ADS বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected]

সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী – Satyendra Nath Bose Biography in Bengali

Satyendra Nath Bose Biography in Bengali
Satyendra Nath Bose Biography in Bengali

সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী: Bengaliportal.com আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Satyendra Nath Bose Biography in Bengali. আপনারা যারা সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সত্যেন্দ্রনাথ বসু র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু কে ছিলেন? Who is Satyendra Nath Bose?

সত্যেন্দ্রনাথ বসু (৩০ জুলাই ১৮৮২ – ২২ নভেম্বর ১৯০৮) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যা করার জন্য ২২ নভেম্বর, ১৯০৮ সনে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রেসিডেন্সি জেলে ফাঁসি হয়।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু জীবনী – Satyendra Nath Bose Biography in Bengali

নামসত্যেন্দ্রনাথ বসু
জন্ম৩০ জুলাই ১৮৮২
পিতাঅভয়চরণ বসু
মাতাতারাসুন্দরী বসু
জন্মস্থানমেদিনীপুর জেলা, ব্রিটিশ ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাবিপ্লবী
মৃত্যু২২ নভেম্বর, ১৯০৮

bengaliportal

 

সত্যেন্দ্রনাথ বসু র জন্ম: Satyendra Nath Bose’s Birthday

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ৩০ জুলাই ১৮৮২ জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: সালিম আলী ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘র জীবনী

আরও পড়ুন: আবদুস সালাম জীবনী

আরও পড়ুন: দৌলাত সিং কোঠারি জীবনী

সত্যেন্দ্রনাথ বসু র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Satyendra Nath Bose’s Parents And Birth Place

১৯০২ খ্রিঃ থেকে ১৯০৮ খ্রিঃ পর্যন্ত বাংলায় যে বিপ্লবী ক্রিয়াকর্ম চলে তার একজন প্রধান কর্মী ও নেতা ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৮৮২ খ্রিঃ ৩০ শে জুলাই মেদিনীপুরে সত্যেনের জন্ম। তাঁর পিতার নাম অভয়চরণ বসু। ঋষিকল্প রাজনারায়ণ বসু ছিলেন সত্যেনের জ্যেঠামশায় ৷ মায়ের নাম তারাসুন্দরী বসু।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু র শিক্ষাজীবন: Satyendra Nath Bose’s Educational Life

ছেলেবেলা থেকেই সত্যেনের স্মৃতি শক্তি ছিল খুব প্রখর। ছয় বছর বয়সে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে। এখানে প্রতি বছরই পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানটি ছিল তার বাঁধা। সত্যেনের চরিত্রে শৈশব অবস্থা থেকেই যে সব গুণ প্রকাশ পেয়েছিল তা হল, চরিত্রবল, অমায়িক ব্যবহার, মনোবল ও সত্যবাদিতা। তার অকপট ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হতেন।

১৮৯৭ খ্রিঃ প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হন। ১৮৯৯ খ্রিঃ এই কলেজ থেকেই এফ.এ পরীক্ষা পাশ করেন। তারপর কলকাতায় এসে সিটি কলেজে বি.এ ক্লাসে ভর্তি হন। কলকাতায় পড়াশুনা করবার সময়েই সত্যেন একবার খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তারদের পরামর্শে তার মা তাকে নিয়ে কিছুদিন ওয়ালটেয়ারে থেকে ১৯০২ খ্রিঃ মেদিনীপুরে ফিরে আসেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু র কর্ম জীবন: Satyendra Nath Bose’s Work Life

এই বছরেই মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখনো সেখানে দীক্ষা ইত্যাদির কোন ব্যবস্থা ছিল না। বরোদা থেকে অরবিন্দ মেদিনীপুর আসেন ১৯০২ খ্রিঃ শেষ দিকে। তিনিই প্রথম গুপ্ত সমিতির কয়েকজনকে দীক্ষা দেন। সত্যেন ছিলেন তাঁদের অন্যতম। অরবিন্দ ছিলেন সম্পর্কে সত্যেনের ভাগনে – রাজনারায়ণ বসুর দৌহিত্র। কিছুদিনের মধ্যেই মেদিনীপুরের মিঞা বাজারের একটি বাড়িতে কুস্তির আখড়া খোলা হয়।

সেখানে বিপ্লবীদের লাঠিখেলা, তরবারি চালনা, সাইকেল চড়া, ঘোড়ায় চড়া, বক্সিং, বন্দুক ছোঁড়া প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হত। এই আখড়া উদ্বোধনের দিনে উপস্থিত ছিলেন ভারত হিতৈষিণী স্বনামধন্য ভগিনী নিবেদিতা। তিনি আখড়ার যুবকদের উৎসাহিত করবার জন্য বিপ্লব সম্পর্কিত বেশ কিছু বই – ও দান করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন আখড়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা। ১৮৯৯ খ্রিঃএফ.এ পরীক্ষায় পাশ করবার আগের বছরেই সত্যেনের পিতৃবিয়োগ হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ব্লেজ পাস্কাল জীবনী

আরও পড়ুন: অ্যান্টনি ভন লিউয়েন হক জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী

আরও পড়ুন: লাজারো স্পালানজানি জীবনী

আরও পড়ুন: হেনরি ক্যাভেন্ডিশ জীবনী

তিনি যখন গুপ্ত সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, সেই সময় তাঁদের সাংসারিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। তাই তিনি খড়্গপুরে কোর কোম্পানির হোটেলে কেরানীর চাকরি গ্রহণ করেন। চাকরি করবার সময় সত্যেন স্কুল – কলেজের ছাত্রদের মধ্যে বিপ্লববাদের প্রচার করতে থাকেন। বেশ কিছু উৎসাহী তরুণ তার বিশেষ সহকর্মী হয়ে ওঠেন। তিনি তাদের চরিত্রগঠনে সাধ্যমত সাহায্য করতেন। এই সময় সত্যেন নানা প্রকার রাজনৈতিক পুস্তক, ইতিহাস, সাময়িক পত্রাদি পড়তেন, অন্যদেরও পড়াতেন এবং সেই সম্পর্কে আলোচনা করতেন।

১৯০৫ খ্রিঃ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে সত্যেন্দ্রনাথ কেলনার কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেদিনীপুরের কালেকটরিতে করনীকের চাকরি নেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রভাবে গুপ্তসমিতির বিপ্লবীদের উৎসাহ ও কর্মপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সত্যেন্দ্রনাথ এই সময় মেদিনীপুরে একটি ঘরভাড়া নিয়ে আড্ডা খোলেন। এই আড্ডার নাম দেন তাঁতশালা। একটা তাঁতে সব সময়ই একখানা কাপড় প্রস্তুত অবস্থায় এখানে দেখা যেত। কিছুদিন পরেই আলিপুর বোমার মামলার অভিযুক্ত আসামী নিরাপদ রায় ওরফে নির্মল রায়, বিভূতিভূষণ সরকার এখানে এসে জোটেন।

তারপর আসেন মেদিনীপুর থেকে ক্ষুদিরাম ও শচীন। তাঁতশালা বেশ গুলজার হয়ে ওঠে। কোথায় কোন বিলিতি কাপড়ের দোকানে আগুন লাগাতে হবে, স্বদেশী প্রচারের বিরোধী কাউকে কিভাবে শায়েস্তা করা হবে, শহরের বাইরে কোন হাটে পিকেটিং করতে হবে, কিংবা বিলিতি মাল বোঝাই নৌকা কোথায় ডুবিয়ে দিতে হবে — এই ধরনের নানাপ্রকার কাজের আলোচনা এই তাঁতশালায় হত। সত্যেন্দ্রনাথই ছিলেন একাধারে মন্ত্রণাদাতা, উদ্যোক্তা, আর সকল কাজের অগ্রণী নেতা।

১৯০৭ খ্রিঃ মেদিনীপুরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলনীর অধিবেশন হয়। তার সমস্ত আয়োজনের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। কর্মীসভা ডাকা, চঁাদা সংগ্রহ করা, স্বেচ্ছাসেবক দল সংগঠন, মন্ডপ প্রস্তুত, ডেলিগেটগণের অভ্যর্থনার আয়োজন ইত্যাদি সব কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব ছিল সত্যেন্দ্রনাথের ওপর। আগের বছরেই ফেব্রুয়ারী মাসে মেদিনীপুরে কৃষিশিল্প প্রদর্শনী খোলা হয়। সেই সময় সোনার বাংলা নামে একটি পাম্পলেট বিলি করায় ক্ষুদিরাম প্রথম রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

এই প্রদর্শনীর সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ এবং তিনিই সোনার বাংলা পুস্তিকাটি বার করেন। ক্ষুদিরাম পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সত্যেন্দ্রনাথই ধমকে তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। সেইসময়ে তিনি কালেকটরিতে কেরাণীর চাকরি করেন। পুলিশকে তিনি বলেন, ক্ষুদিরাম ডেপুটির ছেলে, তাকে গ্রেপ্তার করলে বিপদ হবে। পুলিশ ক্ষুদিরামকে ছেড়ে দেয় বটে, পরে নিজের ভুল বুঝতে পারে। সত্যেন্দ্রনাথের নামে মোকদ্দমা হয় এবং তিনি তার চাকরিটি খোয়ান। পরে অবশ্য মোকদ্দমা তুলে নেওয়া হয়।

আর চাকরি থেকে বিমুক্ত হয়ে সত্যেন স্বদেশের কাজে পুরোপুরিভাবে আত্মনিয়োগ করেন। এরপরেই মজঃফরপুরের ঘটনা অনুষ্ঠিত হয়। জজসাহেব কুখ্যাত কিংসফোর্ডকে মারার জন্য কলকাতার গুপ্ত সমিতি থেকে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার অন্ধকারে গাড়ি ভুল করে দুই তরুণ বিপ্লবী কিংসফোর্ডের পরিবর্তে মিসেস ও মিস কেনেডিকে বোমা মেরে হত্যা করে বসেন। এরপর ক্ষুদিরাম ওয়াইনি স্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেন। আর প্রফুল্ল কালকাতার পথে মোকামা ঘাটে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে নিজের পিস্তলে আত্মহত্যা করেন।

ক্ষুদিরামের জবানবন্দী থেকে পুলিশ কলকাতার বিপ্লবীদের গোপন আস্তানাগুলির সন্ধান পেয়ে সেখানে থেকে প্রায় সকল কর্মীকেই গ্রেপ্তার করে। এরপরেই শুরু হয় মুরারী পুকুরের ষড়যন্ত্র মামলা ও আলিপুরের বোমার মামলা। এই মামলার সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথের যোগাযোগ আবিষ্কার করে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাকে প্রথমে মেদিনীপুর জেলে রাখা হয়, পরে সেখান থেকে আলীপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। আলিপুর জেলে এসেই সত্যেন্দ্রনাথ নরেন গোঁসাই এব রাজসাক্ষী হবার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এই বিশ্বাসঘাতক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থির করে ফেলেন।

মজঃফরপুর বোমা বিস্ফোরণের পরে কলকাতা থেকে একে একে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অরবিন্দ, বারীন ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়, হেম দাস, নরেন গোঁসাই, সত্যেন বসু, কানাইলাল দত্ত প্রভৃতি সহ আরো অনেককে। শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক মানিকতাল বোমার মামলা। নরেন গোঁসাই বিশ্বাসঘাতকতা করে গোপনে পুলিশের কাছে গোপনে স্বীকারোক্তি করে রাজসাক্ষী হয়েছে মুক্তির লোভে। পরপর ছয়দিন বিবৃতি দিয়ে পুলিশকে সে কিছুই বলতে বাকি রাখেনি। ফলও ফলল শিগগিরিই। বিপ্লবীদের অন্যান্য সঙ্গীরাও ধরা পড়তে লাগলেন।

চন্দননগর কলেজের অধ্যাপক চারুচন্দ্র রায়, ইন্দ্রনাথ নন্দী, নিখিলরঞ্জন রায়, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃষীকেশ দাস, বিজয় ভট্টাচার্য, দেবব্রত বসু সহ আরো অনেকেরই ঠাই হল কারাপ্রাচীরের অন্তরালে। নরেন সম্পর্কেও পুলিশ যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বন্দী বিপ্লবীদের মধ্য থেকে তাকে সরিয়ে রাখার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের এক ইউরোপীয়ান ওয়ার্ডে। তাকে পাশে থেকে প্রহরা দিচ্ছে শ্বেতাঙ্গ প্রহরী হিগিনস ও একজন শ্বেতাঙ্গ ওয়ার্ডার। জেলে এসেই অসুখের ভান করে প্রথম থেকেই সত্যেন্দ্রনাথ হাসপাতালে থাকার বন্দোবস্ত পাকা করে নিয়েছিলেন।

তিনি হাঁপানী রোগী সেজেছেন। এখানে এসেই নরেন গোঁসাই – এর খবরটা পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্তও স্থির হয়ে গেল। তা জানালেন একমাত্র প্রবীণ বিপ্লবী হেমচন্দ্র দাসকে। পরিকল্পনা মত বাইরে থেকে একদিন রিভলবার গোপনে এসে পৌঁছল সত্যেনের হাতে। কিন্তু সেটা পছন্দ হল না। যেমন বেয়াড়া সাইজ তেমনি পুরনো মডেল। নতুন মডেলের একটা ভাল জিনিস চাই। দিন কয়েকের মধ্যে তা – ও এসে গেল জেলের ভেতরে। একটা ভাল কাপড়ে মুড়ে কানাইলালের হাতে সেটা পৌঁছে দেওয়া হল। বলেছেন, সত্যেন অসুস্থ।

এই ফলমূলগুলো পৌঁছে দাও তার কাছে। কানাই সত্যেনের মতলবের কথা কিছুই জানতেন না। তবে নরেন গোঁসাই – এর কথা তাঁর অজানা ছিল না। নরেনকে ছেলেদের কেউই সহ্য করতে পারত না। সুশীল সেন নামে একজন যে নরেনকে গলাটিপে অথবা ইঁটের আঘাতে হত্যা করার সঙ্কল্প নিয়েছিল তা – ও তার অজানা ছিল না। কৃষ্ণজীবন নামে একটি ছেলে তো একদিন নরেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে একটি লাথিই বসিয়ে দিয়েছিল।

তারপরেই জেল কর্তৃপক্ষ নরেনকে হাসপাতালে ইউরোপীয়ান ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তার জন্য সেখানে পাহারায় মোতায়েন হয়েছে ইউরোপীয়ান প্রহরী হিগিনস ও একজন শ্বেতাঙ্গ ওয়ার্ডার। সত্যেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বাসঘাতক নরেনকে খতম করবেন। তার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে কানাইও তাঁর সঙ্গী হলেন। স্থির হল, দুজনে মিলেই এই নরেন নিধন যজ্ঞ সম্পন্ন করা হবে। ১ লা সেপ্টেম্বর মামলার তারিখ। ওই দিন নরেন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এক বিবৃতি দেবে বলে জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: জোসেফ নিসেফোর নিপেস জীবনী

আরও পড়ুন: থমাস চার্লস হোপ জীবনী

আরও পড়ুন: জর্জ সাইমন ওহম জীবনী

আরও পড়ুন: স্যামুয়েল মোর্স জীবনী

আরও পড়ুন: হারম্যান গ্রাসম্যান জীবনী

সত্যেন স্থির করলেন সেই বিবৃতি দেবার আগেই নরেনকে শেষ করতে হবে। ইউরোপীয়ান ওয়ার্ডে বেশ জামাই আদরে রয়েছে নরেন। তার একমাত্র কাজ সত্যেনকে শিখিয়ে পড়িয়ে রাজসাক্ষী হিসেবে তৈরি করা। সেই কাজেই সে সেদিন সকালে এসেছে সত্যেনের কাছে। তার আগেই কানাই পেটের যন্ত্রণার অছিলায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। কাগজকলম নিয়ে প্রস্তুত হয়েই ছিলেন সত্যেন। নরেন আসতেই তিনি নিরিবিলি তার সঙ্গে কথাবলার ওজর দেখিয়ে হিগিনসকে তার সঙ্গীসহ বাইরে ‘ পাঠিয়ে দিলেন।

এবারে শুরু হল দুজনের কথাবার্তা। নরেন জানাল, তার বাবা মামলার পোকা। তিনি তাকে জানিয়েছেন, সব কথা খুলে বললেই সে খালাস পেয়ে যাবে। এরপর সে সোজা চলে যাবে বিলেত। সত্যেন সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জামার পকেটে হাত রেখে বললেন, বিলেত না গিয়ে আর কোথাও গেলে হয় না ! নরেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, আর কোথায় যাব ? —কেন, যমের বাড়ি। বলতে বলতেই সত্যেন পকেট থেকে রিভলভার বার করে গুলি করলেন নরেনকে। গুলিটা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে উরুতে লেগেছিল। আর্তনাদ করে উঠে নরেন উরু চেপে ধরে ছিটকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

সত্যেন তাকে দ্বিতীয় গুলি করবার সুযোগ পেলেন না। পরিকল্পনা মত কানাই তখন নিচে হাসপাতালের বারান্দায় ছিলেন। গুলির শব্দ কানে যেতেই তিনি দোতলার দিকে ছুটলেন। হাতে তার উদ্যত রিভলভার ৷ সত্যেনের হাত থেকে রিভলভার ছিনিয়ে নেবার জন্য হিগিনস ধস্তাধস্তি শুরু করেছিল। কানাই ওপরে গিয়ে দ্বিতীয় প্রহরীটিকে ধমকে নরেনের পলায়নের পথ জেনে নিলেন। উন্মত্তের মত ছুটে গিয়ে নাগাল ধরে ফেললেন কানাই। দ্রাম। দ্রাম। দ্রাম। গুলিবিদ্ধ হয়ে নর্দমায় আছড়ে পড়ল নধেন বেপরোয়া ও মরীয়া কানাই রিভলভারের সবকটা গুলিই নিঃশেষ করে তারপরে নিশ্চিত হলেন। যথারীতি জেলের পাগলা ঘন্টি বাজল।

সেপাই শাস্ত্রীর দল বেরিয়ে পড়ল। সরকারের দুর্ভেদ্য কারাগারের ভেতরে বিপ্লবীরা যে এমনশংঘাতিক কান্ড ঘটিয়ে বসবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। বন্দি হলেন সত্যেন ও কানাই। আলিপুরে দায়রা জজ মিঃ এফ.আর.রো – এর আদালতে শুরু হল মামলা। তাদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ, জেলের ভেতরে সরকারী সাক্ষী নরেন গোস্বামীকে হত্যার চেষ্টা। সত্যেনের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হলেন ব্যারিস্টার এ.সি.ব্যানার্জী ও উকিল নরেন্দ্রকুমার বসু। আবার সেই বিচারের প্রহসন। যথারীতি সত্যেন ও কানাই – এর হল প্রাণদন্ডের হুকুম।

সত্যেনের ফাঁসির দিন ধার্য হল ২১ শে নভেম্বর ভোর পাঁচটায়। ফাঁসির দিন নির্দিষ্ট হবার পরে সতোনের সঙ্গে অনেকেই দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর ভগ্নী সুরবালা দেবী সাক্ষাৎ করতে গেলে সত্যেন মায়ের উদ্দেশে তাকে বলেছিলেন- “সুবোধ (ছোটভাই) স্বেচ্ছায় আমেরিকায় গিয়েছে, তার (মায়ের) ধন তাঁরই আছে। কিন্তু চর্মচক্ষে তিনি আর তাকে দেখতে পাচ্ছেন না। সেইরূপ আমিও অত্যন্ত ইচ্ছা ও আগ্রহের সঙ্গে নিশ্চিন্ত ও নির্ভীক হৃদয়ে অন্য এক ধামে যাচ্ছি। আমি সেখানেও তাঁরই থাকব। কেবল আমার দেহ থাকবে না। অতএব তিনি যেন আমার জন্য খেদ না করেন। তাঁকে ভেবে দেখতে বলো, আমার আত্মাকে বিনাশ করার কারও সাধ্য নেই।”

আরও পড়ুন: জর্জেস কুভিয়ার জীবনী

আরও পড়ুন: রোবের্ট কখ জীবনী

আরও পড়ুন: উইলিয়াম রামসে জীবনী

আরও পড়ুন: স্যার জোসেফ জন থমসন জীবনী

আরও পড়ুন: রোনাল্ড রস জীবনী

ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় ১৯০৮ খ্রিঃ ২১ শে নভেম্বর দিনটি রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা রয়েছে। বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা – আকাঙ্ক্ষী এক মহা প্রাণ সেদিন মাতৃমুক্তির বেদীমূলে উৎসর্গীকৃত হয়েছিল। ১৯০২ খ্রিঃ সত্যেন্দ্রনাথ স্বদেশ মুক্তির যে কঠোর ব্রত গ্রহণ করেছিলেন সে ব্রত তার উদযাপন হয় ফাঁসির মঞ্চে। এবারে আর ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন না ইংরাজ শাসক। তাঁর শবদেহ জনতার হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরাই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন আলিপুর জেলের অভ্যন্তরে।

কেবল মাত্র দশজন আত্মীয় ও বন্ধু – বান্ধব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সত্যেনের চিতাভষ্ম পর্যন্ত বাইরে আনতে দেওয়া হয়নি। এ.সি.রায় বলে এক ভদ্রলোক সত্যেনের শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সত্যেনের কয়েকজন আত্মীয় সহ বন্ধুও ছিলেন। সত্যেনের ফাঁসি হয়ে যাবার পর একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিস সুপারিন্টেন্ডন্ট তাদের নিকটে এসে বললেন, “You can go now. The thing is over . Satyendra died bravely. Kanai was brave, but Satyendra was braver. “সেই সময় পার্শ্ববর্তী একজন সার্জেন্ট জানালেন, “When I went to his cell to get him to the gallows, he was wide awake. When said, Satyendra, be ready, he answered, well, I am quite ready and smiled . He steadily walked to the gallows. He mounted it bravely and bare it all cheerfully – a brave lad.”

Leave a Reply