অস্কার ওয়াইল্ড জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Oscar Wilde Biography in Bengali. আপনারা যারা অস্কার ওয়াইল্ড সম্পর্কে জানতে আগ্রহী অস্কার ওয়াইল্ড এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
- অস্কার ওয়াইল্ড কে ছিলেন? Who is Oscar Wilde?
- অস্কার ওয়াইল্ড জীবনী – Oscar Wilde Biography in Bengali
- অস্কার ওয়াইল্ড এর জন্ম: Oscar Wilde’s Birthday
- অস্কার ওয়াইল্ড এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Oscar Wilde’s Parents And Birth Place
- অস্কার ওয়াইল্ড এর শিক্ষাজীবন: Oscar Wilde’s Educational Life
- অস্কার ওয়াইল্ড এর প্রথম জীবন: Oscar Wilde’s Early Life
- অস্কার ওয়াইল্ড এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Oscar Wilde’s Marriage Life And Family
- অস্কার ওয়াইল্ড এর রচনা: Written by Oscar Wilde
- অস্কার ওয়াইল্ড এর মৃত্যু: Oscar Wilde’s Death
অস্কার ওয়াইল্ড কে ছিলেন? Who is Oscar Wilde?
অস্কার ফিঙ্গাল ও ফ্ল্যাহারটি উইলস ওয়াইল্ড বা অস্কার ওয়াইল্ড (১৬ অক্টোবর ১৮৫৪ – ৩০ নভেম্বর ১৯০০) একজন আইরিশ নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং কবি। তার জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। তিনি বহু ছোট গল্পও রচনা করেছেন। এছাড়া তিনি ফ্রিম্যাসন্স সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
অস্কার ওয়াইল্ড সম্পূর্ণ নাম ছিল অস্কার ফিঙ্গাল ও ফ্লাহাটি উইলস ওয়াইল্ড। পরবর্তীকালে মাঝের তিনটি শব্দ বাদ রেখে নিজেই পিতৃদত্ত নামের পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন অস্কার ওয়াইল্ড। ইংরাজি সাহিত্যের তথা বিশ্ব সাহিত্যের অবিস্মরণীয় নাম অস্কার ওয়াইল্ড। গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি সাহিত্যের প্রধান শাখাগুলােতেই তিনি রেখে গেছেন বিশিষ্ট অবদান।
ভিক্টোরীয় যুগের লন্ডন শহরে তিনি অন্যতম সফল নাট্যকার হিসেবে পরিচিত হন। তিনি তার চাতুর্যময় নাট্য রচনার মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তবে এক বিখ্যাত বিচারের রায়ের ফলে তার সাফল্যের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তাকে বড় মাপের অশ্লীলতা এবং সমকামিতার দায়ে কারাদন্ড দেয়া হয়। তিনি ৪৬ বছর বয়সে প্যারিস শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
অস্কার ওয়াইল্ড জীবনী – Oscar Wilde Biography in Bengali
নাম | অস্কার ওয়াইল্ড |
জন্ম | 16th অক্টোবর 1854 |
পিতা | স্যার উইলিয়াম ওয়াইল্ড |
মাতা | জেনি ওয়াইল্ড |
জন্মস্থান | ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড |
জাতীয়তা | আইরিশ |
পেশা | লেখক, কবি, নাট্যকার |
মৃত্যু | 30th নভেম্বর 1900 (বয়স 46) |
অস্কার ওয়াইল্ড এর জন্ম: Oscar Wilde’s Birthday
অস্কার ওয়াইল্ড ১৮৫৪ সালের ১৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।
অস্কার ওয়াইল্ড এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Oscar Wilde’s Parents And Birth Place
১৮৫৪ খ্রিঃ ১৬ অক্টোবর আয়াল্যান্ডের ডাবলিন শহরে জন্মেছিলেন। বংশগতভাবে ওয়াইল্ডরা ছিলেন ওলন্দাজ। সপ্তদশ শতকে তাদের এক পূর্বপুরুষ হল্যান্ড ছেড়ে আয়াল্যান্ডে এসে বসবাস করেন।
অস্কারের বাবা উইলিয়ম ওয়াইল্ড ছিলেন চোখ ও কানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। চোখের অস্ত্রোপচার করে ছানি বাদ দেবার পদ্ধতির উদ্ভাবন করে তিনি জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি এখনাে পর্যন্ত অনুসৃত হয়ে থাকে। পেশাগতভাবে চোখের চিকিৎসক হলেও সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রেও ইউলিয়ম ওয়াইল্ডের আগ্রহ ছিল। তিনি পুরাতত্ত্ব, লােককাহিনী প্রভৃতি বিষয়ে এবং ব্যঙ্গাত্মক রচনার লেখক জোনাথন সুইফট সম্পর্কেও বই লিখেছিলেন। সাহিত্যের প্রতিভা অস্কার উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন তার পিতার কাছ থেকে।
আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায় জীবনী
আরও পড়ুন: মুকুন্দ দাস জীবনী
আরও পড়ুন: অতুলপ্রসাদ সেন জীবনী
আরও পড়ুন: শিবনাথ শাস্ত্রী জীবনী
আরও পড়ুন: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জীবনী
তার মা জেন ফ্রান্সেসকা এলগিও ছিলেন লেখিকা। তিনি ছিলেন ইয়ং আয়াল্যান্ড মুভমেন্ট – এর প্রথম সারির নেত্রী। স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন ইংরাজ বিরােধী। তিনি প্রবন্ধ ও কবিতা লিখতেন স্পেরানজা ছদ্মনামে।
এসব রচনার মাধ্যমে তিনি জাতীয়তাবাদ প্রচার করতেন এবং দেশবাসীকে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করবার চেষ্টা করতেন। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতি এবং দয়ালু। তবে বেশ খামখেয়ালি। মায়ের সাহিত্য প্রতিভার সঙ্গে স্বভাবের এই দুর্বলতার অংশও অস্কার পেয়েছিলেন। পরবর্তী জীবনে অস্কার বহুবার খামখেয়ালের বশে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিব্রত হয়েছেন।
অস্কার ওয়াইল্ড এর শিক্ষাজীবন: Oscar Wilde’s Educational Life
ওয়াইল্ড দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন অস্কার। বাল্যে পড়াশুনাে শুরু হয়েছিল ইনিস্কিলেন – এর পােটোরা রয়্যাল স্কুলে। তবে বাঁধাধরা পড়াশােনার প্রতি তার কখনােই আগ্রহ ছিল না। পরে প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি কঠোর মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা শেখাই কি করে সব কিছু মনে রাখতে হবে। কিন্তু কি করে বড় হতে হবে স্কুলগুলােতে আমরা তা শেখাই না।
তবে স্কুলে পড়াশােনার সময়েই চিরায়ত গ্রীক, ল্যাটিন, শিল্পসাহিত্য এবং আধ্যাত্মিকতার আশ্রয়ে কল্পনা প্রসারের সন্ধান পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর ফলে অল্পবয়সেই তার জ্ঞানের জগতে ঘটল ব্যাপ্তি। স্কুলের পড়া শেষ করে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হলেন অস্কার। এখানকার পরিবেশ ছিল গ্রীক জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ বৃদ্ধির অনুকূল। ফলে এখানে পড়া চলাকালীনই তিনি লাভ করলেন ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ, অক্সফোর্ডের ম্যাকড়েলান কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি এবং গ্রীকসাহিত্যে ব্যুৎপত্তির জন্য বার্কলে স্বর্ণপদক।
অস্কারের উজ্জ্বল প্রতিভা এইভাবেই তার বিকাশের পথ করে নিতে লাগল ধাপে ধাপে। ১৮৭৪ খ্রিঃ অক্সফোর্ডে ভর্তি হলেন অস্কার। এখানে তিনি মনেপ্রাণে হয়ে উঠলেন সৌন্দর্যের পূজারী। তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠল কি করে নিজেকে সৌন্দর্যের যােগ্য করে তুলবেন তার চেষ্টা। ১৮৫০ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রি – র্যাফেনাইট ব্রাদারহুড। শিল্পকলায় চলতি প্রথার প্রতিবাদ স্বরূপই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সংস্থা।
শিল্পকলাকে জীবন ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার প্রতিবাদী ভাবনায় উদ্বুদ্ধ, শিল্পকলা হবে নির্মল ও কলুষমুক্ত এবং বাস্তবতার সম্পর্ক রহিত — এই ছিল এই আন্দোলনের মূলসূত্র। অস্কার পরবর্তীকালে বলেছেন তার এক প্রবন্ধে, শিল্পকলা জীবনকে নয়, জীবনই শিল্পকলাকে অনুসরণ করে। অক্সফোর্ডে অস্কারের চিন্তাভাবনা পরিপুষ্টি লাভের সুযােগ পেয়েছিল দুই পন্ডিত শিক্ষক জন রাসকিন এবং ওয়াটার প্যাটারের সাহচর্যে।
অক্সফোর্ড থেকে লন্ডনে ফিরে এলেন অস্কার। এখান থেকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন কলাবিভাগের প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রী। এছাড়া সঙ্গে ছিল রাভিনা কবিতার জন্য পাওয়া নিউডিগেট পুরস্কারের (১৮৭৮ খ্রিঃ) স্বীকৃতি। কিন্তু এই সব কাগুজে সম্মানে সন্তুষ্ট ছিলেন না অস্কার। তিনি ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। গতানুগতিকতার বিরােধী। চারদিকে একটা আলােড়ন সৃষ্টি হবে – সকলের মুখে মুখে আলােচনার বিষয় হয়ে থাকতে হবে এই ছিল তার প্রবণতা।
আরও পড়ুন: গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘র জীবনী
আরও পড়ুন: সালিম আলী ‘র জীবনী
আরও পড়ুন: হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র জীবনী
আরও পড়ুন: আবদুস সালাম জীবনী
আরও পড়ুন: দৌলাত সিং কোঠারি জীবনী
অস্কার ওয়াইল্ড এর প্রথম জীবন: Oscar Wilde’s Early Life
সহসা বিচিত্র পােশাকে নিজেকে সজ্জিত করলেন। গায়ে চড়ালেন বড় গলাওয়ালা শার্ট সিল্কের কাপড়ের বিনুনি করা মখমলের জ্যাকেট, পরনের ট্রাউজার হাঁটু পর্যন্ত আঁটোসাঁটো, গলায় বেঢপ মাপের টাই, পায়ে উঠল কালাে সিঙ্কের মােজা আর বকাস দেওয়া জুতাে।
ল্যাভেন্ডার রঙের দস্তানা পরা হাতে নিলেন একটা বেতের লাঠি, তার গায়ে আবার মূল্যবান পাথর বসানাে খােদাই করে। সাতাশ বছরের সুদর্শন যুবক অস্কারের এই পােশাক আর মুখের চটকদার কথা- অল্পসময়ের মধ্যেই সকলের আলােচনার পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি। খুব ভাল কথা বলতে পারতেন অস্কার। যারা শুনত তারা মুগ্ধ না হয়ে পারত, তার মত আলাপপটু ও বাগ্মী ব্যক্তি সেই সময়ে খুব কমই ছিল।
একবার এক বন্ধুকে স্রেফ কথা বলেই আত্মহত্যার সংকল্প থেকে ফিরিয়ে এনে ছিলেন। বন্ধুর মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন তিনি মর্মস্পর্শী ভাষায় শুধুমাত্র এটুকু বুঝিয়ে যে জীবন অমূল্য এবং সতত সুখের। কথা বলার বিস্ময়কর ক্ষমতা নিয়ে তার সুখ্যাতি ছিল সমাজের সর্বস্তরে। চার্চিল একবার এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন পরলােকে গিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি সুখী হবেন যদি সেখানে তিনি অস্কার ওয়াইল্ড – এর দেখা পান।
কেবল পােশাক আর বাকপটুতার জন্যই অতি অল্পসময়ের মধ্যেই অস্কার হয়ে উঠলেন সমাজের প্রিয় ব্যক্তিত্ব। ১৮৮২ খ্রিঃ বক্তৃতা দেবার নিমন্ত্রণ পেয়ে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন অস্কার। ফিরে এসেছিলেন প্রচুর সুখ্যাতি আর হাজার হাজার পাউন্ড সঙ্গে করে। তবে আমেরিকা সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে যা বলেছিলেন তা ছিল রীতিমত বিস্ফোরক। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে বলেছিলেন, লােকের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয় আমেরিকানরা তা জানে না। এরা শিল্পকলা বােঝে না। যন্ত্র নিয়েই সারাক্ষণ মেতে থাকে।
অস্কার ওয়াইল্ড এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Oscar Wilde’s Marriage Life And Family
১৮৮৪ খ্রিঃ এক আইরিশ ব্যারিষ্টারের সুন্দরী কন্যা কনস্ট্যাসি লয়েডকে বিয়ে করলেন। তাদের দুটি পুত্রসন্তান জন্মেছিল। নাম রাখা হয়েছিল সিরিল ও ভিভিয়ান।
অস্কার ওয়াইল্ড এর রচনা: Written by Oscar Wilde
প্রকৃত অর্থে অস্কারের সাহিত্যচর্চার শুরু হয় দ্য উওম্যানস ওয়ার্ল্ড সাময়িক পত্রিকার সম্পাদনার সূত্রে। তার আগে আশির দশক পর্যন্ত কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল মাত্র। ১৮৮৬ খ্রিঃ থেকে আরম্ভ হল গদ্য রচনা। একের পর এক গল্প প্রকাশিত হতে লাগল।
দ্য হ্যাপি প্রিন্স, দ্য সেলফিস জায়েন্ট ও দ্য রিমার্কেল রকেট নামের বিশ্বখ্যাত রূপকথার গল্পগুলি এই সময়েই লেখা হল। তার রূপকথার গল্পগুলিতে ছিল অবাধ কল্পনা আর ব্যঙ্গের নিপুণ সংমিশ্রণ।
আরও পড়ুন: জন ডাল্টন জীবনী
আরও পড়ুন: কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস জীবনী
আরও পড়ুন: আমেদেও অ্যাভোগাড্রো জীবনী
আরও পড়ুন: হামফ্রে ডেভি জীবনী
আরও পড়ুন: কাউন্ট রামফোর্ড জীবনী
সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছেই তার লেখা সমাদৃত হল। কোথাও কোন লেখা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য উচ্চারিত হল না। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হল তার প্রথম উপন্যাসদ্য পিকচার অব ডােরিয়ান গ্রে এবং প্রবন্ধ পুস্তক দ্য সেলি অব ম্যান আন্ডার সােশ্যালিজম।
উপন্যাস ও প্রবন্ধ পুস্তকের সূত্রে এবারে প্রচন্ড আলােড়ন উঠল। অভিজাত সম্প্রদায়ের মজ্জাগত মূল্যবােধের প্রতি তীব্র কটাক্ষপাত এবং তার বিরুদ্ধে তারুণ্যের বিপ্লবের জয়গান স্বাভাবিকভাবেই সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল। কিন্তু দমলেন না অস্কার।
এরপর তিনি আসরে নামলেন নাটক নিয়ে। পর পর প্রকাশিত হল সামাজিক কমেডিগুলাে- লেডি উইল্ডারমেয়ারস ফ্যান (১৮৯২ খ্রিঃ), এ উওম্যান অব নাে ইম্পরট্যান্স (১৮৯৩ খ্রিঃ), এন আইডিয়াল হ্যাজব্যান্ড (১৮৯৫ খ্রিঃ) এবং দ্য ইমপরট্যান্স অব বিয়িং আর্নেস্ট (১৮৯৫ খ্রিঃ)।
সেন্ট জেমস থিয়েটারে অনেক নাটকের অভিনয় হল সাফল্যের সঙ্গে। প্রশংসা পেলেন অস্কার। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী বলে খ্যাতিমান হলেন। এইভাবে খ্যাতির শীর্ষে পৌছলেন একজন আইরিশ নাইটের দরিদ্র সন্তান।
এরপরেই অস্কারের জীবন – নাট্যে আরম্ভ হল ট্রাজেডির পট পরিবর্তন। সংসার জীবনের একঘেয়েমিতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন স্বভাব – চঞ্চল অস্কার। তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠল (১৮৯১ খ্রিঃ) তরুণ কবি লর্ড অ্যালফ্রেড ডগল্যাসের সঙ্গে। ১৮৯৫ খ্রিঃ নাগাদ তিনি অভিযুক্ত হলেন সমকামিতার অভিযােগে। মামলা উঠল আদালতে। ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনের আইন সমকামিতার অভিযােগে অভিযুক্ত করল তাকে।
চর্তুদিকে সৃষ্টি হল ব্যাপক উত্তেজনা। অসাধারণ বাগ্মিতায় আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেন অস্কার। ইংরাজ জনগণের কপট নৈতিকতার এক চূড়ান্ত রূপ উদঘাটিত হল। বিচারে দুবছরের সশ্রম কারাদন্ড হল অস্কারের। ওয়ান্ডস ওয়ার্থ ও রিডিংজেলে কঠিন শ্রমের মধ্যে কাটালেন।
অসংযত জীবনযাত্রার অভিযােগে অভিযুক্ত আসামী কাজেই বাইরের কোন দর্শনার্থীর সাক্ষাৎকারের অনুমতি ছিল না তার সঙ্গে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে জেল থেকে বেরিয়েই অস্কার তার জেল – যন্ত্রণার ছবি আঁকলেন তার সর্বশ্রেষ্ঠকবিতা দ্য ব্যালাড অব রিডিং জেল – এ। জেলের বাইরে নতুন রকমের জীবন – যন্ত্রণা অপেক্ষা করছিল অস্কারের জন্য। দেউলিয়া ঘােষণা করাহলতাকে। ঘর – গৃহস্থালীর সব জিনিস বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। স্ত্রীও বিবাহ – বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং জীবনী
আরও পড়ুন: মেরী কুরি জীবনী
আরও পড়ুন: গুলিয়েলমো মার্কনি জীবনী
আরও পড়ুন: আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী
আরও পড়ুন: হারম্যান জোসেফ মুলার জীবনী
ইংলন্ডে তার পাবার মত আর কিছুই ছিলনা। সন্তানদের কাছ থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিলেন তিনি। তাদের দায়িত্ব একজন আইনত বৈধ অভিভাবকের হাতে বর্তাল। লন্ডন ছেড়ে প্যারিসে আশ্রয় নিলেন। চরম দুরবস্থা আর আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও অস্কারের সঙ্গী হয়েছিল তার স্বভাবজাত বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা, রসিকতা, খামখেয়ালের বিতর্কিত বক্তব্যের অভ্যাস।
অস্কার ওয়াইল্ড এর মৃত্যু: Oscar Wilde’s Death
শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮৬ বছর বয়সে প্যারিসের এক হােটেলে ১৯০০ খ্রিঃ ৩০ শে নভেম্বর অস্কারের নাটকীয় ঘটনায় দীর্ণ জীবনের অবসান ঘটল।
প্যারিসের এক সেমিট্যারিতে সমাহিত করা হয় অস্কার ওয়াইল্ডকে। যিনি যন্ত্র ও বস্তুতন্ত্রের নিন্দা করেছিলেন উচ্চকণ্ঠে, মানুষের মহত্ত্বের জয়গান করেছিলেন এবং জীবনে সৌন্দর্যের প্রয়ােজনীয়তার কথা বলে গেছেন মর্মস্পর্শী ভাষায়, তিনি ছিলেন অর্ধেক সাবালক, অর্ধেক বালক। যিনি মানুষের সুপ্ত কল্পনা গুলিকে সজীব সতেজ করে জাগিয়ে তুলেছিলেন, যিনি ঘুন ধরা সমাজের প্রচলিত সবকিছুর বিরুদ্ধে সােচ্চার ছিলেন, তিনি নিজে ছিলেন অতিমাত্রায় জটিল অথচ সর্বদা হাসিখুশি, রসিকতায় প্রাণময়।