বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Benjamin Franklin Biography in Bengali. আপনারা যারা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কে ছিলেন? Who is Benjamin Franklin?
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জীবনী – Benjamin Franklin Biography in Bengali
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর জন্ম: Benjamin Franklin’s Birthday
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Benjamin Franklin’s Parents And Birth Place
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর ছোটবেলা: Benjamin Franklin’s Childhood
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর শিক্ষাজীবন: Benjamin Franklin’s Educational Life
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর কর্ম জীবন: Benjamin Franklin’s Work Life
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর পুরস্কার ও সম্মান: Benjamin Franklin’s Awards And Honors
- বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর মৃত্যু: Benjamin Franklin’s Death
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কে ছিলেন? Who is Benjamin Franklin?
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (৬ই জানুয়ারি ১৭০৬ – ১৭ই এপ্রিল, ১৭৯০) আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা জনকদের মধ্যে একজন। তিনি বিবিধ বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। ফ্রাঙ্কলিন একাধারে একজন লেখক, চিত্রশিল্পী, রাজনীতিবিদ, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ, উদ্ভাবক, রাষ্ট্রপ্রধান, কৌতুকবিদ, গণআন্দোলনকারী এবং কূটনীতিক। বিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার অবদানসমূহ বেশ উল্লেখযোগ্য। তিনি তড়িৎ সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়ে তার অবদান রাখেন। তিনি বজ্রনিরোধক দন্ড, বাইফোকাল লেন্স, ফ্রাঙ্কলিনের চুলা, অডোমিটার, ফ্রাঙ্কলিন হারমোনিকা ইত্যাদি উদ্ভাবন করেন।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জীবনী – Benjamin Franklin Biography in Bengali
নাম | বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন |
জন্ম | 6 জানুয়ারী 1706 |
পিতা | জোসিয়াহ ফ্র্যাঙ্কলিন |
মাতা | ফলগার আবিয়া |
জন্মস্থান | বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস বে, ব্রিটিশ আমেরিকা |
জাতীয়তা | আমেরিকান |
পেশা | লেখক, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, রাষ্ট্রনায়ক, কূটনীতিক, মুদ্রক, প্রকাশক |
মৃত্যু | 17 এপ্রিল 1790 (বয়স 84) |
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর জন্ম: Benjamin Franklin’s Birthday
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন 1706 সালের 6 জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Benjamin Franklin’s Parents And Birth Place
১৭০৬ খ্রিঃ জানুয়ারী মাসে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আমেরিকার বোষ্টন শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের আদি বাস ছিল ইংলন্ডে। তাঁর পিতা ছিলেন প্রোটেস্টান্ট মতাবলম্বী। ধর্মীয় মতভেদের জন্য সম্রাট দ্বিতীয় চার্লসের শাসনকালে তাকে ইংলন্ড ছেড়ে আমেরিকায় এসে বসবাস করতে হয়েছিল। বেঞ্জামিন ছিলেন তাঁর পিতার পঞ্চদশতম সস্তান ৷
আরও পড়ুন: হেনরিক যােহান ইবসেন জীবনী
আরও পড়ুন: ম্যাক্সিম গাের্কি জীবনী
আরও পড়ুন: জর্জ বার্নাড শ জীবনী
আরও পড়ুন: আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে জীবনী
আরও পড়ুন: পাবলো নেরুদা জীবনী
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর ছোটবেলা: Benjamin Franklin’s Childhood
সংসারের আর্থিক অনটনের ফলে বেঞ্জামিন বেশিদিন স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। বাবার ছিল সাবানের কারখানা। বছর দুয়েক স্কুলে যাতায়াতের পরই তাকে বাবার সঙ্গে কারখানার কাজে যোগ দিতে হয়েছিল। শৈশবে বেঞ্জামিন স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভাবে উন্মুক্ত সমুদ্রের বুকে পাড়ি দেবেন। বাড়ির কাছেই সমুদ্র। সেখানে নৌকা নিয়ে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করবার সময়েই তার এই স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল মনে। কিন্তু সেই স্বপ্ন মনের কোণে চেপেই রাখতে হল তাঁকে- বাবার হুকুমে কারখানায় এসে সাবান তৈরির কাজে হাত লাগাতে হল।
তবে কাজের ফাকে যখনই সুযোগ পেতেন নৌকা নিয়ে নেমে পড়তেন সমুদ্রে। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। হাতের কাছে কোন বই পেলেই সেটা তড়িঘড়ি পড়ে ফেলতেন। কিছুদিন পরে বাবা ঠিক করলেন তাকে ছাপাখানার কাজে দেবেন। বেঞ্জামিনের পড়াশোনার আগ্রহ লক্ষ করেই হয়তো তার বাবা এই সিদ্ধান্ত করেছিলেন। কেননা ছাপাখানার কাজে অন্ততঃ কিছুটা লেখাপড়ার যোগাযোগ ও সুযোগ রয়েছে যা রুটির কারখানায় ছিল না।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর শিক্ষাজীবন: Benjamin Franklin’s Educational Life
বোষ্টনে বেঞ্জামিনের দাদা জেমস – এর একটা ছাপাখানা ছিল। বারো বছর বয়সে সেখানেই তাকে শিক্ষানবীশ হিসেবে পাঠানো হল। এখানে এসে বাস্তবিকই বই পড়ার সুযোগ নাগালের মধ্যে পেয়ে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে অনেক পত্রপত্রিকা। কিছুদিন পরেই জেমস নিউ ইংল্যান্ড কুর্যান্ট নামে একটি খবরের কাগজ প্রকাশ শুরু করলেন। অভাবিতভাবে বেঞ্জামিন এই কাগজে লেখার সুযোগও পেয়ে গেলেন। সেই সময়ের জীবনযাত্রা নিয়ে তিনি এই কাগজে যেসব লেখা লিখেছেন তাতে তার সুস্খরসবোধ, অন্তর্দৃষ্টি ও অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
ইতিমধ্যে ট্রায়ো নামের এক লেখকের বই পড়ে বেঞ্জামিন কোন প্রাণীর মাংস খাবেন না বলে একরকম সিদ্ধান্ত করে ফেলেছিলেন। ফলে কোন বাড়িতে বা হোটেলে খাওয়ায় তাঁর খুবই আপত্তি ছিল। তাই নিজের খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেই করে নেবেন বলে তিনি দাদা জেমসের কাছ থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে খাওয়া খরচ চেয়ে নিতেন। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনরকম কিছু একটা হলেই তার চলে যেত। ফলে টুকটাক ফল, রুটি, কেক এসব দিয়েই তার খাওয়ার কাজ চুকে যেত।
সপ্তাহের শেষে দেখা যেত বেশ কিছু পয়সা বেঁচে গেছে। তিনি সেই পয়সা দিয়ে পছন্দমত বই কিনতে লাগলেন। আর প্রেসের কাজের অবসরে সেই বই নিয়ে বসতেন। পরে তিনি বলেছেন, ওসব হাল্কা খাবার খেয়ে তাঁর ক্ষতি কিছু তো হয়ইনি বরং মস্তিষ্কের ক্ষমতা, চিন্তার শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যা পড়তেন সহজেই মনে রাখতে পারতেন। অবশ্য নিরামিষ আহারের পর্বটা ছিল তার নিতান্তই আবেগ নির্ভর। আহারের জন্য প্রাণীহত্যার বিষয়টাই ছিল বাধাস্বরূপ। নইলে ট্রায়োর বই পড়বার আগে স্বচ্ছন্দেই তিনি মাছ, মাংস গলাধঃকরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: লিওনার্দো দা ভিঞ্চি জীবনী
আরও পড়ুন: নিকোলাস কোপার্নিকাস জীবনী
আরও পড়ুন: আন্দ্রে ভেসালিয়াস জীবনী
আরও পড়ুন: টাইকো ব্রাহে জীবনী
আরও পড়ুন: গ্যালিলিও গ্যালিলেই জীবনী
বিশেষ করে কড মাছ ভাজা ছিল তার অত্যন্ত প্রিয়। যাইহোক, বছরখানেক পরেই আবার নিজের মনেই যুক্তি খাড়া করলেন। প্রাণীরা তো উদরপূর্তির জন্যই অপর প্রাণী হত্যা করছে দেখতে পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাটা প্রাকৃতিক। কাজেই বেঁচে যখন থাকতে হবে, খাদ্য হিসেবে নির্বাচিত প্রাণীহত্যায় আর দোষ কোথায় ? তিনি যথারীতি আবার মাছ ও মাংসের স্বাদ নিতে লাগলেন। বেঞ্জামিনের এই ‘দিব্যজ্ঞান’ – এর উদয় হয়েছিল একবার সহকর্মীদের সঙ্গে ব্লক আইল্যান্ড নামে একটা দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে।
সেখানে সহকর্মীরা কড মাছ ধরে যখন রান্নার জন্য কাটাকুটি করছিল সেই সময় তাদের অনেকেরই পাকস্থলীতে ছোট ছোট মাছ পাওয়া গিয়েছিল। বেঞ্জামিন তা লক্ষ করেছিলেন। এই ঘটনা থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে তার স্বভাবে কিছুটা ভাবালুতা এবং খেয়ালিপনাও ছিল অল্প বয়স থেকেই। সতের বছর বয়স পর্যন্ত প্রেসের কাজে টিকে ছিলেন বেঞ্জামিন। দাদা জেমসের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কাজ ছেড়ে তিনি প্রথমে পাড়ি দিলেন নিউইয়র্ক। পরে সেখান থেকে গেলেন ফিলাডেলফিয়ায়। একরকম নিঃসম্বল অবস্থাতেই লন্ডনে এসে পৌঁছেছিলেন বেঞ্জামিন। কিছু ঘোরাঘুরি করে একটা প্রেসে কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলেন।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর কর্ম জীবন: Benjamin Franklin’s Work Life
১৭২০ খ্রিঃ থেকে দুবছর সেই কাজ করলেন। ১৭২৬ খ্রিঃ ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে এসে নিজেই প্রেসের ব্যবসায় শুরু করলেন একজন অংশীদারের সঙ্গে। দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফলে ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল। কিছুকাল পরে সম্পূর্ণ ব্যবসার মালিক হয়ে উঠলেন। ১৭২৯ খ্রিঃ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পেলেন যা তাকে অচিরেই বিখ্যাত হয়ে উঠবার সুযোগ এনে দিল। পেনসিলভানিয়া গেজেট প্রকাশনার দায়িত্ব পেলেন বেঞ্জামিন। এর বছর কয়েক পরে লিখতে শুরু করলেন পুওর রিচার্ডস অ্যালম্যানক। এই লেখার বলার ভঙ্গী ও সরস উক্তি তাঁকে রাতারাতি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় করে তুলল।
এই বই বিক্রির টাকাই তাঁকে বলা যায় ধনী করে দিল। ভবিষ্যতে বেঞ্জামিন যে বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন, অ্যালম্যানকই তার সূচনা করেছিল। তার বহুমুখী প্রতিভা যেন পথ খুঁজে পেল এতদিনে। এই সময়ে বৃহত্তর লক্ষে পারিপার্শ্বিক উন্নতির জন্য তিনি পরিচিত ও বন্ধুদের নিয়ে দ্য জুটা নামে একটি ক্লাব গড়ে তুললেন। মানুষের সর্বাঙ্গীন উন্নতি বিধানই ছিল তার মূল লক্ষ।
এই ক্লাবের মধ্য দিয়ে সীমিত ভাবে সেই উদ্যোগ আরম্ভ হল। তিনি নিজে ক্লাবে সভ্যদের সভায় বহুরকম সংস্কারমূলক প্রবন্ধ পাঠ করতেন। নানান উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন। পরবর্তীকালে এগুলোই আমেরিকার নানাবিধ সংস্কারের ভিত্তিস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। বেঞ্জামিনের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তারই প্রচেষ্টায় দেশে গড়ে উঠেছিল ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। পরবর্তীকালে তাঁর হাতেই জন্ম নিয়েছিল আমেরিকার প্রথম ফায়ার ইন্সিওরেন্স কোম্পানি। বাল্যবয়স থেকেই ছিলেন অনুসন্ধিৎসু, চারপাশের সবকিছু নিয়েই তার ছিল অসীম কৌতূহল।
সেই কৌতূহল নিবৃত্তির জন্যই নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। এভাবেই লালিত হয়ে চলেছিল তার বৈজ্ঞানিক প্রতিভা। ১৭৪০ খ্রিঃ বেঞ্জামিন জ্ঞানীগুণীদের নিয়ে গড়ে তুললেন ফিলজফিক্যাল সোসাইটি। সেই সময় ইংলন্ডের সঙ্গে লড়াই বেঁধেছিল স্পেন আর ফ্রান্সের। বেঞ্জামিন তার প্রিয় শহরটিকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করবার জন্য গড়ে তুললেন এক স্বেচ্ছাসেবী সুরক্ষাবাহিনী। ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তনও হয়েছিল তার হাতে। পরবর্তীকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
দুবছর পরে বন্ধু ডাঃ বন্ড – এর সহযোগিতায় গড়ে তুললেন আমেরিকার প্রথম হাসপাতাল। এই সব গঠনমূলক কাজে তার গভীর সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। যে কোন উদ্যোগ শুরুর যথেষ্ট আগে থেকেই তিনি সেই সম্পর্কে পুস্তিকা প্রকাশ করে এবং খবরের কাগজে লিখে প্রচারের কাজ আরম্ভ করতেন। এছাড়াও এসব কাজে প্রচারের নানা পদ্ধতি তিনি গ্রহণ করতেন। ফলে শুরুর আগেই প্রকৃত কাজ অনেকটাই এগিয়ে থাকত। সংস্কারমূলক কাজে কেবল সমাজই নয়, শহরের রাস্তাঘাট ইত্যাদিও তাঁর কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত থাকত।
সবকাজেরই উদ্দেশ্য সর্বসাধারণের উন্নতি ও উপকার। বস্তুতঃ তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় নতুন এক আমেরিকার জন্ম হতে লাগল। পরবর্তীকালে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সেই আমেরিকার মুকুটহীন সম্রাট। টুকটাক পরীক্ষা – নিরীক্ষার ফলে ১৭৪২ খ্রিঃ বেঞ্জামিন এক নতুন ধরনের চুল্লী আবিষ্কার করেন। এসব ক্ষেত্রে আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয় — এটাই চিরাচরিত রীতি। বেঞ্জামিন কিন্তু তার আবিষ্কৃত চুল্লীর পেটেন্ট নেবার কোনরকম চেষ্টা করলেন না। তিনি বললেন, আবিষ্কারের সব রকম সুবিধা ও ফলভোগ করবে জনসাধারণ, তাদের উপকারের লক্ষেই বিজ্ঞানীরা গবেষণায় রত হবেন — তার জন্য পেটেন্টের বাধা রাখা অনুচিত।
একসময় বেঞ্জামিন বিদ্যুৎ নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা শুরু করলেন। অচিরেই তিনি আবিষ্কার করলেন বিদ্যুতের পজিটিভ ও নেগেটিভ তত্ত্ব। বজ্রপাতের সঙ্গে বিদ্যুতের যে সম্পর্ক রয়েছে সেই সত্যই তিনিই আবিষ্কার করেন ১৭৫২ খ্রিঃ। এর ফল স্বরূপ তিনি আবিস্কার করলেন বাজ নিরোধক কনডাকটর। এইভাবে নানা কাজের মধ্য দিয়ে তার নাম দেশের সীমা ছেড়ে বিদেশেও পৌঁছে যেতে লাগল। বিশেষ করে তার আবিষ্কার ও গবেষণা বিপুল উৎসাহে সর্বত্র গৃহীত হতে লাগল। ব্যবসায়ের সাফল্য তাঁকে দিয়েছিল বিত্ত ও সম্পত্তি।
আরও পড়ুন: আলফ্রেদ নোবেল জীবনী
আরও পড়ুন: জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল জীবনী
আরও পড়ুন: উইলিয়াম থমসন ব্যারন কেলভিন জীবনী
আরও পড়ুন: বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন জীবনী
আরও পড়ুন: আরমাউয়ার হ্যানসেন জীবনী
বহুমুখী প্রতিভা ও হিতৈষণা বুদ্ধিথেকে পেলেন খ্যাতি। এর মধ্যে থেকেও তার জীবন ছিল সহজ সরল অনাড়ম্বর। ভোগবিলাসের প্রতিও ছিলেন উদাসীন ও নিস্পৃহ। বিয়ে করেছিলেন ১৭৩০ খ্রিঃ। সেই সূত্রেই তার একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিবারে অনুপ্রবেশ ঘটেছিল বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধার, সেগুলোকে কটাক্ষ করে তিনি বলতেন ‘ বিলাসিতা ’। জনহিতকর কাজের মাধ্যমে বেঞ্জামিন পেনসিলভানিয়ার আইনসভার সদস্য পদ লাভ করেছিলেন।
১৭৫০ খ্রিঃ থেকে ১৭৬৪ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি এই আইনসভার সদস্য ছিলেন। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যোগ্য সহকর্মীর অভাবে ও অন্যান্য কারণে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মত সফলতা পাননি। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্যরা বেঞ্জামিনের চিন্তাধারাকে ঠিকমত বুঝতে পারতেন না বলে কাজেও লাগাতে পারেননি। ১৭৫৪ এবং ১৭৬৪ খ্রিঃ বেঞ্জামিন দুবার ইংলন্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ইংলন্ডে অবস্থানকালে বহু বিতর্কিত স্ট্যাম্প আইন – এর বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। মূলতঃ তাঁরই চেষ্টায় এই বহুনিন্দিত আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল ১৭৬৬ খ্রিঃ।
তিনি নিঃসন্দেহে রাজভক্ত প্রজা ছিলেন। কিন্তু ইংরাজ উপনিবেশগুলির প্রতি কোনরূপ অবহেলা বা অবিচার হলে তিনি তার বিরোধিতা করতে কুণ্ঠিত হতেন না। ইংলন্ড তাঁর প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারত না। ফলে তাকে একবার প্রিভি কাউন্সিলের কাছে অপমানিত হতে হয়েছিল। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তিনি উপনিবেশগুলির স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করেননি। আমেরিকাব উপনিবেশগুলি যখন স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করল বেঞ্জামিন ছিলেন সেই লড়াইয়ের অন্যতম যোদ্ধা।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর পুরস্কার ও সম্মান: Benjamin Franklin’s Awards And Honors
সেই সময় তিনি তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা পূর্ণভাবে স্বদেশের কাজে প্রয়োগ করেছিলেন। বেঞ্জামিন তাঁর বাস্তবমুখী চিন্তাধারা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিভার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সর্বত্র। তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৭৫৩ খ্রিঃ পেয়েছিলেন কার্পাল পুরস্কার। এছাড়াও সেন্ট অ্যানড্রজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছিলেন সম্মানিক উপাধি।
জীবনের শেষ দিকে বেঞ্জামিন আমেরিকার সুপ্রীম একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলে ১৭৮৭ খ্রিঃ সংবিধান রচনায়ও তিনি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন। তিনি দেশের আইনসভায় দাসত্ব প্রথার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের মূল্যায়ন করা এক কঠিন কাজ ৷ বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ, দার্শনিক, মানবহিতৈষী— তাঁর সব পরিচয়ই সার্থক।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর মৃত্যু: Benjamin Franklin’s Death
১৭৯০ খ্রিঃ অক্লান্তকর্মী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের জীবনাবসান হয়।
আরও পড়ুন: চার্লস ডারউইন জীবনী
আরও পড়ুন: এভারিস্ট গ্যালোইস জীবনী
আরও পড়ুন: হেনরি ভিক্টর রেনোঁ জীবনী
আরও পড়ুন: হারমান ভন হেলমহোল্টজ জীবনী
আরও পড়ুন: জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার জীবনী