুন: সুকুমার সেন জীবনী

আরও পড়ুন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী

কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ভেঙ্গে দেবার জন্য পোপ ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন ও নেপলসের কাছে আবেদন জানালেন। গ্যারিবন্ডি নতুন সরকারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। তাঁকে রোমান সৈন্যদলে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদ দেওয়া হল। তার অধীনে রইল ৫০০ জন সৈন্য। অবশ্য পরে তিনি তার সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা ১০০০ জনে বর্ধিত করে নিলেন। এরপর তিনি এই বাহিনীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেবার কাজে নিযুক্ত হলেন। রোম পুনরুদ্ধারের জন্য পোপের আহ্বানে প্রথম সাড়া দিলেন ফরাসী সম্রাট লুই নেপোলিয়ন। ৮,০০০ ফরাসী সৈন্য সিভিতা ভেডিয়াতে অবতরণ করল।

কিন্তু রোমের অধিবাসীরা তাদের বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পারল না, তারা গুলিগে ৷ না নিয়ে এই বাহিনীকে আক্রমণ করে বসল। গ্যারিবন্ডির সুশিক্ষিত বাহিনী নিতান্ত ছোট হলেও তাদের আক্রমণে এঁটে উঠতে না পেরে ফরাসী সৈন্যদল ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে শুরু করল। নেপলসে পোপের আশ্রয়দাতা রাজা ফার্দিনান্দ এবারে ২০,০০০ সৈন্যের এক বাহিনী রোমে পাঠালেন। গ্যারিবন্ডি তার গেরিলা বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে এই বিশাল বাহিনীকেও পর্যুদস্ত করলেন। মাৎসিনিকে নেতা নির্বাচিত করে রোমের জন্য তিনজনের এক শাসক গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছিল। এবারে মাৎসিনি গ্যারিবন্ডিকে রোমে ডেকে পাঠালেন।

সেখানে এক ফরাসী কূটনীতিক ফার্দিনান্দ দ্য পেলস – এর মাধ্যমে এক শান্তি চুক্তি তৈরি হল। অস্ট্রিয়ানদের হাত থেকে রোমান প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে ফরাসী সৈন্যর নিযুক্ত থাকবে। কিন্তু অনতিবিলম্বেই এই শান্তিচুক্তি অগ্রাহ্য করে ফ্রান্সের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল ওদিনো অকস্মাৎ রোম আক্রমণ করে বসল। গ্যারিবন্ডি ও তার সৈন্যদল অসাধারণ বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। কিন্তু ব্যর্থ হলেন, রোমের পতন হল। সস্ত্রীক গ্যারিবল্ডিকে আবার পালাবার বন্দোবস্ত করতে হল।

তিনি সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে স্থলপথ ধরলেন। পথের ধকল অ্যানিটা সইতে পারলেন না। একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। স্ত্রীর মৃতদেহ গ্রামবাসীদের দায়িত্বে দিয়ে গ্যারিবল্ডি এসে আশ্রয় নিলেন ট্যাঙ্গিয়ারে, সার্ডিনিয়ার রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে। সেই মুহূর্তে ইতালির কোন রাজ্যই গ্যারিবন্ডির পক্ষে নিরাপদ ছিল না। তাই ১৮৫০ খ্রিঃ তিনি আমেরিকায় চলে গেলেন। সেখানে একাকীত্ব অসহনীয় হয়ে উঠলে কারমেল নামে ৪০০ টনের ছোট্ট একটি জাহাজের দায়িত্ব নিয়ে চীনে চলে এলেন। চীনেও বেশিদিন ভাল লাগল না। ১৮৫৪ খ্রিঃ পুনরায় পিডেমেন্ট রওনা হলেন। পথে কিছুদিন লন্ডনে কাটিয়েছিলেন।

তারপর নাইসে সন্তানদের কাছে ফিরে গেলেন। ১৮৫৫ খ্রিঃ গ্যারিবল্ডির ভাই মারা গেলেন। পৈতৃক বিষয় সম্পত্তি থেকে এই সময় প্রচুর অর্থ তাঁর হাতে এল। তাই দিয়ে তিনি ক্যাপরেরা দ্বীপের অর্ধেকটা কিনে নিয়ে চাষবাসের কাজে মন দিলেন। এদিকে ইউরোপের রাজনৈতিক আকাশে চলেছিল বিচিত্র খেলা। পিডেমেন্টের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কাউন্ট কাভুর। সম্রাট ভিক্টর ইমানুয়েলের সম্মতি নিয়ে তিনি ফরাসীসম্রাটের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে স্থির করেছিলেন ১৮৫৯ খ্রিঃ বসন্তকালে ফ্রান্স এবং ইতালি মিলিতভাবে অস্ট্রিয়া আক্রমণ করবে। যুদ্ধজয়েব পরে নাইস ও স্যাভয় এই দুটি ভূখণ্ড ফ্রান্সকে দিয়ে দিতে হবে।

যুদ্ধের আগে ক্যাপরেরা দ্বীপে জাহাজ পাঠিয়ে গ্যারিবন্ডিকে জেনোয়ায় নিয়ে আসা হল। এখানে কাভুরের সঙ্গে আলোচনার পর গ্যারিবন্ডি বুঝতে পারলেন তার স্বদেশভূমিকে ঐক্যবদ্ধ করবার উপযুক্ত সময় উপস্থিত হয়েছে। নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় আবার জ্বলে উঠলেন গ্যারিবল্ডি। অবিলম্বে তিনি তার অনুগত পুরনো স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করলেন। তাদের জন্য একটি যুদ্ধ সঙ্গীতও রচনা করে দিলেন। ২৬ শে এপ্রিল অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে নামার আগে তার সঙ্গে প্রথমবারের মত স্বয়ং সম্রাট ভিক্টর ইমানুয়েলের এই সময়ে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল। ক্যাভুর ছিলেন ধূর্ত কুটনীতিক।

তিনি স্থির করেছিলেন এই যুদ্ধকালে গ্যারিবন্দ্বিব জনপ্রিয়তাকে দেশবাসীর মনোবলকে অটুট রাখতে কাজে লাগাবেন। যুদ্ধ পরিচালনার মত কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিয়ে তার গৌরব বৃদ্ধির কোন সুযোগ আর দেওয়া হবে না। সম্রাটের সঙ্গে দেখা করে গ্যারিবন্ডি তার স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে যে কোন স্থানে যুদ্ধ করবার অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলেন। ফলে কাভুরের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেল। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে গ্যারিবল্ডি জয়লাভ করলেন। দেশ বাসীর কাছে তিনি মুক্তিদাতা এক মহান দেবপুরুষ রূপে গৃহীত হলেন। তার খ্যাতি গগন স্পর্শ করল। গ্যারিবল্ডি হয়ে উঠলেন জীবন্ত কিংবদন্তী।

এরপর থেকে তার উপস্থিতি দরকার হত না, তার নাম শুনেই অস্ট্রিয়ান সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে লাগল। ঈর্ষাকাতর কূটনীতিকদের সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গ্যারিবল্ডি দেশের অবিসংবাদিত নায়ক হয়ে উঠলেন। সম্রাট স্বয়ং তাঁকে বীরত্বের জন্য পিডেমেন্টের সর্বোচ্চ সম্মান সোনার পদক দিয়ে অভিনন্দিত করলেন। ইতিমধ্যে সলফারিনোর যুদ্ধে ফরাসীরা জয়লাভ করল। এই পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ৩ য় নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার সঙ্গে এক চমকপ্রদ শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করলেন।

আরও পড়ুন: জীবনানন্দ দাশ জীবনী

আরও পড়ুন: সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনী

আরও পড়ুন: হােমার জীবনী

আরও পড়ুন: গল্পের রাজা ঈশপ জীবনী

আরও পড়ুন: দান্তে আলিঘিয়েরি জীবনী

এই চুক্তির ফলে ইতালির পোপের সভাপতিত্বে অনেকগুলি রাজ্যের এক সংঘরাষ্ট্র গঠিত হল। টাসকানি, রোমাগনা এবং মোডেনা রাজ্যের সম্মিলিত সেনা বাহিনীর প্রধান হলেন গ্যারিবল্ডি। কিন্তু নোংরা রাজনীতির খেলায় বিরক্ত হয়ে কিছুদিন পরেই তিনি এই পদ ছেড়ে দিলেন। এরপর ইতালির স্বাধীনতার জন্য তিনি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের কাজে মন দিলেন। “মিলান রাইফেলস সাবসক্রিপসন ফান্ড” নামে একটা তহবিল গড়লেন। জনসাধারণের দানে বিপুল অর্থ সংগৃহীত হল। তা দিয়ে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র কিনে ভবিষ্যতের জন্য মিলানে রেখে দেওয়া হল। গ্যারিবন্ডি সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। সেই সুযোগ আসতেও বিলম্ব হল না। সিসিলিতে বিদ্রোহ দেখা দিল।

দুটি পুরনো জাহাজে করে ১০৮৯ জন সৈন্য নিয়ে গ্যারিবন্ডি সিসিলিতে উপস্থিত হলেন। ৩ য় নেপোলিয়নের বাহিনীতে ছিল উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত ও সুশিক্ষিত ২০ হাজার সৈন্য ৷ গ্যারিবল্ডির রোমাঞ্চকর অবিশ্বাস্য ঘটনায় পূর্ণ জীবনের এটাই ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। একাধিক যুদ্ধে তিনি চমকপ্রদ জয়লাভ করলেন। ১৮৬০ খ্রি মে মাসে যুদ্ধ শুরু করে তিন মাসের মধ্যেই গ্যারিবল্ডি সিসিলি অধিকার করে নিজের অধীনে নিয়ে এলেন। সেই সঙ্গে নেপলস রাজ্য আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে মেসিনা প্রণালী পর্যন্ত শত্রুমুক্ত করে ফেললেন। কাভুর ও তার সরকার নানাভাবে গ্যারিবন্ডির অগ্রগতি রোধ করবার চেষ্টা করলেন।

কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। গ্যারিবন্ডির বিজয় বাহিনী ৭ ই অক্টোবর নেপলস শহর অধিকার করে নিল। নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনী এখনো জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। গ্যারিবল্ডি শেষবারের মত সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিলেন ভলটার্নো নদীর যুদ্ধে। গ্যারিবন্ডির কীর্তি ও কৃতিত্বে বিচলিত সম্রাট ভিক্টর ইমানুয়েল পিডেমেন্টের একদল সৈন্য নিয়ে তড়িঘরি গ্যারিবন্ডির সঙ্গে এসে যোগ দিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল গ্যারিবল্ডির গৌরবে দাবি বসানো। সম্রাট এসেই হুকুম করলেন, গ্যারিবল্ডি যেন তাঁর স্বেচ্ছাসেবী লালকোট বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।

তিনি একবারও এই বিজয়ী বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হলেন না কিংবা আহত স্বেচ্ছাসেবীদের দেখতে হাসপাতালেও গেলেন না। তবে নেপলসের রাজার সদ্য ছেড়ে যাওয়া সিংহাসনটি অধিকার করতে তার বিন্দুমাত্র ভুল হল না। তিনি বিজয়ী নায়ক গ্যারিবন্ডিকে পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করতে চাইলেন। কিন্তু গ্যারিবল্ডি সবকিছুই প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি ফিরে গেলেন তার ছোট্ট দ্বীপ ক্যাপরেরাতে। ক্রমাগত যুদ্ধের ক্লান্তি ও অমানুষিক পরিশ্রমে শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল গ্যারিবন্ডির।

নিজের জন্য যে ছোট্ট অনাড়ম্বর ঘরটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন শেষ জীবনে এখান থেকে প্রায় বেরতেনই না। অসংখ্য যুদ্ধ জয় করেছেন এই কিংবদন্তী বিপ্লবী। কিন্তু কখনো নিজের জন্য কিছু চাননি। তাঁর জীবনযাত্রা ছিল নিতান্তই সাদামাটা। জীবনের শেষ লগ্নে যেন দুরন্ত অভিমানে নিজেকে একান্তে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই দীনহীন কুটিরের সম্মুখেই ভিড় করতেন বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিরা। শেষ দিকে গ্যারিবন্ডি তার আত্মজীবনী লেখায় হাত দিলেন। ৭৩ বছর বয়সে একাকীত্ব ঘোচাবার জন্য নাতির ধাত্রী ফ্রাসেসকাকে বিয়ে করেছিলেন।

জুসেপ্পে গারিবালদি র মৃত্যু: Giuseppe Garibaldi’s Death

১৮৮২ খ্রিঃ ২ রা জুন ফ্রাসেসকাকে পাশে রেখেই এই অনন্য সাধারণ বীরপুরুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

Leave a Reply