সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে ধনেপাতা খান – জানুন ধনেপাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: ধনেপাতা ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গাতে পাওয়া যায়। বাঙালিরা রান্নার স্বাদ বাড়াতে এর ব্যবহার করে থাকে। ধনেপাতাকে আবার স্যালাড হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা অনেকেই ধনেপাতা খাইনা তার কারণ হলো ধনেপাতাতে এক প্রকার গন্ধ বার হয় তার জন্য। যা অনেকেই সহ্য করতে পারেনা।
ধনেপাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম: Coriandrum sativum
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে ধনেপাতা খান – জানুন ধনেপাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
আমরা অনেকেই ধনেপাতার গুণাগুণ সম্পর্কে না জেনে খেয়ে থাকি। মানব শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু ধনেপাতা নয় ধনেপাতার শিকড়ও নানান রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
ধনেপাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন – Benefits And Nutritional Value Of Coriander Leaves:
১. অর্শ রোগে: ধনেপাতার রস সকালে খালিপেটে খেলে যে অর্শ থেকে রক্ত পড়ছে তার উপশম হয়।
২. চোখের ব্যথায়: ধনে পাতা বেটে সেই রস পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে কয়েক ফোটা চোখে সকাল ও সন্ধ্যেবেলা দিলে চোখের ব্যথায় উপকার হয়।
৩. বায়ু বা গ্যাস: ধনেপাতার রস বায়ু বা গ্যাস নাশ করে ও খিদে বাড়িয়ে দেয় সেইজন্যে এই পাতা খেলে শরীর ঝরঝরে বা তরতাজা থাকে। ভোজনের পর ৫-৬টি ধনেপাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন।
আরও পড়ুন: শুষনি শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৪. বসন্ত রােগে: বসন্ত রোগ হলে ধনে পাতার রস কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে চোখে দিলে চোখে বসন্তের গুটি বেরােয় না।
৫. দাঁতের সমস্যায়: ধনে পাতা থেতো করে সেই পাতা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি দৃঢ় বা মজবুত হয়। দাঁতের ঢিলে মাড়ি শক্ত হয়ে যায় এবং রক্তপড়া বন্ধ হয়।
৬. পুষ্টি: ধনে পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন যা শরীরকে সুস্থ রাখে ও দেহে এনার্জি সরবরাহ করে।
৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, এসেনশিয়াল অয়েলস, ভিটামিন ও ডায়েটারি ফাইবার, যা শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাশাপাশি ভালাে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সক্ষম। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম সুস্থ থাকে।
৮. বদহজম বা গা বমি: বদহজম বা গা বমি ভাব কাটাতে ধনেপাতা ও অল্প পরিমানে লবন এর সাথে চিবিয়ে খেলে কার্যকর উপকার পাবেন।
৯. টক্সিন বার করতে: ধনেপাতা নিয়মিত খেলে শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে এই পাতা।
১০. শরীরকে ডিটক্স করতে: ধনেপাতায় বেশি মাত্রার ক্লোরােফিল থাকায় শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। তাই ধনেপাতা খাওয়া দরকার।
১১. নার্ভ রিলাক্স: নার্ভের সমস্যায় নিয়মিত খাওয়ার ফলে এই পাতা নার্ভ রিলাক্স করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: পুদিনা পাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১২. খিদে বাড়ায়: ধনে পাতার রস বায়ু নাশ করে ও খিদে বাড়ায়। পেটের নানা সমস্যার সমাধান করে।
১৩. এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁত ও মাড়ির জন্য উপকারী।
১৪. ডার্মাইটিস বা এগজিমাতে: ব্ল্যাক হেডস আর অ্যাকনে সারাতে খুব ভালাে কাজ করে এই পাতা ডার্মাইটিস বা এগজিমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৫. ত্বকের সমস্যায়: তৈলাক্ত ত্বকে উপকারী ধনে পাতা। বাড়তি তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সকালে উঠে ধনেপাতার রস ত্বকে লাগিয়ে ৫-৭ মিনিট রাখুন তার পর ফেলুন। অথবা রাতে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন ও সকালে উঠে জল দিয়ে ধুয়ে নিন অয়েলি স্কিন দূর হবে।
১৬. ব্লাড প্রেসার: ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে ধনেপাতা। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ধনেপাতা রাখার চেষ্টা করুন।
১৭. ঋতুস্রাবের ব্যথায়: ধনে পাতা ভেজানাে জল খেলে ঋতুস্রাবের ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
১৮. ঠোঁটে কালো দাগ: যাদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তারা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনেপাতার রসের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এভাবে এক মাস লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে আর ঠোঁট কোমলও হবে।
আরও পড়ুন: কাঁঠাল এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
সতর্কতা:
রান্নায় অত্যাধিক ধনে পাতার ব্যবহার ভাল নয়। বলা হয় বেশি ধনেপাতার রস পেটে গেলে রতিশক্তি কমে যায়, দৃষ্টিশক্তি লােপ পায়, মাথা ঘুরতে থাকে, মনে চাঞ্চল্য উপস্থিত হয় এবং হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। অবশ্য সাধারণত যে পরিমাণে ধনে পাতা খাওয়া হয় তাতে এসব অসুখের আশঙ্কা থাকে না।