সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে ব্রাউন রাইস খান – জানুন ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: সাধারণত টেকি ছাটা চালে এই বাদামী আবরণ থাকে বা ব্রাউ রাইস তৈরি হয় ধান সিদ্ধ করে ৷ ব্রাউন রাইস হলো একটি ফাইবার যুক্ত খাদ্য। এই চালটি কম পালিস হয় সেজন্য চালের উপরিভাগ (ব্রাউন কালারের হয়), রাইস ব্রান বা ধানরে তুষের কিছুটা অংশ থেকেই যায়, চাল দেখতে হয় লালচে ধরনের এবং এতে পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে সংরক্ষিত থাকে৷ স্বাস্থ্য-সচেতন ব্যক্তিদের কাছে ব্রাউন রাইস একটি অতি প্রয়ােজনীয় খাদ্য শস্য। পালিশ করা চালের তুলনায় এতে অনেক বেশি মাত্রায় পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
ব্রাউন রাইসের বিজ্ঞানসম্মত নাম: Oryza Sativa
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে ব্রাউন রাইস খান – জানুন ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
অনেকের ধারণা ভাত খেলে সহজে ঘুম পায়, মোটা হবার প্রবণতা বাড়ে বেশি। তাছাড়া ডায়বেটিস রোগীর জন্য ভাত না খাওয়াই ভালো৷ তবে এই সব ধারণার কিছু পরিবর্তন হচ্ছে ইদানিং৷ এমন মতও শোনা যাচ্ছে ভাত আর রুটির মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য নেই। আবার ভাত খেলেও ব্রাউন রাইস খাওয়ার তেমন চল নেই৷ কিন্তু জেনে রাখুন ব্রাউন রাইসে রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।
আরও পড়ুন: শুষনি শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১. এনার্জি সরবরাহ ও কর্মক্ষমতা: কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ব্রাউন রাইসে স্টার্চ ও ফাইবার রয়েছে। একদিকে যেমন ব্রাউন রাইস হজম হতে সময় লাগে বেশি, কিন্তু ধীরে ধীরে সারাদিনে অনেক এনার্জি সরবরাহ করে। ফলে গোটা দিনই কর্মক্ষম থাকার জন্য ব্রাউন রাইস খাওয়া উচিত।
২. ভিটামিন: ব্রাউন রাইসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-কে। এছাড়া রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম।
৩. অনিদ্রা বা ইনসােমনিয়া: অনিদ্রা বা ইনসােমনিয়া রােগেও ব্রাউন রাইস উপকারী। যারা রাতে ঘুমোতে পারেন না ইনসোমনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ব্রাউন রাইস তাদের পক্ষে খুবই উপকারী।
৪. হাড় খুব শক্ত ও মজবুত: ব্রাউন রাইসে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় খুব শক্ত ও মজবুত হয়।
আরও পড়ুন: পুদিনা পাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৫. অ্যালঝাইমার রোগ: ব্রাউন রাইসে যথেষ্ট পরিমাণে নিউরোট্রান্সমিটার নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যা অ্যালঝাইমার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৬. হরমোন তৈরি করতে: ব্রাউন রাইস নার্ভ সিস্টেম ভালো রাখতে ও হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রিলাক্স থাকার জন্যেও সাহায্য করে।
৭. অ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপ: এক কাপ ব্রাউন রাইসে পাওয়া যায় প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ। এই মাঙ্গানিজ দেহে শক্তি সরবরাহ করে। এটি অ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ম্যাঙ্গানিজ স্নায়ুতন্ত্র ও প্রজনন তন্ত্রের জন্যও উপকারী।
৮. ক্যান্সার প্রতিরোধে: ব্রাউন রাইসে এক ধরনের ইনসলিউবল ফাইবার রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। গবেষণায় জানা গেছে, ইনসলিউবল ফাইবার ক্যান্সারের কোষগুলো থেকে শরীরকে রক্ষা করতে ব্রাউন রাইস সাহায্য করে।
৯. কোলন ক্যানসার: ব্রাউন রাইসে থাকা সেলেনিয়াম কোলন ক্যানসার প্রতিরােধ করে। ক্যান্সার এর হাত থেকে রক্ষা করে।
১১. হজম শক্তি বৃদ্ধি: ব্রাউন রাইসে থাকা ফাইবার পেটের জন্য উপকারী। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। ফাইবার গলস্টোন প্রতিরােধ করে।
১২. কোলস্টেরল মাত্রা: এটি দেহে কোলস্টেরল মাত্রা কমায়। মহিলাদের দেহে কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও হৃদরােগের সম্ভাবনা কমায়।
১৩. দুধের বৃদ্ধিতে: এটি দুগ্ধ প্রদানকারী মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মহিলাদের বাচ্ছার দুধের মাত্রা কমে গেলে নিয়মিত ব্রাউন রাইস খাওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১৪. ওজন হ্রাস: রিফাইভ চাল থেকে ব্রাউন রাইস খেলে দেহিক ওজন হ্রাস পায়। এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৫. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বার্ধক্য রোগে: ব্রাউন রাইসে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বার্ধক্য বিলম্বিত করে এবং ফ্রি র্যাডিক্যালসের হাত থেকেও বাঁচায়।
১৬. স্ট্রেসের সমস্যায়: অ্যাংজাইটি বা স্ট্রেসের সমস্যায় ব্রাউন রাইস উপকারী।
১৭. রাইস খাওয়ার গুন: হোয়াইট রাইসের তুলনায় ব্রাউন রাইস বেশি উপকারী। কিন্তু ভাত আর ব্রাউন রাইসের স্বাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সে কারণে নিয়মিত ব্রাউন রাইস খাওয়ায় অভ্যস্ত হওয়া একটু মুশকিল হয়ে পড়ে ।
আরও পড়ুন: তেলাকুচার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Brown Rice:
প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রাউন রাইসে আছে-
- শক্তি – ১১০ ক্যালোরি
- লিপিড – ০.৯ গ্রাম
- কোলেস্টেরেল – ০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ৫ – মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – ৪৩ মিলিগ্রাম
- চিনি – ০.৪ গ্রাম
- প্রোটিন – ২.৬ গ্রাম
- ভিটামিন এ – ০ আইইউ
- ভ্যাটামিন সি – ০ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ১০ মিলিগ্রাম
- লোহা – ০.৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি – ০ আইইউ
- ফিরিডক্সিন – ০.১ মিলিগ্রাম
- সায়ানোকোবালামিন – ০ আইইউ
- ম্যাগনেসিয়াম – ৪৩ মিলিগ্রাম