সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে কাঁঠাল খান – জানুন কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: ভারতের সর্বত্রই কম বেশি এই কাঁঠাল পাওয়া যায়। বসন্ত ও গ্রীষ্মের প্রথমে কাঁচা অবস্থায় এবং গ্রীষ্ম ও বর্ষায় পাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। ফলটি আকারে বেশ বড় হয়। কাঁঠাল পাকা ও কাঁচা দুই ভাবে এবং রান্না করে ও খাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কাঁচা কাঁঠালের এঁচোড় করে খেয়ে থাকে, এঁচোড় বাঙালির খুবই পছন্দের। নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠাল। কাঁঠাল কিন্তু আমাদের শরীরের জন্যও যেমন উপকারী তেমন অপকারীও বটে। পাকা কাঁঠাল বেশি পরিমানে খেলে পেটের যন্ত্রনা ও পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
কাঁঠালের বিজ্ঞানসম্মত নাম: Artocarpus heterophyllus

সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে কাঁঠাল খান – জানুন কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
কাঁঠালে থাকে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান । এই সমস্ত উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে কাঁঠাল এবং শরীরকে হেলদি রাখতে সাহায্য করে থাকে।
আরও পড়ুন: তেলাকুচার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
কাঁঠালের প্রায় ৩-৫ কোয়া থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি উপাদান পাওয়া যায়। এর হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ। ৩-৪ কোয়া কাঁঠাল আমাদের এক দিনের ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা পূরণ করে থাকে। কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিন সহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী।
কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১. নানা ব্যবহার: গ্রীষ্মকালীন একটি রসালাে ফল হল কাঁঠাল। কচি কাঁঠাল (এঁচোড়) সবজি হিসাবে এবং পাকা কাঁঠাল ফল হিসাবে খাওয়া হয়। কাঁঠাল বীজ ময়দা তৈরিতে ও সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
২. কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করতে: কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার ফলে ল্যাক্সেটিভ উপাদান হিসাবে কাঁঠাল কাজ করে, ফলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়। কোষ্ঠবদ্ধতা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন খাওয়ার পর ভরাপেটে যদি একটা কাঁঠালের দানা সিদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া যায় তাহলে পেটের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: কাঁঠালে পটাসিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কাঁঠালে ভরপুর পটাশিয়াম (৩০৩.০ মিলি গ্রাম) ক্যালসিয়াম (৩৪.০ মিলি গ্রাম) থাকার কারণে রক্তচাপের সাথে সাথে পেশিতে বা শিরার টানের থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: আম এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৪. বলবর্ধক: কাঁঠালের কোয়া ও বীজ বলবর্ধক হিসাবে কাজ করে। কাঁঠালের কোয়াতে ভিটামিন-এ পাওয়া যায় যার দ্বারা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও দুর্বল ভাব কমায়। কাঁঠালের বীজ যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. ক্যানসার প্রতিরােধ: কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন-এ ও সি ( ২৯৭ আই. ইউ.-৬.৭ মিলিগ্রাম) থাকে। ফলে ফুসফুস ও মুখের ক্যানসার প্রতিরােধ করে। শুধু তাই নয় কাঁঠালে ভিটামিন-সি এর পরিমান (৬.৭ মিলিগ্রাম) পর্যাপ্ত থাকায় মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬. হাঁপানি ও চর্মরােগে: কাঁঠাল গাছের মূল্যের রস জ্বর ও পায়খানার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। মূল হাঁপানি ও চর্মরােগের চিকিৎসায় ভাল কাজ দেয়। কাঁঠাল গাছের মূল, অল্প কাঁচা হলুদ ও এলাচ বেটে তা দাদ-হাজা-চুলকানি তে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. মানসিক চাপ: কাঁঠালে থাকা ভিটামিন-বি৬ ১,১০৮ আই. ইউ. ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-বি ১২, ১৪.০ মিলিগ্রাম ৩৭.০ মিলিগ্রাম, এগুলি মানসিক চাপ ও হতাশা দমনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৮. আলসার গুণাবলী: কাঁঠালে অ্যান্টি-এজিং, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ক্যানসার ও অ্যান্টি- আলসার গুণাবলী রয়েছে।
৯. ক্ষত বা পুরানো কাটা পোড়া: কাঁঠাল পাতার পােড়া ছাই, বীজ পােড়া ছাই ও নারকেল মালা পােড়া ছাই একসঙ্গে মিশিয়ে ক্ষত স্থানের উপর প্রয়ােগ করলে ক্ষত বা পুরানো কাটা, পোড়া, তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
১০. হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে: কাঁঠালের বীজ খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়ে ও হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখবে।যার ফলে হার্ট এটাকের সম্ভবনা অনেক কমে যায়।
আরও পড়ুন: আঙুর এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১১. দৃষ্টি শক্তি ভালাে রাখে: কাঁঠালের বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে, ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালাে রাখে ও রাতকানা রােগ হতে দেয় না।
১২. হজম শক্তি বাড়ে: কাঁঠালের বীজ খেলে হজম শক্তি বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৩. চুলের স্বাস্থ্য: ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম চুলের স্বাস্থ্য ও ভালাে রাখে এবং চুলকে লম্বা ও স্ট্রং বা মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে।
আরও পড়ুন: পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন

কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Jackfruit:
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে আছে-
- কার্বোহাইড্রেট – ২৪.০ গ্রাম
- জিঙ্ক – ০.৪২ গ্রাম
- প্রােটিন – ১.০ গ্রাম
- কপার – ০.১৮৭ গ্রাম
- ফ্যাট – ০.৩ গ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ – ০.১৯৭ গ্রাম
- জল – ৭৭.২ গ্রাম
- সেলেনিয়াম – ০.৬০ মাইক্রোগ্রাম
- খাদ্য আঁশ – ২.০ গ্রাম
- ভিটামিন-বি ১ – ০.০৩ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৩৪.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-বি ৫ – ০.৪০ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম – ৩০৩.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-বি ৬ – ১.১০৮ আই. ইউ.
- ম্যাগনেসিয়াম – ৩৭.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-সি – ৬.৭ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – ৩৬.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-এ – ২৯৭ আই. ইউ
- সােডিয়াম – ৩.০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-বি ১২ – ১৪.০ মিলিগ্রাম
- লােহা – ০.৬ মিলিগ্রাম
- তাপশক্তি – ৯৪.০ কিলাে ক্যালােরি
আরও পড়ুন: আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন