সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে নটে শাক খান – জানুন নটে শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন: নটেশাক বাড়ির আনাচে কানাচে পাওয়া যায়। এখন নটেশাক চাষ শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গঞ্জে ও কলকাতার প্রায় জায়গাতে নটেশাক পাওয়া যায়। নটে শাক সাধারণত বাজারে দু ধরনের পাওয়া যায় সবুজ বা সাদা নটে ও রাঙা বা লাল নটে। আর এক ধরণের নটে শাক পাওয়া যায় তা হল কাঁটা নটে। আর নটে শাকের শিকড় ও পাতা নানা রোগে ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সবুজ বা সাদা নটে শাকের চেয়ে লাল বা রাঙা নটে শাকই বেশি উপকারী আয়ুর্বেদ মতে।
নটে শাকের বিজ্ঞানসম্মত নাম:
- লাল নটে: Anuaranthus tricolor
- সাদা নটে: Amaranthus bilitum
সুস্থ ও রোগ মুক্ত থাকতে নটে শাক খান – জানুন নটে শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
নটেশাক গরম আর বর্ষাকালেই অধিক জন্মায়। নটেশাক খুবই পুষ্টি কর ও সুস্বাদু সবজি। গরমকালে আর বর্ষাকালের বদহজম বা পেটের সমস্ত রকম গোলমাল থেকে নটে শাক শরীরকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। নটেশাকে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লােহা, ম্যাগনেসিয়াম, সােডিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, সালফার, ক্লোরিন, ভিটামিন-বি, থাকে যা আমাদের সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: ধনেপাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
নটে শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
১। শরীর গরম বা রক্তের দোষ: যদি শরীর গরম হওয়ার দরুণ বা যে কোনাে কারণে রক্তের দোষ ঘটে এবং সেই কারণে চুলকুনি হয় তাহলে নিয়মিত নটে শাক ভাজা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। নানা রোগে নটে: নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন নটে শাক ভাজা করে খেলে গরমকালের সব অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩৷ মেয়েলি রোগে: মেয়েদের সমস্ত রকম মেয়েলি অসুখেও নটে শাক ভাজা ও সিদ্ধ করে খেলে খুব উপকার পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: ব্রাউন রাইস এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
৪। স্তন্যদুগ্ধ বর্ধক: যে সমস্ত মায়েদের স্তনে দুগ্ধের পরিমান কমে গেছে তারা নটে শাক নিয়মিত লাল নটে ভাজা ও সাদা নটে সিদ্ধ করে খান ১ মাস পর্যন্ত। নটে শাক স্তন্যদুগ্ধবর্ধক।
৫। নানা রোগে নটে: প্রতিদিন নটে শাক খেলে কুষ্ঠ রােগ, শরীর জ্বালা, লিভার ও পিত্তের অসুখেও নটে শাক উপকার দেয়।
৬। অসুস্থতা: যাঁরা অসুস্থ তাঁদের ও নটে শাক খাওয়ানাে যেতে পারে কারণ নটে শাক খেলে কোনাে অপকার হবে না।
৭। গরমকালে ও বর্ষাকালে: গরমকালে ও বর্ষাকালে প্রতিদিন নিয়ম করে ভাতের সঙ্গে নটে শাক ভাজা, চচ্চড়ি, ভাতে বা ঘণ্ট খেলে অনেক রােগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নটে শাক সব রকম বিষের ক্রিয়া নাশের পক্ষেই, নটে শাক হল সবচেয়ে সুলভ, সস্তা, সহজ অব্যর্থ ওষুধ।
৮। নটে শাক অনেক রােগেরই সুলভ, সস্তা ও সহজ ও ঘরােয়া ওষুধ।
৯। মহিলাদের জন্য: নটে শাক বা কাটা নটের মূল বা শিকড় পিষে জলে সেদ্ধ করে ক্বাথ তৈরি করে সেই ক্বাথের ২ চা চামচ তার সঙ্গে মধু ২ চামচ এবং ভাতের ফ্যান ৮ চা চামচ মিশিয়ে খেলে মেয়েদের সব রকমের প্রদর রােগ সারে।
১০। আগুনে পােড়া: নটে শাক শিলে বেটে নিয়ে, আগুনে পােড়া ঘা বা ব্রণতে নটে শাকের রস লাগালে ঘা বা ব্রণ সারে, জ্বলা যন্ত্রনা নরম করে।
আরও পড়ুন: শুষনি শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
১১। ফোঁড়া পাকাতে: নটে শাকের পুলটিস তৈরি করে ফোড়ার ওপর বাঁধলে ফোঁড়া তাড়াতাড়ি পেকে ফেটে যায়। ফোলার ওপর নটে শাক বাটার প্রলেপ লাগালে ফোলা কমে।
১২। যেকোনো বিষক্রিয়াতে: নটে শাকের রস গােরুর দুধে মিশিয়ে খেলে বিষ নেমে যায়। ১ চা চামচ নটে শাকের শিকড়ের চূর্ণ (ওঁড়াে) ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দু বার করে চেটে খেলে শরীর থেকে ইদুরের বিষ নেমে যায়।
১৩। বিছের কামড়ে: নটে শাকের রসে চিনি মিশিয়ে খেলে বিছের কামড়ের বিষও নেমে যায়।
১৪। অর্শ রােগে: নটে শাক নিয়মিত সেবনে অর্শ রােগের উপশম হয়।
১৫। কোষ্ঠবদ্ধতা দূর: নটে শাক খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকে।
১৬। শরীর জ্বালা: নটে শাক খেলে কুষ্ঠ রােগ, শরীর জ্বালা ও যকৃৎ এর রােগ সারে। সিদ্ধ ও ভাজা আর মধু দিয়ে নটেশাকের রস খালি পেটে সকালে খেতে হবে তাহলে উপকার পাবে।
১৭। সর্দি বা ঠান্ডা: নটের মূল থেতাে করে রস বের করে গরম করতে হবে। তা থেকে দু’চামচ করে খেলে সর্দি ভালাে হয়ে যাবে।
১৮। ঋতু স্রাব: মেয়েদের অনিয়মিত ঋতু স্রাব ও শ্বেত প্রদর রােগে নটে শাক সিদ্ধ করে ও নটে শাকের রস চিনি মিশিয়ে সকালে খেলে উপকার পাবেন।
আরও পড়ুন: পুদিনা পাতার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন
নটে শাক এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুন:
প্রতি ১০০ গ্রাম নটে শাকে আছে-
- কার্বোহাইড্রেট ৮.১ গ্রাম
- প্রােটিন ৩ গ্রাম
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ ৪ গ্রাম
- এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লােহা, ম্যাগনেসিয়াম, সােডিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, সালফার, ক্লোরিন,ভিটামিন-বি, থাকে যা আমাদের সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।